জুনায়েদ বিন কাসেম - মাদরাসা আবুবকর রা., যাত্রাবাড়ি, ঢাকা
৯০২. Question
অনেকে বলে, কালামুল্লাহ হল ৯০ হাজার। ৩০ হাজার জাহেরী আর বাকি ৬০ হাজার বাতেনী। তারা বলে বাতেনী ৬০ হাজারের খবর বর্তমান আলেমরা জানেন না। একথা কতটুকু সত্য জানতে আগ্রহী। তাদের কথার প্রমাণ কুরআন-হাদীসে আছে কি? যদি থাকে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি না থাকে তাহলে কোথা থেকে একথার জন্ম হয়েছে জানতে ইচ্ছুক। অনুগ্রহ করে জানিয়ে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিবেন বলে আশা করি।
Answer
এখানে যে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তা একশ্রেণীর বেদ্বীন মানবরূপী শয়তান ফকীরদের ভাষ্য। তারা বলে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাত্র আলী রা. কে গোপনে ষাট হাজার কালাম শিক্ষা দিয়েছেন। আর হযরত আলী রা. হতে সিনাপম্পরায় তা এ ফকীরদের নিকট পৌঁছেছে, যা থেকে আলেমগণ বঞ্চিত। এ দাবি যে ঈমান পরিপন্থী তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কারণ, প্রথমত এতে আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করা হয় যে, তিনি মানুষকে দু’প্রকার শরীয়ত দিয়েছেন। একটি হল ত্রিশ হাজার কালামবিশিষ্ট শরীয়ত। অন্যটি হল, ষাট হাজার কালামবিশিষ্ট। আর উভয় শরীয়ত পরস্পর বিরোধী। এক শরীয়তে একটি বস্তু হালাল, অন্য শরীয়তে সে একই বস্তু হারাম। এরূপ পরস্পর বিরোধী কাজ, যা কোনো সৃষ্টিজীবের বেলায়ও নিকৃষ্ট, সেটিকে তারা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শানে চালিয়ে দিয়েছে। এর ফলে তারা ঈমানের সর্বপ্রথম রুকন ঈমান বিল্লাহ তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাসের গণ্ডি হতে বের হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত উক্ত দাবিতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মিথ্যারোপ করা হয়। তাঁর উপর এ অপবাদ আসে যে, তিনি দ্বীনের অধিকাংশ মৌলিক কথা যা সর্বস্তরের মুসলমানদের জানা জরুরি ছিল তা যথাযথ পৌঁছাননি। শুধু একজনকে কানে কানে বলে গেছেন। আর অন্যদেরকে তার বিপরীত বলে গেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে যে ব্যক্তির এরূপ ধারণা থাকবে, তার যে রাসূলের প্রতি ঈমান নেই তা বলাই বাহুল্য।
তৃতীয়ত “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলীকে দ্বীনের বিশেষ বিশেষ এমন কথা গোপনে বলে গেছেন যা অন্যদেরকে বলে যাননি।” এরূপ আকীদা মূলত সাবায়ী চক্রের ছিল। যারা উম্মতের সর্ববাদী সম্মত কাফের। হযরত আলী রা.-এর যুগে এ চক্র তাদের উক্ত আকীদা প্রচার করলে তখনই অন্যান্য লোকেরা সরাসরি হযরত আলী রা.-এর কাছে বিষয়টি তদন্ত করেন। তখন তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় তা অস্বীকার করেছেন। এ সর্ম্পকে অসংখ্য সহীহ রেওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। এখানে একটি মাত্র রেওয়ায়াত উল্লেখ করা হল। এক ব্যক্তি হযরত আলী রা. কে জিজ্ঞেস করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মানুষের অগোচরে আপনাকে কিছু বলে গেছেন? আলী রা. এ কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে গেলেন এবং তার মুখমণ্ডল লাল হয়ে গেল। অতঃপর বললেন,
مَا كَانَ يُسِرُّ إِلَيَّ شَيْئًا دُونَ النَّاسِ غَيْرَ أَنَّهُ حَدَّثَنِي بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ وَأَنَا وَهُوَ فِي الْبَيْتِ فَقَالَ لَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ.
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের আগোচরে আমাকে কিছুই বলে যাননি। তবে আমাকে তিনি চারটি কথা বলেছেন। তখন আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়েই ঘরের ভিতরে ছিলাম। তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার পিতাকে লানত করে আল্লাহ তাআলা তাকে লানত করুন। যে ব্যাক্তি গাইরুল্লাহর নামে জবাই করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লানত করুন। যে ব্যক্তি বিদআতীকে সমর্থন করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লানত করুন। যে ব্যক্তি জমির চিহ্ন (সীমানা) এদিক সেদিক করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লানত করুন।” ¬সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৪২২
অতএব প্রশ্নোক্ত দাবির বাতুলতা ও মিথ্যা হওয়া দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা সকলকে এ কুফরী ধারণা থেকে হেফাজত করুন আমীন।