হুযুর, গত কোনো এক সংখ্যায় সিয়ারু আলামিন নুবালা থেকে তরজমা বের করতে ‘তবাকা’-এর সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেন ফাহারিস এর আশ্রয় না নেওয়া হয় সে কথাও বলা হয়েছে। জানার বিষয় হল, তবাকা হিসাবে তরজমা বের করার পদ্ধতি কী? জানালে খুশি হব।
হুযুর, গত কোনো এক সংখ্যায় সিয়ারু আলামিন নুবালা থেকে তরজমা বের করতে ‘তবাকা’-এর সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেন ফাহারিস এর আশ্রয় না নেওয়া হয় সে কথাও বলা হয়েছে। জানার বিষয় হল, তবাকা হিসাবে তরজমা বের করার পদ্ধতি কী? জানালে খুশি হব।
আলকাউসারের ঐ সংখ্যায় ‘তবাকা’-এই পরিভাষাটির অর্থ লেখা হয়েছে, সমকালীন ব্যক্তিবর্গ যাদের মাঝে মিল রয়েছে বয়সের এবং সমকালীন মাশায়েখদের শিষ্যত্ব গ্রহণে। সুতরাং ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ থেকে তবাকা হিসেবে জীবনী বের করার জন্য প্রয়োজন হবে উদ্দীষ্ট ব্যক্তি কোন যামানার বা কোন প্রজন্মের সে-সম্পর্কে ধারণা থাকা। এরপর‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ গ্রন্থের কোথায় কোনো যামানার ও প্রজন্মের লোকদের জীবনী লিপিবদ্ধ হয়েছে তা জানতে হবে। যেমন এতে প্রথমে সাহাবায়ে কেরামের জীবনী সন্নিবেশিত হয়েছে। এরপর তাবিয়ীনের জীবনী লিপিবদ্ধ হয়েছে। এতে তাবিয়ীদেরকে জন্ম, মৃত্যু এবং ইলম অর্জনের সময় ইত্যাদির ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী ও পরবর্তী হওয়া- এই বিবেচনায় ছয় তবাকায় বিভক্ত করা হয়েছে। এরপর আতবাউত তাবিয়ীন এবং তাঁদের শাগরিদ ও শাগরিদদের শাগরিদ- এভাবে ধারা পরম্পরায় হাফেয যাহাবী রাহ.-এর মাশায়েখ ও আসাতিযার তবাকা পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হয়েছে। এখন এই ‘তবাকা’গুলোর বিন্যাস এবং কোন খণ্ডে কোন তবাকার জীবনী লিপিবদ্ধ হয়েছে তা জানার জন্য সরাসরি কিতাবের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। কোন তবাকা কিতাবের কোথায় শুরু হয়েছে আর কোথায় শেষ হয়েছে তা আপনি পুরো কিতাবের উপর ইজমালীভাবে নযর বুলিয়েও জানতে পারেন। এক্ষেত্রে তবাকাভিত্তিক যে ফিহরিস রয়েছে সেটা থেকেও প্রাথমিকভাবে সহযোগিতা নিতে পারেন। প্রথমে একটু কঠিন মনে হলেও কিতাবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে এবং অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
Sharable Link
আমি শিক্ষার্থীদের পাতায় প্রকাশিত ‘কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলার শানে ব্যবহৃত বহুবচনরূপী সর্বনামের অনুবাদ প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধটি বুঝে পড়ার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে তা খুবই দালীলিক ও তাহকীকপূর্ণ মনে হয়েছে।
প্রবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে যে,‘বিভিন্ন ভাষায় ব্যক্তির মর্যাদা ও গৌরব প্রকাশের জন্য একবচনের স্থলে বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার হয়ে থাকে’। এখানে সর্বনামের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি এবং আলোচনা থেকে বুঝে আসে যে, নাম-উত্তম-মধ্যম পুরুষ সর্বক্ষেত্রেই ضمير العظمة ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে شرح الرضي থেকেও একটি বক্তব্যকে দলীল হিসেবে পেশ করা হয়েছে :
ويقول الواحد المعظم أيضا : نفعل، وفعلنا، وهو مجاز عن الجمع لعدهم المعظم كالجماعة
অথচ উল্লেখিত বক্তব্যের পরই মুসান্নিফ লিখেছেন :
ولم يجئ للواحد الغائب والمخاطب المعظمين فعلوا وفعلتم في الكلام القديم المعتد به وإنما هو استعمال المولدين.
এখান থেকে বুঝে আসে উত্তম পুরুষের ক্ষেত্রে ضمير العظمة ব্যবহৃত হলেও নামপুরুষ ও মধ্যমপুরুষের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য পূর্ববর্তী আরবী ভাষাবিদদের ব্যবহারে ضمير العظمة -এর ব্যবহার পাওয়া যায় না বরং তা পরবর্তীতে সৃষ্ট ব্যবহার। মুসান্নিফের পরবর্তী উক্তিটি প্রবন্ধের এ দাবির সাথে অসংগতিপূর্ণ মনে হয়। বিষয়টি স্পষ্ট করলে বাধিত হব।
হাযের ও গায়েবের সীগার ক্ষেত্রে ‘যমীরুল আযামাহ’-এর ব্যবহারকে মুয়াল্লাদ বলা ইমাম রযীউদ্দীন রাহ.-এর একটি শায কওল। অন্যথায় তাঁর পূর্ববর্তী একাধিক ইমামুল লুগাহ ‘সীগায়ে হাযের’-এর ক্ষেত্রে ‘যমীরুল আযামাহ’-এর ব্যবহারকে ফসীহ আরবী এবং আরবী ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইমামুল লুগাহ আবুল হুসাইন ইবনু ফারিস রাহ. (মৃত্যু ৩৯৫ হি.) তাঁর ‘ফিকহুল লুগাহ’ গ্রন্থে বলেন-
و من سنن العرب مخاطبة الواحد بلفظ الجمع، فيقال للرجل العظيم انظروا في أمري ـ وكان بعض أصحابنا يقول : إنما يقال هذا، لأن الرجل العظيم يقول : نحن فعلنا، فعلى هذا الابتداء خوطبوا في الجواب ومنه في القرآن: "قال رب ارجعون" (سورة المؤمنون : ৯৯)
উপরোক্ত নসটি ইমাম সুয়ূতী রাহ. (মৃত্যু ৯১১ হি.) ‘আল মুযহির ফী উলূমিল লুগাহ’ গ্রন্থে নকল করেছেন। ইমাম ইবনু ফারিসের মতো একই কথা ইমাম আবু মনসূর ছায়ালাবী (মৃত্যু ৪২৯ হি.) ‘সিররুল আদব ফী মাজারী কালামিল আরব’ কিতাবে এবং ইমাম আবুল ফাতহ উছমান ইবনু জিন্নী ‘আল-খাসায়িস’ গ্রন্থে বলেছেন। দ্রষ্টব্য: তাফসীরু রূহুল মাআনী, মাহমুদ আলূসী ১১ ভলিয়ম ২০ খণ্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা সূরা কাসাসের ৯ নং আয়াতের তাফসীর। এখানে ইমাম মাহমূদ আলূসী রাহ. বলিষ্ঠ ভাষায় রযীউদ্দীন রাহ.-এর শায কওলকে খণ্ডন করেছেন এবং উপরোক্ত আইম্মায়ে লুগাহ-এর হাওয়ালা দিয়েছেন।
সীগায়ে হাযের-এর ক্ষেত্রে যমীরুল আযামাহর ব্যবহার দৃষ্টান্ত প্রাচীন আরবী কবিতায় রয়েছে।
দ্রষ্টব্য : তাফসীরুল কাশশাফ, জারুল্লাহ যমখশারী ৩/৪২ সূরা মুমিনূন ৯৯ নং আয়াত, আদ-দুররুল মাসূন ৫/২০০ সূরা মুমিনূন ৯৯ নং আয়াত
মাহমুদ আলুসী রাহ. বলেন-
والحق أن التعظيم يكون في ضمير المتكلم والمخاطب بل والغائب، والاسم الظاهر، وإنكار ذلك غير رضي والإيهام الذي يدعيه ابن مالك هنا لا يلتفت إليه.
দ্রষ্টব্য : রূহুল মাআনী, সূরা মুমিনূন-এর ৯৯নং আয়াতের তাফসীর।
Sharable Link