নাজমুল হাসান - ভাঙ্গা, ফরিদপুর
৫৫৪০. Question
প্রায় প্রায়ই আমার স্ত্রীর সাথে আমার বিভিন্ন বিষয়ে কথা কাটাকাটি হতো। একদিন রাগের মাথায় বলে ফেলি, ‘যাহ, তোকে ছেড়ে দিলাম। তোর কোনো প্রয়োজন নেই।’
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার এই কথার দ্বারা কি কোনো তালাক হয়েছে? হয়ে থাকলে কয় তালাক হয়েছে? এখন আমরা একসাথে ঘর-সংসার করতে চাচ্ছি। তাই এখন কী করণীয়? জানালে উপকৃত হব।
Answer
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ‘তোকে ছেড়ে দিলাম’ এই কথার দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রাজয়ী পতিত হয়েছে। এখন আপনারা বর্তমান সম্পর্ক বহাল রাখতে চাইলে ইদ্দতের মধ্যেই (ঋতুমতী মহিলার জন্য তিনটি ঋতুস্রাব অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। আর অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত) স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মৌখিকভাবে ‘আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিলাম’ অথবা ‘তোমাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করলাম’ এভাবে বললেই হবে।
এছাড়া দুজনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসূলভ কোনো ঘনিষ্ঠ আচরণ হলেও রাজআত হয়ে যাবে। যদিও মৌখিকভাবে রাজআত করাই উত্তম।
কিন্তু যদি আপনি ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে না নেন বা ঐ সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসূলভ কোনো আচরণও আপনাদের ভেতর না হয়, তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, এই স্ত্রীকে আপনি ইদ্দতের ভেতর রাজআত করেন বা ইদ্দত শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণ করেন- উভয় ক্ষেত্রে পরবর্তীতে আপনি দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে দুই তালাক দিলেই পূর্বের এক তালাকের সাথে মিলে তিন তালাক হয়ে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
উল্লেখ্য, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির পথমাত্র। তাই তালাকের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে, পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া, কথায় কথায় তালাক দেওয়া অন্যায়। তাই এ থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৩১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/১৮৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/৩০০, ২৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৯৭; ইমদাদুল আহকাম ২/৪৪৩