মুহাম্মাদ আশরাফ বিন আলতাফ - জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া
Question
‘আবু হানীফা ওয়া আসহাবুহুল মুহাদ্দিসুন’ নামে ইলাউস সুনানের একটি মুকাদ্দিমা রয়েছে। এটি ইদারাতুল কুরআন করাচি থেকে ছেপেছিল। ১৯৮৯ সালে বৈরুতের দারুল ফিকরিল আরাবিয়া থেকেও ছেপেছে। উভয় সংস্করণে এই মুকাদ্দিমাটিকে সূচির মাধ্যমে মিলিয়ে দেখলাম যে, সম্পূর্ণ এক ও অভিন্ন। আমরা জানতাম, কিতাবটি যফর আহমদ ওছমানী রাহ.-এর প্রণীত। যেমনটি জুমাদাল উখরা ২৮ হি. আলকাউসারেও বলা হয়েছে এবং করাচি সংস্করণেও তেমনি রয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি, দারুল ফিকর কর্তৃক প্রকাশিত নুসখায় মুসান্নিফ হচ্ছেন হাবীব আহমদ কিরানভী রাহ.। এর কারণ কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
Answer
আসলে ‘ইলাউস সুনান’-এর সর্বমোট তিনটি মুকাদ্দিমা রয়েছে, যা আলাদা আলাদা তিনটি কিতাবের মতো। প্রথমটি উসূলে হাদীস বিষয়ক মুকাদ্দিমা, যা পরে শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রা.-এর তাহকীক ও তালীকের মাধ্যমে ‘কাওয়াইদ ফী উলূমিল হাদীস’ নামেও প্রকাশিত হয়েছে। এটি লিখেছেন ইলাউস সুনানের মূল মুসান্নিফ মাওলানা যফর আহমদ ওছমানী রাহ. (১৩১০ হি.-১৩৯৪ হি.)।
দ্বিতীয়টি ফিকহ বিষয়ক মুকাদ্দিমা। এটিকে পরবর্তীতে ‘ফাওয়াইদ ফী উলূমিল ফিকহ’ নামেও নামকরণ করা হয়েছে। হযরত থানভী রাহ.-এর নির্দেশে এটি লিখেছেন মাওলানা হাবীব আহমদ কিরানভী রাহ.। মূলত হাদীস ও ফিকহ বিষয়ক এই উভয় মুকাদ্দিমার প্রথম নাম ছিল ‘ইনহাউস সাকান ইলা মান য়ুতালিউ ইলাআস সুনান’। তৃতীয় মুকাদ্দিমাটি ছিল ইমাম আবু হানীফা রাহ., ইলমে হাদীসে তাঁর মাকাম ও হানাফী মুহাদ্দিসীনের আলোচনা সম্বলিত। আগে এটির নাম ছিল‘ইনজাউল ওয়াতান আনিল ইযদিরাই বিইমামিয যামান’ পরবর্তীতে তা ‘আবু হানীফা ওয়া আসহাবুহুল মুহাদ্দিসুন’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এটিও লিখেছেন ইলাউস সুনানের মূল মুসান্নিফ মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ.।
সারকথা হল, ফিকহ বিষয়ক মুকাদ্দিমাটি ছাড়া অন্য দুটি মুকাদ্দিমার মুসান্নিফ মাওলানা উছমানী রাহ.। আর ফিকহ সংক্রান্ত ‘ফাওয়াইদ ফী উলুমিল ফিকহ’ নামক মুকাদ্দিমাটি লিখেছেন মাওলানা হাবীব আহমদ কিরানভী রাহ.।
উল্লেখিত তথ্যগুলি এতই প্রসিদ্ধ যে, তা নতুন করে বলার দরকার ছিল না। খোদ দারুল ফিকরসহ অন্যান্য সব সংস্করণের কিতাবুত তাহারাত-এর পূর্বে প্রথম খন্ডের শুরুতে ইলাউস সুনানের পরিচিতিমূলক যে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা রয়েছে, সেখানে সব কথাই বিস্তারিতভাবে রয়েছে। যা সর্বাগ্রে পড়ে নেওয়া জরুরি। সাথে সাথে ১৪ খন্ডের শুরুতে ‘দীবাজাতু তাতিম্মাতি কিতাবিল বুয়ূ’ নামক ভূমিকাটিও পড়ে নিন।
অতএব সন্দেহ নেই, প্রশ্নোক্ত বিষয়ে করাচির ইদারাতুল কুরআনের তথ্যই সঠিক। এর উল্টো দারুল ফিকরিল মুআসির-এর সংস্করণে ‘আবু হানীফা ওয়া আসহাবুহ’-এর প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় যা লিখা হয়েছে বলে আপনি লিখেছেন তা সম্পূর্ণ ভুল। সম্ভবত এই ভুলটি আরো সুস্পষ্ট হবে যখন আপনি দেখবেন যে, মুকাদ্দিমাটির শেষেও উছমানী রাহ.-এর নাম লেখা রয়েছে।
শেষ ইবারতটি হল-
كتبه بقلمه أسير وصمة ذنبه وألمه عبده ظفر أحمد وفقه الله للتزود لغد وغفر له ولوالديه وما ولد ولمشايخه وأصحابه وأحبابه أبدا لأبد وصلى الله تعالى على سيدنا محمد وآله وأصحابه أجمعين.
এতো গেল বৈরুতের দারুল ফিকরিল মুআসির এর মুদ্রিত সংস্করণের কথা, যার কথা আপনি বলেছেন। এই সংস্করণটি আমি এখনও সংগ্রহ করতে পারিনি। শুনেছি, শাবাকাতেও (ইন্টারনেট) একই ধরনের ভুল রয়েছে। তবে এখন আমার সামনে রয়েছে বৈরুতের আরেক মাকতাবা দারুল ফিকর-এর নুসখা, যা ১৪২১ হিজরীতে প্রকাশিত তাদের প্রথম সংস্করণ। এই সংস্করণে আরেক আশ্চর্য কান্ড ঘটানো হয়েছে। এটির মধ্যে তিনটি মুকাদ্দিমার প্রত্যেকটির প্রচ্ছদ পৃষ্ঠাতেই যফর আহমদ উছমানীর নাম লেখা। অথচ ফিকহ সংক্রান্ত মুকাদ্দিমাটির শুরুতে এই ইবারতটিও রয়েছে-
فيقول العبد الضعيف حبيب أحمد الكيرانوي هذه مقدمة
অথচ প্রচ্ছদে লিখে রেখেছে, যফর আহমদ উসমানী!!
প্রচ্ছদেই যখন এই হ-য-ব-র-ল অবস্থা তখন ভিতরের হালত কি হবে তা তো সহজেই অনুমেয়।
তুরাস নিয়ে এসব কর্মকান্ড তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন।
ইলাউস সুনানের এই জাতীয় আরো কয়েকটি সংস্করণ রয়েছে, তবে আমার জানা মতে তুলনামূলক ভালো সংস্করণ এখনও পর্যন্ত ইদারাতুল কুরআনেরটি। কেউ সংগ্রহ করতে চাইলে এই নুসখাটি সংগ্রহ করা উচিত।
তবে ইলাউস সুনান-এর যুযোপযোগী তাখরীজ, তাহকীক ও তানকীহ-এর মাধ্যমে করার মতো কাজ অনেক রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কাউকে আমানতদারির সাথে একটি মুতকান ও মুহাক্কাক খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।