আহসান হাবীব - তেজগাঁও, ঢাকা
৪৮১৭. Question
আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার ছোট ছোট দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে। আমার স্ত্রীর সাথে একটি বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হচ্ছিল। কিছুদিন আগে আমার বোনেরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলে সে তাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে এবং ফোনে আমার সাথে খুব কথা কাটাকাটি হয়। আমি তাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং একটি চিঠিতে ঘটনার বিবরণসহ লিখি যে, ‘আমি আমার স্ত্রীকে বায়েন তালাক দিলাম’। আমি মুখে উচ্চারণ করে তালাক বলিনি কিন্তু তালাকের নিয়তেই উক্ত কথা লিখেছি। পরে আমার ছেলে-মেয়ের কথা ভেবে তালাকের চিঠিটি তার কাছে না পাঠিয়ে ছিঁড়ে ফেলি।
আমার জানার বিষয় হল, উক্ত লেখার কারণে আমার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে কি না? এখন তার সাথে ঘর-সংসার করতে পারব কি না? উল্লেখ্য, আমি ইতিপূর্বে তাকে কোনো তালাক দেইনি। সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
Answer
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে চিঠিতে ঐ কথা লেখার দ্বারাই আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক পতিত হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তদ্রƒপ লিখিত তালাক স্ত্রীর কাছে প্রেরণ করা বা পৌঁছাও জরুরি নয়। সুতরাং আপনার উক্ত তালাক কার্যকর হয়ে গেছে। তবে এখন আপনারা যদি পুনরায় ঘর-সংসার করতে চান তাহলে মোহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এভাবে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে পরবর্তীতে আপনি মাত্র দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। অর্থাৎ যদি কখনো তাকে দুই তালাক দেওয়া হয় তাহলে পূর্বের এক তালাকসহ মোট তিন তালাক পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এভাবে নতুন বিবাহের মাধ্যমেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। অতএব ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, তালাক হল বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চ‚ড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে উভয়ের জন্য তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে ও পরামর্শ সাপেক্ষে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কোনো কথা বা সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায়। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আরো উল্লেখ্য যে, শরীয়তে তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। যা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, রাগ বা স্বাভাবিক অবস্থায় এমনকি ঠাট্টাচ্ছলে দিলেও কার্যকর হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
-কিতাবুল আছল ৪/৫১৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ২/৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৮৪; ফাতহুল কাদীর ৩/৪০৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ৩/২৪৬