মোহাম্মাদ শাহজাহান মিয়া -
১২৮২. Question
ক. কনে ও বর পক্ষের সম্মতিক্রমে স্ত্রীর দেনমোহর দুই লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছিল। তা থেকে এক লক্ষ টাকা বিবাহের সময় আদায় করা হয়েছে। আদায়কৃত এক লক্ষ টাকার মধ্যে মেয়ের হাতের সোনার বালা ও গলার হারসহ মোট সাড়ে চার ভরি স্বর্ণালংকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্ত্রীকে দেনমোহর হিসাবে প্রদত্ত উক্ত হাতের বালা ও গলার হার বর্তমানে ছেলের মায়ের নিকট রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেনমোহরের বাকি এক লক্ষ টাকা এবং মেয়ের হাতের বালা ও গলার হার মেয়ে পাবে কি না?
খ. কন্যা সন্তানের ভরণ-পোষণ
বিবাহের পর ১৪-৯-০৭ ইং তারিখে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত সন্তানের যাবতীয় খরচ স্ত্রী পক্ষ বহন করে আসছে। সন্তানের পিতা দুই ঈদে কিছু কাপড়-চোপড় দেওয়া ছাড়া সন্তানের ভরণ-পোষণ বাবদ কোনো খরচ দেয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সন্তানের ভরণ-পোষণ তার পিতাকে দিতে হবে কি না? দিতে হলে কী পরিমাণ, কত দিন পর্যন্ত দিতে হবে, বিগত দিনগুলোর অনাদায়ী খরচ তাকে আদায় করতে হবে কি না? তাছাড়া মা নিজে সন্তানের লালন-পালন বাবদ পিতা থেকে কোনো বেতন ভাতা পায় কি না?
গ. বিয়ের সময় প্রদত্ত বিভিন্ন জিনিসপত্র
বিবাহের সময় কনের পিতা মেয়েকে জাজিম, লেপ ও বালিশসহ একটি খাট দিয়ে ছিল যা ছেলের বাড়িতে আছে। তা ছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়েছিল। এ সকল উপহার সামগ্রী বর পক্ষ রেখে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সকল আসবাবপত্র মেয়ে পাবে কি না?
Answer
ক. দেনমোহর স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। এ ঋণ আদায় করা স্বামীর কর্তব্য। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দেনমোহরের বাকি এক লক্ষ টাকা এবং প্রদেয় স্বর্ণালংকার যা ছেলের মার নিকটে আছে তা দ্রুত স্ত্রীকে দিয়ে দিতে হবে।
খ. কন্যা সন্তানের বিবাহ পর্যন্ত যাবতীয় ভরণ-পোষণ পিতার সামর্থ অনুযায়ী দেওয়া কর্তব্য। বিগত যে দিনগুলোতে পিতা কন্যার খরচ দেয়নি এ সময় মা যদি নিজ সম্পদ থেকে খরচ করে থাকে তবে তা পিতার জন্য আদায় করা জরুরী নয়। কিন্তু যদি স্ত্রী কারো থেকে ঋণ নিয়ে খরচ করে থাকে তবে সে ঋণ পরিশোধ করা পিতার উপর জরুরী।
উল্লেখ্য যে, মা তার মেয়েকে লালন-পালন বাবদ (স্ত্রী থাকাকালীন) পিতা থেকে কোনো বেতন ভাতা দাবি করতে পারবে না। কারণ তখন মেয়েকে লালন-পালন করা মাতার নৈতিক দায়িত্ব। আর স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে ইদ্দত শেষ হওয়ার পর থেকে মা মেয়ের লালন-পালনের জন্য পারিশ্রমিক দাবি করলে পিতার সামর্থ অনুযায়ী যুক্তিসঙ্গতভাবে তা আদায় করতে হবে।
গ. নিম্নে বর্ণিত জিনিসগুলো স্ত্রীর বলে ধর্তব্য হবে :
১. স্বামী বিয়ের সময় যে সকল সাজানী দিয়েছে এবং পরবর্তীতে স্ত্রীকে যা কাপড় ইত্যাদি দিয়েছে সেগুলোর মালিক স্ত্রী।
২. বিয়ে ও তৎপরবর্তী সময় স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে যা দেওয়া হয়েছে তার মালিকও স্ত্রী।
৩. আর যে সকল জিনিস পুরুষ-মহিলা উভয়ের ব্যবহারের উপযোগী কিংবা সংসারের ব্যবহৃত যৌথ আববাবপত্র, এগুলোর মধ্যে যা মেয়ে পক্ষ দিয়েছে তা মেয়ের। আর ছেলেপক্ষ যা দিয়েছে তা ছেলের। যেমন : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়ের পিতা যে খাট, জাজিম, বিছানাপত্র দিয়েছে এর মালিক মেয়েই।
-সূরা নিসা ৪, ৪০; আল ইনায়াহ ৩/২০৪; ফাতহুল কাদীর ৩/২৪৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪৩, ৫৬৩, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০