ক) জরহ-তাদীল-এর ইমামগণের পরিচয়, মাকাম ও মর্যাদা এবং তাবাকা ও যামানাইত্যাদি বিষয়ে অবহিত হওয়া উলূমুল হাদীস-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি নিম্নোক্তকিতাবগুলোতে বিষয়টি অধ্যয়ন করতে পারেন :
১. তাকদিমাতুল জারহি ওয়াত তাদীল, ইমাম ইবনু আবী হাতিম (২৪০-৩২৭ হি.)
২. আলকামিল ফী জুয়াফাইর রিজাল, আবু আহমদ ইবনে আদী (২৭৭-৩৬৫ হি.)-এরমুকাদ্দিমা, পৃষ্ঠা : ১১৭-২৪১
৩. কিতাবুল মাজরূহীন, মুহাম্মাদ ইবনে হিববান আলবুসতী (২৭০-৩৫৪ হি.)-এর মুকাদ্দিমা,পৃষ্ঠা : ৩৪-৬০
৪. কিতাবুল মুযাক্কীন লিরুয়াতিল আখবার, হাকেম আবু আবদিল্লাহ
নিশাপুরী (৩২১-৪০৫ হি.)। এ কিতাবটির কথা লেখক নিজে তার কিতাব ‘মারিফাতু উলূমিলহাদীস’-এর অষ্টাদশ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
৫. যিকরু মান ইউতামাদু কওলুহূ ফিল জারহি ওয়াত তাদীল, হাফেয শামসুদ্দীন আযযাহাবী(৬৭৩-৭৪৮ হি.) রাহ.।
৬. হাফেয মুহাম্মাদ ইবনে আবদুর রহমান আসসাখাবী রাহ. রচিত ‘আলইলান বিততাওবীখলিমান যাম্মাত তারীখ’ (শেষ অনুচ্ছেদ
المتكلمون في الرجال
এবং ফাতহুল মুগীছ-এর ‘মারিফাতুছ ছিকাত ওয়ায যুয়াফা’ অধ্যায়। সাখাবী রাহ.-এর এআলোচনা এবং যাহাবী রাহ.-এর উপরোক্ত রিসালা শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহরাহ.-এর তাহকীক-তালীকসহ প্রকাশিত ‘আর্রাফউ ওয়াত তাকমীল ’কিতাবে রয়েছে।
৭. শায়খ আবদুল ফাত্তাহ রাহ.-এর তাহকীক-তালীকসহ প্রকাশিত ‘আররাফউওয়াততাকমীল’, মাওলানা আবদুল হাই লখনবী রাহ. (সংশ্লিষ্ট আলোচনা টীকাসহ)
৮. ‘উমারাউল মুমিনীনা ফিলহাদীস’, শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (১৩৩৬-১৪১৭ হি.)।
এছাড়াও ইমাম আবু ইয়ালা খলীলী রাহ.-এর-
الإرشاد في معرفة علماء الحديث
হাফেয যাহাবী রাহ.-এর
تذكرة الحفاظ مع الذيول عليها
এবং ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’-এই কিতাবগুলোতে মুহাদ্দিসীন ও নুক্কাদে হাদীসের জীবনীপাঠ করলেও তাঁদের তবাকা ও মাকাম সম্পর্কে অনেক মালুমাত হাসিল হবে।
উত্তর : খ) تاريخ صيانة السنة وتدوين الحديث
হাদীস ও সুন্নাহর সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিহাস সুদীর্ঘ ও সু-প্রাচীন। হাদীস ও সীরাত,উলূমুল হাদীস, তারীখুল উলূম এবং ইতিহাস ও জীবনী-গ্রন্থের বিপুল সম্ভারে এ বিষয়েরঅনেক আলোচনা এবং বহু তথ্য-উপাত্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর ইসতিশরাক ও ইনকারেহাদীসের ফিতনা আরম্ভ হওয়ার পর তার মোকাবেলায় উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ভাষায় এতবই-পুস্তক ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন যে, এ বিষয়ে আলাদা একটি গ্রন্থাগার প্রস্ত্তত হয়েগেছে। এখানে আমি কয়েকটিমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কিতাব ও প্রবন্ধের নাম উল্লেখ করছি
১. ابتداء التدوين في صدر الإسلام
মুহাম্মাদ আব্দুল হাই কাত্তানী রাহ. (১৩০৩-১৩৮২ হি.)
২. ‘আলহাদীস ওয়াল মুহাদ্দিসূন’, শায়খ মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ আবু যাহু (১৩২৭-১৪০৩ হিজরী)
৩. ‘আসসুন্নাহ কাবলাত তাদবীন’, মুহাম্মাদ আজাজ আলখাতীব
৪. صحائف الصحابة رضي الله عنهم وتدوين السنة المشرفة
আহমদ আবদুর রহমান আসসুইয়ান
৫. دلائل التوثيق المبكر للسنة والحديث
ইমতেয়াজ আহমদ, করাচী ইসলামী ইউনিভার্সিটি, পাকিস্তান।
৬. ‘আলওসাইকুস সিয়াসিয়্যাহ’, ড. মুহাম্মদ হামীদুল্লাহ (১৩২৬-১৪২৩ হি.)
৭. ‘রাসূলে আকরাম কী সিয়াসী যিন্দেগী’, ড. মুহাম্মদ হামীদুল্লাহ
৮.‘আসসুন্নাহ ফী আসরিন নবুওয়াহ’, শায়খ আল আহমদী আব্দুল ফাত্তাহ খলীল এবং তাঁরআরেকটি কিতাব ‘আসসুন্নাহ বা’দা আসরিন নুবুওয়াহ’
৯. معرفة النسخ والصحف الحديثية
শায়খ বকর ইবনে আব্দুল্লাহ আবু যায়েদ
১০. ‘তাদবীনে হাদীস’ (মূল উর্দূ) মাওলানা মানাযির আহসান গিলানী (১৩১০-১৩৭৬ হি.)
এর আরবী অনুবাদ করেছেন ড. আব্দুর রাযযাক ইস্কান্দার। এতে নববী যুগ থেকে খলীফায়েরাশেদ আলী রা.-এর যুগ পর্যন্ত হেফাজত হাদীসের ইতিহাস সন্নিবেশিত হয়েছে।
১১. دراسات في الحديث النبوي وتاريخ تدوينه
ড. মুহাম্মদ মুস্তফা আ’জমী। এটি হাদীস সংকলনের ইতিহাস সংক্রান্ত একটি প্রামাণ্য ওতথ্যবহুল গ্রন্থ।
الإمام ابن ماجه وكتابه السنن
বা
ما تمس إليه الحاجة لمن يطالع سنن ابن ماجه
(এক কিতাবের দুই নাম) এবং ‘ইবনে মাজাহ আওর ইলমে হাদীস’, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুররশীদ নু’মানী রহ. এই কিতাব দুটি হাদীস ও ফিকহ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পাশাপাশিসাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেঈনের যুগে হাদীসের ইতিহাস, হাদীস শাস্ত্রে তাঁদের মানহাজও পরবর্তী যুগের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে সারগর্ভ ও নির্ভরযোগ্য স্বতন্ত্র কিতাবেরমর্যাদা রাখে।
১৩. লাহোর থেকে প্রকাশিত মাসিক উর্দূ পত্রিকা ‘মাহনামা মুহাদ্দিস’-এর ‘ইনকারে হাদীস’বিষয়ক সংখ্যা। এতে হাদীস অস্বীকারের ফেতনা, হাদীসের হেফাজত ও সংকলনের ইতিহাসসম্পর্কে প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাড়াও উপমহাদেশে ইনকারে হাদীসের ফিতনার প্রেক্ষাপটে এ সংক্রান্তযত গ্রন্থ, লিটারেচার ও গবেষণাপত্র লেখা হয়েছে তার তালিকা ও নির্ঘণ্ট পেশ করা হয়েছে।এছাড়া
حجية الحديث ومكانة السنة
বিষয়ে লিখিত কিতাবাদি এবং এ বিষয়ে মুনকিরীনে হাদীস ও মুসতাশরিকীনের সৃষ্ট বিভিন্নসন্দেহ ও সংশয়ের খন্ডনে রচিত কিতাবসমূহ থেকেও হাদীস সংকলনের ইতিহাস পাঠ করাযায়। যেমন-
১. ড. মুস্তফা সিবায়ী রাহ.-এর
السنة ومكانتها في التشريع الإسلامي
২. ড. আবদুর রাযযাক হামযা (১৩০৮-১৩৯২ হি.)-এর
ظلمات أبي رية أمام أضواء السنة المحمدية
৩. শায়খ আবদুর রহমান ইবনে ইয়াহইয়া আলমুয়াল্লিমী (১৩১৩-১৩৮৬ হি.) লিখিত
الأنوار الكاشفة لما في كتاب أضواء على السنة من الزلل والتضليل والمجازفة
৪. শায়খ আবদুল গনী আবদুল খালেক (১৩২৬-১৪০৩ হি.)-এর ‘হুজ্জিয়াতুস সুন্নাহ’।
৫. মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী (১৩১৯-১৪১২ হি.)-এর
نصرة الحديث في الرد على منكري الحديث
(মূল উর্দু ভাষায় রচিত, আরবী অনুবাদ করেছেন মাসউদ আহমদ আজমী)
৬. ড. মুহাম্মাদ আবু শাহবাহ-এর
دفاع عن السنة
এবং এ জাতীয় আরো অনেক কিতাব।
আলোচ্য বিষয়ে আরো বিস্তৃত ও গবেষণামূলক পড়াশোনার জন্যে আপনাকে আরো কী কীকরতে হবে তা উপরোক্ত দুই ধরনের কিতাব মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে জানতেপারবেন ইনশাআল্লাহুল আযীয। আমি এখানে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি
ইঙ্গিত করছি-
১. হাদীস ও আছার এবং সিয়ার ও শামায়েলের কিতাবগুলো হাদীস সংকলনের ইতিহাসেরমৌলিক উপাদান।
ঐসব কিতাবে ও খায়রুল কুরূনের ইতিহাস সম্পর্কিত সকল কিতাবে হাদীস সংকলন সংক্রান্তবিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্যমান রয়েছে।
২. সিয়ার ও মাগাযী যেহেতু মূলত ইলমুল হাদীসেরই একটি অংশ তাই এর ইতিহাসওআপনাকে পাঠ করতে হবে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে।
৩. অনুরূপভাবে আততাফসীর বিলমাছূরও ইলমুল হাদীসেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এরইতিহাস ও ক্রমবিকাশও হাদীস সংকলনের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৪. সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ী তথা সালাফের আছার এবং ফিকহ ও ফতোয়াওহাদীসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং ফিকহুস সলফের ইতিহাসও ইলমুল হাদীসের ইতিহাসেরইএকটি অধ্যায়।
৫. সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের আহলে ইলমের ‘ইলমী যিন্দেগী’ অধ্যয়ন করলেওঅনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে।
৬. সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন যুগের তালীম ও তারবিয়াতের ইতিহাসের উপর বেশকিছু কিতাবও রচিত হয়েছে। সেগুলো থেকেও সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
৭.‘গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার’ একটি স্বতন্ত্র ফন ও শাস্ত্র। এ বিষয়ে যেসব কিতাব রচিত হয়েছে তাথেকেও ইস্তিফাদা করা যেতে পারে।
৮. বিশ্বের প্রাচীন কুতুবখানাগুলোর মাখতূতাত তথা পান্ডুলিপিসমূহ এবং মাতবূয়াত তথামুদ্রিত কিতাবসমূহের পরিচিতি ও ইতিহাসের উপর লিখিত গ্রন্থগুলোও আলোচ্য বিষয়েরগুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র।