শামিম বিন হায়দার আলী - বরিশাল
Question
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
হযরত, আমি কিছুদিন আগে একটি বই হাতে পাই। বইটির নাম ‘শরীয়তের মানদ-ে ওলীগণের হালত’।
প্রকাশনায় : দারুত তাহকীক, জামেয়া ইসলামিয়া রশিদিয়া হোসাইনাবাদ, (ধুমঘাট) শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।
লেখকের নামের সঙ্গে লেখা আছে : মুতাখাসসিস ফিল হাদীস, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া বাংলাদেশ।
বইটির উপরে লেখা আছে, ‘তাসাওউফ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ষোলটি প্রশ্নের শরয়ী সমাধান।’ আমি খুব কৌতুহলী হয়ে বইটি পড়া শুরু করি। কিন্তু পড়ার পর আমি খুবই মর্মাহত হই। কারণ, এতে বহু আপত্তিকর কথাবার্তা আমার নযরে পড়ে। আমি আশ্চর্য হই, এতে তাসাওউফের মৌলিক কোনো বিষয় অর্থাৎ তাযকিয়া ও ইসলাহে আখলাক সম্পর্কে তেমন কোনো আলোচনা নেই। বরং এতে কিছু প্রশ্নের আজগুবি জবাব দেয়া হয়েছে। এসব দেখে আমার মনে সংশয় জাগে, আসলে কি এ বইটি মারকাযুদ দাওয়াহর কোনো মুতাখাসসিস-এর লেখা?! বইটি সম্পর্কে কি আপনারা অবহিত? বইটির একটি কপি আপনার কাছে পাঠালাম। আশা করি বইটি দেখে এর সম্পর্কে ও এর লেখক সম্পর্কে আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। যাতে বইটি পড়ে কারো মধ্যে ভুল ধারণা বা ভুল আকীদা সৃষ্টি না হয়। আল্লাহ সবাইকে হেফাযত করুন।
Answer
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। বইটি ইতিপূর্বে দেখার সুযোগ হয়নি। এই প্রথম দেখছি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! আসলেই বইটি খুবই বিভ্রান্তিকর। এতে শুধু বিদআতীদের জন্যই নয়; বরং কাদিয়ানীদের জন্যও নিজ নিজ বাতিল মতবাদের তরফদারির বিভিন্ন উপাদান জমা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর বিষয় রয়েছে, যেমন :
তাহরীফ অর্থাৎ এক জায়গার কথা অন্য জায়গায় ব্যবহার করা, ‘কথা সত্য মতলব খারাপ’-এর বিভিন্ন নমুনা, শায ও মুনকার কথাবার্তা এবং পূর্ববর্তী কতক আলেমের বর্জনীয় যাল্লাত ও তাসামূহাতের অনুসরণ। আল্লাহ তাআলা বইটির লেখককে খালেস অন্তরে তওবা করার তাওফীক দান করুন এবং এসব কিছু থেকে নিজের বারাআত ও সম্পর্কহীনতা ঘোষণার তাওফীক দান করুন- আমীন।
‘মুতাখাসসিস’ শব্দটি থেকেই আপনি অনুমান করতে পারেন, মারকাযুদ দাওয়াহ-এর সাথে লেখক বেচারার সম্পর্ক কোন্ প্রকারের। মারকাযুদ দাওয়াহ্য় কেউ দাখেল হলে চেষ্টা করা হয়, সে যেন কমপক্ষে ইলমের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুধাবনের চেষ্টা করে। এবং এর মধ্য দিয়ে নিজের ক্ষুদ্রতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে। সে যেন কোনো শব্দ বা উপাধি অনুচিত স্থানে ব্যবহার না করে। এবং অতি ব্যবহৃত শব্দ ও উপাধিসমূহের নির্বিচার ব্যবহারের মাধ্যমে সেগুলোকে আরো বেশি গতানুগতিক ও গুরুত্বহীন বানানো থেকে বিরত থাকে।
পুরাতন কাগজপত্রে তার পরীক্ষার ফলাফল দেখা হয়েছে। সে সময় উলূমিল হাদীস বিভাগের লাযেমী নেসাব ছিল দু’বছরের। প্রথম বর্ষের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলে শুধু ‘আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শারীফ’ কিতাবের নাম্বার পাওয়া গেল। এটি একটি প্রাথমিক কিতাব, এতে তার প্রাপ্ত নাম্বার মাত্র ৪৯ (মোট নাম্বার ১০০), বাকি বিষয়গুলোতে তার কোনো নাম্বার নেই। নোটে লেখা আছে, অসুস্থ।
দ্বিতীয় ফাতরার (সেমিস্টারের) পরীক্ষার ফলাফলের অবস্থা হল, ‘মুকাদ্দিমাতু ইবনিস সালাহ’ কিতাবের পরীক্ষায় ‘রাসিব’ (ফেল)। তৃতীয় ফাতরার (সেমিস্টারের) পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণই করেনি। নোটে লেখা আছে, সে অসুস্থ। আর দ্বিতীয় বর্ষের কোনো ফাতরার (সেমিস্টারের) পরীক্ষায়ই তার নাম উল্লেখ নেই!! প্রথম ফাতরার পর থেকে মারকাযে অবস্থানের সুযোগ পাওয়া মূলত তার ওজর ও অনুরোধের বিবেচনায় হয়েছিল। কিন্তু এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তো যেখানে বিভাগের সাধারণ কারিকুলাম পূর্ণ করার কাছে ধারেও যে পৌঁছাতে পারেনি সে তাখাসসুসের দাবি করে কীভাবে? তাখাসসুস তো কারিকুলাম পুরা করার চেয়েও অনেক দীর্ঘ ও গভীর বিষয়। আর এখানে তো দাবি শুধু ‘তাখাসসুসের’ নয়; বরং ‘মুতাখাসসিস’ শব্দের নিঃসঙ্কোচ ব্যবহার।
উলূমুল হাদীস বিভাগের যিম্মাদারি এই অধমকে সোপর্দ করা হয়েছে। সম্ভবত এই দুঃখজনক অবস্থা আমারই আমলের মন্দ পরিণতি। আল্লাহ তাআলা এই অধমকে মাফ করুন এবং তার অনিষ্ট থেকে সকল ব্যক্তিকে ও সকল বস্তুকে হেফাযত করুন- আমীন।
উক্ত বইটিতে উদ্ভট ও আপত্তিকর কথাবার্তা এবং তাহরীফ ও বিকৃতির তো কোনো শেষ নেই। তবে বইটির ১০৫ নং পৃষ্ঠায় এই জঘন্য কুফুরী কথারও উল্লেখ রয়েছে যে, বান্দা কখনো নাকি এমন হালতে পৌঁছে যায়, যখন সে শরয়ী বিধি-বিধানের ঊর্ধ্বে উঠে যায়। নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক।
বইটির ৬নং পৃষ্ঠায় এক বুযুর্গের ‘তাকরীয’ও ছাপা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক। তবে স্পষ্ট যে, ঐ বুযুর্গের সরলতার সুযোগ নিয়েই হয়তো তার থেকে তাকরীয নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এই বইয়ের অনিষ্ট থেকে মানুষকে হেফাযত করুন। বইয়ের লেখককে তাওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন। যে ব্যক্তির তরফদারির জন্য এই বেচারা নিজের দু চার হরফ লাফযী ইলমকে বরবাদ করেছে সেই ব্যক্তি যদি এই বইয়ের কথাবার্তার সাথে একমত হন তবে শুধু এটাই তারও গোমরাহ হওয়ার দলীল। আল্লাহ তাআলা তাকেও হেদায়েত নসীব করুন- আমীন।