(ক) নিয়মিত দেখার জন্য সাধারণ অভিধানগুলোর মধ্যে আধুনিককালে রচিত সহজ ও সংক্ষিপ্ত অভিধান আলমুজামুল ওয়াসীত এবং আগের অভিধানগুলোর মধ্যে আল্লামা মাজদুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকুব ফিরোযাবাদী রাহ. (৮১৭ হি.)-এর ‘আলক্বামুসুল মুহীত’ কাছে রাখা যেতে পারে। আর কুরআনে কারীমের আলফাযের জন্য রাগেব আসফাহানী (৪২৫ হি.) রাহ.-এর المفردات في غريب القرآن হাদীসের আলফাযের জন্য ইবনুল আছীর রাহ.-এর النهاية في غريب الحديث والأثر ফিকহের আলফাযের জন্য নাসির ইবনু আব্দিস সায়্যেদ আল মুতাররিযী (৬১০ হি.) রাহ.-এর المغرب في ترتيب المعرب এবং আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ ফাইয়ুমী (৭৭০ হি.)-এর المصباح المنير في غريب الشرح الكبير দেখতে পারেন। আর অতিরিক্ত তাহকীক ও তাফসীলের জন্য প্রয়োজনের মুহূর্তে লুগাতের অন্যান্য উৎসগ্রন্থগুলোর শরণাপন্ন হতে হবে।
(খ) আগের যামানায় রচিত ও সংকলিত কোনো আরবী কিতাবের পাণ্ডুলিপি বর্তমান যামানায় যখন সম্পাদনার ও প্রকাশনার আধুনিক রীতি অনুসারে ছাপা হয় তখন তার ইবারতে যে ইরাব ও হরকত লাগানো তা সাধারণত মুহাক্কিক ও প্রকাশকের পক্ষ থেকেই লাগানো হয়। তবে মূল পাণ্ডুলিপিতে কখনো কখনো মুসান্নিফ, লিপিকর বা অন্য কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকেও ইবারতের কিছু কিছু ইরাব ও হরকত লাগানো থাকে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যবতুন নুসূস-এর ক্ষেত্রে আসল কর্তব্য হল, নাহবী, ছরফী ও লুগাবী উসুল ও কাওয়ায়েদ অনুসরণ করা, মুহাক্কিক ও মুতকিন আহলে ইলম ও মাশায়েখদের রেওয়ায়াত এবং তালাফফুয ও উচ্চারণ অনুসরণ করা এবং যব্ত বিষয়ক লুগাবী ও অন্যান্য কিতাবের মুরাজাআত করা। যাহোক, আধুনিককালে মুদ্রিত কোনো কিতাবের ইবারতের ইরাব ও হরকতের বিশুদ্ধতা নির্ভর করে মুহাক্কিকের উপর। মুহাক্কিক যদি এ বিষয়ে মুতকিন ও দক্ষ হয়ে থাকেন তবে তার তাকলীদ করা যেতে পারে। তবে আসল করণীয় সেটাই, যা একটু আগে উল্লেখ করা হয়েছে।
(গ) নির্ভরযোগ্য আরবী অভিধান একাধিক রয়েছে। বিভিন্ন মাকসাদে বিভিন্ন আঙ্গিকে এসব অভিধান রচিত হয়েছে। এগুলোর একেকটার একেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন
১. মুতাকাদ্দিমীন আইম্মায়ে লুগাত কর্তৃক রচিত লুগাতের মৌলিক উৎসগ্রন্থসমূহের সারনির্যাসরূপে সংকলিত معاجم الألفاط (শব্দের মাদ্দা ভিত্তিক শব্দকোষ) সমূহের মধ্যে লিসানুল আরব এবং تاج العروس من جواهر القاموس সর্বাধিক জামে ও সমৃদ্ধ। এ দুটির মধ্যে ‘তাজুল আরূসের’ একটি বৈশিষ্ট্য হল, এতে বহুসংখ্যক ব্যক্তি ও স্থানের নামের যব্ত ও পরিচয় সংকলিত হয়েছে।
২. معاجم المعاني অর্থাৎ বিষয়ভিত্তিক সমার্থক শব্দাবলীর অভিধান হিসেবে আলী ইবনু ইসমাঈল ইবনু সীদাহ রাহ. (৪৫৮ হি.)-এর আলমুখাস্সিস এবং আবু মানসুর আব্দুল মালিক ছায়ালিবী রাহ. (৪২৯ হি.)-এর فقه اللغة وسر العربية কিতাব। আলমুখাস্সিস সর্বাধিক সুন্দর, তবে বেশ দীর্ঘ কিতাব তাই الإفصاح في فقه اللغة নামে সম্প্রতি এর একটি তালখীস ও তাহযীব বেরিয়েছে।
৩. শব্দের ইশতেকাক ও বুৎপত্তি এবং একই মাদ্দার বিভিন্ন শব্দের পারস্পরিক অর্থগত সাদৃশ্য ও যোগসূত্র পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আহমদ ইবনু ফারিস রাহ. (৩৯৫ হি.)-এর مقايس اللغة তথ্যবহুল চমৎকার কিতাব।
৪. معاجم الأسلوب তথা আরবী বাকরীতি বিষয়ক অভিধানগুলোর মধ্যে কুদামাহ ইবনু জাফর (৩৩৭ হি.)-এর جواهر الألفاظ এবং আব্দুর রহমান ইবন ঈসা হামযানী (৩২০ হি.)-এর الألفاظ الكتابية সুন্দর কিতাব।
৫. كتاب المعربات-এর পুরাতন কিতাবগুলোর মধ্যে আবু মানসূর মাওহুব জাওয়ালীকী (৪৬৫ হি.)-এর المعرب এবং আহমদ খফাজী (১০৬৯ হি.)-এর
شفاء الغليل فيما في كلام العرب من الدخيل
(ঘ) লিসানুল আরবের মূল তারতীব হল, মাদ্দার শেষ হরফ দ্বারা ‘বাব’ এবং ঐ বাবে অন্তর্ভুক্ত শব্দগুলোকে মাদ্দার প্রথম হরফের ভিত্তিতে ‘ফছল’ আকারে ভাগ করা। কিন্তু সম্প্রতি মিশরের এক ব্যক্তি বর্তমান যামানার লোকদের সহজার্থে মূল তারতিবের পরিবর্তে পুরো কিতাবকে মাদ্দার প্রথম অক্ষর অনুসারে সাজিয়েছেন।
(ঙ) হাঁ, উল্লেখিত কিতাবগুলো সম্প্রতি একাধিক মাকতাবা থেকে ছেপেছে।
সর্বশেষ একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আপনি আপনার প্রশ্নে অভিধান ও শব্দকোষ অর্থে ‘আল-কামূস’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এটি মুনাসিব ব্যবহার নয়। কারণ আল-কামূস শব্দের অর্থ সাগর বা সমুদ্র। মাজদুদ্দীন ফিরূযাবাদী রহ. তার রচিত অভিধানকে ‘আল-কামূসুল মুহীত’ নাম করেছিলেন এজন্য যে এটি একটি জামে ও সমৃদ্ধ কিতাব; এজন্য নয় যে ‘আল-কামূস’ অর্থই হল অভিধান। কিন্তু কেউ কেউ এখান থেকে ধারণা করেছে যে, আল-কামূস অর্থ অভিধান। এ ধারণা ঠিক নয়। শব্দকোষ ও অভিধান অর্থে আরবীতে المعجم শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এ বিষয়টি শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. تصحيح الكتب وصنع الفهارس المعجمة রিসালায় তামবীহ করেছেন।