মুফীদা - লক্ষ্মীপুর
৬৩৫০. Question
আমাদের এলাকায় কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে পঁয়তাল্লিশ দিন পরই স্বামীর বাড়ি থেকে ঐ মহিলাকে বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় এবং কেবল পঁয়তাল্লিশ দিন ইদ্দত পালনকে আবশ্যক মনে করা হয়। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তাদের এ নিয়ম কি ঠিক আছে? স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য কত দিন ইদ্দত পালন করা জরুরি?
Answer
প্রশ্নোক্ত প্রথাটি সম্পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাড়িতে (স্বামীর জীবদ্দশায় সে যেখানে বসবাস করত) চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করা জরুরি। চার মাস দশ দিন শেষ হওয়ার আগে শরীয়তসম্মত ওযর ছাড়া তার জন্য সেখান থেকে পিত্রালয় বা অন্যত্র স্থানান্তর হওয়া জায়েয নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا.
তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রী রেখে যায়, তাদের সে স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে। —সূরা বাকারা (২) : ২৩৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারী রাহ. বলেন—
وأما قوله: (يتربصن بأنفسهن)، فإنه يعني به: يحتبسن بأنفسهن معتدات عن الأزواج، والطيب، والزينة، والنقلة عن المسكن الذي كن يسكنه في حياة أزواجهن أربعة أشهر وعشرا.
বিধবাগণ ইদ্দতের চার মাস দশ দিন অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার, সাজসজ্জা গ্রহণ এবং স্বামীর জীবদ্দশায় যেখানে বসবাস করত সেখান থেকে স্থানান্তর হওয়া থেকে বিরত থাকবে। (তাফসীরে তাবারী ২/৫২৫)
হাদীস শরীফে এসেছে, ফুরাইয়া বিনতে মালিক রা.-এর স্বামী মৃত্যুবরণ করার পর তিনি নবীজীর কাছে তাঁর পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন—
امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ.
ইদ্দত (চার মাস দশ দিন) পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার গৃহেই (স্বামী থাকাবস্থায় যেখানে বসবাস করতে সেখানে) অবস্থান কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৪)
উল্লেখ্য, ইদ্দতের এ সময়সীমা— স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী গর্ভবতী না থাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী গর্ভবতী হলে তার ইদ্দতের সময়সীমা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ.
আর যারা গর্ভবতী তাদের (ইদ্দতের) মেয়াদ হল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। [সূরা তালাক (৬৫) : ৪]
—কিতাবুল আছল ৪/৪০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৪১; মাজমাউল আনহুর ২/১৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১০