শিব্বির আহমদ - মোমেনশাহী
Question
মুহতারাম, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন এবং আপনার থেকে আমাদেরকে আরও বেশি উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
কয়েকটি বিষয়ের সমাধান বুঝে আসছে না, আশা করি জানিয়ে উপকৃত করবেন।
ক. সূরা জিন্ন দ্বারা বুঝা যায়, জিনেরা আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান এনেছে তারপরও নাকি জিনদের জান্নাতে যাওয়া নিয়ে ইমামদের মাঝে মতভেদ আছে। বিষয়টি মতভেদসহ বিস্তারিত জানতে চাই।
খ. কুরআন শরীফে অনেক জমার সীগা আলিফ ছাড়া কেন? যেমন- ১ নং পারার ৮ পৃষ্ঠায় بَاءُوْ শব্দটি ও ২ নং পারার ১৫ নং পৃষ্ঠায় فَاءُوْ শব্দটি।
আবার অনেক শব্দ অহেদের সীগা কিন্তু আলিফসহ কেন? যেমন : সূরা বায়িন্যাহ يَتْلُوْا শব্দটি।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
Answer
ক. জিন্ন জাতি শরীয়তের মুকাল্লাফ অর্থাৎ ঈমান আনা ও শরীয়ত মান্য করা তাদের উপরও ফরয- এ বিষয়ে কারো কোনো ইখতেলাফ নেই। এমনিভাবে জিন্নদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে না এবং যারা আল্লাহর নাফরমানী করবে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে এ বিষয়েও কোনো ইখতিলাফ নেই। কুরআনে কারীমের সুস্পষ্ট আয়াত ও সহীহ হাদীস দ্বারা এসব কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল জিনদের মধ্যে যারা মুমিন ও নেককার তাদেরকে আখেরাতে কী প্রতিদান দেয়া হবে। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হল, নেককার জিনরা মানুষের মতই জান্নাত লাভ করবে। জুমহুর ও অধিকাংশ আহলে ইলম থেকে এ কথাই বর্ণিত হয়েছে। তবে পূর্ববর্তী কোনো কোনো আহলে ইলম থেকে একথাও বর্ণিত হয়েছে যে, মুমিন ও নেককার জিনদের প্রতিদান হল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ এবং আখেরাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ। কিন্তু জান্নাতের যেসব নায-নিআমতের প্রতিশ্রম্নতি মানুষকে দেয়া হয়েছে তাতে জিনেরা শামিল হবে না, বরং তাদেরকে অন্যান্য প্রাণীর মত মাটি বানিয়ে দেয়া হবে।
শেষোক্ত এই মতটি যাদের দিকে সম্বন্ধ করা হয়, যেমন, ইমাম আবূ হানীফা রাহ.-এর প্রতি; তাদের প্রতি এ কথার সম্বন্ধ সন্দেহযুক্ত। কারণ তাদের পর্যন্ত এ কথার সহীহ কোনো সনদ আমাদের জানা নেই। অধিকন্তু এ মতটির পক্ষে শক্তিশালী কোনো দলীলও নেই। সুতরাং প্রথমোক্ত জুমহুরের মতটিই সহীহ ও অগ্রগণ্য। কেননা এ সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহর নুসূসের জাহির ও ব্যাপকতা থেকে প্রথমোক্ত কথাই প্রতীয়মান হয় এবং এর খেলাফ কোনো শক্তিশালী দলীল বিদ্যমান নেই।
দ্রষ্টব্য : তাফসীরু ইবনু কাছীর, তাফছীরু কাশশাফ, তাফসীরু আবিস সাউদ (সূরা আহকাফের ৩১ নং আয়াতের তাফসীর), তাফসীরে মাযহারী, (সূরা জিনের তাফসীর), কিতাবুন নুবুওয়াহ, ইবনু তাইমিয়া পৃ. ৩/১২৩৬
খ. দেখুন, আরবী লেখার সাধারণ رسم الخط বা লিখন পদ্ধতি এবং কুরআনে কারীমের ‘রসমুল খতে’র মাঝে পার্থক্য রয়েছে।
বিভিন্ন মাসলেহাত ও কারণে কুরআনে কারীমের ‘রসমুল খত’ "المصحف الإمام" তথা হযরত উছমান রা. কর্তৃক সংকলিত মুসহাফের মত রাখা জরুরি। এর উপরই সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর কর্মধারা বিদ্যমান রয়েছে। তাই একে অপরিবর্তিত রাখাই সর্বস্বীকৃত বিষয়।