নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক -
Question
হুজুর, আমি একজন ‘তাখাসসুস ফী উলূমিল হাদিস’-এর ছাত্র। আমি বিদআত সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করতে চাই। যাতে আমি বিদআতের মি’ইয়ার (মানদন্ড) সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারি। সাথে সাথে উসূল এবং ফুরু এর মাঝে সমন্বয় করতে পারি। তাই এ বিষয়ে কোন কোন কিতাব মুতালাআ করতে পারি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা জানালে কৃতজ্ঞ হব। আল্লাহ হুজুরকে উত্তম জাযা দান করুন।
Answer
বিদআত সম্পর্কে উসূলী বিষয়গুলো অর্থাৎ বিদআতের অর্থ, প্রকারভেদ, মারাতিব ও স্তর, বিদআতের বিস্তারিত হুকুম এবং বিদআত নির্ণয়ের উপায় ইত্যাদি জানার জন্য ইমাম আবু ইসহাক শাতিবী রাহ. (মৃত্যু : ৭৯০ হি.)-এর ‘আল ই’তিসাম’ একটি বিশ্লেষণধর্মী কিতাব।
আমাদের হিন্দুস্তানের হযরত শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহ.-এর ‘ঈযাহুল হককিস সরীহ ফী আহকামিল মাওতা ওয়াদ দরীহ’ পুস্তিকাটি সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও অতি মূল্যবান ও তত্ত্বপূর্ণ।
হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহ.-এর নির্দেশে মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রাহ. লিখিত‘বারাহেনে কাতেয়া’ কিতাবে বিদআতের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও হুকুম ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে। আর বিভিন্ন বিষয় ও অধ্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিদআতী আমল ও রসম-রেওয়াজ অর্থাৎ বিদআতের শাখা-প্রশাখা সংক্রান্ত বিশদ আলোচনার জন্য ইবনুল হাজ্জ আলফাসী (মৃত্যু ৭৩৭ হি.) রাহ.-এর ‘আলমাদখাল’ নির্ভরযোগ্য একটি উৎস। আর সংক্ষিপ্ত কিতাবসমূহের মধ্যে মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানুবী রাহ.-এর ‘ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম’ অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ কিতাব।
তো বিদআত সংক্রান্ত অধ্যয়নের সূচনা উপরোক্ত কিতাবগুলো দ্বারা হতে পারে। এরপর যেসকল মুসলিহীনে উম্মত সমাজে প্রচলিত বিদআত, রসম-রেওয়াজ এবং মুনকার কাজকর্মের ইসলাহের মহান কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন তাঁদের ইসলাহী কার্যক্রমের ইতিহাস এবং তাঁদের রচনাবলী মনোযোগ সহকারে মুতালাআ করতে হবে। যেমন পরবর্তী প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে হাফেজ ইবনু তাইমিয়া, হাফেজ ইবনুল কায়্যিম, ইবনু রজব হাম্বলী প্রমুখ। হিন্দুস্তানের ব্যক্তিদের মধ্যে খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া, হযরত আহমদ সেরহেন্দী, সায়্যেদ আহমদ বেরলবী, শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী এবং নিকট অতীতের আকাবিরদের মধ্যে হযরত গাঙ্গুহী, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী প্রমুখের ফাতওয়া-রাসায়েল, খুতুবাত, মালফুজাত ইত্যাদির অধ্যয়ন অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
মনে রাখতে হবে, বিদআতকে সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য সুন্নাহর অর্থ ও মর্ম, সুন্নাহ প্রমাণিত হওয়ার পদ্ধতি, সুন্নাহর প্রকার ও স্তর এবং সুন্নাহর উপর আমলের সঠিক পন্থা এবং সুন্নাহর বিরোধিতার অর্থ ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকাও জরুরি। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সুন্নাহ ও বিদআত সম্পর্কে বিশদ এবং তাহকীকী ইলম লাভের জন্যে উসূলে শরীয়ত, মাকাসেদে শরীয়ত, উসূলে ফিকহের রাসেখ ইলম এবং তাফাক্কুহ ফিদ্দীন থাকা একান্ত প্রয়োজন।