আব্দুল গফুর - পীরগাছা, রংপুর
০৯৮৯. Question
বেশ আগে এক মহিলার আচরণে বিরক্ত হয়ে তার স্বামী বলেছিল যে, তুমি এত ঘণ্টা পরে তালাক হয়ে যাবে। ফলে ওই মহিলার উপর এক তালাকে ‘রজয়ী’ পড়ে যায়। পরে মহিলা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে উক্ত ঘটনার তিন মাসের মধ্যে স্বামী তাকে ‘রুজূ’ করে নেয়। কিন্তু তাদের সংসারে শান্তি আসে না। স্বামীকে কষ্ট দেওয়া, স্বামীর বিরোধিতা করা, স্বামীর সাথে দুর্ব্যবহার করা মহিলার স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। তাই এক পর্যায়ে স্বামী রাগারাগি করাতে কয়েক মাস আগে মহিলা নিজের ইচ্ছায় ও সিদ্ধান্তে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যায়। মেহেরবানী করে এই মাসআলার সমাধান বলে দিলে কৃতজ্ঞ হব।
Answer
প্রশ্নপত্রে বর্ণিত ঘটনা সম্পর্কে কোন্ বিষয়টির উত্তর চাওয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। বাহ্যত মনে হচ্ছে, প্রশ্নকারী জানতে চাচ্ছেন যে, এমতাবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর করণীয় কী? স্বামীর ঘর থেকে এভাবে চলে যাওয়ার কারণে স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়েছে কি না?
উত্তর হল, স্ত্রী যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়াই চলে গিয়ে থাকে তাহলে সেটা বৈধ হয়নি। তবে একারণে স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি; বরং আগের মত তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল রয়েছে।
এখন মহিলার করণীয় হল, এ কাজের কারণে অনুতপ্ত হওয়া এবং এখনও যদি স্বামীর ঘরে ফিরে না এসে থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি স্বামীর ঘরে ফিরে আসা এবং স্বামীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা। স্বামীর খেদমত ও তার কথা মান্য করার ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত কোনো ত্রুটি না করা।
হাদীস শরীফে আছে, ‘যে স্ত্রীর প্রতি স্বামী অসন্তুষ্ট তার কোনো নামায কবুল হয় না; কোনো নেক আমল উপরে উঠানো হয় না, যতক্ষণ স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট না হবে।’ -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৩৫৫
অন্য হাদীসে আছে, ‘যে স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়, স্বামীর নিকট ফিরে আসা পর্যন্ত তার নামায মাথার উপরে যায় না। অর্থাৎ কবুল হয় না।’ -মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৭২; তাবারানী ১/১৭২
অবশ্য কোনো মহিলা যদি শরীয়তসম্মত কোনো ওযরে বের হয়ে যায় তাহলে তার হুকুম ভিন্ন। তবে এ অবস্থায়ও সাময়িক ওযর কেটে যাওয়ার পর ফিরে আসা জরুরি।
হুসাইন ইবনে মুহসিন থেকে বর্ণিত, তাঁর এক ফুফু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনো প্রয়োজনে এসেছিলেন। প্রয়োজন পূর্ণ হলে নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহিতা? তিনি বললেন জী। নবীজী বললেন, তুমি স্বামীর সাথে কেমন আচরণ কর? তিনি বললেন, আমি একেবারে অপারগ না হলে তাঁর সেবা করতে ত্রট্টটি করি না। তখন নবীজী বললেন, ‘স্বামীর সাথে তোমার আচরণ কেমন তা ভেবে দেখ। কারণ স্বামীই তোমার জান্নাত কিংবা জাহান্নাম।’ -মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৪১, ৬/৪১৯
আর স্বামীর করণীয় হল, স্ত্রীকে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়া। তাকে ক্ষমা করে দেওয়া; বরং প্রয়োজনে নারীর দুর্বলতার দিকে তাকিয়ে তার মন খুশি করে তাকে নিজের নিকটে আনার চেষ্টা করা। স্বামীর হক আদায় সম্পর্কে উপদেশ দেওয়া। যথাসম্ভব ধৈর্যধারণ করা এবং সুন্দর ব্যবহার করা। কেননা মহিলারা সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল। আর আল্ল¬াহ তাআলা স্বামীকে মহিলার মুরব্বী বানিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ তাআলা অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ -সূরা নিসা ১৯
হাদীস শরীফে আছে, ‘কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করে। যদি তার একটি অভ্যাস অপছন্দ হয়, তাহলে আরেকটি তো পছন্দ হতে পারে।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৬৯
অন্য হাদীসে আছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারাই যারা তাদের পরিবারের কাছে সর্বোত্তম এবং আমি আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম।’ -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৮৯৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৯৭৭
অন্য হাদীসে আছে, ‘নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা। তুমি যদি তাকে সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে। তাই তার মন রক্ষা করে চল। তাহলেই একসাথে জীবন যাপন করতে পারবে।’ -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৭৮
আরেক হাদীসে আছে, ‘যে তোমার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখ। তোমাকে যে বঞ্চিত করে তাকে দান কর। যে তোমার উপর জুলুম করে তাকে ক্ষমা কর।’ -মুসনাদে আহমাদ ৪/১৫৮