আবু হুরায়রা - কুমিল্লা
৬৬০৫. Question
আমি এক ছাতা ব্যবসায়ী থেকে ২৭৫ টাকা করে ৫০ পিস ছাতা খরিদ করি। তার সাথে আমার এভাবে চুক্তি হয়েছিল যে, প্রতি পিছ ছাতায় সে তার কেনা মূল্য ও খরচের ওপর ২০ টাকা করে লাভ নেবে। এই চুক্তির পর বিক্রেতা আমাকে ছাতাগুলো বুঝিয়ে দিয়ে মূল্য পরিশোধের জন্য এক সপ্তাহ সময় দেয়। এরই মধ্যে আমি বিভিন্নভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিতভাবে জানতে পারি যে, বাস্তবে বিক্রেতার কেনা মূল্য প্রতি পিস ছাতা ২৩২ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচসহ (বিক্রেতার কথা অনুযায়ী ৭ টাকা) যার মূল্য মোট ২৩৯ টাকা হয়। কিন্তু বিক্রেতা বিক্রয় চুক্তির সময় তার কেনা মূল্য আমাকে ২৪৮ টাকা করে বলেছে। আর আনুষঙ্গিক খরচ ৭ টাকা ধরে ২৫৫ টাকা হিসাব করেছে। অর্থাৎ সে তার কেনা মূল্য ও খরচের ওপর আমাকে ১৬ টাকা করে বাড়িয়ে বলেছে, ফলে ২০ টাকার পরিবর্তে প্রতি পিস ছাতায় সে ৩৬ টাকা করে লাভ ধরেছে।
এখন আমি জানতে চাই, যেহেতু ২০ টাকা করে লাভ নেওয়ার শর্তে বিক্রয় চুক্তিটি হয়েছিল, তাই এখন আমি কি বিক্রেতাকে ছাতাগুলোর মূল্য ৩৬ টাকা লাভে পরিশোধ না করে ২০ টাকা লাভে পরিশোধ করতে পারব?
Answer
প্রশ্নোক্ত ক্রয়-বিক্রয়ে যেহেতু বিক্রেতা তার পূর্ব কেনা মূল্যের ওপর নির্ধারিত অংকের লাভ গ্রহণ করবে– এই শর্তের ভিত্তিতে আপনি তার সাথে চুক্তি করেছেন, তাই এটি বাইয়ে মুরাবাহার অন্তর্ভুক্ত। অতএব এক্ষেত্রে বিক্রেতা ক্রয় মূল্য বলার ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কারণে আপনার জন্য দুটি সুযোগ রয়েছে।
একটি হল, আপনি ক্রয়কৃত ছাতা নিতে চাইলে প্রতি পিসের মূল্য বাবদ ২৭৫ টাকাই পরিশোধ করতে হবে; ২৫৯ টাকা করে নয়।
অবশ্য বিক্রেতার নৈতিক কর্তব্য হল, যেভাবে আপনার সাথে তার চুক্তি হয়েছে সেভাবেই মূল্য নেওয়া; বাড়িয়ে না নেওয়া।
দ্বিতীয়টি হল, আপনি যদি এই দামে ছাতাগুলো নিতে না চান, তাহলে চুক্তি বাতিল করে ছাতাগুলো ফেরতও দিতে পারবেন। তবে ছাতাগুলো ফেরত না দিতে চাইলে বিক্রেতার সম্মতি ছাড়া ২০ টাকা লাভ ধরে ২৫৯ টাকা করে মূল্য প্রদানের সুযোগ নেই।
তবে উল্লেখ্য যে, বাইয়ে মুরাবাহা হোক বা সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়, সকল ক্ষেত্রেই ক্রেতাকে পণ্যের মূল্য বা গুণগত মান বলার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যে কবীরা গুনাহ, এর মাধ্যমে যে ব্যবসার বরকত কমে যায়, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন–
فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا.
যদি তারা সত্য বলে ও যথাযথ অবস্থা বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেওয়া হবে, আর যদি দোষ-ত্রুটি গোপন করে এবং মিথ্যা বলে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত নষ্ট করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৭৯)
তাই মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সততা ও সত্যবাদিতার সাথে ব্যবসা করা জরুরি।
* كتاب >الأصل< ২/৪৮২: وإذا باع الرجل متاعاً مرابحة، فخانه في المرابحة ودلس له، فإن المشتري بالخيار إذا اطلع على ذلك: إن شاء رد المتاع، وإن شاء أخذه بالثمن الذي اشتراه به، لا ينقص منه شيئاً.
–আলমুহীতুর রাযাবী ২/৬৩১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৬৯; আলইখতিয়ার ২/৬৯; দুরারুর হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ১/৩৭৩, ৩৬৯