রুহুল আমীন - মিরপুর, ঢাকা
৬৩৭৮. Question
আমাদের মহল্লায় বৈধভাবে গ্যাস চালু হয়নি। তবে, কয়েক বছর আগে মহল্লার কিছু লোকজন অবৈধ গ্যাসের লাইন লাগিয়ে নিয়েছে। তারা বাড়িতে বাড়িতে যায়। প্রত্যেক বাড়ি থেকে ২-৫ হাজার টাকা জমা করে এবং সে টাকা দিয়ে এলাকার মেম্বার-মাতব্বরদের সাথে যোগাযোগ রেখে মহল্লায় গ্যাস সংযোগ দেয়। এভাবে কখনো এক-দুই বছর, কখনোবা পাঁচ-ছয় মাস চলে। এরপর গ্যাসের লাইন কেটে দেওয়া হয়। আবার উপরোক্ত নিয়মে টাকা উঠিয়ে গ্যাস সংযোগ নিতে হয়। আবার লাইন কেটে দেওয়া হয়। আবার সংযোগ নিতে হয়। এভাবে বেশ কয়েক বছর যাবৎ চলছে। এক্ষেত্রে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলছে―
ক. কারো কারো মতে, আমরা গ্রামের সাধারণ মানুষ। লাইনের গ্যাস খুব দরকার। কেননা, সিলিন্ডার গ্যাসে প্রতি মাসে বড় অংকের খরচ লাগে। তাছাড়া পুরুষ বাড়িতে না থাকা অবস্থায় হঠাৎ সিলিন্ডার গ্যাস ফুরিয়ে গেলে রান্না বন্ধ হয়ে যায়; তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাস আনা যায় না। ২-৪ ঘণ্টার একটা পেরেশানি ওঠাতে হয়। বর্তমানে লাকড়িতে রান্না করাও সম্ভব নয়। তাছাড়া গ্যাসের কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও বিষয়টি জানেন। সুতরাং মজবুরির কারণে গ্যাস আনা ও ব্যবহার বৈধ হবে।
খ. আবার কারো কারো মতে, গ্যাসের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান-মেম্বার অনেকে বিষয়টি জানলেও যেহেতু এটা অবৈধ লাইন, সরকার অনুমোদিত নয়; তাই এভাবে গ্যাসের লাইন নেওয়া ও ব্যবহার করা কোনো অবস্থায়ই বৈধ হবে না। চাই জনগণ বা ব্যক্তির যত কষ্টই হোক না কেন?
অতএব, আমার জানার বিষয় হল, উপরোক্ত পদ্ধতিতে সংযোগ নিয়ে গ্যাসের ব্যবহার করা কতটুকু শরীয়তসম্মত হবে? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
Answer
যথাযথ কর্তৃপক্ষের সরকারি বিধি মেনে প্রদত্ত বৈধ অনুমোদন ছাড়া গ্যাস সংযোগ নেওয়া জায়েয নয়। তা চুরি ও সরকারি সম্পদ আত্মসাতের শামিল। সুতরাং এভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া এবং অন্যদের জন্য তাদের থেকে সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করা অন্যায় ও গোনাহের কাজ। এক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ওজরের কথা প্রশ্নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তা শরীয়ত স্বীকৃত নয়। এসবের কারণে অবৈধভাবে সংযোগ নেওয়া বৈধ হয়ে যাবে না। বাজারে তো অনেক কিছুর মূল্যই অস্বাভাবিকহারে মাঝে মাঝে বেড়ে যায়। তাহলে কি তখন না বলে অন্যের জিনিস ব্যবহার করা যাবে? এমনিভাবে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার, এমনকি গ্যাস অফিসের লোকদের জানার দ্বারাও বিষয়টি বৈধ হয়ে যাবে না। সরকারি অনুমোদন ব্যতীত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবগতি এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে জনগণ ঠেকায় পড়ে ব্যবহার করলেও যারা এ সংযোগ দিয়ে থাকে, তারা কিন্তু চুরির উদ্দেশ্যেই দিয়ে থাকে এবং দেশীয় আইন ও সাধারণ বিচারেও তা চুরির শামিল।
মোটকথা, অবৈধ সংযোগ নিয়ে এভাবে গ্যাস ব্যবহার মারাত্মক অন্যায় ও গোনাহের কাজ। এ থেকে বিরত থাকতে হবে। এতদিন অন্যায়ভাবে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে, এর ন্যায্য বিল গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে সরকারি খাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সমপরিমাণ টাকা গরিব-মিসকীনদের সদকা করে দিতে হবে। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ৩১৮০; ফাতহুল বারী ৬/২৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮৩, ৬/১৮২; রদ্দুল মুহতার ৬/১৫৬