শরীফ হাসান - খুলনা
৬৫৫৩. Question
হুজুর, আমার স্ত্রী মাঝে মাঝেই সামান্য বিষয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয় এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও খারাপ আচরণ করে। তাকে কিছু বললে সে বলে, ভালো না লাগলে আমাকে তালাক দিয়ে দিতে পারো। একদিন ঝগড়ার সময় এরকম তালাকের কথা বললে আমি তাকে বলেছি, তোমাকে তালাক দিয়ে দিলাম। একথা বলার পরই সে কান্নাকাটি শুরু করে এবং বলে, সে ভালো হয়ে চলবে আর খারাপ আচরণ করবে না।
আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে?
উল্লেখ্য, আমি বায়েন তালাকের নিয়তে তালাক দিয়েছি।
Answer
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বায়েন তালাকের নিয়তে ঐ কথা বললেও এর দ্বারা আপনার স্ত্রীর ওপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। বায়েন তালাক পতিত হয়নি। কেননা এটি রজয়ী তালাকের শব্দ। বায়েন তালাকের শব্দ নয়। তাই এক্ষত্রে বায়েনের নিয়ত করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না; বরং এর দ্বারা তালাকে রাজয়ীই পতিত হবে।
সুতরাং এক্ষেত্রে চাইলে আপনি তাকে ইদ্দতের মধ্যে বিবাহ ছাড়াই ফিরিয়ে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে মৌখিকভাবে আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিলামÑ একথা বললেই আপনাদের সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে যাবে। তাছাড়া ইদ্দতের ভেতর তার সাথে স্বামী-স্ত্রীসূলভ কোনো আচরণ হলেও আপনাদের বিবাহ পুনর্বহাল হয়ে যাবে। কিন্তু ইদ্দতের ভেতর কোনোভাবেই যদি তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নেওয়া না হয়, তাহলে ইদ্দত শেষে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তাকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে বিবাহ নবায়ন করে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, মহিলাটিকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া হোক বা ইদ্দত শেষে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেওয়া হোক, উভয় ক্ষেত্রে আপনি কেবল দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে দুই তালাক দিলেই পূর্বের এক তালাকসহ তিন তালাক হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে এবং আপনারা একে অপরের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে পুনরায় তাকে বিবাহ করারও সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে সতর্কতা কাম্য।
আরো উল্লেখ্য, তালাক বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। বিনা কারণে তালাক দেওয়া কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায় ও গুনাহের কাজ। ক্ষেত্রবিশেষে তা স্ত্রী-সন্তানের ওপর জুলুমও বটে। তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ১৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৮৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৩৯; ফাতহুল কাদীর ৪/১৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৩০৬