নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা
Question
মুহতারাম, আল্লাহ তাআলা আপনার বরকতময় ছায়াকে দীর্ঘায়িত করুন। কয়েকটি বিষয় অনেক চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারিনি।
(ক) মানুষ মাত্রই ভুলের শিকার হয়। তাই যাঁর কাছে ছবক পড়েছি তিনি যদি কখনো তাকরীরে বা ইবারতে ভুল করেন সেক্ষেত্রে কী করণীয়?
(খ) ইমাম আবু হানিফা রাহ. আল্লাহকে স্বপ্নে দেখেছেন বলে শোনা যায়। কথাটা কতটুকু দলীল সম্বলিত? আর দুনিয়াতে কি কোনো মানুষ আল্লাহকে দেখার যোগ্যতা রাখে
(গ) শরহে বেকায়ার মুকাদ্দামাতে (যা মুসান্নিফ লিখেছেন) আছে
فكتبت في هذا الشرح العبارة التي تقرر عليها المتن لتغير النسخ
জানার বিষয় হল لتغير শব্দটি কি এখানে তাফা‘উল-এর মাছদার নাকি তাফয়ীলের মাজহুলের ছীগা। বিভিন্ন জন থেকে বিভিন্ন রকম শুনেছি। অতএব অর্থগত দিক থেকে এবং মুসান্নিফের উদ্দেশ্য প্রকাশে কোনটি সঠিক?
আশা করি নতুন বছর শুরু হওয়ার আগেই বিষয়গুলোর সমাধান দিবেন।
Answer
(ক) দরস গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হল, দরসের কোনো বিষয়ে উস্তাযের কোনো ভুল হয়ে গেলে (যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়) আর তালিবে ইলমের এ সম্পর্কে অবগতি থাকলে দরস বা আম মজমায় তা প্রকাশ করবে না; বরং নির্জনে গিয়ে যথাযথ আদব ও বিনয়ের সাথে উস্তাযের নিকট পেশ করবে। ইস্তেফহাম ও পরামর্শ প্রার্থনার পদ্ধতিতে তাঁকে অবহিত করবে। আরেকটি আদব হল,ইস্তেফহাম পেশ করার আগে অনুমতি গ্রহণ করা এবং ইস্তেফহামের ক্ষেত্রে কখনো তর্কের ভাব প্রকাশ না পাওয়া। কেননা এটা মারাত্মক বেআদবী। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আলকাউসার ফেব্রুয়ারি’১৪ সংখ্যায় শিক্ষার্থীর পাতার ‘ইলমের সাথে ইলমের আদব শেখাও অপরিহার্য’ শিরোনামের লেখাটি পড়তে পারেন।
(খ) এধরনের কথা কোনো কোনো কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা রাহ. থেকে এ কথা সহীহ সনদে প্রমাণতি কি না তা আমার জানা নেই। যদি সহীহ সনদে প্রমাণতি থাকে তবে তো সেটি খাব ও স্বপ্নমাত্র। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে কোনো কিছু দর্শন করা আর জাগ্রত অবস্থায় বাস্তবে কিছু দর্শন করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কারণ স্বপ্নে মানুষ যা দেখে, শুনে কিংবা অনুভব করে তা মূলত সে পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা করে না। হাদীসের ভাষায় যে স্বপ্নগুলো الرؤيا الصالحة ও الرؤيا الصادقة(ভালো ও সত্য স্বপ্ন) সেগুলোতেও দৃষ্ট ও শ্রুত বিষয়াবলী সাধারণত স্থুল হাকীকত ও প্রকৃত বিষয় হয় না; বরং উদ্দীষ্ট বিষয়ের সূ² কোনো মিছাল ও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে, এ কারণে ভালো স্বপ্নও তা‘বীর ও তা‘বীল সাপেক্ষ।
এছাড়া আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম ছাড়া অন্যদের কোনো স্বপ্ন তো শরীয়ত ও আকলের দৃষ্টিতে হুজ্জত নয় একথা সর্বজন স্বীকৃত।
সুতরাং কেউ স্বপ্নে আল্লাহ তাআলার দর্শন লাভ করে থাকলে সেটি যে প্রকৃত দর্শন নয় এবং চর্মচক্ষু দ্বারা দর্শন নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের দর্শন মূলত উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত স্বরূপ কোনো ভালো গুণ বা অবস্থার দর্শন। স্বপ্নদ্রষ্টার অবস্থাভেদে সেই উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের বিভিন্নতা হতে পারে। অন্যথায় কুরআনুল কারীমের অকাট্য ঘোষণা হল,
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
(তরজমা) কোনও জিনিস নয় তার অনুরূপ। তিনিই সব কথা শোনেন ও সবকিছু দেখেন। -সূরা শূরা, আয়াত ১১
আর পরীক্ষার ইহজগতে কেউ আল্লাহ তায়ালাকে দেখবে না- একথা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ
এবং হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
تعلموا أنه لن يرى أحد منكم ربه عز وجل حتى يموت
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৩০) তবে আল্লাহর মুমিন ও নেক বান্দাগণ আখেরাতে জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার লাভে ধন্য হবে- সে কথা কুরআন-হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণীত।
(اللهم اجعلنا منهم وأسعدنا به)
বাকী থাকল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের রজনীতে আল্লাহর দিদার লাভের ঘটনা। তো সেটা এই জড় জগতে ঘটেনি, বরং উর্ধ্ব জগতে ঘটেছে। এছাড়া এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একক বৈশিষ্ট্য। এ ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যাও রয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য, শরহে হাদীসের কিতাব দেখা যেতে পারে।
স্বপ্নে আল্লাহ তাআলার দর্শন লাভের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু সিদ্দিক আল গুমারী রাহ. (মৃত্যু ১৪১২ হি.) যথার্থই বলেছেন-
"يستدل بعض غلاة أهل السنة بحديث رؤيا الله في المنام على إمكان رؤيته تعالى في اليقظة، وهو خطأ، لأن الله لا يرى في المنام حقيقة، وإنما المرئي مثال يتعرف الله به إلى عبده ويريه ما يريد أن يبينه له من بشارة أو انذار، والمثال غير المثل." انتهى من كتاب "مدى حجية الرؤيا عند الأصوليين" للدكتور علي جمعة ص৫৪ نقلا عن كتاب الرؤيا في القرآن والسنة للشيخ عبد الله الغماري ص৬৭.
এ বিষয়ে আরো জানার জন্য দেখা যেতে পারে- আরিযাতুল আহওয়াযী-শরহু সুনানিত তিরমিযী,ইবনুল আরাবী ১২/১১০-১১১; মিরকাত শরহুল মিশকাত, ২/২০৯; মজমূউল ফাতাওয়া, শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া ৫/২৫১-২৫৫, ৩/৩৮৯-৩৯২; আত তাকাশশুফ, হযরত থানবী পৃ ২৮৭;বাওয়াদিরুন নাওয়াদির, হযরত থানবী ৪১১-৪১৬
তা‘তীরুল আনাম ফি তাফসীরলি মানাম, আব্দুল গণী নাবলূসী
(গ) প্রশ্নোক্ত শব্দটি বাবে তাফয়ীল থেকে মাজহুলের সীগাহ হওয়াই মুনাসিব বলে মনে হয়। কারণ,এখানে উদ্দেশ্য হল মতনের লেখক মাহমূদ ইবনু সদরুশ শরীয়াহ কর্তৃক সর্বশেষ সম্পাদিত ও সংশোধিত নুসখা অনুসারে যেন অন্যরা তাদের পূর্ববর্তী নুসখাগুলোকে সংশোধন করে নেয়- একথা ব্যক্ত করা। আর এই উদ্দেশ্যটি এখানে ফেয়েলের সীগাহ থেকেই সাবলীলভাবে বুঝে আসে। কিতাবে فكتبت শব্দের উপরে যে হাশিয়াটি রয়েছে তা মনোযোগ দিয়ে পড়লেও বিষয়টি বুঝতে পাড়বেন বলে আশা করি।