মুহাম্মাদ ছারওয়ার হোসেন - সাবালিয়া, টাঙ্গাইল
২০২৭. Question
আমাদের দাদারা আমাদের গ্রামের বাড়ির সম্মুখে দক্ষিণ পার্শ্বে ৫৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য দান করে গিয়েছেন। জমিটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। উক্ত জমির উত্তরাংশে পূর্ব দিকে একটি টিনের মসজিদ ঘর এবং মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে তারা ব্যবহার করে আসছেন, যার উত্তর দিকে পূর্ব পশ্চিমে লম্বা এবং পূর্ব পার্শ্ব দিয়ে উত্তর দক্ষিণে লম্বা নিজ বাড়িতে ও মসজিদে চলাচলের রাস্তা আছে। রাস্তার উত্তর পার্শ্বে প্রায় চার একর জমির উপর দাদাদের বসতবাড়ি। মসজিদ-কবরস্থানের উল্লেখিত ৫৩ শতাংশ প্লটের অবশিষ্ট প্রায় অর্ধেক অংশে পূর্ব পার্শ্বে মসজিদের জন্য বিরাট ইঁদারা এবং ইঁদারার পশ্চিম পার্শ্বের অবশিষ্ট জায়গা খালি পড়ে ছিল। পরবর্তীতে বাপ-চাচাদের আমলে ইঁদারার পশ্চিম পার্শ্বের খালি জায়গায় মসজিদ ঘরটি স্থানান্তর করা হয়। আর ঐ সময় থেকে অদ্যাবধি মসজিদের সাবেক জায়গাটি খালি পড়ে আছে।
আমাদের জামানায় ১৯৯২ ঈ.সালে এলাকায় সর্বশেষ ভূমিজরিপ হলে আমরা উক্ত ৫৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও কবরস্থানের নামে ২৭ ও ২৬ শতাংশ করে আলাদা আলাদা ভাগ করে রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত করে দেই এবং যেহেতু দক্ষিণ পার্শ্বে ইঁদারা ও মসজিদ ঘর স্থানান্তরিত হয়েছে সে হিসাবে দক্ষিণের অংশ মসজিদের নামে এবং উত্তরের অংশ কবরস্থানের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে মসজিদের সাবেক জায়গাটি কবরস্থানের অংশে পড়ে গিয়েছে। মসজিদ ও কবরের জায়গা মেপে বুঝ করতে গিয়ে দেখা গেল যে, মসজিদ ও কবরস্থানের উত্তর পার্শ্বে আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটিও সম্পূর্ণ মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে। এমনকি রাস্তার উত্তর পার্শ্বে আমাদের বাড়ির সিমানা মনে করে আমাদের ভাইয়েরা (শরিক) সারিবদ্ধভাবে যে সমস্ত ফলের ও কাঠের গাছ লাগিয়েছিলেন সেগুলোও সারিবদ্ধভাবে মসজিদ-কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় ভাইয়েরা মসজিদ-কবরস্থানের উল্ল্লেখিত জায়গা ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের লাগানো কিছু গাছ কেটে কাজে লাগিয়েছেন এবং কিছু গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। অবশিষ্ট গাছগুলিও কেটে ফেলে জায়গাটি খালি করে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। আর আমাদের বাড়িতে ও মসজিদে চলাচলের যে সরু রাস্তাটি আছে, উক্ত রাস্তাটি প্রশস্ত করে অন্য বড় এক রাস্তার সাথে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ এখন মাপের পর দেখা গেছে যে, রাস্তাটি মসজিদ-কবরস্থানের সিমানার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে।
এখন আমাদের জানার বিষয় হল :
ক) মসজিদ ও কবরস্থানের উল্লেখিত ৫৩ শতাংশ জায়গা আমরা যেভাবে ১৯৯২ সালের রেকর্ডে ভাগ করে দিয়েছি তা সঠিক হয়েছে কি না? না হয়ে থাকলে এখন করণীয় কী? আর মসজিদের সাবেক স্থানটি কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে সে বিষয়ে করণীয় কী?
খ) বর্তমানে মসজিদটি বড় ও পাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যদি কবরস্থানের কিছু জায়গা ব্যবহার করতে হয় তাহলে তা করা যাবে কি না?
গ) মসজিদ ও কবরস্থানের সিমানায় ভাইদের লাগানো গাছগুলো তারা কেটে ব্যবহার করেছে ও বিক্রি করেছে তা সঠিক হয়েছে কি না? না হয়ে থাকলে এখন করণীয় কী? আর অবশিষ্ট গাছের হুকুম কি?
ঘ) মসজিদ-কবরস্থানের সিমানায় পড়ে যাওয়া উল্লেখিত রাস্তাটি সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরও প্রশস্ত করে অন্য বড় রাস্তার সাথে মিলানো যাবে কি না? যদি না যায় তাহলে মসজিদ-কবরস্থানের অর্ধেক এবং আমাদের বাড়ির অংশ থেকে অর্ধেক জায়গার মাধ্যমে রাস্তাটি করা যাবে কি না? আর যদি তাও না হয় তাহলে যেভাবে রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছি অন্তত সেভাবে ব্যবহার করতে পারব কি না?
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিষয়গুলোর সমাধান দিলে ইনশাআল্লাহ আমরা সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Answer
ক ও খ) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াক্ফকারীগণ যেহেতু ৫৩ শতাংশ জায়গা মসজিদ ও কবরস্থান উভয়টির জন্য যৌথভাবে ওয়াক্ফ করেছেন তাই মসজিদ এবং কবরস্থান উভয়ের জন্য সমান ভাগে অর্থাৎ সাড়ে ছাব্বিশ শতাংশ করে ভাগ করতে হবে। আর ওয়াক্ফকারীগণ প্রথমে যে স্থানে মসজিদ করেছিলেন সেটিকেই মসজিদ হিসেবে বহাল রাখা জরুরি। পাকা মসজিদ বানালে পুরাতন মসজিদের স্থানেই বানাতে হবে। সুতরাং উত্তর-পূর্ব দিকের পুরাতন মসজিদের আশপাশে উত্তর-দক্ষিণে কিংবা পূর্ব-পশ্চিমে যেভাবে সুবিধা হয় সাড়ে ছাব্বিশ শতাংশ মসজিদের জন্য রেখে বাকি অর্ধেক কবরস্থানের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। অতএব দক্ষিণ-পশ্চিমে নতুন করে যে মসজিদ বানানো হয়েছে তা মসজিদ থাকবে না। সেটা কবরস্থানের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। আর ১৯৯২ সালের রেকর্ড শুদ্ধ হয়নি। উপরে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে তা সংশোধন করে নেওয়া জরুরি।-সহীহ বুখারী ১/৩৮২; হেদায়া ২/৬৪৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩৯
গ) ভাইদের লাগানো গাছগুলো নিজেদের ব্যবহারে নেওয়া বা বিক্রি করা সঠিক হয়েছে। অবশিষ্ট গাছগুলো দ্রুতি সরিয়ে ফেলতে হবে। আর মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গায় গাছ লাগানোর কারণে জায়গার ন্যায্য ভাড়া দিয়ে দিতে হবে।-তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৮২
ঘ) ওয়াক্ফের জায়গা যথাসম্ভব রাস্তার জন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজস্ব জমিতে রাস্তা বের করা সম্ভব হলে সেটাই করতে হবে। একান্ত ওয়াক্ফের জমি থেকে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়লে ওয়াক্ফ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এভাবে ইনসাফ অনুযায়ী নিতে পারবে।-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৮