সাঈদুর রহমান - সাতক্ষীরা
৫৮১৮. Question
কয়েক মাস যাবৎ আমার স্ত্রীর সাথে একটা বিষয় নিয়ে খুব ঝগড়া হচ্ছে। একপর্যায়ে সে বাপের বাড়ি চলে যায়। তাই আমি রাগে তাকে তালাক দিয়ে তার সাথে সংসার না করার সিদ্ধান্ত নিই। তাকে তালাক দেওয়ার জন্য মোবাইলে মেসেজ লিখি ‘আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম’ মেসেজটি শ্বশুরের নম্বরে পাঠাবো এমন সময় আমার রাগ কমে যায়। তখন ভাবি যে, তাকে তালাক দিয়ে কাকে নিয়ে সংসার করব। তাই মেসেজটি না পাঠিয়ে ডিলিট করে দিই। ঘটনাটি আমার পরিচিত একজন হুজুরকে জানালে তিনি বলেন, তালাকের কথাটি যেহেতু শুধু লিখেছেন, পাঠাননি তাই আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। কিন্তু আমার এক বন্ধু কোনো দারুল ইফতা থেকে মাসআলাটি ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। তাই আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে মোবাইলে শুধু উক্ত কথাটি লেখার কারণে কি আমার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়েছে? এখন স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চাই। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
Answer
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেসেজে ‘আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম’ লিখেছেন, তাই তা না পাঠালেও পূর্ণভাবে লেখার দ্বারাই আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রাজয়ী পতিত হয়ে গেছে। কারণ তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে শুধু তালাকের কথা লিখলেও তালাক কার্যকর হয়ে যায়। তা কার্যকর হওয়ার জন্য স্ত্রী বা অন্য কাউকে পাঠানো কিংবা জানানোর প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে তালাকের মেসেজটি না পাঠানোর কারণে তালাক পতিত হয়নি- এ কথা সঠিক নয়।
এখন তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিতে চাইলে ইদ্দতের ভেতর তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত বা প্রকাশ করলেই সে আপনার স্ত্রী হয়ে যাবে। কিন্তু ইদ্দতের ভেতর যদি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করেন বা এ সময়ের মধ্যে আপনাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসুলভ কোনো আচরণও না হয় তাহলে তালাকটি বায়েন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনারা একত্রিত হতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে সাক্ষীদের সামনে পুনরায় বিবাহ করতে হবে। এভাবে পুনরায় একত্রিত হলে আপনি শুধু দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। পরবর্তীতে কখনো দুই তালাক হলেই স্ত্রী সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিবাহের মাধ্যমেও একত্রিত হওয়া সম্ভব হবে না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি।
প্রকাশ থাকে যে, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই বিনা কারণে বা রাগের সময় তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৭৩, ২৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৪৬, ৪৫৩; গামযু উয়ূনিল বাসাইর ৩/৪৪৭; রদ্দুল মুহতার ৩/২৪৬