আর কদিন পরেই পরীক্ষার পর কওমী মাদরাসাগুলোতে দীর্ঘ ছুটি আরম্ভ হবে। এই সময় ছাত্রদের জন্য কী কী করণীয় তার একটি তালিকা দিলে ভালো হত। বিশেষ করে মুতালাআর ব্যাপারে রাহনুমায়ী অবশ্যই দিবেন।
আর কদিন পরেই পরীক্ষার পর কওমী মাদরাসাগুলোতে দীর্ঘ ছুটি আরম্ভ হবে। এই সময় ছাত্রদের জন্য কী কী করণীয় তার একটি তালিকা দিলে ভালো হত। বিশেষ করে মুতালাআর ব্যাপারে রাহনুমায়ী অবশ্যই দিবেন।
এ বিষয়ে আমি বিগত বছরগুলোতে কয়েকবার লিখেছি। মৌলিক কথা এই যে, প্রত্যেক তালিবে ইলম স্বীয় তা’লীমী মুরববীর মশওয়ারা অনুযায়ী ছুটির সময়গুলো কাজে লাগাবে। এ সময়ে পিতা-মাতার খেদমত করবে, তাঁদের সান্নিধ্যে থাকবে। দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করবে। ইলমী ত্রুটি-অপূর্ণতাগুলো দূর করার চেষ্টা করবে কিংবা অধিক তারাক্কীর জন্য মুতালাআর কোনো তারতীব তৈরি করবে। সুলূক ও ইহসানের জন্য শায়খের সোহবতে থাকবে। মোটকথা, বিভিন্নভাবে ছুটিকে কাজে লাগানো যায়। যার জন্য যেটা অধিক উপযুক্ত তার সেটাই করা উচিত। বিশেষ কোনো কাজের পরিকল্পনা না থাকলে রমযানের ছুটির সর্বোত্তম আমল হল, তেলাওয়াতে কুরআন, তাদাববুরে কুরআন এবং পিতা-মাতার খেদমত। নেযামুল আওকাত (রুটিন) তৈরি করে কিছুটা সময় মুতালাআর জন্য রাখা ভালো। এক্ষেত্রে পরবর্তী তা’লীমী সালের জন্য প্রস্ত্ততিমূলক মুতালাআ সবচেয়ে উপকারী।
প্রস্ত্ততিমূলক মুতালাআ বলতে পরবর্তী বছরের নেসাবভুক্ত কিতাবাদি, সেগুলোর মুসান্নিফ, শরাহ-হাশিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে অবগতি লাভ করা। কোন কিতাবটি আদ্যোপান্ত মুতালাআ করার মতো, কোনটা মূল কিতাব হল করার জন্য অধিক উপযোগী তা নির্ধারণ করা। নতুন কোনো ফন আসলে তার সাথে পরিচিত হওয়া। কোনো কিতাবের শুরুতে মুসান্নিফ বা শারেহের পক্ষ থেকে লেখা বিস্তারিত মুকাদ্দিমা মুতালাআ করা।
Sharable Link
আমি মাদানী নেসাবের ২য় বর্ষের ছাত্র। বর্তমানে বাড়িতে আববা কঠিন রোগে আক্রান্ত, আম্মাও পূর্ব থেকেই অসুস্থ। ভাইয়েরা দ্বীনী ইলম না থাকায় যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই পরিবার থেকে আমার প্রতি চাপ হল, তাড়াতাড়ি পড়াশুনা শেষ করে মা-বাবার খেদমতে নিয়োজিত হও। তাই আমার প্রশ্ন, কীভাবে ৫ বছরের অবশিষ্ট নেসাব ৩/৪ বছরে শেষ করতে পারি? একটি সুপরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ করছি।
মেহেরবানী করে স্বীয় তা’লীমী মুরববীর সঙ্গে আলোচনা করুন কিংবা সরাসরি সাক্ষাত করুন।
Sharable Link
আমি ইনশাআল্লাহ আগামী বছর দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হব। আমি আপনার কাছ থেকে দুটি বিষয় জানতে চাই।
ক) শামায়েলে তিরমিযীর কোনো ভালো শরাহ থাকলে জানাবেন। তা উর্দু হোক বা আরবী।
খ) দাওরায়ে হাদীসের নেসাবের মধ্যে ত্বহাবী শরীফ রয়েছে। কিন্তু আমার মনে পড়ে কোথাও আমি তহতাবী নামেও একটি কিতাব দেখেছিলাম। প্রশ্ন হল, দুটো কি একই কিতাব না ভিন্ন ভিন্ন? নাকি আমি ভুলে ত্বহাবীকে তহতাবী পড়েছি?
ক) ইমাম তিরমিযী রাহ. কর্তৃক সংকলিত ‘আশশামাইলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ’ গ্রন্থের প্রসিদ্ধ শরাহ কয়েকটি। যেমন, মোল্লা আলী ক্বারী রাহ. (১০১৪ হি.) কৃত ‘জমউল ওয়াছাইল’, তাঁর উস্তাদ ইবনে হাজার মক্কী হাইতামী রাহ. (৯৭৪ হি.) কৃত ‘আশরাফুল ওয়াছাইল’, আল্লামা আবদুর রউফ মুনাভী (১০০৩ হি.) এরও একটি শরাহ রয়েছে যা ‘জমউল ওয়াছাইল’-এর সাথে হাশিয়ায় ছাপা হয়েছে। তাছাড়া রয়েছে ইবরাহীম বাজূরী (১১৯৮-১২৭৭ হি.) কৃত ‘আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ’। এ সবগুলোই মুদ্রিত এবং সংগ্রহ করাও কঠিন নয়। মোল্লা আলী ক্বারী রাহ.-এর শরাহ অধিক বিস্তারিত আর রাজূরী রাহ.-এর শরাহ সহজ ও সংক্ষিপ্ত। এর উপর শায়েখ মুহাম্মাদ আউয়ামার সংক্ষিপ্ত তা’লীকও রয়েছে।
উর্দূতে শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ. (১৪০২ হি.)-এর ‘খাসাইলে মুহাম্মদী’ একটি প্রসিদ্ধ শরাহ। এছাড়া শামায়েল বিষয়ে সালেহ আহমদ শামীকৃত ‘মিন মায়ীনিশ শামাইল’ খুবই চমৎকার একটি কিতাব। শামায়েল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য সীরাতের বিস্তারিত আলোচনা সংবলিত কিতাবগুলোর পাশাপাশি ‘ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন’-এর সংশ্লিষ্ট অধ্যায় মুতালাআ করে নিলে ভালো।
খ) ইমাম আবু জা’ফর তহাভী রাহ. হাদীস, তাফসীর ও ফিকহ বিষয়ে মুজতাহিদ পর্যায়ে উন্নীত ছিলেন। তিনি হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় ইমামের সমসাময়িক। জন্ম ২৩৯ হিজরীতে এবং ওফাত ৩২১ হিজরীতে।
পক্ষান্তরে সাইয়েদ আহমদ তহতাবী তেরো শতকের একজন আলিম। তার ওফাত ১২৩১ হিজরীতে। ফিকহ বিষয়ে মারাকিল ফালাহ শরহু নূরুল ইযাহ এবং আদদুররুল মুখতার শরহু তানবীরুল আবছার-এর উপর লিখিত হাশিয়া গ্রন্থটি সুপরিচিত এবং সমাদৃত। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ. রদ্দুল মুহতারের বহু জায়গায় তাঁর বরাত দিয়েছেন এবং দ্ব বর্ণ দ্বারা তাঁর দিকে ইশারা করেছেন।
ইমাম তহাবী রাহ. মিশরের সাঈদ শহরের নিকটবর্তী ‘তহা’ নামক গ্রামের দিকে মানসূব আর তহতাবী মিশরের ‘সুয়ূত’ শহরের নিকটবর্তী একটি গ্রাম ‘তহতা’-এর দিকে মানসূব্ আহমদ তহতাবী রাহ. প্রকৃত পক্ষে তুরষ্কের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর পিতা ‘তহতা’-এর কাযী নিযুক্ত হয়ে সেখানে প্রেরিত হন। (তথ্যসূত্র : শরহু মুশকিলিল আছার মুকাদ্দিমাতুত তাহকীক; আল আ’লাম খায়রুদ্দীন যিরিকলী) #
Sharable Link