মুহাম্মাদ আনিছ বেদার - হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম
Question
আমি দাওরায়ে হাদীস জামাতে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাই এবং একটি ভালো ফলাফল করতে চাই। হুজুরের নিকট আমার বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে এমন কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে
সহায়তা করবেন, যার দ্বারা আমি উক্ত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারি। কিন্তু দাওরায়ে হাদীসে
আমার যেন পড়ালেখার কোনো ঘাটতি না হয়। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
Answer
পরীক্ষা একজন তালিবে ইলমের শিক্ষা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিভা বিকাশ, ইস্তিদাদ যাচাই ও নিজের মেহনতের ফল লাভের জন্য পরীক্ষা উত্তম মাধ্যম। যদিও চলমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে এই ফল পূর্ণাঙ্গভাবে লাভ করা যায় না।
তবু শিক্ষা জীবনের উন্নতিতে এর প্রভাব অনস্বীকার্য।
আমার মতে, পরীক্ষা এমন কোনো বিষয় নয়, যার জন্য আলাদা প্রস্ত্ততি ও স্বতন্ত্র পড়াশোনার দরকার; বরং স্বাভাবিক গতিতে একজন তালিবে ইলমের পুরো বছরের রুটিন মাফিক পড়াশোনা, নিয়মিত দরসে উপস্থিতি, তাকরার-মুযাকারা, নিরবচ্ছিন্ন মুতালাআ ইত্যাদি অন্যের কাছে উপস্থাপনের জন্য পরীক্ষা একটি মাধ্যমমাত্র।
এটা অনেকটা ফসল ক্ষেতের মতো। মৌসুমের শুরুতে যদি চাষী নিজের সবটুকু শ্রম ও আন্তরিকতা উজাড় করে দিয়ে ফসল ফলায়, মৌসুমজুড়ে পরিচর্যায় লেগে থাকে, সব ধরনের বিপর্যয় থেকে ক্ষেত রক্ষায় সচেষ্ট হয় তাহলে মৌসুম শেষে ফলে -ফসলে ভরা মাঠ দেখে তার মুখে হাসি ফুটবেই।
অতএব ভালো ফলাফল লাভের জন্য পূর্ণ নাশাত ও হিম্মতের সাথে মেহনত চালিয়ে যেতে হবে। পুরো বছর অবহেলা ও গাফলতের মধ্যে ডুবে থেকে কিংবা পরীক্ষার আগ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে প্রস্ত্ততিগ্রহণ করে ভালো ফলের আশা করা বোকামি বৈ আর কিছু নয়। উপরোক্ত কথাগুলো
সব পরীক্ষার ক্ষেত্রে সত্য। তবে আপনার মনে রাখা ভালো, যেহেতু দাওরায়ে হাদীসে
কুতুবে সিত্তাসহ প্রায় কিতাবে ফিকহুল হাদীস সংক্রান্ত আলোচনায় প্রত্যেক মুসান্নিফ নিজ মাযহাব, ইজতিহাদ এবং যওক-রুচি অনুযায়ী বিন্যাস করলেও মৌলিক বিষয়বস্ত্ত কিন্তু প্রায় এক ধরনের। তাই আমার পরামর্শ হল, যে কোনো একটি বিস্তৃত আরবী শরহ শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে মুতালাআ করে নিন। এছাড়া প্রয়োজনের সময় অন্যান্য শরহর শরণাপন্ন হোন। বিশেষত হানাফী মাযহাবের সঠিক
দলিলাদির জন্য হানাফী কোনো মুসান্নিফের শরহ অধ্যয়ন করা তো অত্যন্ত জরুরি।
মুতালাআর সময় বার বার করে হাদীস, শরহে হাদীস, ফিকহ ইত্যাদি বিষয়ে জরুরি কথাগুলি আলাদা আলাদা খাতায় নোট করুন। এরপর প্রত্যেক কিতাবের বিশেষ বৈশিষ্টমন্ডিত বাব ও বহস এবং প্রত্যেক মুসান্নিফের নিজস্ব আন্দাযের সাথে ভালোভাবে পরিচিত হোন। কুতুবে সিত্তার প্রত্যেকটির সাথে হাশিয়াতুস সিন্দীও নিয়মিত মুতালাআয় রাখতে পারেন।
একটি কথা বিশেষভাবে বলব, পুরো বছর এই চেষ্টা করুন, যাতে কোনো একটি হাদীসও আপনার শোনা ও কমপক্ষে অর্থ বুঝা থেকে বাদ না যায়। অন্যান্য ফায়েদা তো রয়েছেই, পরীক্ষাতেও এর একটি ভালো উপকার পাবেন বলে আশা করি।
স্পষ্টাক্ষরে সুন্দর লিখা ও উত্তরপত্র তৈরির অনুশীলন করা পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের অন্যতম শর্ত। ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই এর জন্য মেহনত শুরু করা দরকার।
বিগত বোর্ড পরীক্ষার কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে রুমে বসে উত্তর লিখার অনুশীলনও করে দেখতে পারেন। তবে সাবধান, এর জন্য সব বোর্ড-প্রশ্ন একত্র করা কিংবা‘মিফতাহুন নাজাহ’ জাতীয় কোনো প্রশ্নোত্তর নোটের পিছনে পড়ে নিজের মূল্যবান যিন্দেগী নিজ হাতে খুন করবেন না। কথাটা
এভাবে বললাম কারণ আমাদের তালিবে ইলম ভাইদের মাঝে এই রোগ দিন দিন ব্যাপকতা লাভ করছে।
মনে রাখা উচিত, এরকম নোটের সাহায্যে মাওলানা হয়ে সাময়িকভাবে পরীক্ষায় ভালো
ফলাফলও যদি লাভ করা যায় কিন্তু জীবনে তার পরিণতি অত্যন্ত খারাপ। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন। আমীন।