Safar 1429 || February 2008

সুবর্ণা ইসলাম - দক্ষিণ পাইকপাড়া, মিরপুর, ঢাকা

১১৮৪. Question

আমার পিতা ২৫ জুন/২০০৫ ইন্তেকাল করেন। তার হাউজ বিল্ডিং-এর লোনে তৈরি একটি পাঁচতলা বাড়ী রয়েছে এবং তার রেখে যাওয়া ইন্সুরেন্সের টাকার পরিমাণ তিন লক্ষাধিক। আমার মা জীবিত। আমরা এক ভাই ও দুই বোন। আমি আমার সন্তানদের সুবিধার্থে উক্ত পাঁচতলা বাড়ীর একটি ফ্ল্যাট চাইলে তারা আমার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। এখন আমার প্রশ্ন-

১. এমতাবস্থায় আমি আমার অংশের দাবী করলে তা কি শরীয়ত সম্মত হবে?

২. আমাকে বঞ্চিত করে কি তারা গোনাহগার হচ্ছে না এবং গোনাহ হলে তা কোন প্রকৃতির গোনাহ?

৩. আমাকে বঞ্চিত ও নাখোশ রেখে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়ানো ও তাদের জন্য খাওয়া কি বৈধ?

৪. আমি আমার অংশের হকদার কি লোন পরিশোধ করার পর হবো? নাকি বাবার ইন্তেকালের পর থেকেই?

৫. ইন্সুরেন্সের তিন লক্ষ টাকা আমাকে না জানিয়ে ও না দিয়ে খরচ করা এবং ছোট বোনের বিবাহ বাবদ এক/দেড় লক্ষ টাকা এখান থেকে জমা করে রাখা জায়েয হবে? উল্লেখ্য যে, আমার ভাই হাফেয মাওলানা। তার বক্তব্য হচ্ছে, এখানে কোন হারাম-হালাল, জায়েয-নাজায়েয আর হক না-হকের কিছু নেই। একথাটি কতটুকু শরীয়তসম্মত? এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা প্রদানে বাধিত করবেন।

Answer

উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর ধারাবাহিকভাবে প্রদান করা হলো-

১. পিতার ইন্তেকালের সাথে সাথেই ছেলেমেয়েরা হিস্যা অনুযায়ী তার সম্পদের মালিক হয়ে যায়। তাই আপনিও পিতার মৃত্যুর সাথে সাথে তার সকল সম্পদে আনুপাতিক হারে মালিক হয়ে গেছেন। সুতরাং আপনার প্রাপ্য-অংশের দাবী করা শরীয়ত পরিপন্থী নয়; বরং এটা শরীয়ত কর্তৃক প্রদত্ত আপনার অধিকার। তাই মা ও ভাইয়ের কর্তব্য, অনতিবিলম্বে সকল ওয়ারিসের হিস্যা নির্ধারণ করে বণ্টন করে দেওয়া। -সূরা নিসা ৭, সহীহ বুখারী ১/৩২২, ফাতহুল বারী ৫/৬৯

২. আপনাকে প্রাপ্য-অংশ থেকে বঞ্চিত করলে অবশ্যই তারা মারাত্মক গোনাহগার হবে। এটি আত্মসাতের অন্তর্ভুক্ত, যা কবীরা গোনাহ। এ হক আদায়ে গড়িমসি করাও মারাত্মক গোনাহ। -সূরা বাকারা ১৮৮, ফাতহুল বারী ৪/৫৪৩, সহীহ বুখারী ১/৩২৩

৩. কোন ব্যক্তির সম্পদ তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া অন্যের জন্য ভোগ করা হারাম। সুতরাং অনিচ্ছা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও আপনার সম্পদ ভোগ করা অথবা তা থেকে উপকৃত হওয়া তাদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ। -মুসনাদে আহমাদ ৫/৭৩, শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৬৫

৪. পিতার মৃত্যুর পর মুহূর্ত থেকেই আপনারা নিজ নিজ অংশের মালিক হয়ে গেছেন। তাই প্রশ্নোক্ত বাড়ীটি ওয়ারিসদের প্রত্যেকের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টন করে দিতে হবে। আর প্রত্যেকের অংশ অনুযায়ী হাউজ বিল্ডিং-এর লোনও ভাগ হয়ে যাবে, যা সংশ্লিষ্ট মালিককে আদায় করতে হবে। তাই আপনার অংশ অনুপাতে ওই লোন পরিশোধ করা আপনার জিম্মায় থাকবে। -আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২২১

৫. ইন্সুরেন্সে যে পরিমাণ টাকা আপনার বাবা নিজে জমা করেছিলেন আপনারা শুধু ততটুকুরই মালিক। সুতরাং আপনার পিতা কর্তৃক জমাকৃত সমস্ত টাকা সকল ওয়ারিসের মাঝে হিস্যা অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে। বণ্টনের পূর্বে এখান থেকে সংসারের জন্য খরচ করা বা অপর বোনের বিবাহের জন্য রেখে দেওয়া জায়েয হবে না; বরং আপনার অংশের টাকা যথাশীঘ্র দিয়ে দেওয়া জরুরি।

উল্লেখ্য, আপনার পিতার জমাকৃত টাকা ছাড়া অতিরিক্ত টাকা যেগুলো ইন্সুরেন্স কোম্পানি দিয়েছে, সেগুলো সুদ এবং হারাম। এ টাকা ওয়ারিসদের ভোগ করা জায়েয হবে না। এ টাকা পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া ফকীর-মিসকীনকে দিয়ে দেওয়া জরুরি। আরো উল্লেখ্য, শরীয়তে ওয়ারা্সাতের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে অন্যান্য অনেক বিষয় যেখানে খুব সংক্ষেপে বলা হয়েছে সেখানে ওয়ারাসাতের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; যা এ বিষয়টির গুরুত্বের পরিচায়ক। সুতরাং এক্ষেত্রে কোন রকম অবহেলা করা একজন মুসলমানের পরিচয়াক হতে পারে না। সেখানে আপনার বর্ণনা অনুযায়ী একজন আলেম কর্তৃক বোনের হক আটকে রাখা যে কত বড় অপরাধ তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।

-সূরা নিসা ৭, শরহুল মাজাল্লা ৪/৩১, সূরা বাকারা ২৭৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৬

Read more Question/Answer of this issue