Jumadal Akhirah 1438 || March 2017

আব্দুল্লাহ আল আসিফ - মিয়াপাড়া, কুমিল্লা

৪০২৬. Question

পূর্বকথা : মাসআলাটি জানা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমর চাচা ও আমরা কয়েক বন্ধু হালাল হারাম বিবেচনা না করে সংস্থাটির সাথে জড়িয়ে পড়ি এবং আমাদের কারণে আরো কয়েকজন বিষয়টির সাথে যুক্ত হয়। তাই মাসআলাটি যত দ্রুত সম্ভব জানা জরুরি।

আমি যে কোম্পানির কথা বলছি তার নাম তিয়ানশি। কোম্পানিটি চায়নার। তারা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করে :

১. সেবা

২. ব্যবসা

১. সেবা : মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য কোম্পানিটির রয়েছে কয়েক শত পণ্য। যা বাস্তবিক পক্ষেই মানুষের জন্য উপকারী এবং কার্যকরী। এসব পণ্য দিয়েই এর ব্যবসা সঞ্চালিত হয়।

২. ব্যবসা : তিয়ানশির ব্যবসা হচ্ছে নেটওয়ারর্কিং সিস্টেমে। অর্থাৎ আমি সুস্থ থাকার জন্য সর্বপ্রথম ৩০০ ডলারের (২৪০০০ টাকা) পণ্য ক্রয় করে ৩* (three stars) অর্জন করব। তারপর আমি কোম্পানির যেসব পণ্য ক্রয় করব তা থেকে ঐ পণ্যের মূল্যের ২০% হারে ছাড় পাব। নিয়মটা ঠিক এরকম, আমি নির্দিষ্ট দামেই পণ্য কিনব। তবে পরবর্তীতে তা থেকে মূল্যের ২০% আমার ব্যাংক একাউন্টে চলে আসবে। আমার মাধ্যমে অন্য কেউ ক্রয় করলেও ঠিক এ রকম। এরপর আমি ৪ জনকে ৩* বানাব। আর তাদের থেকে নির্দিষ্ট পয়েন্ট পেয়ে আমি হয়ে যাব ৪* (four stars) এতে আমি সরাসরি যা কিনব তা থেকে পাব ২৪%। আর আমি যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছি তাদের ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য থেকে পাব ৪%। এভাবে আমার ঐ ৪ জন ৪* হয়ে গেলে আমি হব ৫*। পণ্যের মূল্যের ২৪% লাভ পাব। আর আমার নিচের লোকদের থেকে পাব ৪% ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এক সময় তা ৪০% পর্যন্ত যায়। আর আমি কাজ করি না করি, জানি বা না জানি আমার নিচে যত শত শত হাজার হাজার লোক থাকবে তাদের কাছ থেকে ৪% মূল্যের দাম থেকে ওদের ভাষ্যমতে একজন ব্যক্তি ২০% থেকে ৪০% পর্যন্ত যে লাভটা পাবে সেটা হচ্ছে অন্যান্য কোম্পানি মধ্যস্তা অথবা শোরুম, টিভিতে এ্যাড, এজেন্ট, সাব এজেন্টের মত ৬/৭ টি হাত বদল হতে হতে পণ্যের দাম দ্বীগুণ অথবা তিনগুণ বেড়ে যায়। ওদের এসব মধ্যস্থতা নেই, যার ফলে ঐ বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে তারা কোম্পানির সদস্যদের দেয়। এখন আমার প্রশ্ন হল :

১. এই সিস্টেম/পদ্ধতিতে ব্যবসা কি জায়েজ। যদি জায়েজ না হয় তবে তা কেন? (দলিলসহ)

২. যদি জায়েয না-ই বা হয় তবে আমরা যে এতদিন এর থেকে লভ্যাংশ পেয়ে এসেছি তার জন্য বর্তমানে কী করা?

৩. যদি আমরা ব্যবসা না করে ওদের কাছ থেকে পণ্য কিনি তাহলে এর বিধান কি?

 


Answer

১. প্রচলিত এমএলএম পদ্ধতির কারবার জায়েয নয়। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী তিয়ানশি কোম্পানি যেহেতু এমএলএম অর্থাৎ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে পরিচালিত তাই এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করা নাজায়েয। এমএলএম পদ্ধতি নাজায়েয হওয়ার মৌলিক ও শাখাগত অনেক কারণ রয়েছে। তন্মেধ্যে গারারশ্রমবিহীন পারিশ্রমিকএক চুক্তির সাথে আরেক চুক্তি শর্তযুক্ত হওয়াঅযাচিত মধ্যস্বত্ব ভোগ ও দালালদের অতিরঞ্জিত কথা বলে মানুষকে প্রভাবিত করা অন্যতম। সুতরাং উক্ত কোম্পানীর সাথে ব্যবসায় জড়িত হওয়া জায়েয হবে না। এ পদ্ধতির মার্কেটিংয়ের খারাবী ও নাজায়েযের দলীলসমূহ মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক আল কাউসারের ২০১১ সালের জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ও মার্চ সংখ্যায় বিস্তারিত লেখা হয়েছে। প্রয়োজনে আলকাউসার দপ্তর থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো পড়ে নিতে পারেন।

২. যেহেতু এই পদ্ধতির ব্যবসা সম্পূর্ণ নাজায়েযতাই এ থেকে অর্জিত লভ্যাংশও হালাল নয়। সুতরাং এ পর্যন্ত যত টাকা কমিশন পেয়েছেন তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হবে।

৩. এ ধরনের কোম্পানীর পণ্য নিজে পরিবেশক হওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলেও কোনো পরিবেশকের মাধ্যমে কেনা বৈধ নয়। কেননাএতে নিজে ব্যবসায় জড়িত না হলেও নেটে অবস্থিত অন্যান্য লোকের এবং কোম্পানীর অবৈধ ব্যবসায় সহায়তা করা হয়।

-সূরাতুন নিসা (৪) : ২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪১৩, ১৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৭২

Read more Question/Answer of this issue