আব্দুল্লাহ আল মামুন বিন আব্দুল বারী - আশরাফুল উলূম, সুতারপুর, নেত্রকোণা
Question
হুযুর! আল্লাহ তাআলা আপনাকে সিহহাত-আফিয়াতের সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন। আমীন। হুযুরের কাছে কয়েকটি বিষয় জানতে চাই।
(ক) মাকতাবাতুল আযহার কর্তৃক প্রকাশিত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাযযাক কাসেমী দা.বা. (উসতায, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া কাসিমুল উলূম জামে মসজিদ, আমরুহা, ইউপি, ভারত) কর্তৃক তালীককৃত ‘তালীমুল মুতাআল্লিম’ কিতাবের ৪৩ নাম্বার পৃষ্ঠায় ইমাম বুরহানুদ্দীন যারনুজী রাহ. বলেন-
وكان يحكى أن محمد بن إسماعيل البخاري رحمه الله تعالى كان بدأ بكتاب الصلاة على محمد بن الحسن رحمه الله تعالى إلخ
এখানে আমার জানার বিষয় হলো, এই মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান কে? তার জীবনী কোথায় পাব? তিনি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান শাইবানী নাকি অন্য কেউ? তালীমুল মুতাআল্লিম কিতাবের সবচেয়ে উত্তম নুসখা কোনটি?
(খ) এই কিতাবের ১৯ নাম্বার পৃষ্ঠায় আছে-
وقد صنف الشيخ الإمام الأجل الشهيد ناصر الدين أبو القاسم رحمه الله تعالى كتابا في الأخلاق إلخ
এই الأخلاق কিতাবটি কোথায় পাওয়া যাবে? এটি প্রকাশিত কি না।
২৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় আছে-
وينبغي لطالب العلم أن يحصل كتاب "الوصية" إلخ
এ ‘কিতাবুল ওসিয়্যা’টি মূল মতনসহ (হিন্দুস্থানের) কোন্ মাকতাবা থেকে প্রকাশিত জানতে চাই। আমার ইলমী-আমলী তারাক্কীর জন্য হুযুরের কাছে দুআর দরখাস্ত। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
Answer
(ক) মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান নামে ইমাম বুখারী রাহ.-এর প্রসিদ্ধ কোনো উস্তাযের কথা আমার জানা নেই। খুব সম্ভব‘তালীমুল মুতাআল্লিম’ কিতাবের উপরোক্ত ইবারতে ‘মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান’ নামটি নুসখার ভুল; আসলে হবে আহমদ ইবনু হাফ্স। অথবা ‘মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান’ নামের আগে ‘আহমদ ইবনু হাফস’ এই নামটি ছিল। কেননা ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুুল হাসান রাহ.-এর প্রসিদ্ধ শাগরিদ হলেন আবূ হাফ্স কাবীর আহমদ ইবনু হাফ্স আল বুখারী রাহ. (মৃত্যু : ২১৭ হি.),যিনি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আলবুখারী রাহ.-এর খাস উস্তায এবং তাঁর বাবা ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীমের বন্ধু। ইমাম বুখারী রাহ. কিশোর বয়সে তাঁর কাছে ‘জামে সুফিয়ান ছাওরী’-এর পাঠ গ্রহণ করেছেন। আর আবূ হাফ্স কাবীরের পুত্র মুহাম্মাদ ইবনু আহমদ ইবনু হাফ্স (মৃত্যু: ২৬৪হি.) ছিলেন ইমাম বুখারী রাহ.-এর সহপাঠী। দ্রষ্টব্য : তারীখে বাগদাদ ২/১১; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১০/১৫৭ (আহমদ ইবনু হাফসের জীবনী), ১২/৪২৫, ৪৪৭ (ইমাম বুখারীর জীবনী);আল-ফাওয়ায়েদুল বাহিয়্যহ; ইবনু মাজাহ আওর ইলমে হাদীস, মাওলান মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ., পৃ. ১০৮-১০৯, ১৮৫-১৮৬
(খ) আবূল কাসিম নাসিরুদ্দীন রাহ.-এর পূর্ণ নাম মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ। তিনি সমরকন্দের অধিবাসী, হানাফী ফকীহ ও মুহাদ্দিস। ৫৫৬ হিজরী সনে তিনি ইন্তেকাল করেন। ‘রিয়াযুল আখলাক’ বা ‘রিযাযাতুল আখলাক’ নামে তাঁর একটি কিতাবের কথা তাঁর জীবনীতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কিতাবটি মুদ্রিত বা পাণ্ডুলিপি আকারে কোথাও আছে কি না তা আমার জানা নেই। মুসান্নিফের জীবনী সম্পর্কে দ্রষ্টব্য : হাদিয়্যাতুল আরিফীন ১/৪৯৩; আল-আ‘লাম, যিরিকলী ৭/১৪৯
(গ) ইমাম আবূ হানীফা রাহ.-এর ‘ওসীয়ত’ নামে একাধিক রিসালা তাঁর প্রতি সম্বন্ধ করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা রাহ. পর্যন্ত সেসব ওসিয়্যাতের সবগুলোর সহীহ সনদ জানা যায় না। সেসব ওসিয়্যাতনামার মধ্যে একটি হল ইউসুফ ইবনু খালিদ আস- সামতির উদ্দেশ্যে ইমাম আবূ হানীফা রাহ.-এর ওসিয়্যাত ও উপদেশ।
এই ওসিয়্যাতটির পাঠ সনদসহ মুয়াফফাক ইবনু আহমদ আলমাক্কী (মৃত্যু ৫৬৮ হি.) তাঁর কিতাব ‘মানাকিবুল ইমাম আজম’-এ (২/১০৭, ২৫ তম অধ্যায়ে) উল্লেখ করেছেন। এটি ইবনুল বাযযাযী আল-কারদারী (মৃত্যু ৮২৭ হি.) তাঁর কিতাব ‘মানকিবুল ইমাম আজম’-এও উল্লেখ করেছেন। বাযযাযীর এই কিতাবটি মূলত মুয়াফফাক আলমাক্কীর কিতাবের তালখীস ও সারসংক্ষেপ।
ওসিয়্যাতটির শুরুতে একটি দীর্ঘ ঘটনা ও কাহীনিরও উল্লেখ রয়েছে, যাতে বেশ কিছু মুনকার ও অপত্তিকর কথাবার্তাও রয়েছে। আর এর সনদটিতে রয়েছে একজন ‘মাজহুল’ রাবী। সুতরাং এই ওসিয়্যাতটি ইমাম আবূ হানীফা রাহ. থেকে প্রমাণিত- এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
যাহোক, এ ওসিয়্যাতটি এবং ইমাম আবূ হানীফা রাহ.-এর প্রতি সম্বন্ধকৃত ভিন্ন আরো চারটি ওসিয়্যাত একত্রে মাওলানা মুহাম্মাদ আশেক ইলাহী বুলন্দশহরী রাহ.-এর তারতীব ও তরজমাসহ হিন্দুস্তানের মাকতাবাতুন নূর থেকে ‘ওয়াসায়া ইমাম আজম’ নামে ছেপেছে।