Muharram 1440 || October 2018

নুরুল্লাহ - হযরতপুর, কেরাণীগঞ্জ

৪৫৭৫. Question

মুহতারাম, বর্তমানে দেখা যায় আমাদের দেশের প্রায় মসজিদই নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় তালা মেরে রাখা হয়। এ ব্যাপারে কোনো কোনো মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলেন, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদ ময়লা হয়ে যায় এবং মসজিদের আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। অথচ আমরা  অনেক সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিস টাইমের ফাঁকে ফাঁকে কিছু অবসর সময় পাই। তখন আমাদের নামায, কুরআন তিলাওয়াত বা ফাজায়েলে আমল কিংবা অন্যান্য দ্বীনী বইপত্র পড়তে মনে চায়। কিন্তু মসজিদগুলো  তালাবদ্ধ থাকায় উপযুক্ত স্থান না পেয়ে আমরা এসব করতে পারি না। মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, উল্লেখিত সমস্যাকে সামনে রেখে এক্ষেত্রে শরয়ী সমাধান কী? আশা করি বিষয়টি খোলাসা করে জানাবেন।

Answer

মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের স্থান ও দ্বীন শিক্ষার অন্যতম জায়গা। মসজিদ শুধু নামাযের জন্য নয়; বরং যিকির-আযকার, কুরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনী তালীমের জন্যও বটে।

হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِنّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزّ وَجَلّ، وَالصّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ.

অর্থাৎ মসজিদ হল নামায, যিকির ও কুরআন  পড়ার জন্য। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫

তাই নিয়ম হল, ফরয নামাযের সময় ছাড়াও মসজিদকে প্রয়োজন মোতাবেক ইবাদত, তালীম ও যিকিরের জন্য উন্মুক্ত রাখা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ বন্ধ রাখা ঠিক নয়। ইবনুল হুমাম রাহ. বিনা প্রয়োজনে মসজিদ বন্ধ রাখাকে- মানুষকে মসজিদ থেকে বাধা প্রদান করার অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ مَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ یُّذْكَرَ فِیْهَا اسْمُهٗ وَ سَعٰی فِیْ خَرَابِهَا .

তার চে’ বড় জালেম আর কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং সেগুলো ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়। -সূরা বাকারা (২) : ১১৪

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদের মালামাল হেফাযতের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো কোনো ফকীহ প্রয়োজনের কারণে নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখাকে জায়েয বলেছেন। তাই এ ধরনের প্রয়োজনে অন্যান্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখার অবকাশ আছে।

কিন্তু সেক্ষেত্রেও নামাযের পরপরই বন্ধ করবে না; বরং জামাত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় খোলা রাখবে। যেন পরে আসা ব্যক্তিগণ ফরয আদায় করতে পারে। এবং জামাতের পরে যারা একটু সময় নিয়ে নফল ইবাদত করতে চায় তাদের জন্যও যেন সুযোগ থাকে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, জামাত শেষ করার সামান্য পরেই মসজিদের মুআজ্জিন/খাদেমগণ মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লীদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকেন, যা কিছুতেই সমীচীন নয়।

আর যেখানে নামাযের নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়েও ইবাদত ও দ্বীনী তালীমের উদ্দেশ্যে মুসল্লীদের মসজিদে ব্যাপক আসা-যাওয়া থাকে ঐসব মসজিদ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এজন্য প্রয়োজনে মালামাল হেফাযত করা ও মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অতিরিক্ত খাদেম নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। আর কোনো ক্ষেত্রে পুরো মসজিদ খোলা রাখা সম্ভব না হলে অন্তত মসজিদের কোনো অংশ অথবা বারান্দা (বাতি ও পাখাসহ) খোলা রাখার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

প্রাসঙ্গিকভাবে একথাও জেনে রাখা দরকার যে, মসজিদে যে দ্বীনী  কাজ করা হবে তা শরীয়তের আহকাম মোতাবেক হওয়া জরুরি এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে যেমন শরীয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন করা জায়েয নয় তেমনি মসজিদের বৈধ ও স্বীকৃত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করাও ঠিক নয়।

-ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬; রূহুল মাআনী ১০/৬৫

Read more Question/Answer of this issue