ওযুতে কান মাসেহ করার সময় কানের ভেতর-বাহির মাসেহ করার পর কানের ছিদ্রেও আঙুল প্রবেশ করানোর বিধান আছে কি? যদি প্রবেশ করানোর বিধান থাকে, তাহলে কোন্ আঙুল প্রবেশ করাবে?
ওযুতে কান মাসেহ করার সময় কানের ভেতর-বাহির মাসেহ করার পর কানের ছিদ্রেও আঙুল প্রবেশ করানোর বিধান আছে কি? যদি প্রবেশ করানোর বিধান থাকে, তাহলে কোন্ আঙুল প্রবেশ করাবে?
ওযুতে কানের ভেতর-বাহির মাসেহ করার সময় কানের ছিদ্রে ভেজা আঙুল প্রবেশ করানো মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে দুই কানের ছিদ্রে দুই হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুল প্রবেশ করাবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত মিকদাদ রা. বলেন-
رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ، فَلَمَّا بَلَغَ مَسْحَ رَأْسِهِ، وَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى مُقَدَّمِ رَأْسِهِ، فَأَمَرَّهُمَا حَتَّى بَلَغَ الْقَفَا، ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ، وَمَسَحَ بِأُذُنَيْهِ ظَاهِرِهِمَا وَبَاطِنِهِمَا، وَأَدْخَلَ أَصَابِعَهُ فِي صِمَاخِ أُذُنَيْهِ.
আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওযু করতে দেখেছি, যখন মাথা মাসেহ পর্যন্ত পৌঁছান তখন তিনি এভাবে মাথা মাসেহ করেন যে, উভয় হাতের তালু আঙুলসহ মাথার সামনের অংশে রেখে ক্রমান্বয়ে তা মাথার পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত নিয়ে যান। অতঃপর পেছনের দিক থেকে তা সামনের দিকে শুরুর স্থানে ফিরিয়ে আনেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কানের বহিরাংশ ও ভেতরাংশ মাসেহ করেন এবং তিনি উভয় কানের ছিদ্রে আঙুল প্রবেশ করান। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১২৩, ১২৪)
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৭; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৭৮; ফাতহুল কাদীর ১/২৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৮২; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৫
গত সপ্তাহে আমি অসুস্থতার কারণে পানি ব্যবহার করে ওযু গোসল করতে সক্ষম ছিলাম না। সেসময় একবার আমার ওপর গোসল ফরয হয়। তখন আমি তায়াম্মুম করি এবং অসুস্থতার দিনগুলোতে তায়াম্মুম করেই নামায পড়েছি। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, সুস্থ হওয়ার পর কি আমি স্বাভাবিকভাবে ওযু করে নামায পড়তে পারব, না আগে ফরয গোসল করে নিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারে সক্ষম হওয়ার পর আপনাকে আগে ফরয গোসল করে নিতে হবে। কেননা পানি ব্যবহারে সক্ষম হওয়ার সাথে সাথে ফরয গোসলের পরিবর্তে কৃত আপনার তায়াম্মুমটি ভেঙে যাবে। সুতরাং এক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার পর ফরয গোসল না করে শুধু ওযু করে নামায পড়া সহীহ হবে না। আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
إِذَا أَجْنَبتَ فَاسْأَلْ عَنِ الْمَاءِ جَهْدَكَ، فَإِنْ لَمْ تَقْدِرْ فَتَيَمَّمْ وَصَلِّ، فَإِذَا قَدَرْتَ عَلَى الْمَاءِ فَاغْتَسِلْ.
তোমার ওপর গোসল ফরয হলে পানি জোগাড় করার চেষ্টা করবে। যদি না পাও তাহলে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। তারপর যখন পানি পাবে তখন গোসল করে নেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৯২৪)
উল্লেখ্য, গোসল করতে সক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত তায়াম্মুম করে আপনি যে নামাযগুলো পড়েছেন তা আদায় হয়ে গেছে। সেগুলো আর পুনরায় পড়তে হবে না।
শেয়ার লিংককিতাবুল আছল ১/৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৪; আলবাহরুর রায়েক ১/১৬৯
কয়েকদিন যাবৎ আমার পায়ের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগানো আছে। আমি সেটার ওপর মাসেহ করি। গতকাল আসরের নামাযের আগে আমি ওযু করি এবং তার ওপর মাসেহ করি। ওযুর পর পুরাতন ব্যান্ডেজটি খুলে নতুন ব্যান্ডেজ লাগাই এবং পূর্বের মাসেহের ওপর ভিত্তি করে নামায আদায় করি।
মুহতারাম হুজুরের কাছে জানতে চাই, পূর্বের মাসেহের ওপর ভিত্তি করে আমার নামায আদায় করা কি শুদ্ধ হয়েছে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত নতুন ব্যান্ডেজের ওপর পুনরায় মাসেহ করা জরুরি নয়; বরং পুরাতন ব্যান্ডেজের ওপর ঐ মাসেহই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। তবে এক্ষেত্রেও নতুন ব্যান্ডেজটির ওপর মাসেহ করে নেওয়া উত্তম।
শেয়ার লিংকবাদায়েউস সানায়ে ১/৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬২; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ১৪২; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৪৭
কোনো মুসল্লি তার পায়ের স্থান হতে কতটুকু উঁচু স্থানে সিজদা করলে সিজদা আদায় হয়ে যাবে? আর কতটুকু উঁচু স্থানে সিজদা করলে সিজদা আদায় হবে না? এই মাসআলার ক্ষেত্রে ফিকহের কিতাবাদিতে نصف ذراع -এর কথা উল্লেখ করা হয়; এর দ্বারা কোন্ ধরনের ذراع উদ্দেশ্য?
মুসল্লির সিজদার জায়গা যদি পায়ের জায়গা থেকে আধা হাত বা তার চেয়ে কম উঁচু হয় তাহলে সিজদা আদায় হয়ে যাবে। আর যদি সিজদার জায়গা পায়ের জায়গা থেকে আধা হাতের বেশি উঁচু হয় তাহলে সিজদা আদায় হবে না।
আর ফিকহের কিতাবের এই ذراع দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ذراع الكرباس তথা এক হাত, যা চব্বিশ আঙুল সমপরিমাণ। আর তা বর্তমানের হিসাবে এক গজের অর্ধেক অর্থাৎ একহাত বা ১৮ ইঞ্চি। সে হিসেবে نصف ذراع-এর পরিমাণ হচ্ছে, আধা হাত বা এক গজের চার ভাগের এক ভাগ, তথা নয় ইঞ্চি।
শেয়ার লিংকআযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ২/৪২; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০৩; ইমদাদুল আহকাম ১/৫৫৫; আওযানে শারইয়্যাহ, পৃ. ৩১
তাকবীরে তাহরীমার সময় কখন হাত তুলবে- এ ব্যাপারে কয়েক ধরনের পদ্ধতিই পরিলক্ষিত হয়, কেউ আগে কান পর্যন্ত হাত ওঠায়, পরে তাকবীরে তাহরীমা বলে। আবার কেউ তাকবীরে তাহরীমা বলা শুরু করে হাত ওঠায় এবং তাকবীর শেষে হাত বাঁধে। আবার কেউ তাকবীরে তাহরীমা বলার পর হাত ওঠায়।
জানার বিষয় হল, উল্লিখিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কোন্টি সঠিক?
প্রশ্নোল্লিখিত তিনটি পদ্ধতিই সহীহ আছে। তবে এর মধ্যে উত্তম হল প্রথম পদ্ধতিটি। অর্থাৎ কান পর্যন্ত হাত ওঠাবে, এরপর তাকবীরে তাহরীমা বলবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ لِلصَّلَاةِ رَفَعَ يَدَيْهِ، حَتَّى تَكُونَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، ثُمَّ كَبَّرَ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর ওঠাতেন, এরপর তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৯০)
শেয়ার লিংকআলমাবসূত, সারাখসী ১/১১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৫৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৮৪; ফাতহুল কাদীর ১/২৪৪; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১০১
মুহতারাম, একদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙতে দেরি হয়। উঠে দেখি, ফজরের আর সামান্য সময় বাকি আছে। তখন তাড়াতাড়ি শুধু ফরয দুই রাকাত পড়ে নিই। স্বাভাবিকভাবে আমি ওয়াক্ত আছে মনে করেই আদায় করি। কিন্তু নামায শেষে বুঝতে পারি যে, আমি ভুল দেখেছিলাম, আমি নামায শুরু করার প্রায় বিশ মিনিট আগেই সূর্য উঠে গিয়েছিল। তো আমার এই নামায কি আদায় হয়েছে? আমি তো ওয়াক্তের মধ্যে আদায়ের নিয়তে পড়েছি। অথচ তা কাযা হয়ে গিয়েছিল, এর কারণে কি কোনো অসুবিধা হবে?
আপনার উক্ত ফজর নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামাযটি ওয়াক্তের পর পড়া হলেও আপনি যেহেতু ঐ দিনের ফজর নামাযই আদায় করেছেন, তাই এক্ষেত্রে কাযার নিয়ত না করলেও তাতে কোনো অসুবিধা হয়নি।
শেয়ার লিংকআততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪১৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪২২; রদ্দুল মুহতার ১/৪২২
আমি একজন হাফেয। সুন্নত ও নফল নামাযে কুরআন কারীম খতম করার নিয়ত করেছি। কখনো সূরা ফাতেহা পড়ার পর কোনো সূরা পড়া শুরু করি। এক দুই আয়াত তিলাওয়াতের পর খতমের কথা মনে হলে ঐ সূরা ছেড়ে খতমের জায়গা থেকে পড়ি। জানার বিষয় হল, এমনটি করা ঠিক হবে কি না?
বিনা কারণে এমনটি করা ঠিক নয়। কুরআন কারীমের কোনো স্থান থেকে তিলাওয়াত শুরু করার পর সেখান থেকেই ঐ রাকাতের তিলাওয়াত পূর্ণ করবেন। বিনা ওজরে (যেমন আটকে যাওয়া) তা বাদ দিয়ে অন্য স্থান থেকে পড়া অনুচিত। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাযের সময় একদিন বেলাল রা.-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি নামাযে এ সূরা থেকে কিছু অংশ, ও সূরা থেকে কিছু অংশ, আরেক সূরা থেকে কিছু অংশ- এভাবে পড়ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে তাঁকে বললেন-
إِذَا قَرَأْتَ السُّورَةَ فَأَنْفِدْهَا.
যখন তুমি কোনো সূরা পড়বে তখন তা থেকেই তিলাওয়াত পূর্ণ করবে। (ফাযায়েলে কুরআন আবু উবাইদ রাহ., পৃ. ৯৫)
শেয়ার লিংকখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৮; আলমুহীতুর রাযাবী ১/২৩৭; আলহাবিল কুদসী ১/১৭৪; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২১; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯
আমাদের বাড়ি থেকে ঈদগাহ ভালোই দূরে। এবার ঈদের নামাযে যাওয়ার পথে পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে অতিক্রমকারী সিএনজির কারণে রাস্তার কাদাপানি আমার জামায় পড়ে। বাড়ি থেকে জামা পরিবর্তন করে আসতে আসতে ঈদের নামায শেষ হয়ে যায়। পরে শুধু খুতবা শুনি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, ঈদের নামায ছুটে গেলে করণীয় কী?
ঈদের নামাযের জন্য জামাত শর্ত। তা একাকী আদায় করা যায় না। তাই নিজ এলাকায় ঈদের নামায ছুটে গেলে আশেপাশে কোথাও ঈদের জামাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেখানে শরীক হওয়ার চেষ্টা করবে। যদি ঈদের জামাত পাওয়া না যায়, তাহলে আর তা আদায়ের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে নিজের ত্রুটির জন্য তাওবা ইস্তেগফার করবে। আর সম্ভব হলে এর পরিবর্তে চার রাকাত বা দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নিতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-
مَنْ فَاتَهُ الْعِيدُ فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا.
‘কারো ঈদের নামায ছুটে গেলে চার রাকাত (নফল) নামায পড়ে নেবে।’ (ঢ়মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৮৫০)
মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ রাহ. বলেন-
يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ.
(ঈদের নামায ছুটে গেলে) দুই রাকাত (নফল) নামায পড়ে নেবে (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৮৫৬)
তবে এটি ঈদের নামায হিসেবে গণ্য হবে না।
উল্লেখ্য, রাস্তার কাদাপানিতে স্পষ্ট কোনো নাপাকী দেখা না গেলে তা অপবিত্র নয়। তাই এক্ষেত্রে সহজে ময়লা ধোয়া সম্ভব হলে ধুয়ে নেওয়া উচিত ছিল। অন্যথায় জামা পরিবর্তন না করে ঐ জামা পরেই ঈদের নামায পড়ে নেওয়া করণীয় ছিল।
শেয়ার লিংককিতাবুল আছল ১/৫২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৫;
অনেকে টাইট প্যান্ট ও গেঞ্জি পরিধান করে নামায পড়ে। সিজদায় গেলে অনেক সময় গেঞ্জি উপরে ওঠে ও প্যান্ট নিচে নেমে পেছন থেকে তাদের সতর খুলে যায়। এক্ষেত্রে তাদের নামাযের কী হুকুম?
নামাযের ভেতরে ও বাইরে সর্বাবস্থায় সতর পুরোপুরি ঢেকে রাখা ফরয। মানুষের সামনে সতরের অল্প কোনো অংশও খোলা রাখা নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। নামাযের ভেতর তা আরো বড় অপরাধ। এক্ষেত্রে যদি কাপড় সরে যাওয়া অংশ তলপেট ও এর বরাবর পেছনের পুরো অংশের এক চতুর্থাংশ বা তার বেশি হয় এবং তা তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য অনাবৃত অংশ যদি এক চতুর্থাংশের কম হয়, অথবা এক চতুর্থাংশ বা তার বেশি হয়, কিন্তু তিন তাসবীহ থেকে কম সময় খোলা থাকে, তাহলে নামায আদায় হয়ে যাবে। যেহেতু সাধারণত প্রশ্নোক্ত লোকদের এত সময় ধরে বা এত বেশি পরিমাণে কাপড় খুলে থাকে না, তাই স্বাভাবিক ক্ষেত্রে নামায আদায় হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, নামাযের জন্য এমন স্বাভাবিক ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করা কর্তব্য, যা পরে সহজেই রুকু-সিজদা করা যায় এবং রুকু-সিজদা করলে সতর খুলে যায় না।
মনে রাখতে হবে, এ ধরনের ক্ষেত্রে শুধু নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ারই আশংকা তৈরি হয় না, বরং তা অন্যকে নিজ সতর দেখাবার মতো বড় গোনাহেরও কারণ হয়ে থাকে।
শেয়ার লিংকআলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪০১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/১৯১; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৮; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/১৯৯
বিতিরের নামাযে একদিন আমি দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে সন্দেহে পড়ে যাই যে, এটা কি দ্বিতীয় রাকাত, না তৃতীয় রাকাত। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারায় নামায ছেড়ে দেই এবং নতুন করে বিতিরের নামায পড়ি।
মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় আমার করণীয় কী ছিল? জানালে উপকৃত হব।
উল্লেখ্য, আমার আগে থেকেই নামাযে সন্দেহে পড়ার অভ্যাস আছে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আপনার যেহেতু আগ থেকেই প্রায়ই নামাযে সন্দেহে পড়ার সমস্যা আছে এবং প্রশ্নোক্ত ঘটনায় বিতিরের দুই রাকাত হয়েছে, না তিন রাকাত- কোনো একটি ব্যাপারে আপনার ধারণাও প্রবল হয়নি, তাই উক্ত অবস্থায় আপনার করণীয় ছিল, বিতিরের দ্বিতীয় যে রাকাতে আপনার সন্দেহ হয়েছে সে রাকাতে কুনূত পড়ে বৈঠক করা। অতঃপর এর সঙ্গে আরেক রাকাত মিলিয়ে এই রাকাতেও কুনূত পড়া এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করা।
আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাসআলা না জানার কারণে নতুন করে নামায শুরু করতে চাইলেও নামায ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। বরং এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য ছিল, উক্ত রাকাত পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা। এমনটি করলে ঐ দুই রাকাত নফল হয়ে যেত।
শেয়ার লিংকআততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৯১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪১০, ৪৫৪; আলমুহীতুর রাযাবী ১/২৮৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০
একবার জনৈক ইমাম সাহেব নামাযের মাসআলা-মাসায়েল শেখাতে গিয়ে বলেন, সুস্থ ব্যক্তি নামাযে সিজদা থেকে দাঁড়ানোর সময় হাত দ্বারা জমিনে অথবা হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়ালে নামায মাকরূহ হয়ে যাবে। তবে কেউ ওযরবশত এমনটি করলে নামায মাকরূহ হবে না। তাই ওযর ছাড়া এমনটি করা যাবে না।
এখন হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, কেউ সিজদা থেকে দাঁড়ানোর সময় কোনো ওযর ছাড়া জমিনে অথবা হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়ালে কি নামায মাকরূহ হবে? আশা করি সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
নামাযে সিজদা থেকে দাঁড়ানোর সময় ওযর ছাড়া জমিনে ভর দিয়ে দাঁড়ানো মাকরূহে তানযীহী। তাই ওযর ছাড়া জমিনে ভর দেবে না। আর হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়ানো মাকরূহ নয়; বরং ওঠার সময় হাঁটুতে ভর করে দাঁড়ানোই নিয়ম।
শেয়ার লিংকসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৩৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪০২০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩২২
আমাদের এলাকায় ঈদের খুতবার মধ্যে ইমাম কিছুক্ষণ পর পর যখন তাকবীরে তাশরীক বলেন তখন উপস্থিত লোকজনও ইমামের সাথে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীরে তাশরীক বলে থাকে।
জানার বিষয় হল, ঈদের খুতবা চলাকালে এভাবে ইমামের সঙ্গে তাকবীরে তাশরীক বলা যাবে কী? জানালে উপকৃত হব।
জুমার খুতবার ন্যায় ঈদের খুতবার সময়ও উপস্থিত মুসল্লিদের চুপ থেকে মনোযোগের সাথে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
وَجَبَ الْإِنْصَاتُ فِي أَرْبَعَةِ مَوَاطِنَ: الْجُمُعَةِ، وَالْفِطْرِ، وَالْأَضْحَى، وَالِاسْتِسْقَاءِ.
অর্থাৎ চার জায়গায় চুপ থাকা ওয়াজিব। জুমার খুতবা, ঈদুল ফিতরের খুতবা, ঈদুল আযহার খুতবা এবং ইসতিসকার খুতবার সময়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬৪২)
সুতরাং ঈদের খুতবাতে ইমাম যখন তাকাবীরে তাশরীক বলেন, সে সময় উপস্থিত মুসল্লিদের তাকবীরে তাশরীক বলা ঠিক নয়; বরং খুতবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চুপ থেকে মনোযোগের সাথে খুতবা শোনা আবশ্যক।
শেয়ার লিংককিতাবুল আছল ১/৩২৮; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪১১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯
শরীয়তে একাধিক মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একসঙ্গে পড়া জায়েয কি? যদি জায়েয হয়, তাহলে এক্ষেত্রে জানাযার নামাযের সময় ইমামের সামনে লাশগুলো কীভাবে রাখবে?
জানাযার জন্য একাধিক লাশ একত্রে উপস্থিত হয়ে গেলে সম্ভব হলে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা জানাযার নামায পড়া উত্তম। তবে সবগুলো লাশকে একত্র করে একসাথে জানাযার নামায পড়াও জায়েয আছে। এক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হল, সবগুলো লাশ ইমামের সামনে পশ্চিম দিকে একের পর এক সারিবদ্ধভাবে রাখা। সেক্ষেত্রে সবগুলো লাশ যদি পুরুষের হয় তাহলে বয়স ও মর্যাদার দিক থেকে যে বড় তাকে ইমামের সামনে প্রথমে রাখবে। আর পুরুষ ও মহিলার জানাযা হলে ইমামের সামনে প্রথমে পুরুষের লাশ এরপর মহিলার লাশ রাখবে। তাবেয়ী নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ كَانَ إذَا صَلَّى عَلَى جِنَازَةِ رِجَالٍ وَنِسَاءٍ جَعَلَ الرِّجَالَ مِمَّا يَلِيهِ وَالنِّسَاءَ خَلْفَ ذَلِكَ مِمَّا يَلِي الْقِبْلَةَ.
অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. পুরুষ ও মহিলার জানাযার নামায একত্রে পড়ালে পুরুষদেরকে সামনে রাখতেন এরপর মহিলাদেরকে রাখতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৬৮২)
অবশ্য এক্ষেত্রে লাশগুলো উত্তর-দক্ষিণে সারিবদ্ধভাবে রেখেও জানাযা পড়া যাবে।
শেয়ার লিংককিতাবুল আছল ১/৩৫০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/২২৪; ফাতহুল কাদীর ২/৯২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৯
আমার বড় ভাই চার বছর আগে একবার বাবাকে না জানিয়ে বাবার যাকাত হিসেবে কিছু টাকা দান করেছেন। বিষয়টা তিনি তখন বাবাকে বলেননি। কয়েকদিন আগে বাবাকে জানিয়েছেন আর আমার বাবাও এর মধ্যে তার সম্পদের যাকাত দেননি।
হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, বড় ভাইয়ের দানকৃত টাকা কি বাবার যাকাত হিসেবে আদায় হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যেহেতু বাবাকে না জানিয়ে তার যাকাত দিয়েছেন এবং পূর্ব থেকে তিনি সাধারণত বাবার পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করেন- এমনও নয়, তাই এর দ্বারা আপনার বাবার যাকাত আদায় হয়নি। কেননা, কোনো ধরনের অনুমতি ব্যতীত একজনের যাকাত অন্যজন আদায় করে দিলে তা আদায় হয় না।
এখন উক্ত দানকৃত টাকা আপনার ভাইয়ের পক্ষ থেকে নফল সদকা হিসেবে গণ্য হবে। তিনি এর সওয়াব পাবেন।
শেয়ার লিংকবাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৫; ফাতহুল কাদীর ২/২২১; আলইনায়া ২/২২১; হাশিয়াতুশ শিলবী ২/১৩৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩৯৫
গত জুমাবারে বাবার ইন্তেকাল হয়। তার ওপর হজ্ব ফরয ছিল। জীবনের শেষ দিকে ফরয হজ্ব আদায়ের বিভিন্ন চেষ্টা করলেও আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তাই মৃত্যুর পূর্বে বদলী হজ্বের ওসিয়ত করে যান। কিন্তু তার পরিত্যক্ত সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ তথা আড়াই লক্ষ টাকা দ্বারা বাংলাদেশ থেকে হজ্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। তবে উক্ত টাকা দিয়ে সৌদি থেকে কারো মাধ্যমে বদলী হজ্ব করানো সম্ভব হবে। তাই আমরা চাচ্ছি, সেখান থেকেই আমাদের এক আত্মীয়ের দ্বারা বাবার বদলী হজ্ব করাব।
জানতে চাই, এভাবে বদলী হজ্ব করানোর দ্বারা বাবার ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
বদলী হজ্বের ক্ষেত্রে জরুরি হল, যার বদলী হজ্ব করা হচ্ছে তার দেশ থেকে করা। তবে যদি তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তার দেশ থেকে হজ্ব করানো সম্ভব না হয় তাহলে এই টাকা দিয়ে যেখান থেকে সম্ভব সেখান থেকে কাউকে দিয়ে হজ্ব করাবে। এতে তার বদলী হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত টাকা দিয়ে সৌদি থেকে কারো মাধ্যমে বদলী হজ্ব করানোর দ্বারা আপনার বাবার বদলী হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
শেয়ার লিংকআলমুহীতুর রাযাবী ২/২৫৫; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৩/১৮৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৫৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৪; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৪০
আমরা বহু বছর যাবৎ একটি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ জুমা আদায় করে আসছি। আমাদের মসজিদের মাত্র দশ থেকে বার হাত দূরত্বে সরকারি মডেল মসজিদ নির্মিত হয়। প্রকাশ থাকে যে, আমাদের পুরাতন মসজিদটি সম্পূর্ণ ওয়াক্ফকৃত। এমতাবস্থায় দুটি মসজিদে একই সময় জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা মুসল্লিদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির একটি সম্ভাবনা তৈরি করে। এই পরিস্থিতে আমাদের ইচ্ছা, সরকারি মডেল মসজিদে নামায আদায় করার। এক্ষেত্রে পুরাতন মসজিদটির বিষয়ে আমাদের করণীয় কী?
এলাকার মুসল্লিগণ পুরাতন মসজিদটিতে জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায বন্ধ করে ঐ স্থানে একটি হেফজখানা বা নূরানী মাদরাসা বানাতে চান। এতে শরীয়ত কর্তৃক কোনো বিধি-নিষেধ আছে কি না? দলীল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
কোনো স্থানে শরয়ী মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হলে উক্ত জায়গা স্থায়ীভাবে মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। সর্বদা তা মসজিদ হিসেবে বহাল রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে আশপাশে নতুন কোনো মসজিদ নির্মিত হলেও আগের মসজিদটিকে মসজিদ হিসেবেই বহাল ও আবাদ রাখতে হবে। নতুন মসজিদের কারণে আগের মসজিদের মসজিদ সত্তাকে পূর্ণরূপে বাতিল করে একে ভিন্ন সত্তা, যেমন হেফজখানা বা মাদরাসা বানিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পাশে নতুন আরেকটি মসজিদ হলেও আগের মসজিদটিকে সম্পূর্ণরূপে হেফজখানা বানিয়ে দেওয়া যাবে না। একে মসজিদ হিসেবেই বহাল রাখতে হবে এবং যথাসম্ভব মসজিদটিতে ওয়াক্তিয়া নামাযগুলো (ছোট পরিসরে হলেও) চালু রাখার চেষ্টা করবে। আর জুমা যেহেতু একত্রে বড় জমায়েতে আদায় করা শরীয়তে কাম্য, তাই জুমার নামায সকলে একসাথে নতুন বড় মসজিদে আদায় করতে পারবে।
অবশ্য পুরাতন মসজিদটিকে মসজিদ হিসেবে বহাল রেখে পাঞ্জেগানা নামাযের পাশাপাশি মসজিদের অধীনে চাইলে তাতে কোনো মসজিদভিত্তিক হেফজখানাও চালু করা যাবে। এতে অসুবিধা নেই; বরং মসজিদভিত্তিক কোনো হেফজখানা চালু হলে মসজিদটিতে নিয়মিত নামায চালু রাখাও সহজ হবে। কিন্তু মসজিদের সত্তা বাতিল করে একে সম্পূর্ণরূপে হেফজখানা বানিয়ে নেওয়া বৈধ হবে না; যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এক মসজিদের একেবারে পাশে এভাবে আরেকটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা ঠিক নয়। নতুন মসজিদটি নির্মাণের সময়ই এলাকাবাসীর দায়িত্ব ছিল, মসজিদটি আগের মসজিদ থেকে মোটামুটি দূরে এমন কোনো জায়গায় নির্মাণ করার চেষ্টা করা, যেখানে বাস্তবে মসজিদের প্রয়োজন রয়েছে। এমনটি হলে পাশাপাশি দুটি মসজিদে একসাথে জামাত হওয়ার প্রশ্নোক্ত জটিলতা তৈরি হত না। তাছাড়া বিনা প্রয়োজনে এভাবে পাশাপাশি দুটি মসিজদ নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণের শরয়ী নীতিমালারও পরিপন্থী।
শেয়ার লিংকআলহাবিল কুদসী ৭১/৫৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১১; আলহাবী, যাহেদী (মাখতুত, জামেয়াতুন নাজাহ), পৃ. ১২৯
মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমাদের এলাকায় কিছুদিন থেকে একটি লেনদেন প্রথা প্রচলিত হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদ কমিটি মসজিদের টাকা থেকে গরু কিনে সেটা নিলামে বাকিতে এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। যেমন ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ৬ মাস পরে মূল্য পরিশোধের চুক্তিতে ৬০ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। এবং এর জন্য একজন দায়িত্বশীল নিয়োগ করা হয়। যথাসময়ে আদায় না করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সমমূল্যের কোনো জিনিস ক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে আসে। এমন ক্রয়-বিক্রয়ের দ্বারা মসজিদ কমিটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, মসজিদ ফান্ডের কিছু লাভ করা। আর অনেক গরীব মানুষ যেহেতু একসাথে নগদ টাকা দিয়ে গরু কিনতে পারে না, তাই বেশি দামে হলেও তারা বাকিতে গরু কিনে নেয়। জানার বিষয় হল, উল্লিখিত পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে কি না? আর এজন্য লোক নিয়োগের হুকুম কী? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
উল্লেখ্য, পারিশ্রমিক ছাড়াই লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। তার কাজ হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা উসূল করা। আর মেয়াদ শেষ হলে অন্য কোনো উপায়ে হলেও আদায় করা।
মসজিদ ফান্ডের সাধারণ দান-সদকার টাকা, যা মানুষ মসজিদের উন্নয়ন ও এর খরচাদি নির্বাহের জন্য দিয়ে থাকে, তা দিয়ে ব্যবসা করা শরীয়ত অনুমোদিত নয়। বিশেষত প্রশ্নোক্ত পদ্ধতির বাকিতে ব্যবসা, যেখানে পরবর্তীতে মূল্য যথাযথ আদায় হওয়ার বিষয়টিও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মসজিদ ফান্ডের টাকা মসজিদ কমিটি আমানত হিসেবে নিজেদের কাছে হেফাজত করে রাখবে; তা এভাবে ব্যবসায় খাটাবে না। তবে কোনো ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ যদি ব্যবসা করে তহবিল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে কোনো অর্থ দান করে থাকেন, তাহলে সে টাকা মসজিদের আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবসায় খাটানো যাবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসাটি হতে হবে হালাল, এবং তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ ।
অবশ্য এতদিন প্রশ্নোক্ত মসজিদ ফান্ডের টাকা দিয়ে যে ব্যবসা করা হয়েছে, তা যদি নিম্নোক্ত শর্তাদি রক্ষা করে করা হয়ে থাকে, তাহলে তা জায়েয গণ্য হবে এবং এ থেকে প্রাপ্ত টাকা মসজিদে খরচ করা যাবে-
১. বাকিতে বিক্রির কারণে কিছুটা (যৌক্তিক) বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। তবে মূল্য বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার আগেই সুনির্ধারিত হয়ে যেতে হবে।
২. মেয়াদান্তে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া বা শর্ত করে অতিরিক্ত কোনো কিছু নেয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, দেনাদার কর্তৃক অকারণে অন্যের পাওনা পরিশোধে গড়িমসি অন্যায় ও গোনাহের কাজ। তবে বাস্তবসম্মত ওজরের কারণে কেউ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে সক্ষম না হলে তাকে সময় ও সুযোগ দেওয়া ইসলামের শিক্ষা। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ‘যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করলে সমমূল্যের কোনো জিনিস নিয়ে আসা হয়’- বলে পাওনা উসূলের যে ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এর ধরন ও পদ্ধতি কী- তা জানা দরকার। তা অবগত হওয়ার পরই বলা যাবে, এভাবে কাজটি করা শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না। বাহ্যত মনে হচ্ছে, এটি পাওনা উসূলের সহীহ পন্থা নয়। তাই বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়ে উত্তর জেনে সে অনুযায়ী আমল করা দরকার।
শেয়ার লিংকসহীহ বুখারী, হাদীস ২২৮৮; আলইসতিযকার ৫/৫০৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/৭৬; আলমাজমু শরহুল মুহায্যাব ১৩/৭; কিফায়াতুল মুফতী ১০/২৫৩; মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী ৬/১/৪৪৭
আমার ও আমার ছোট ভাইয়ের যৌথ মালিকানাধীন একটি দোকান আছে। এর মূলধন আমরা অর্ধেক অর্ধেক দিয়েছিলাম। চুক্তি ছিল উভয়ে মিলে দোকান চালাব। এবং লভ্যাংশও সমান সমান হারে বণ্টন হবে। আর ব্যবসার মেয়াদ নির্ধারণ করেছিলাম দশ বছর। আমরা দুজন মিলেই দোকান চালাতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ছোট ভাই বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়ার কারণে দোকানে তেমন সময় দিতে পারে না। তাই আমাকেই দোকানে বেশি শ্রম ও সময় দিতে হয়। এজন্য আমি এখন যৌথ ব্যবসাটি বন্ধ করে দিতে চাচ্ছি।
জানার বিষয় হল-
১. ব্যবসার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই আমি ব্যবসাটি বন্ধ করে দিতে পারব কি না? এটা ব্যবসার সপ্তম বছর চলছে।
২. আমি দোকানে বেশি শ্রম দেওয়ার কারণে লভ্যাংশে ৫০% এর অতিরিক্ত কিছু দাবি করতে পারব কি না?
যৌথ মূলধনী মেয়াদী কারবারে ব্যবসার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই কোনো শরীক চাইলে প্রয়োজনে ব্যবসা নিষ্পত্তি করতে পারে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবসার অপর শরীক যেহেতু ব্যবসায় তেমন সহযোগিতা করছে না, তাই আপনি চাইলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেও তার সাথে ব্যবসাটি নিষ্পত্তি করে দিতে পারেন। তবে অপর শরীক অপেক্ষা ব্যবসায় বেশি শ্রম দেওয়ার কারণে চুক্তিকৃত লভ্যাংশের অতিরিক্ত দাবি করতে পারবেন না; বরং চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশের ৫০ পার্সেন্টই আপনি পাবেন। কেননা শরীকানা কারবারে কোনো শরীক যদি ব্যবসায় অতিরিক্ত শ্রম দেয় সেক্ষেত্রেও পূর্ব নির্ধারিত হার অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রাপ্য হয়। অবশ্য অপর শরীক যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশি কিছু দেয়, তবে সেটি ভিন্ন বিষয়।
শেয়ার লিংককিতাবুল আছল ৪/৫২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬১৩; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১০৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩২৭
আমার বাবা ছিলেন খুবই সৎ ও নেককার একজন মানুষ। তবে আর্থিকভাবে ছিলেন অসচ্ছল। বাবার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন অনেক জমিজমার মালিক। বাবা জীবনে তার অনেক উপকার করেছেন। এজন্য তিনি সবসময় বাবার প্রশংসা করতেন।
একবার এক ঘটনায় তিনি বাবার ওপর খুশি হয়ে বাবার সামনেই নিজের ছেলেদেরকে ডেকে বলেন, ‘আমি ওসিয়ত করছি, আমার মৃত্যুর পর আমার অমুক জমিটি তোমরা আমার এই বন্ধুকে দিয়ে দেবে।’ এর কয়েকদিন পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমার বাবা ইন্তেকাল করেন। আর বাবার সেই বন্ধু আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর প্রায় মাসখানেক পর তিনিও ইন্তেকাল করেন।
সম্প্রতি বাবার বন্ধুর সন্তানরা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বণ্টন করছেন। বিষয়টি জানতে পেরে আমার বড় ভাই তাদেরকে সেই ওসিয়তের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জমিটি আমাদেরকে দিয়ে দেওয়ার জন্য বললে তারা বলেন, ‘বাবা জমিটি আপনাদের জন্য ওসিয়ত করেননি, যার জন্য ওসিয়ত করেছেন তিনি তো এখন জীবিত নেই। অতএব, আপনারা তা নেওয়ার অধিকার রাখেন না।
জানার বিষয় হল, জমিটির প্রকৃত হকদার এখন কে? ওসিয়তকৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে আমরা কি জমিটির প্রকৃত হকদার নই?
প্রশ্নের বর্ণনা মতে আপনার বাবা যেহেতু ওসিয়তকারীর আগেই মারা গেছেন। তাই উক্ত ওসিয়তটি বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং এই ওসিয়তের ভিত্তিতে আপনারা কোনো কিছু দাবি করতে পারবেন না।
শেয়ার লিংকশরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/১৬১; আলহাবিল কুদসী ২/৪৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪১৭; আদ্দুররুর মুখতার ৬/৬৯৩
আমি একজন হাফেজে কুরআন। রাস্তায় হাঁটা-চলার সময় প্রায়ই আমি কুরআন কারীম তিলাওয়াত করি। তিলাওয়াতরত অবস্থায় অনেকেই সালাম দেয়। এ অবস্থায় আমার কী করণীয় তা জানা নেই; আমি কি তখন তিলাওয়াত বন্ধ করে সালামের জবাব দেব, নাকি জবাব না দিয়ে তিলাওয়াত চালিয়ে যাব? এ বিষয়ে হুজুরের কাছে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।
কুরআন তিলাওয়াতরত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া অনুচিত। কেননা এর দ্বারা তিলাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটে। তাই কোনো ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করছে তা বুঝতে পারলে তাকে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। যদি কেউ কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তিকে সালাম দিয়ে ফেলে তাহলে তিলাওয়াতকারীর জন্য সেই সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব নয়।
শেয়ার লিংকতাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৮২; ফাতহুল কাদীর ১/২১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫; রদ্দুল মুহতার ১/৬১৮
আমি জানি, শরীয়তে পুরুষের জন্য রুপার আংটি ব্যবহার করার অনুমতি আছে। আমি জানতে চাচ্ছি :
ক. পুরুষের জন্য সর্বোচ্চ কতটুকু পরিমাণ ওজনের রুপার আংটি বানানোর অনুমতি আছে? এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ আছে কি?
খ. রুপার আংটির ওপর কোনো ধরনের পাথর বসানো যাবে কি?
ক. পুরুষের জন্য রুপার আংটি ব্যবহার করা জায়েয আছে। আর তা এক মিস্কালের কম হতে হবে। বুরায়দা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
اتَّخِذْهُ مِنْ وَرِقٍ، وَلَا تُتِمَّهُ مِثْقَالًا.
এক ‘মিস্কাল’ ওযনের কম রুপা দিয়ে আংটি তৈরি করে তা ব্যবহার করো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২২৩)
এক মিস্কাল হল ৪.৩৭৪ গ্রাম। সুতরাং আংটি ব্যবহার করতে চাইলে ৪.৩৭৪ গ্রামের কম ওজনের রুপার আংটি ব্যবহার করতে হবে।
খ. হাঁ, রুপার আংটির ওপর পাথর বসানো জায়েয আছে। এতে অসুবিধা নেই। Ñবুস্তানুল আরিফীন, সমরকান্দী, পৃ. ৮১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬১; ইলাউস সুনান ১৭/৩২৫
শেয়ার লিংক