মাহফুজুর রহমান - জামিয়াতুল মাআরিফ আলইসলামিয়া ৮৮/৯ উত্তর যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

Question

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ

হযরতের সুস্বাস্থ্য ও জীবনের সর্বক্ষেত্রে বরকত কামনা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর হযরতের ছায়াকে সুদীর্ঘ করুন। হযরতের নিকট একটি বিষয়ে সমাধান কামনা করছি।

দরসে নেযামীর বিভিন্ন কিতাবে আমরা ফেয়েলে মুযারেকে নছব দানকারী হরফ لن -এর অর্থ ‘কিছুতেই না’, ‘কখনো না’ পড়েছি।

এসো আরবী শিখিতেও অর্থ দেয়া আছে ‘কিছুতেই না’। কোনো কোনো তাফসীর গ্রন্থেও تأبيد- تأكيد  -এর অর্থ পাওয়া যায়। কিন্তু ইবনে হিশাম রাহ.-এর কিতাবসমূহ যেমনÑ

مغني اللبيب، قطر الندى، أوضح المسالك

এবং নাহবের আরো কিছু কিতাব যেমনÑ

النحو القرآني، موسوعة النحو والصرف والإعراب، المعجم الوسيط في الإعراب

ইত্যাদি গ্রন্থে تأكيد  ও تأبيد -এর অর্থ আমরা পাই না। আরবী অভিধান যেমন, مقاييس اللغة، القاموس المحيط، المنجد، المعجم الوسيط এগুলোতেও আমরা تأكيدتأبيد -এর অর্থ পাইনি। কিছু কিছু জায়গায় আল্লামা যামাখশারী রাহ.-এর কওল (تأكيدتأبيد -এর ফায়দা দেয়া) রদও করা হয়েছে। এখন হযরতের নিকট জানার বিষয় হল, لن -এর মাঝে কি تأكيدتأبيد -এর অর্থ আছে, নাকি لن শুধুই ‘নাফয়ে মুস্তাকবাল’-এর ফায়দা দেয়? হযরতের নিকট দরখাস্ত, উক্ত বিষয়ে সমাধান দিয়ে আমাদের সন্দেহ-সংশয় দূর করে উপকৃত করবেন।

Answer

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আপনি প্রশ্নোক্ত বিষয়ে বেশ কিছু কিতাবের মুরাজাআত করেছেন। আল্লাহ তাআলা আপনার মেহনতকে কবুল করুন এবং ইলম ও আমলে বরকত দান করুন। দেখুন, لن হরফটি ‘ফেয়েলে মুযারে’-এর শুরুতে এসে শেষে নসব দান করে এবং ভবিষ্যতের ফেয়েলকে নাকচ করে। এজন্য একে حرفُ نفي ونصب واستقبال বলা হয়। لن হরফটি যে  لا-এর মতো ভবিষ্যতের ফেয়েলকে নাকচ করে সে বিষয়ে কারো কোনো ইখতিলাফ নেই, কিন্তু এটি ভবিষ্যতের না-বাচক ফেয়েলকে مؤكد বা দৃঢ় করে কি না এবং مؤبد বা চিরস্থায়ী করে কি না অর্থাৎ ফেয়েলটি ভবিষ্যতে কিছুতেই ঘটবে না এবং কখনই ঘটবে নাÑ এমন অর্থ প্রকাশ করে কি না এবং এটি ‘নাফী’র ক্ষেত্রে لا -এর তুলনায় অধিক জোরদার কি নাÑ সে বিষয়ে নাহবীদের মধ্যে কিছুটা ইখতিলাফ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নাহ্ব ও লুগাতের অনেক মুহাক্কিক ও বিশেষজ্ঞ আলেমের মতেই রাজেহ ও অগ্রগণ্য অভিমত হল, لن হরফটি ভবিষ্যতের ফেয়েলকে مؤكد দৃঢ় ও জোরদার করে, কিন্তু مؤبد বা চিরস্থয়ী করে না; বরং ‘নাফীর’ সময়সীমা কখনো মাহদুদ ও মুকায়্যাদ হয় এবং কখনো মুতলাক ও গায়রে মাহদুদ হয়। 

মোটকথা ভবিষ্যতের ফেয়লকে চিরস্থায়ীভাবে নাকচ করাÑ এটি لن হরফের অর্থ নয়। তবে কখনো কখনো প্রসঙ্গের বিচারে এবং পূর্বাপর অবস্থা অনুসারে এমন অর্থ বুঝে আসে। নি¤েœর উদ্ধৃতিগুলো লক্ষ্য করুনÑ

আল্লামা রযীউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আস্তারাবাযী রাহ. (ওফাত : আনুমানিক ৬৮৬হি.) কাফিয়ার ভাষ্যগ্রন্থে বলেনÑ

قوله: (ولن معناها نفي المستقبل)، هي تنفي المستقبل نفيا مؤكدا وليس للدوام والتأبيد كما قال بعضهم.

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. جمع الجوامع গ্রন্থে বলেনÑ

لن- بسيطة، وقال الخليل: من (لا أن)، والفراء لا النافية أبدلت نونا وإنما تنصب مستقبلا وتفيد نفيه وكذا التأكيد لا التأبيد على المختار.

তারপর তিনি ‘জামউল জাওয়ামে’-এর  ব্যাখ্যাগ্রন্থ همع الهوامع -এ বলেনÑ

وتنصب (لن) المستقبل أي أنها تخلص المضارع إلى الاستقبال وتفيد نفيه ثم مذهب سيبويه والجمهور أنها تنفيه من غير أن يشترط أن يكون النفي بها آكد من النفي بلا، وذهب الزمخشري في مفصله إلى أن (لن) لتأكيد ما تعطيه (لا) من نفي المستقبل، قال : تقول : لا أبرح اليوم مكاني، فإذا أكدت وشددت قلت : لن أبرح اليوم، قال تعالى: لَاۤ اَبْرَحُ حَتّٰۤی اَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَیْنِ،  وقال: فَلَنْ اَبْرَحَ الْاَرْضَ حَتّٰی یَاْذَنَ لِیْۤ اَبِیْۤ، وذهب الزمخشري في أنموذجه إلى أنها تفيد تأبيد النفي، قال : فقولك لن أفعله كقولك لا أفعله أبدا، ومنه قوله تعالى: لَنْ يَّخْلُقُوْا ذُباباً  (ثم نقل رد ابن مالك على الزمخشري، إلى أن قال:) ووافقه على إفادة التأكيد جماعة منهم ابن الخباز بل قال بعضهم، إن منعه مكابرة، فلذا اخترته دون التأبيد. انتهى من همع الهوامع২৮৭-২৮৬/২

(قال الراقم : لايوجد في "الأنموذج" المطبوع كل ماعزي إليه هنا، فالظاهر أن النقل عنه هنا دخله الإدراج والرواية على المعنى، بل التصحيف أيضا، وسيأتي الكلام على ذلك إن شاء الله تعالى.)

আল্লামা সুয়ূতীর উপরোক্ত ইবারত থেকে এবং ইবনু মালিক, ইবনু হিশাম প্রমুখ মুতাআখখিরীন উলামায়ে নাহ্ব-এর বক্তব্য থেকে মনে হয় আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশারীই (জন্ম : ৪৬৭ হি. ওফাত : ৫৩৮ হি.) সর্বপ্রথম لن হরফের تأكيد النفي এবং تأبيد النفي -এর অর্থ আবিষ্কার করেছেন; তাঁর পূর্বে অন্য কেউ এমন অর্থ বর্ণনা করেননি। এমনকি অনেকের দাবি হল, আল্লামা যামাখশারী যেহেতু আকীদা ও ইলমুল কালামের ক্ষেত্রে মুতাযিলা মতালম্বী তাই তিনি নিজ মাযহাবের সমর্থনের জন্য উপরোক্ত অর্থ অবিষ্কার করেছেন, অন্যথায় এই অর্থের পক্ষে শক্তিশালী কোনো শাহেদ ও দলীল নেই!! কিন্তু এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। আমরা আমাদের সামান্য অনুসন্ধানে দেখতে পাই, আল্লামা যামাখশারীর পূর্বেও কোনো কোনো ইমামে লুগাহ স্পষ্ট ভাষায় এবং কেউ কেউ ইঙ্গিতে তাকীদের অর্থ উল্লেখ করেছেন এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী অনেক আলেমই ‘তাকীদ’-এর অর্থকে সাব্যস্ত করেছেন।

নাহব শাস্ত্রের ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসী রাহ.  ارتشاف الضرب গ্রন্থে এবং تفسير البحر المحيط গ্রন্থের একাধিক স্থানে لن হরফের تأبيد النفي-এর অর্থকে নাকচ করেছেন এবং এ ব্যাপারে যামাখশারীর বক্তব্যকে দৃঢ়তার সাথে রদ করেছেন কিন্তু  تأكيد-এর অর্থকে সরাসরি অস্বীকার করেননি। তিনি যদিও যামাখশারীর রদ করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেছেনÑ

وأما قوله : إلا أن في لن تأكيداً وتشديداً ليس في لا ، فيحتاج ذلك إلى نقل عن مستقري اللسان.

কিন্তু  لن  হরফটি যে تأكيد النفي  -এর ভাব প্রকাশ করে তা তিনি تفسير البحر المحيط -এর একাধিক স্থানে সমর্থন করেছেন। এমন দুটি স্থানের হাওয়ালা নি¤েœ উল্লেখ করা হলÑ

كان الأقرب من هذه الأقوال قول الزمخشري أولاً، من أن فيها توكيداً وتشديداً، لأنها تنفي ما هو مستقبل بالأداة ، بخلاف لا، فإنها تنفي المراد به الاستقبال مما لا، أداة فيه تخلصه له، ولأن لا قد ينفى بها الحال قليلاً، فلن أخص بالاستقبال وأخص بالمضارع، ولأن “ولن تفعلوا” أخصر من “ولا تفعلون”، فلهذا كله ترجيح النفي بـ "لن" على النفي بـ "لا". انتهى من "البحر المحيط"১০৭/১

লক্ষণীয়, উপরোক্ত ইবারতে আবু হাইয়ান রাহ. لن হরফটি কেন  أوكد في نفي المستقبل সে কথার একাধিক ‘নাহবী ইল্লত’ উল্লেখ করেছেন। তিনি অন্যত্র বলেনÑ

قوله: (لَنْ تَتَّبِعُونَا) : وأتى بصيغة لن، وهي للمبالغة في النفي،... انتهى من "البحر المحيط" ৯৪/৮

আমাদের বর্তমান অনুসন্ধান অনুসারে لن হরফের ‘তাকীদ’-এর অর্থ সর্বপ্রথম যিনি বর্ণনা করেছেন তিনি হলেন ইমামুল লুগাহ ওয়ান নাহব খলীল ইবনু আহমদ রাহ. (ওফাত : ১৭০ হি.) তিনি তাঁর ‘কিতাবুল আইন’ গ্রন্থে বলেনÑ

وأمّا (لن) فهي: لا أنْ، وصلت لكثرتها في الكلام، ألا ترى أنّها تُشْبِهُ في المعنى (لا)، ولكنّها [أوكد]. تقول: لن يُكْرِمَك زيدٌ، معناه: كأنّه يَطْمَعُ في إكرامِهِ، فنفيتَ عنه، ووكّدتّ النّفي بلن، فكانت أوكد من (لا). انتهى من كتاب العين (৮/ ৩৫০)

ইমাম খলীল ইবনু আহমাদ لن হরফের যে বুৎপত্তি ও গঠন উল্লেখ করেছেন তা পরবর্তীতে কেউ গ্রহণ করেেেছন এবং কেউ গ্রহণ করেননি। কিন্তু আমাদের জানামতে মুতাকাদ্দিমীন ইমামদের মধ্যে কোনো ইমামে লুগাহ বা ইমামে নাহব ইমাম খলীল ইবনু আহমাদের বর্ণিত উপরোক্ত অর্থকে রদ করেননি। বরং তাঁর উপরোক্ত বক্তব্য তাঁর শাগরিদ লাইছের সূত্রে ইমাম আবু মানসূর আযহারী (ওফাত : ৩৭০ হি.) তাঁর ‘তাহযীবুল লুগাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম আযহারীর বরাতে আল্লামা ইবনু মানযুর ইফরীকী ‘লিসানুল আরব’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। দ্রষ্টব্য : তাহযীবুল লুগাহ ১৫/২৩৯; লিসানুল আরব ১৩/৩৯২

এছাড়াও মুতাকাদ্দিমীন আইম্মায়ে নাহব ও আইম্মায়ে লুগাহদের মধ্যে ইমাম সীবাওয়াইহ, ইমাম মুবাররিদ, ইমাম ইবনু ফারিস প্রমুখের  বক্তব্যে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, لا يفعل এবং لن يفعل এই দুই সীগা নাফীর ক্ষেত্রে বরাবর নয়; বরং ভবিষ্যতের ফেয়েলকে নাকচ করার ব্যাপারে لا-এর তুলনায় لن -এর নাফী অধিকতর জোরদার ও শক্তিশালী। যেমন ইমাম সীবাওয়াইহ তাঁর কিতাবে বলেনÑ

>وإذا قال: سوف يفعل فإن نفيه لن يفعل<. انتهى من الكتاب لسيبويه (৩/ ১১৭)

ইমাম মুবাররিদ বলেনÑ

>ومن هَذِه الْحُرُوف لن، وَهِي نفي قَوْلك سيفعل، تَقول: لن يقوم زيد وَلنْ يذهب عبد الله، وَلَا تتصل بالقسم كما لم يتصل به سيفعل<. انتهى من المقتضب (২/ ৬)

ইমাম আহমাদ ইবনু ফারিস (ওফাত : ৩৯৫হি.)  لن হরফের অর্থ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এভাবেÑ

"لن" تكون جوابا للمثبت أمرا في الاستقبال، يقول: "سيقوم زيد" فتقول أنت: "لن يقوم". وحكي عن الخليل أن معناها: "لا أن" بمعنى "ما هذا وقت أن يكون كذا". انتهى من الصاحبي في فقه اللغة العربية ومسائلها، وسنن العرب في كلامها (ص: ১২০)

এখানে লক্ষণীয়, سيفعل  এবং سوف يفعل বিশেষভাবে ভবিষ্যতের হাঁ-বাচক ফেয়েলকে সাব্যস্ত করে, আর এর বিপরীতরূপে لن يفعل উল্লেখ করা হয়েছে, لا يفعل উল্লেখ করা হয়নি। কেননা لا يفعل কখনো কখনো বর্তমানের ফেয়েলকে নাকচ করার জন্যও ব্যবহৃত হয় আর ভবিষ্যতের ফেয়েলকে নাকচ করলেও তা سيفعل  এবং سوف يفعل -এর পূর্ণ বিপরীত নয়। এ বিষয়টিকেই ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসীসহ অনেকেই لن أوكد في نفي المستقبل এই কথার একটি ইল্লত ও কারণরূপে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসীর ইবারত আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। সামনে আরো কয়েকজন শাস্ত্রজ্ঞের বক্তব্য উল্লেখ করছিÑ

আল্লামাতুন-নাহব ইয়ায়িশ ইবনু আলী ইবনু ইয়ায়িশ (ওফাত : ৬৪৩ হি.) বলেনÑ

>اعلم أن >لن< معناها النفي، وهي موضوعة لنفي المستقبل، وهي أبلغ في نفيه من >لا<، لأن >لا< تنفي يفعل إذا أريد به المستقبل، ولن تنفي فعلا مستقبلا قد دخل عليه السين وسوف، وتقع جوابا لقول القائل: سيقوم زيد وسوف يقوم زيد،...<. انتهى من شرح المفصل لابن يعيش ১১২-১১১/৮

 

জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু আলী আলইয়ামানী আলমাওযায়ী (ওফাত : ৮২৫ হি.) বলেনÑ

وزعم في المفصل والكشاف أنها تفيد تأكيد النفي، وبه قال ابن الخباز، وما ادعاه من التأكيد حسن قريب، وربما أعطاه كلام سيبويه، حيث قال: لا نفي لقولك: يفعل، ولن نفي لقولك: سيفعل، فكما أفادت السين التنفيس في الاستقبال، كذلك يفيد نقيضها تأكيدا في النفي، والله أعلم. انتهى من مصابيح المغاني في حروف المعاني ص ৪২৬

আর মুতাআখখিরীন লুগাবী ও নাহবীদের মধ্যেও যামাখশারীর পূর্বে কেউ কেউ তাকীদের অর্থ উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম আব্দুল কাহির ইবনু আব্দির রহমান আল-জুরজানী (ওফাত: ৪৭৪ হি.)।

দ্রষ্টব্য : আল-আওয়ামিলুল মিয়াহ, পৃ. ৫৩, তাহকীক : আনওয়ার দাগিস্তানী, দারুল মিনহাজ; শরহুল জুমাল, পৃ. ১৩৯-১৪০, তাহকীক : খাদীজাহ পাকিস্তানী, জামিয়াতু উম্মিল কুরা; তারশীহুল ইলাল ফী শারহিল জুমাল, সাদরুল আফাযিল, পৃ. ১৭৭-১৭৮, তাহকীক : আদিল মুহসিন, জামিআতু উম্মিল কুরা।

আর যামাখশারীর পরবর্তী লুগাত ও নাহবের যেসব আলিম لن হরফের ‘তাকীদ’-এর অর্থকে সমর্থন করেন তাদের কয়েকজনের উদ্ধৃতি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। নি¤েœ আরো কয়েকজনের নাম কিতাবের হাওয়ালাসহ উল্লেখ করা হলÑ

১. সাদরুল আফাযিল আলকাসিম ইবনুল হুসাইন আলখুয়ারাযমী (ওফাত : ৬১৭)। দ্রষ্টব্য : তারশীহুল ইলাল ফী শারহিল জুমাল, পৃ. ১৭৭-১৭৮, তাহকীক : আদিল মুহসিন, জামিআতু উম্মিল কুরা; আততাখমীর ফী শরহিল মুফাস্সাল, ৪/৮৯-৯০

২. আহমাদ ইবনুল হুসাইন, যিনি ইবনুল খাববায নামে পরিচিত (ওফাত : ৬৩৯ হি.)। তার কিতাবের নামÑ

الغرة المخفية في شرح الدرة الألفية،(ص১৬০)

৩. আলমুনতাজাব ইবনু আবিল ইয আলহামাযানী (ওফাত : ৬৪৩ হি.)। তার কিতাবের নাম-

الفريد في إعراب القرآن المجيد (২৪৯/১)

৪. জামালুদ্দীন আবু আমর ইবনুল হাজিব [কাফিয়ার গ্রন্থকার (ওফাত : ৬৪৬ হি.)]। দ্রষ্টব্য : আলঈযাহ ফী শারহিল মুফাসসাল ২/২১৫, ২১৯

৫. মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আলআস্ফারায়িনী (ওফাত : ৬৮৪ হি.)। তারকিতাবের নামÑ

لباب الإعراب (ص ৪৪৭)

৬. আল্লামা বদরুদ্দীন যারকাশী (ওফাত : ৭৯৪ হি.)। আলবুরহান ফী উলূমিল কুরআন ৪/৪৮৯; মা‘না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পৃ. ১৫৬-১৫৭

৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আবুসসাঊদ (ওফাত : ৯৮২)। তাফসীরু আবীস সাঊদ ১/৬৭ (সূরা বাকারার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর)।

৮. আল্লামা আবূ ইয়াকুব ইউসুফ আসসাক্কাকী (ওফাত : ৬২৬)। মিফতাহুল উলূম, পৃ. ১০৮

৯. মুহাম্মাদ ইবনু আলী আসসব্বান (ওফাত : ১২০৬)। হাশিয়াতুস সব্বান আলাল-উশমূনী ৩/৪০৭

১০. আধুনিক কালের আরবী ভাষা বিশেষজ্ঞ ড. ফাযিল সালিহ আসসামিররায়ী। দ্রষ্টব্য : ‘মাআনীন নাহ্ব’ ৩/৩৬০-৩৬৬

তাছাড়া কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন নস এবং সাধারণ ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও لن  হরফটিকে তাকীদের স্থলে অর্থাৎ ভবিষ্যতের না-বাচক ফেয়লকে জোরালো ও তাকীদযুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমন সাধারণ ক্ষেত্রে বলা হয়Ñ لا أكلمك কিন্তু কথাটিকে আরো জোরালো করার জন্য এবং নাফীর মুবালাগা ও অতিশয়তা প্রকাশের জন্য বলা হয়Ñ لن أكلمك

কুরআনের কয়েকটি আয়াত লক্ষ করুনÑ

فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا وَ لَنْ تَفْعَلُوْا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیْ وَ قُوْدُهَا النَّاسُ وَ الْحِجَارَةُ،  اُعِدَّتْ لِلْكٰفِرِیْنَ. (سورة البقرة : ২৪)

وَ اِذْ قُلْتُمْ یٰمُوْسٰی لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتّٰی نَرَی اللهَ جَهْرَةً فَاَخَذَتْكُمُ الصّٰعِقَةُ وَ اَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ.  (سورة البقرة : ৫৫)

اِنِّیْ نَذَرْتُ لِلرَّحْمٰنِ صَوْمًا فَلَنْ اُكَلِّمَ الْیَوْمَ اِنْسِیًّا.  (سورة مريم : ২৬)

فَلَنْ اَكُوْنَ ظَهِیْرًا لِّلْمُجْرِمِیْنَ. (سورة القصص : ১৭)

قَالُوْا یٰلُوْطُ اِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ یَّصِلُوْۤا اِلَیْكَ فَاَسْرِ بِاَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ الَّیْلِ.  (سورة الهود : ৮১)

এজন্যই لن হরফের তাকীদের অর্থ অস্বীকার করাকে কেউ কেউ ‘মুকাবারা’ আখ্যায়িত করেছেন। যেমন ইমাম সা‘দুদ্দীন তাফতাযানী রাহ. ‘শরহুল মাকাসিদ’ গ্রন্থে ‘রুইয়াতে বারী তাআলা’ সম্পর্কে মুতাযিলাদের মত খ-ন করতে গিয়ে বলেনÑ

والجواب أن كون كلمة لن للتأبيد لم يثبت ممن يوثق به من أئمة اللغة، وكونها للتأكيد وإن ثبت بحيث لا يمنع إلا مكابرة، لكن لا نسلم دلالة الكلام على عموم الأوقات لا نصا ولا ظاهرا، ولو سلم الظهور فلا عبرة به في العلميات، سيما مع ظهور قرينة الخلاف، وهو وقوعه جوابا لسؤال الرؤية في الدنيا، على أنه لو صرح بالعموم وجب الحمل على الرؤية في الدنيا توفيقا بين الأدلة.

 

‘তাবীদুন নাফী’ বা চিরস্থায়ীভাবে নাকচ করার অর্থ

‘তাবীদুন নাফী’-এর অর্থকে যামাখশারীর দিকে নিসবত করা হয় এবং তাকেই এই অর্থের প্রথম আবিষ্কারক মনে করা হয়। কিন্তু আমরা দেখি আল্লামা যামাখশারী এই অর্থটি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আলমুফাসসাল ফীল ই‘রাব’-এ উল্লেখ করেননি, বরং সেখানে তিনি কেবল তাকীদের অর্থকে উল্লেখ করেছেন। আলমুফাসসাল-এর খোলাসা ‘আলউনমূযাজ’, যা তিনি নিজেই তৈরি করেছেন তাতেও শুধু তাকীদের অর্থেরই উল্লেখ পাওয়া যায়। আলউনমূযাজ-এর ইবারত হলÑ

ولن نظيرة لا في نفي المستقبل، ولكن على التأكيد.

তবে পুরাতন কোনো কোনো নুসখায় এখানে التأكيد -এর স্থলে  التأبيد আছে। তবে তা লিপিকারের ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা এ কিতাবের মূল ‘আলমুফাসসাল’ আর তাতে তাবীদের অর্থের প্রতি কোনো ইঙ্গিত নেই। এমনকি তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলকাশশাফে’ও তিনি لن হরফের  تأبيد النفي -এর অর্থ স্পষ্টভাবে কোথাও উল্লেখ করেননি। এসব কারণে কোনো কোনো মুহাক্কিক আলেম মনে করেন, এই অর্থের নিসবত আল্লামা যামাখশারীর দিকে করা ভুল। তবে আল্লামা যামাখশারী কাশশাফের বিভিন্ন স্থানে لن হরফের তাকীদের অর্থ এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যা থেকে কোথাও কোথাও তাবীদের অর্থের আভাস পাওয়া যায়। (দ্রষ্টব্য : দিরাসাতুন লি উসলূবিল কুরআনিল কারীম, মুহাম্মাদ আব্দুল খালিক উযায়মাহ ২/৬৩৫-৬৩৭) কিন্তু আল্লামা যামাখশারীকে ‘তাবীদুন নাফী’ অর্থের প্রথম আবিষ্কারক মনে করা ঠিক নয়। কেননা তার  জন্মের বহু পূর্বে মুতাযিলা মতালম্বী কোনো কোনো আলেম যেমন,  কাযী আব্দুল জাব্বার (ওফাত : ৪১৫ হি.), মুহাম্মাদ আলখতীব আলইসকাফী (ওফাত : ৪২০ হি.), শরীফ মুরতাযা (ওফাত : ৪৩৬) لن হরফের ‘তাবীদুন নাফী’-এর অর্থ দাবি করেছেন এবং সে ভিত্তিতে কুরআনেরÑ لَنْ تَرَانِيْ এই বাক্য দ্বারা তারা ‘নাফয়ে রুইয়াহ’-এর ব্যাপারে গলত ইস্তেদলাল করেছেন এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আলিমগণ তাদের সেই গলত ইস্তেদলালকে খ-ন করেছেন। যেমন ইমামুল হারামাইন (ওফাত : ৪৭৮ হি.) তিনি তার ‘আশশামিল ফী উসূলিদ দ্বীন’ গ্রন্থে তাদের সেই ইস্তেদলাল উল্লেখ করেছেন এবং খ-ন করেছেন। তবে মনে রাখতে হবে, لن হরফের ‘তাবীদুন নাফী’র অর্থ মেনে নেয়া হলেও তা দ্বারা মুতাযিলা মাযহাব প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ, তাবীদ যেমন মুতলাক হতে পারে তেমনি মুকায়্যাদও হতে পারে, যা পূর্বাপর আলামাত দ্বারা নির্ধারিত হবে। আল্লামাতুন নাহ্ব ইয়ায়িশ ইবনু আলী ইবনু ইয়ায়িশ (মৃত্যু : ৬৪৩ হি.) যামাখশারীর আলমুফাসসাল-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে لن হরফের তাবীদুন নাফীর অর্থ উল্লেখ করার পর বলেনÑ

ومنه قوله تعالى: (لَنْ تَرَانِيْ) ولم يلزم منه عدم الرؤية في الآخرة لأن المراد: إنك لن تراني في الدنيا، لأن السؤال وقع في الدنيا، والنفي على حسب الإثبات.

মুফাসসির আল্লামা ইবনু আতিয়্যাহ বাহ্যত তাবীদুন নাফীর অর্থকে গ্রহণ করা সত্ত্বেও তিনি তার তাফসীর গ্রন্থে বলেনÑ

وقوله عز وجل: لَنْ تَرَانِيْ نص من الله تعالى على منعه الرؤية في الدنيا، ولَنْ تنفي الفعل المستقبل، ولو بقينا مع هذا النفي بمجرده لقضينا أنه لا يراه موسى أبدا، ولا في الآخرة، لكن ورد من جهة أخرى بالحديث المتواتر أن أهل الإيمان يرون الله تعالى يوم القيامة، فموسى عليه السلام أحرى برؤيته.

যাইহোক, لَنْ হরফের ব্যবহার সম্পর্কে খোলাসায়ে কালাম হল, যা শায়েখ মুস্তফা আলগালায়িনী (ওফাত : ১৩৬৪ হি.) তাঁরجامع الدروس العربية  গ্রন্থে বলেছেনÑ

لنْ، وهي حرفُ نفيٍ ونصبٍ واستقبال، فهي في نفي المستقبل كالسين وسوفَ في إثباته، وهي تفيدُ تأكيدَ النفي لا تأبيدَهُ، وأما قولهُ تعالى لَنْ يَّخْلُقُوْا ذُبَابا، فمفهوم التأبيدِ ليس من "لن"، وإنما هو من دلالة خارجيّة، لأنّ الخلقَ خاص بالله وحدَهُ

Sharable Link