Shawal 1436 || August 2015

নাদিম মাহমুদ - শরীয়তপুর

Question

হুযুর, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক পূর্ণ আদবের সহিত জানাচ্ছি যে, ইনশাআল্লাহ আমি এই রমযানের পর শরহে বেকায়া জামাতে উন্নীত হতে যাচ্ছি। এযাবৎ যত কিতাবাদি পড়েছি শত কষ্ট করে হলেও নিজে ক্রয় করেই পড়েছি। শরহে বেকায়া জামাতের কিতাব ও তার সংশ্লিষ্ট শরাহগুলোও আমি ব্যক্তিগত কিতাব দিয়েই পড়তে ইচ্ছুক। অথচ আমার আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল যে, এতগুলো কিতাব ক্রয় করা আমার পক্ষে অসম্ভব। এ নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় আছি। উপরন্তু পড়া-লেখার প্রতি আমার অধীর আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু যখনই আর্থিক অবস্থার দিকে তাকাই আমার সব আগ্রহ অনাগ্রহে পরিণত হয়। পড়া-লেখা থেকে মন উঠে যায়। মাঝে মাঝে ভাবনাও আসে যে, এত কষ্ট করে পড়া-লেখা করে লাভ কী? হেলায়-খেলায় জীবন কাটিয়ে দিলেও তো অনেক ভালো। এরকম আরো অনেক ভাবনাই জেগে বসে মনে। আর আমার সবচে বড় সমস্যা হল- আমার কোনো তালীমী মুরুব্বী নেই। যাকে সব কিছু খুলে বলব। যার থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাবো। হুযুরের কাছে জানতে চাই তালীমী মুরুব্বী প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উস্তায হওয়া জরুরি কি না? যদি জরুরি হয় তাহলে আমি কেমন উস্তাযকে তালীমী মুরুব্বী হিসেবে নির্ধারণ করব? আর যদি জরুরি না হয় তাহলে বলি- গত বৎসর থেকে আমি একজন বিজ্ঞ আলেমকে তালীমী মুরুব্বী হিসেবে পছন্দ করে আসছি। এস্তেখারা করেও তার প্রতি ইঙ্গিত পেয়েছি। তবে কেন যেন তাকে বলার সাহস পাচ্ছি না। এখন আমার দিকনির্দেশনাহীন ভয়ঙ্কর জীবনটা যেন উদ্দেশ্যহীন পথের যাত্রী। আমি পত্রোক্ত সবগুলো বিষয় নিয়ে খুব পেরেশানীতে আছি। মেহেরবানী করে সঠিক পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

 

Answer

ইলম ও জ্ঞান সাধনার পথে তালিবে ইলম ও আহলে ইলমদের দারিদ্র ও অভাব-অনটনের কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ার তিক্তমধুর অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত অধ্যায়টি বেশ বড়। এটা সবার ক্ষেত্রে না হলেও অনেকের ক্ষেত্রে তো বটে। সালাফের ইলম অন্বেষণের অতীত ইতিহাস তারই সাক্ষ্য বহন করে।

এসকল পরিস্থিতিতে করণীয় হলআল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি দুআ করা ও সাহায্য চাওয়া,সবর ও ধৈর্যের সওয়াব লাভের আশা রাখা এবং ইলমের মনযিলে মকসুদে পৌঁছানোর তীব্র বাসনা নিয়ে সকল দুঃখ-কষ্টকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সামনে অগ্রসর হতে থাকা। আপনি এত পেরেশনা হচ্ছেন কেনতালীমী মুরুব্বী গ্রহণ করুন। আল্লাহ আপনার নুসরত করবেন। দুআ ও মুজাহাদা সকল সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। কিতাব সংগ্রহের ব্যাপারে দুআ ও রোনাযারীকে মূল অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করুন। আর সহযোগী উপায় হিসেবে খরচে মিতব্যয়িতা।

হযরত মাওলানা আমীন ছফদর ছাহেব রাহ. অত্যন্ত গরীব মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত কুতুবখানা ছিল বেশ বড়। এ কুতুবখানা তৈরিতে দুআ ও রোনাযারী ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সহায়। একবার তাঁর আদ্দুররুল মানছূর কিতাবের প্রয়োজন ছিল। রাতভর তাহাজ্জুদের নামাযে কেঁদে কেঁদে দুআ করলেন। এর মধ্যে কিছুটা তন্দ্রা এল। স্বপ্নে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেয়ারত হয়ে গেল। ইরশাদ হলকিতাবের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। শেষে সেই কিতাবের তো ব্যবস্থা হলই পরবর্তীতে প্রয়োজন মাফিক অন্যান্য কিতাবেরও ব্যবস্থা হতে থাকল। শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ রাহ. কিতাবের জন্য নফল নামাযের মান্নত করতেন। অমুক কিতাব পেলে এত রাকাত নফল পড়ব। কিতাবও সংগ্রহ হত আর নফল নামাযের মাধ্যমে তাকাররুব ইলাল্লাহও হাসিল হত।

আপনি তালীমী মুরুব্বীর কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। তো নিজের কোনো অভিজ্ঞ মেহেরবান উস্তাযকে তালীমী মুরুব্বী হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম। কারণতিনি আপনার বিস্তারিত হালত সম্পর্কে জেনে পরামর্শ দিতে পারবেন।

Read more advices provided in this issue