উবায়েদ - জামালপুর
৫৭০৯. Question
আমি বিভিন্ন দ্বীনী মাদরাসার জন্য সাধারণ দান, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদির টাকা কালেকশন করে থাকি। দেশ ও দেশের বাহির থেকে অনেকেই আমার বিকাশ/নগদ একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বহু লোক আমার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে যাকাত-ফিতরার টাকা পাঠান। আবার আমার নিজস্ব টাকাও জমা থাকে। সাধারণত বিকাশ থেকে টাকা ক্যাশ করতে চাইলে হাজারে ১৭.৫০ টাকা আর নগদে ১২.৫০ টাকা খরচ হয়। এখানে কয়েকটি বিষয় জানার রয়েছে :
১. অনেক মানুষ এমন আছেন, যারা বিকাশে টাকা পাঠাতে যে খরচ হয় তা দেন না। অনেকের কাছে এ খরচের টাকার কথা বলা যথেষ্ট মুশকিল বা অসম্ভব। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এমনও মনে হয় যে, যদি তার কাছে সঠিক মাসআলা বলে ক্যাশআউটের টাকা চাওয়া হয় তাহলে সে পুনরায় মাদরাসায় দান তো করবেই না, আবার এমন কোনো কথাও বলে ফেলতে পারে, যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, এরকম লোক যদি বিকাশের মাধ্যমে আমার মোবাইলে ৫০০০ টাকা পাঠায় তাহলে এ টাকার ক্যাশআউট খরচ ৮৭.৫ টাকা কে দেবে?
২. কেউ কেউ আবর ক্যাশআউটের টাকা দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে যে, একজন উদাহরণস্বরূপ তার যাকাত ৫০০০ টাকা। সে আমার একাউন্টে খরচসহ ৫১০০ টাকা পাঠাল। এখানে খরচ হয় মূলত ৮৭.৫০ টকা। এক্ষেত্রে বাকি ১২.৫ টাকার কী হবে?
৩. কারো যাকাত ৫০০০ টাকা। সে আমার বিকাশ একাউন্টে ৫১০০ টাকা পাঠাল। দেখা গেল, ঐ মুহূর্তে আরেকজনের বিকাশের টাকা অন্যত্র পাঠানোর প্রয়োজন। সে আমার থেকে ৫০০০ টাকা সেন্ড মানি করালো। সেক্ষেত্রে আমার খরচ হল মাত্র পাঁচ টাকা। আমি দোকানে গিয়ে যদি ক্যাশআউট করতাম তাহলে আমার খরচ হতো, ৮৭.৫ টাকা। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে সেন্ড মানি করার কারণে আমার খরচ হল পাঁচ টাকা বা সর্বোচ্চ দশ টাকা। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে বাকি ৯০-৯৫ টাকার মালিক কে? এ টাকার ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে খরচসহ টাকা পাঠায় সে ধরেই নেয় যে আমার ক্যাশআউট করতে খরচ হবেই। কিন্তু এখানে আমি সেন্ড মানি বা নিজের প্রয়োজনে খরচ করার কারণে খরচ লাগে না। এক্ষেত্রে কি আমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে ৫০০০ টাকা দিয়ে দিলেই হবে?
বি. দ্র. আমার লেনদেন এত বেশি হয় যে, যদি বলা হয় যে, যিনি কম দিয়েছেন তার কম টাকার রশিদ এবং যিনি বেশি দিয়েছেন তার বেশি টাকার রশিদ কাটা হবে তাহলে তা অসম্ভব।
Answer
১. যাকাতের টাকা তার হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাকাতদাতার দায়িত্ব। এতে কোনো খরচের প্রয়োজন হলে তাকেই তা বহন করতে হবে। তবে নিকটে উপযুক্ত লোক থাকলে দূরবর্তী কাউকে যাকাত দেওয়া আবশ্যক নয়। তাই দূর থেকে কোনো দরিদ্র বা তার প্রতিনিধি যদি কোনো ব্যক্তির নিকট যাকাতের টাকা চেয়ে তা তার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল এ্যকাউন্টে পাঠাতে বলে তাহলে সেক্ষেত্রে যাকাতদাতার জন্য ক্যাশআউট খরচ পাঠানো আবশ্যক নয়। তবে যাকাতগ্রহীতা বা তার প্রতিনিধি না বলা সত্ত্বেও যদি সে নিজ থেকে বিকাশ, নগদ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে যাকাতের টাকা পাঠায় তাহলে ক্যাশআউট খরচসহ তা পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ যদি ক্যাশআউট খরচ না দেয় আর দরিদ্রব্যক্তি ক্যাশআউট করতে গিয়ে পরিমাণে কম পায় তাহলে কম অংশের যাকাত আদায় হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি যাকাত গ্রহীতার চাহিদাতেই যাকাতদাতাগণ টাকা প্রেরণ করে থাকেন তাহলে যাকাতদাতা খরচ না পাঠালে সে খরচ গ্রহীতা তথা মাদরাসা দেবে। আর খরচসহ পাঠালে খরচ বাদে বাকি টাকা গ্রহীতাকে দিয়ে দেবেন।
২, ৩. যদি কেউ ক্যাশআউট খরচ বেশি পাঠায় অর্থাৎ ক্যাশআউট করার পর কিছু টাকা অতিরিক্ত থেকে যায় অথবা ক্যাশআউট খরচ পাঠানোর পর আপনি তা ক্যাশ না করে অন্য কোনো চার্জবিহীন কাজে ব্যবহার করেন বা সেন্ডমানি করেন তাহলে ক্যাশআউট বাবদ উদ্বৃত্ত সকল টাকা গ্রহীতাকে দিয়ে দেবেন; আপনি নিজে কিছুই গ্রহণ করতে পারবেন না। এ টাকা তিনি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঠিয়েছেন সেখানে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের দেশে দাতাগণ এমন চিন্তা করেই খরচ প্রেরণ করে থাকেন যে, যদি খরচ না হয় তাহলে পুরো টাকা গ্রহীতা (দরিদ্র ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) পাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯; মুগনিল মুহতাজ ৪/১৯২; ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দাইমা ৯/৪৩২