মুহাম্মাদ আতাউর রহমান - ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বাজার
২৩০১. Question
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ইমামতি ছাড়াও এলাকার সিনিয়র মাদরাসায় (আলিয়া) শিক্ষকতা করেন। ঐ মাদরাসায় সহশিক্ষা চালু আছে। ছেলেমেয়ে একত্রে ক্লাস করে। (তবে মেয়েরা বোরকা বা নেকাব পরে থাকে।)
আবার কিছু মুসল্লী তাকে অপছন্দ করেন। এ অবস্থায় ঐ ইমামের পিছনে ইক্তিদা করাতে শরীয়তে কোনো সমস্যা আছে কি না? থাকলে দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
Answer
মূল উত্তরের আগে ভূমিকাস্বরূপ কয়েকটি বিষয় জানা দরকার।
১. সহশিক্ষা তথা নারী-পুরুষের যৌথ শিক্ষা-ব্যবস্থা ইসলাম সমর্থিত নয়। এটি বিজাতীয় শিক্ষা-পদ্ধতি। একসময় স্কুল-কলেজেও আলাদা ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীতে পাশ্চাত্যের অনুকরণে সহশিক্ষা চালু করা হয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন আলিয়া পদ্ধতির দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী।
মেয়েরা বোরকা পরা থাকলেও সহশিক্ষা ব্যবস্থা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পাঠশালায় একজন ছাত্রী শুধু নীরব শ্রোতা নয়; তাকে যেমন শিক্ষকের কথা শুনতে হয়, তেমনি পড়া শুনাতে হয় এবং প্রয়োজনে প্রশ্নও করতে হয়। এমনিভাবে তাকে লেখা দেখাতে হয়, বাড়ির কাজ দেখাতে হয়। এসব কিছুই হয়ে থাকে তার সহপাঠি বেগানা ছাত্রদের কাছে বসে এবং বেগানা পুরুষ শিক্ষকের সাথে সামনাসামনি ও সরাসরি। বলাবাহুল্য যে, এ সকল কর্মকান্ড কুরআন মজীদের মৌলিক নির্দেশনা পরিপন্থী। সূরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
২. শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে এর গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। এক হাদীসে ইরশাদ করেছেন, ইমাম মুসল্লীদের নামাযের যিম্মাদার। (জামে তিরমিযী ১/২৯)
অন্য হাদীসে আছে, যদি তোমরা চাও, তোমাদের নামায কবুল হোক তাহলে তোমাদের ইমাম যেন হয় তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি। কারণ ইমাম হল তোমাদের ও তোমাদের রবের মধ্যকার প্রতিনিধি। (মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৩৭)
তাই ফকীহগণ বলেন, ইমামকে হতে হবে সহীহ আকীদাসম্পন্ন, খোদাভীরু-পরহেযগার, সুন্নতের অনুসারী, বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী আলেম।
৪. মসজিদকমিটি বা মহল্লাবাসীর কর্তব্য হল, দ্বীনদার-পরহেযগার যোগ্য আলেমকে ইমাম বানানো। সম্পূর্ণ সততা ও নিষ্ঠার সাথে এই কর্তব্য পালন করা তাদের উপর ওয়াজিব। যদি তারা এতে অবহেলা করে তাহলে গুনাহগার হবে।
উপরোক্ত ভূমিকার পর এবার মূল জবাব এই-
যেহেতু সহশিক্ষা ইসলামে জায়েয নয় এবং একজন ইমামের এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার অর্থ হল শরীয়ত পরিপন্থী কাজে সহযোগিতা করা, যা কোনো মতেই কাম্য হতে পারে না। তাই এক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, ঐ ইমামকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা। যদি তিনি এরপরও তা না ছাড়েন তাহলে একজন দ্বীনদার পরহেযগার ও উপরোক্ত গুণাবলি সম্পন্ন আলেমকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিবে।
-সূরা আহযাব : ৫৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬৯; জামে তিরমিযী ১/২৯; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৩৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৭; ইবনে মাজাহ পৃ. ৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; ইলাউস সুনান ৪/৩৫২; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬০৩; মারাকিল ফালাহ ১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫১৩