মুহতারাম,আমি শরহে বেকায়া জামাতের ছাত্র। নূরুল আনওয়ারের কিছু বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না। সেগুলোকে হযরতের সমীপে পেশ করলাম। সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
১. কিতাবের মুকাদ্দিমাতেই আছে যে, সিরাতে মুস্তাকীম-এর মিসদাক তিনটি হতে পারে। (ক) শরীয়তে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খ) আক্বায়েদে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ (গ) ত্বরীকে সুলূক
মনে হচ্ছে যে এ তিনটি বিষয় পরস্পর সম্পৃক্ত; এর একটি ছাড়াও ‘সিরাতে মুসতাকীম’-এর ওপর থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু কিতাবের বর্ণনামতে তিনটির যে কোনো একটিই হল সীরাতে মুসতাকীম। আসলে বিষয়টা কী?
২. অন্যত্র আছে ‘কিতাবুল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল পাঁচশত আয়াত, আর ‘সুন্নাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল তিন হাজার হাদীস, এই নির্দিষ্টতা কীভাবে সম্ভব?
১. নূরুল আনওয়ার কিতাবের মুকাদ্দিমার আলোচ্য স্থানে প্রথমে সীরাতে মুস্তাকীমের হাকীকত ও স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-
هو الصراط الذي يكون على الشارع العام، ويسلكه كل واحد من غير أن يكون فيه التفات إلى شعب اليمين والشمال وهو الذي يكون معتدلا بين الإفراط والتفريط.
এরপর সীরাতে মুস্তাকীমের উক্ত হাকীকত কোথায় প্রতিফলিত হয়েছে সে কথা বলা হয়েছে এভাবে-
وهذا صادق على شريعة محمد... وعلى عقائد أهل السنة والجماعة... وعلى طريق سلوك جامع بين المحبة والعقول...
একটু খেয়াল করে পড়লে বুঝতে পারবেন উপরোক্ত ইবারতের মতলব কখনো কোনোক্রমে এমন হতে পারে না যে,উল্লেখিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে কেবল একটিই সীরাতে মুস্তাকীমের মিসদাক। কারণ এখানে তো হরফে আতফ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পূর্বোক্ত হুকুমের ক্ষেত্রে মাতূফ ও মাতূফ আলাইহি একইসঙ্গে শরীক হওয়া বুঝায়। সুতরাং উপরোক্ত ইবারতের সহীহ মতলব এটাই যে, উল্লেখিত তিনটি বিষয় একইসঙ্গে সীরাতে মুস্তাকীমের মিসদাক।
২. আহকাম সংক্রান্ত আয়াত সংখ্যা পাঁচশত- একথা ইমাম গাযালী রাহ. (মৃত্যু ৫০৫ হি.) ‘আল-মুস্তাসফা’গ্রন্থে এবং মালিকী মাযহাবের ফকীহ ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবী রাহ. (মৃত্যু ৫৪৩ হি.) উসূলে ফিকহ বিষয়ে রচিত ‘আল-মাহসূল’ নামক কিতাবে বলেছেন। তাঁদের একথার উদ্দেশ্য আক্ষরিক অর্থে উপরোক্ত সংখ্যার মাঝে তাহদীদ ও সীমাবদ্ধকরণ নয়। এর দ্বারা সম্ভবত তাঁদের উদ্দেশ্য হল আহকাম সংক্রান্ত এমন সব সরীহ আয়াতের সংখ্যা বয়ান করা, যেগুলোর ‘ইবারাতুন নস’ থেকে কোনো হুকুম সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে। অধিকন্তু এটি হচ্ছে তাঁদের নিজ অনুসন্ধান। তাঁদের উক্ত কথার এমন ব্যাখ্যাই কোনো কোনো আহলে ইলম পেশ করেছেন। অন্যথায় ইশারাতুন নাস,দালালাতুন নাস, ইকতিযাউন নাস এবং দালালাতুল কালামের অন্যান্য পদ্ধতিতে যেসব আয়াত থেকে আহকাম আহরণ করা হয় এমন আয়াতের সংখ্যা উপরোক্ত সংখ্যার কয়েকগুণ। এছাড়া আহলে ফিকহ ও আহলে ইখতেসাস উলামায়ে কেরাম তো কাসাস ও আমছাল সংক্রান্ত আয়াতের ইশারা থেকেও কোনো কোনো বিধান আহরণ করে থাকেন। দ্রষ্টব্য : ইরশাদুল ফুহূল, শাওকানী ২/২৯৭-২৯৮
আর আহকাম সংক্রান্ত হাদীসের সংখ্যা তিন হাজার- একথা আবু বকর ইবনুল আরাবী রাহ.‘আল মাহসূল’-এ বলেছেন। কিন্তু তাঁর পূর্ববর্তী অনেক আইম্মায়ে হাদীস ও আইম্মায়ে ফিকহ থেকে আরো কম সংখ্যাও বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী ও ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল কাত্তান রাহ. থেকে বর্ণিত- আটশত। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহ. থেকে বর্ণিত- নয়শত। ইমাম কাযী আবু ইউসুফ রাহ. থেকে বর্ণিত- এগারশত।
উল্লেখ্য, এ সংখ্যাগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হল আহকাম সংক্রান্ত সরীহ ও সুস্পষ্ট কওলী হাদীসের মতনের সংখ্যা। ইবনুল আরাবী রাহ. সম্ভবত কওলী ও ফেয়েলী উভয় ধরনের হাদীসকে হিসেব করে বলেছেন। আর এ সংখ্যাগুলো তাঁরা বলেছেন নিজ নিজ অনুসন্ধান ও জানাশুনার ভিত্তিতে, যে কারণে তাদের সংখ্যার গণনায় তারতম্য হয়েছে। দ্রষ্টব্য: রিসালাতুল ইমাম আবী দাউদ ইলা আহলি মক্কাহ- শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর টীকাসহ ৩৫-৩৭;ইবনে মাজাহ আওর ইলমে হাদীস, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ. ১৬৪
এখানে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, উপরোক্ত সংখ্যাগুলো মূলত আহকাম সংক্রান্ত সরীহ ও মারফ‚ হাদীসের মতনের সংখ্যা। সুতরাং গায়রে সরীহ মারফু হাদীস, হাদীসে মওক‚ফ ও আছারে সাহাবা এবং একই হাদীসের বিভিন্ন সনদ ও রেওয়ায়েতকেও যদি হিসেব করা হয় তবে সেই সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। একারণে হাসান ইবনু যিয়াদ রাহ. বলেছেন-
كتبت عن ابن جريح اثني عشر ألف حديث كلها يحتاج إليها الفقهاء.
(দ্রষ্টব্য: সিয়ারু আলামিন নুবালা ৯/৫৪৪)
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সামিয়া রাহ. বলেছেন-
إن أبا حنيفة رحمه الله ذكر نيفا وسبعين ألف حديث وانتخب الآثار من أربعين ألف حديث.
মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফাহ; মোল্লা আলী কারী- আছারুল হাদীসিশ শরীফ পৃ. ১৭৪