আবদুল্লাহ - ঢাকা
৬৫৭৭. Question
আমাদের মাদরাসা একটি মসজিদের পাশে। মাদরাসাটি মসজিদের সাথেই লাগানো বিল্ডিংয়ে। এক্ষেত্রে মাদরাসার লোকজন কি দরস-তাদরীসের কারণে নিজেরা আলাদা জামাত করতে পারবে? যেমন মসজিদে যোহর নামায সোয়া একটায়। মাদরাসার লোকেরা চাচ্ছে, তাদের দরসের সুবিধার্থে ছাত্রদের নিয়ে ১:৩০ মিনিটে আলাদা জামাত করবে।
প্রশ্ন হল, দরস-তাদরীসের বিষয়কে সামনে রেখে জামে মসজিদের জামাত বাদ দিয়ে নিজেরা জামাত করলে কোনো অসুবিধা আছে কি?
মাদরাসার এক হুজুর বললেন, ইলম ও ফিকহের তাদরীসের কারণে মসজিদের জামাতে নামায না পড়ে দরসের পর মাদরাসায় নিজেরা মিলে জামাত করে নিলে কোনো অসুবিধা নেই। তার কথা কি ঠিক?
Answer
না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদের জামাতে না গিয়ে মাদরাসায় পৃথক জামাতের নিয়ম করা Ñবিশেষ করে যেখানে মাদরাসাটি মসজিদের সাথে লাগানো বিল্ডিংয়েইÑ কিছুতেই শরীয়তসম্মত হবে না। বরং মাদরাসার লোকজন মসজিদে গিয়েই নামায আদায় করবে।
ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার, পুরুষের জন্য ফরয নামায আদায়ের স্থান হল মসজিদ। গ্রহণযোগ্য ওযর ছাড়া নিয়মিত মসজিদ ছেড়ে অন্যত্র নামায পড়া এবং এটিকে অভ্যাস ও নিয়ম বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই। বহু সংখ্যক হাদীস-আছারে মসজিদের জামাতে নামায আদায়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, মসজিদের জামাতে উপস্থিত না হওয়ার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে এবং একে মুনাফিকদের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ
لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْ عُلِمَ نِفَاقُه، أَوْ مَرِيْضٌ، إِنْ كَانَ الْمَرِيْضُ لَيَمْشِيْ بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتّى يَأْتِيَ الصَّلَاةَ، وَقَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلَاةَ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِيْ يُؤَذَّنُ فِيْهِ.
আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, নামায (-এর জামাত) থেকে পিছিয়ে থাকত কেবল এমন মুনাফিক, যার নিফাক স্পষ্ট ছিল অথবা অসুস্থ ব্যক্তি। তবে আমরা কোনো কোনো অসুস্থকেও দেখতাম, দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর করে তারা নামাযের জন্য চলে আসত।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আরো বলেন, নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সুনানুল হুদা অর্থাৎ হেদায়েতের তরীকাসমূহ শিখিয়েছেন। হেদায়েতের এই তরীকাসমূহের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যেখানে আযান হয় সেখানে অর্থাৎ মসজিদে এসে নামায আদায় করা। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৪
আরো বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেনÑ
مَنْ سَرَّه أَنْ يَلْقَى اللهَ غَدًا مُسْلِمًا، فَلْيُحَافِظْ عَلَى هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ، فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى، وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّيْ هذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِه، لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ.
যে ব্যক্তি কাল (হাশরের ময়দানে) ‘মুসলিম’ অবস্থায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে চায়, তার উচিত এই নামাযগুলো মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা। কেননা আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্য সুনানুল হুদা অর্থাৎ হেদায়েতের তরীকাসমূহ সুনির্ধারিত করে দিয়েছেন। আর এই নামাযগুলো মসজিদে গিয়ে আদায় করা এই হেদায়েতের তরীকাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যদি তোমরা ঘরে নামায পড়তে থাকো, যেভাবে পিছিয়ে থাকা লোক (মুনাফিক) ঘরে নামায আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর পথ ছেড়ে দিলে। আর নবীর পথ ছেড়ে দিলে তোমরা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৪
আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ
لَا صَلَاةَ لِجَارِ الْمَسْجِدِ إِلَّا فِيْ الْمَسْجِدِ. (قَالَ الثَّوْرِيُّ فِي حَدِيْثِه) قِيْلَ لِعَلِيٍّ: وَمَنْ جَارُ الْمَسْجِدِ؟ قَالَ: مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ.
মসজিদের প্রতিবেশী ব্যক্তির নামায মসজিদ ব্যতীত হবে না। আলী রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, মসজিদের প্রতিবেশী কে?
তিনি বললেন, যার কাছে আযানের ধ্বনি পৌঁছে। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৯১৫
এছাড়া আরো বহু হাদীস-আছারে মসজিদের জামাত ছাড়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ধমকি এসেছে। ফকীহগণও পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আযান শোনার পর নামায আদায়ের জন্য মসজিদে আসা এবং মসজিদের জামাতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। কেউ যদি সক্ষমতা সত্ত্বেও নিয়মিত মসজিদের জামাত ছেড়ে দেয়, তাহলে সকল ফকীহের মতেই এটি বড় অন্যায় কাজ এবং এ কারণে সে গোনাহগার হবে।
ফকীহগণ একথাও স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, দ্বীনী ইলম এবং মাসআলা-মাসায়েলের দরস-মুযাকারার জন্যও যদি কেউ নিয়মিত মসজিদের জামাতে না আসে, তাহলেও সে গোনাহগার হবে। নিয়মিতভাবে মসজিদের জামাত ছাড়ার জন্য ইলম ও ফিকহের দরস-মুযাকারাও ওযর হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু একে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম বানিয়ে ফেলা আরো বড় অন্যায় ও গোনাহের কাজ।
এক্ষেত্রে ‘ইলম ও ফিকহের তাদরীসের কারণে মসজিদের জামাতে নামায না পড়ে দরসের পর মাদরাসায় নিজেরা মিলে জামাত করে নিলে কোনো অসুবিধা নেই’ বলে যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। ইলম ও ফিকহের দরসের ওযরে বিশেষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তালিবে ইলমের জন্য কখনো মসজিদের জামাত ছাড়া জায়েয হওয়ার কথা কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন। কিন্তু সবসময়ের জন্য এটিকে আগে থেকেই নিয়ম বানিয়ে নেওয়াকে কোনো ফকীহ জায়েয বলেননি। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
Ñফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; আলগায়া, সারুজী ৩/৩২১; মি‘রাজুদ দিরায়া ১/৭৬৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৫; ইলাউস সুনান ৪/১৮৬-১৮৮