Jumadal Ula 1443 || December 2021

মুআয হাসান - হবিগঞ্জ

Question

কয়েকটি বিষয়ে হযরাতুল উসতায থেকে ইসতেফাদা করার বিনীত আবেদন পেশ করছি।

১. তাকলীদ ও মাযহাবের হাকীকত ও ইতিহাস নিয়ে সুন্দর ও নির্ভরযাগ্যে আলোচনা কোথা থেকে মুতালাআ করতে পারি?

২. তাকলীদের ভাগ করতে গিয়ে যে দুই প্রকারের কথা বলা হয়, সে ভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত দালীলিক সুস্পষ্ট কিতাব (বা লেখা ও মাকালা) কোথায় পেতে পারি?

৩. আমরা কোন্ প্রকারের তাকলীদ করি?

আমি আমার এক উস্তাযে মুহতারাম থেকে কেবল এতটুকু শুনেছিলাম, আমরা শখছে (অর্থাৎ, আশখাছে) মাযহাবের তাকলীদ করি। শখছে ওয়াহেদের নয়। তো এ সম্পর্কে যদি হুজুর (দলীলসহ বা দলীলের আলোকে) কিছু হেদায়েত পেশ করতেন!

৪. শেষে আমি যে বিষয়টি বারবারই অনেকের মুখ থেকে শুনেছি, তা হল-

সাহাবার যুগে নাকি তাকলীদে শখছী ছিল না(?); বরং তাকলীদে মুতলাক ছিল। কিন্তু আমার যেটা জানা আছে তা হল, সাহাবা ও তাবেঈদের যুগে আমভাবে তাকলীদে মুতলাকের নযীরপাওয়া যায় না। বরং তারাও তাকলীদে শখছী-ই করতেন। বাকি তখনকার তাকলীদটা মাযহাবের শিরোনামে হত না। তাঁরা মাদরাসাতুল ফিকহ ফীল ইরাক (বা কুফা বা বসরা ইত্যাদি)র তাকলীদ করতেন, যেমন কুফায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর তাকলীদ করতেন। আর আমরা আশখাছে মাযহাবের তাকলীদ করে থাকি।

তো এটা যদি পরিপূর্ণ সঠিক হয় তাহলে এর প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারলে কথাটির উপর পূর্ণ ইতমিনান ও আরো বেশি আত্মিক প্রশান্তি অর্জন হত। জাযাকুমুল্লাহু খায়রান।

Answer

১. এ বিষয়ে এক-দেড় বছর আগে মাওলানা ইমদাদুল হক কুমিল্লায়ীর কিতাব প্রকাশিত হয়েছে। ভালো কিতাব। নাম মাযহাব ও তাকলীদ : একটি সহজ-সরল উপস্থাপন। প্রকাশক : দারুল মুসান্নিফীন, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।

২. এই দুই প্রকারের হাকীকত যদি স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলে আর কী চান?

৩. আমরা তাকলীদে শখছী করি। এই অর্থে যে, আমরা একটি নির্দিষ্ট ফিকহী মাযহাবের তাকলীদ করি, যার নাম আলমাযহাবুল হানাফী। তবে হানাফী মাযহাব শুধু ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর ফতোয়া ও রায়ের সমষ্টি নয়; বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য ওই ফিকহী মাযহাব, যেটা ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর তত্ত্বাবধানে সংকলিত হয়েছে। এতে নবী-যুগ, সাহাবী-যুগ ও কিবারে তাবেয়ীনের যুগ থেকে চলে আসা ফিকহে মুতাওয়ারাসও অন্তভুর্ক্ত। আবার ইমাম আবু হানীফা রাহ., তাঁর ফকীহ শাগরিদগণ ও এই মাযহাবের অনুসারী বড় ফকীহগণের ইসতিম্বাতকৃত ফিকহুল হাওয়াদিস ওয়ান নাওয়াযিলও অন্তভুর্ক্ত।

আর এই কথা তো সর্বজনস্বীকৃত যে, কোনো আলেমের যাল্লাত (অর্থাৎ যেসব ভুল তার থেকে অনিচ্ছাকৃত হয়েছে, তবে সেগুলো ভুল হওয়াটা নিশ্চিত) কখনো মাযহাবের অংশ নয়।

৪. এটা ঠিক যে, খায়রুল কুরূনে তাকলীদে শখছীরই প্রচলন ছিল। এর দলীল আপনি ওই ঘটনাতেই পাবেন, যেটা খলীফা মানসুর আব্বাসী ও ইমাম মালেক রাহ.-এর মধ্যে ঘটেছিল। এ সংক্রান্ত রেওয়ায়েত আপনি হয়ত শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামার আদাবুল ইখতিলাফ ফী মাসাইলিল ইলমি ওয়াদ্দীনকিতাবে পড়ে থাকবেন। আরো দেখুন ইমাম মুহাম্মাদের কিতাবুল আছলে ওয়াফক অধ্যায়ের সেই শানদার আলোচনা, যেটা এই কিতাবের খ. ১২ পৃ. ৯৯-১০২ -এ আছে। এতে ফিকহে হানাফীর তাকলীদে শখছীর আলোচনা আছে।

অবশ্য এই কথা ঠিক যে, ‘তাকলীদে শখছীবা মাদরাসায়ে হেজাযের তাকলীদ’ ‘মাদরাসায়ে ইরাকের তাকলীদএজাতীয় পরিভাষা তখন ছিল না। তবে এর হাকীকত পুরোপুরি বিদ্যমান ছিল।

মাযহাবের অনুসারীদের কেউই কেবল ব্যক্তি ইমামের তাকলীদ করেন না। এই বিষয়টি সমস্ত মাযহাবের রসমুল মুফতী ও উসূলুল ইফতার কিতাবাদি মুতালাআ করলে জানা যায়।

Read more advices provided in this issue