Rajab 1441 || Mach 2020

যাহিদ হাসান - ময়মনসিংহ

৫০৫৫. Question

শরীয়ত মোতাবেক হালালভাবে মুরগি জবাইয়ের কিছু বিষয় জানার আবেদন করছি। বিষয়গুলো হল-

১. ইসলামী শরীয়তে মুরগি জবাই সহীহ হওয়ার শর্তগুলো কী কী?

২. মুরগি জবাইয়ের সুন্নত ও উত্তম পদ্ধতি কী?

৩. আড়াই পোঁচে মুরগি (বা অন্য হালাল প্রাণী) জবাই করা কি শর্ত?

৪. একা একা মুরগি জবাই করা যাবে কি?

৫. মুরগির রানের গোস্তের ভেতর কোনো হারাম (রগ বা অন্য কিছু) অংশ আছে কি? থাকলে অংশটা বা রগটা চিনব কী করে?

৬. stunner সিস্টেম ব্যবহার করে মুরগি অচেতন করে জবাই করা যাবে কি? stunner সিস্টেম হল, ৪০ঠ অঈ কারেন্ট একটি পানির পাত্রে দেওয়া হয়। এরপর ঝুলন্ত মুরগির মাথা ঐ পানির ভেতর ১০ সেকেন্ড পরিমাণ থাকে। এতে করে মুরগি অচেতন হয়ে যায়। কিন্তু মারা যায় না। এরপর মুসলমান ব্যক্তি জবাই করে। stunner ব্যবহার করার কারণে তাদের

কথা অনুযায়ী মুরগি জবাইয়ের কাজে মানবীয় দিক লক্ষ রাখা যায়। এতে করে রক্ত ভালভাবে প্রবাহিত হয়। সহজে মুরগি জবাই করা যায়। পশুর কল্যাণের প্রতি লক্ষ রাখা যায়।

বি. দ্র. জ্ঞানহারা হওয়ার দুই মিনিট ৩০ সেকেন্ড পর মুরগি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

অতএব বিনীত আবেদন এই যে, উক্ত বিষয়গুলোর সমাধান ইসলামী শরীয়া মোতাবেক দলীলসহকারে দেওয়ার জন্য আপনার সুমর্জি কমনা করছি।

Answer

মুরগী বা অন্যান্য পশু-পাখির জবাই সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, জবাইকারী মুসলমান কিংবা আহলে কিতাব তথা কোনো আসমানী কিতাবের অনুসারী এবং সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন বুঝমান ব্যক্তি হওয়া। জবাইয়ের শুরুতে আল্লাহ তাআলার নাম উচ্চারণ করা এবং কোনো ধারালো বস্তু দ¦ারা গলার দিক থেকে জবাই করা এবং  শ্বাসনালি , খাদ্যনালি ও দুইি শাহরগের অন্তত একটি কেটে রক্ত প্রবাহিত করত জবাই সম্পন্ন করা। এসব শর্তের কোনোটি না পাওয়া গেলে জবাই সহীহ হবে না এবং সে প্রাণী খাওয়াও জায়েয হবে না। অবশ্য উপরোক্ত শর্ত পাওয়া যায়, এমন কেউ যদি জবাইয়ের সময় আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করতে ভুলে যায় তাহলে জবাই সহীহ হবে। তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত আল্লাহ্র নাম ছেড়ে দেয় তাহলে উক্ত জবাই সহীহ হবে না। (সূরা মায়েদা (৫) : ৩-৫; সূরা আনআম (৬) : ১২১; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫০৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৮৮৮; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৮৫৭৮, ৮৫৪১ ও ৮৫৫৬; তাফসীরে তাবারী ৪/৪৪০; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৭)

আর জবাইয়ের জন্য একাধিক ব্যক্তি হওয়া জরুরি নয়, একজনও জবাই করতে পারবে। এমনিভাবে আড়াই পোঁচে জবাই করাও জরুরি নয়। এটি একটি ভুল প্রচলন। মাসআলা হচ্ছে, রগ কেটে রক্ত প্রবাহিত করে দেয়া, তা যত পোঁচেই হোক। তবে জবাইয়ের ক্ষেত্রে ধারালো অস্ত্র ব্যবহর করবে। যেন প্রাণীর অধিক কষ্ট না হয়।

উপরোক্ত শর্তগুলো ছাড়াও জবাইয়ের কিছু আদব ও মুস্তাহাব রয়েছে। সুন্নাহসম্মত ও  উত্তমপন্থায় জবাই করতে চাইলে সে বিষয়গুলোর প্রতিও লক্ষ রাখা উচিত। যেমন-

১. প্রাণীকে প্রয়োজন অতিরিক্ত কষ্ট না দেওয়া। তাই প্রাণী ধরা, শোয়ানো ও জবাইয়ের কাজগুলো এভাবে করা উচিত যেন প্রাণীর অতিরিক্ত কষ্ট না হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৫৫; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৮৬০৯)

২. জবাইয়ের সময় পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে রেখে কিবলামুখী করে বাম কাতে শোয়ানো এবং জবাইকারীর কিবলামুখী হয়ে জবাই করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৮৫৮৭)

৩. জবাইয়ের জন্য ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذّبْحَ، وَلْيُحِدّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ.

আল্লাহ তাআলা সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব যখন তোমরা হত্যা করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা কর। যখন যবেহ করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ কর। প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৫৫)

৪. প্রাণীর সামনে অস্ত্র ধার না দেওয়া এবং এক প্রাণীর সামনে আরেক প্রাণী জবাই করা থেকে বিরত থাকা।

আবু হুরাইরা রা. বলেন-

إِذَا أَحَدّ أَحَدُكُمُ الشّفْرَةَ فَلَا يُحِدّهَا وَالشَاةُ تَنْظُرُ إِلَيْهِ.

কেউ যেন প্রাণীর দৃষ্টির সামনে ছুরিতে শান না দেয়। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৮৬০৬, ৮৬১০)

৫. দক্ষ ও পারদর্শী লোকের মাধ্যমে দ্রুত জবাইয়ের কাজ শেষ করা।

৬. শুধু গলার রগগুলো কেটেই ক্ষান্ত থাকা।

গর্দান বা পূর্ণ মাথা বিচ্ছিন্ন না করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৮৬০০)

৭. পুরোপুরি নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত কাটা-ছেলা ও এজাতীয় অন্যান্য কাজ থেকে বিরত থাকা। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৮৮-৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/২২৬; আলইখতিয়ার ৪/২৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৪৭

৫ নং প্রশ্নের উত্তর : না, মুরগীর রানের গোস্তের ভিতর হারাম কোনো রগ বা নাজায়েয কিছু নেই। রানের গোস্তের পুরোটাই হালাল। তা খেতে অসুবিধা নেই।

৬ নং প্রশ্নের উত্তর : মেশিনের মাধ্যমে মুরগী জবাই করার পূর্বে মুরগীকে অজ্ঞান করার যে পদ্ধতি অবলম্বন করার কথা প্রশ্নে বলা হয়েছে তাতে বাহ্যত কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষকের বক্তব্য হল, এ পদ্ধতিতে জবাইয়ের পূর্বে অনেক মুরগী মারা যায়। তাই অনেক আলেম অজ্ঞান করার এ প্রক্রিয়াকে অপছন্দ করেছন। তথাপি কেউ যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে তবে প্রত্যেক মুরগীর বিষয়ে জবাইয়ের পূর্বে নিশ্চিত করে নিতে হবে- তা আদৌ জীবিত আছে কি না। অসতর্কতাবশতঃ কোনো মৃত মুরগী যেন মানুষের খাদ্য হিসাবে পরিবেশিত না হয়।

উল্লেখ্য, আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের মাধ্যমে যেহেতু অল্প সময়ে অনেক মুরগী জবাই করা হয় তাই এক্ষেত্রে প্রত্যেক মুরগীর জন্য পৃথক পৃথক বিসমিল্লাহ বলার ক্ষেত্রে অবহেলার কথা শোনা যায়। তাই এক্ষেত্রেও প্রতিটি মুরগীর জবাইয়ের সময় স্বতন্ত্র বিসমিল্লাহ বলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার অবহেলা করা যাবে না। কেননা প্রত্যেক প্রাণীর জন্য পৃথক বিসমিল্লাহ বলা ছাড়া প্রাণী হালালই হয় না। তাই সংশ্লিষ্টদের এধরনের বিষয়গুলো নির্ভরযোগ্য আলেমদের থেকে জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ১০, ১/৬৫৪; ফিকহুন নাওয়াযিল ৪/২৫১

Read more Question/Answer of this issue