আমানুল্লাহ - সিলেট
৬৪৯৫. Question
আমাদের মহল্লার মসজিদে নির্ধারিত ইমাম আছেন। তবে নির্ধারিত মুআযযিন নেই। তাই মহল্লার এক মুরব্বি লোক সাধারণত আযান দিয়ে থাকেন। ইমাম সাহেব না থাকলে কখনো কখনো তিনি ইমামতিও করেন। কিন্তু এই মুরব্বি আটরশির পীরের মুরিদ। এলাকার দ্বীনদার মুসল্লীগণ তাকে এই রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সে এই বিষয়ে কিছু শুনতেই রাজি নয়। এ বিষয়ে এলাকার লোকদের সাথে তার মাঝে মাঝেই ঝামেলা হয়। মসজিদ কমিটি বিষয়টির চূড়ান্ত মিমাংসা করার জন্য একবার তাকে নিয়ে বসে। তখন আটরশির পীরের বিষয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলে একপর্যায়ে সে বলে— ‘আপনারা সবাই জানেন, আমি আটরশির পীরের মুরিদ। আমি মসজিদ ছাড়তে পারি, আমি আমার পরিবার ছাড়তে পারি, কিন্তু আমি আমার পীরকে ছাড়তে পারব না। এতে যদি আমাকে জাহান্নামেও যেতে হয়, তাতেও আলহামদু লিল্লাহ।’ (নাউযু বিল্লাহ)।
তার এই বক্তব্যের পর এলাকায় তাকে নিয়ে আরো বেশি সমস্যা তৈরি হয়। এলাকার লোকদের সন্দেহ হচ্ছে যে, এই পীরের মুরীদের পেছনে নামায পড়া যাবে কি না? যদি তার পেছনে নামায পড়া হয়, তাহলে নামায সহীহ হবে কি না? এবং তাকে আযানের দায়িত্বে বহাল রাখা যাবে কি না?
মুফতী সাহেবের কাছে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টির সমাধান জানতে চাচ্ছি।
Answer
আটরশির পীর ও তার মুরিদদের ঈমান-বিধ্বংসী সুস্পষ্ট শিরকী ও কুফরী আকীদাসহ বহু ভ্রান্ত ও গোমরাহীপূর্ণ মতবাদ রয়েছে। যা তাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও লেখায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেগুলো বিশ্বাস করলে কোনো ব্যক্তি কিছুতেই সঠিক মুসলমান থাকতে পারে না। যার কিছু নমুনা সামনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্নে আটরশির এমন-ই এক মুরিদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে, প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যে নিজেই তার সম্পর্কে পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে, ‘আপনারা সবাই জানেন, আমি আটরশি পীরের মুরিদ। আমি মসজিদ ছাড়তে পারি, আমি আমার পরিবার ছাড়তে পারি, কিন্তু আমি আমার পীরকে ছাড়তে পারব না। এতে যদি আমাকে জাহান্নামেও যেতে হয়, তাতেও আলহামদু লিল্লাহ।’
তার এ কথা থেকেই স্পষ্ট, সে আটরশির শিরকী ও কুফরী আকীদা-বিশ্বাসের পরিপূর্ণ অনুসারী। তাছাড়া স্বয়ং তার এ কথাটিই আরেক ভয়ংকর ঈমান-বিধ্বংসী কুফরী কথা। অতএব এই ব্যক্তিকে কিছুতেই নামাযের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া যাবে না এবং তার পেছনে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। তাই মসজিদ কমিটির ওপর জরুরি হল, এই ব্যক্তিকে আযান-ইমামতি কোনো কিছুর সুযোগ না দেওয়া। এটি তাদের ঈমানী দায়িত্ব। এতে তারা অবহেলা করলে মসজিদে বাতিলপন্থী লোকের আযান-ইমামতির সুযোগ দেওয়া এবং মুসল্লীদের নামায সহীহ না হওয়ার দায়ভার তাদের ওপরও বর্তাবে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেফাযত করুন এবং দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
আটরশির পীরের কুফরী ও শিরকী আকীদা-বিশ্বাস
আটরশির পীর ও তার মুরিদদের যে ভয়ংকর কুফরী ও শিরকী আকীদা-বিশ্বাসগুলো রয়েছে, তার থেকে নমুনাস্বরূপ কিছু বিষয় তুলে ধরা হল—
১. তাদের আকীদা হল, কালেমা পড়ার পর কেউ শিরকী ও কুফরী কথা ও কাজে ডুবে থাকলেও পরকালে তার মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাত দিয়ে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে আটরশির পীরের সুস্পষ্ট বক্তব্য এই—
‘যে ব্যক্তি এই কলেমা শরীফকে বিশ্বাস করে এবং মুখে উচ্চারণ করে এবং তাহার সহিত সে যদি শিরকী ও কুফরীর ভিতর ডুবিয়াও থাকে, তাহা হইলেও আশা আছে যে, এই কলেমা শরীফের দ্বারা সে একদিন মুক্তি পাইবে।’ (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ৩২২)
কুফর ও শিরক সম্পর্কে এ হচ্ছে তাদের আকীদা-বিশ্বাস। অথচ যে ব্যক্তি কুফরীতে ডুবে থাকবে সে নিশ্চিত কাফের। আর কাফের চিরস্থায়ী জাহান্নামী। পরকালে কখনোই মুক্তি পাবে না। এটি সরাসরি কুরআন কারীমের আয়াত দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ مَاتُوْا وَ هُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓىِٕكَ عَلَیْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ النَّاسِ اَجْمَعِیْنَ،خٰلِدِیْنَ فِیْهَا لَا یُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَ لَا هُمْ یُنْظَرُوْنَ.
যারা কাফের এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে ওদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও মানুষ সকলের লানত। যাতে ওরা চিরকাল থাকবে। ওদের থেকে শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং ওদের অবকাশও দেওয়া হবে না।(সূরা বাকারা (২) : ১৬১-১৬২)
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন—
اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ ظَلَمُوْا لَمْ یَكُنِ اللهُ لِیَغْفِرَ لَهُمْ وَ لَا لِیَهْدِیَهُمْ طَرِیْقًا، اِلَّا طَرِیْقَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۤ اَبَدًا وَ كَانَ ذٰلِكَ عَلَی اللهِ یَسِیْرًا.
যারা কুফরী করেছে এবং (অন্যকে আল্লাহর পথে বাধা দিয়ে তাদের ওপর) জুলুম করেছে আল্লাহ কখনোই ওদের ক্ষমা করবেন না এবং ওদেরকে কোনো পথ দেখাবেন না, জাহান্নামের পথ ছাড়া, যেখানে ওরা চিরকাল থাকবে। আর এ আল্লাহর পক্ষে সহজ। —সূরা নিসা (৪) : ১৬৮-১৬৯
পক্ষান্তরে শিরকও এমন মহা পাপ যে, আল্লাহ পরকালে অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না। এটিও কুরআন কারীমে পরিষ্কারভাবে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.
নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে এছাড়া অন্যান্য (গুনাহ) যার জন্য ইচ্ছা, ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শিরক করেছে সে সুদূর গোমরাহীতে পতিত হল। (—সূরা নিসা (৪) : ১১৬)
২. আটরশির পীরের আরেকটি ঈমান বিধ্বংসী দাবি এবং তার মুরিদদের ভয়াবহ শিরকী আকীদা হল, মুরিদ পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, সে কোনো বিপদে পড়লে পীর তা জানতে পারে এবং তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। এমনকি পীর দুনিয়া থেকে কবরে চলে যাওয়ার পরও তার এমন ক্ষমতা থাকে। মুরিদদের ভালো-মন্দ সবকিছু পীরের হাতে। মুরিদ বিপদে পড়ে পীরকে স্মরণ করে সাহায্য চাইলে পীর তাকে রক্ষা করতে পারে।
এ ব্যাপারে আটরশির পীরের বক্তব্য হল—
‘মুরিদ বিপদে পতিত হইয়া পৃথিবীর অপর প্রান্ত হইতেও আপন পীরকে স্মরণ করিলে, এই প্রান্ত হইতেও মুরিদের ডাকে সাড়া দিয়া পীরে কামেল আত্মিকভাবে তাওয়াজ্জুহর হাত বাড়াইয়া বিপদগ্রস্ত মুরিদকে বিপদ হইতে রক্ষা করিতে পারেন। এই ক্ষমতা যাহার নাই, তিনি কামেল মোকাম্মেল পীর নহেন।’ (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ৯০৫)
এ ব্যাপারে তার আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে—
‘আমার পীরের মতন ক্ষমতাধর ওলী পৃথিবীতে খুব কমই আসিয়াছেন। তিনি নূরময় জগতে চলিয়া গিয়াছেন ঠিকই, কিন্তু সেখান থেকেও যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিতেছেন। ইন্তেকালের পূর্বে আমাকে বলিয়াছেন— বাবা, তোমার কোনো চিন্তা নাই, তোমার যাবতীয় কাজ আমি আমার হাতে রাখিলাম।’ (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ১০৯৩)
এ হচ্ছে তাদের আরেক ভয়ংকর শিরকী আকীদা। ইসলামের আকীদা হল, কাউকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা কেবল আল্লাহ তাআলার হাতে। তেমনি সবার ভালো-মন্দের ক্ষমতাও কেবল আল্লাহ তাআলারই হাতে। সাধারণ কোনো মানুষ তো দূরের কথা, কোনো নবী-রাসূলের হাতেও আল্লাহ তাআলা এই ক্ষমতা দেননি। এমনকি কোনো নবী-রাসূল অন্যের ভালো-মন্দ তো নয়ই; স্বয়ং নিজের ভালো-মন্দের জন্যও আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল।
আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘোষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেন—
قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِیْ نَفْعًا وَّ لَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ وَ لَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَیْبَ لَا سْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَیْرِ وَ مَا مَسَّنِیَ السُّوْٓءُ اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِیْرٌ وَّ بَشِیْرٌ لِّقَوْمٍ یُّؤْمِنُوْنَ.
আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের ভালো-মন্দেরও মালিক নই। কিন্তু আল্লাহ যা চান (তাই হয়)। আর যদি আমি অদৃশ্যের কথা জানতাম, তবে নিশ্চয় বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতাম এবং আমাকে অকল্যাণ স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা— ঈমানদার লোকদের জন্য। (—সূরা আ’রাফ (৭) : ১৮৮)
অতএব আল্লাহ ছাড়া কাউকে লাভ-ক্ষতির মালিক মনে করা এবং বিপদ-আপদে অন্য কাউকে ডাকা ও গাইরুল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা— পরিষ্কার শিরক।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ،وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.
আর আপনি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবেন না, যে আপনার উপকারও করতে পারে না এবং আপনার ক্ষতিও করতে পারে না। আপনি যদি (এরূপ) করেন, তবে তখন আপনিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যদি আল্লাহ আপনার ওপর কোনো কষ্ট আপতিত করেন, তবে এর অপসারণকারী তিনি ছাড়া আর কেউই নেই। আর যদি তিনি আপনাকে কোনো কল্যাণ পৌঁছাতে চান, তবে তার অনুগ্রহ রদকারী কেউ নেই। তিনি আপন বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন। আর তিনি অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। —সূরা ইউনুস (১০) : ১০৬-১০৭
সূরা ফাতেহায় ইরশাদ হয়েছে—
اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.
আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। (—সূরা ফাতেহা (১) : ৪)
সাহায্য প্রার্থনা সম্পর্কে এ হচ্ছে মুমিনের আকীদা। মুমিন কেবলই আল্লাহ তাআলার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করে। কোনো গাইরুল্লাহর কাছে কিছুতেই নয়।
৩. তাদের আরেকটি ভয়াবহ কুফরী আকীদা হল, ‘তাওহীদে আদইয়ান’। যার সারকথা হল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত দ্বীন ইসলাম ছাড়াও যে কোনো ধর্মের অনুসরণ করে মানুষ মুক্তি পেতে পারে।
এ ব্যাপারে আটরশির পীরের বক্তব্য হল—
‘হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানগণ নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং তাহলেই কেবল বিশে^ শান্তি আসবে।’ (আটরশির কাফেলা, পৃ. ৮৯, ২য় সংস্করণ, ১৯৮৪)
কালেমা পাঠকারী মুসলমান মাত্রই জানে, এরূপ আকীদা-বিশ্বাস পোষণকারী ব্যক্তির ঈমান থাকে না। তার এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেব-দেবী ও অজস্র প্রতিমা পূজা করে জঘন্য প্রকৃতির কাফের মুশরিক হয়েও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারবে। তদ্রূপ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সুস্পষ্ট কাফের-মুশরিক হয়ে এবং আল্লাহর দুশমন হয়েও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। জানা কথা যে, এমন জঘন্য আকীদা লালনকারী কিছুতেই মুসলমান হতে পারে না। জঘন্য প্রকৃতির কাফের মুলহিদ ও যিন্দিক ব্যতীত এমন আকীদা পোষণ করতে পারে না। যারা কাফের ও মুশরিক, কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, তারা আল্লাহর দুশমন। চির জাহান্নামী।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে—
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ.
যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। —সূরা মায়েদা (৫) : ৭২
শরীয়তে মুহাম্মাদী আবির্ভাবের পর আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন ও শরীয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন—
اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ .
নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯)
আরো ইরশাদ করেন—
وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.
যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫)
কোনো মানব রচিত ধর্ম তো দূরের কথা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পর ইসলাম গ্রহণ না করে বরং কেউ যদি পূর্ববর্তী কোনো শরীয়তেরও অনুসরণ করে, তাহলেও সে পরকালে মুক্তি পাবে না।
আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন—
وَ قُلْ لِّلَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ وَالْاُمِّیّٖنَ ءَاَسْلَمْتُمْ فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْا وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَیْكَ الْبَلٰغُ وَاللهُ بَصِیْرٌۢ بِالْعِبَادِ.
এবং আহলে কিতাব ও নিরক্ষরদেরকে (আরবের মুশরিকদেরকে) বলে দিন, তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে হেদায়েত পেয়ে গেল। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে (আপনার চিন্তার কারণ নেই। কেননা) আপনার দায়িত্ব তো হল শুধু পৌঁছে দেওয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ২০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِه إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ.
ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, এ উম্মতের ইহুদী বা নাসারা যে-ই আমার দাওয়াত পাবে আর আমার আনীত দ্বীনের ওপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, সে হবে জাহান্নামী। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩)
শুধু এ কয়টিই নয়; বরং ঐ পীর ও তার অনুসারীদের আরো বহু ঈমান-বিধ্বংসী আকীদা-বিশ্বাস ও বক্তব্য রয়েছে। আর তাদের দ্বীন-ধর্ম পালনের পদ্ধতি যে সাধারণ মুসলমানদের থেকে ভিন্ন এ কথাও সবার জানা। সুতরাং এমন আকীদার লোকদেরকে মসজিদের কোনো দায়িত্ব প্রদান থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।