Shaban-Ramadan 1437 || May-June 2016

মুহাম্মাদ - মুন্সিগঞ্জ

৩৭২৯. Question

আমাদের কিছু দোকান আছে। আমরা সেগুলো একবছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকি। ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াগ্রহীতা থেকে দোকানের সাইজ হিসাবে দুই-তিন লক্ষ টাকা সিকিউরিটি মানি নিয়ে থাকি। শুনেছি, এ টাকা নাকি ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এক আলেমের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সিকিউরিটির টাকা অগ্রিম ভাড়া না ধরেও ব্যবহার করা যায়। তাই জানতে চাই, সিকিউরিটি বাবৎ ভাড়াগ্রহীতা থেকে যে টাকা নেওয়া হয় তা ব্যবহারের কোনো বৈধ পদ্ধতি আছে কি? একজন পরামর্শ দিয়েছেন, সিকিউরিটি মানি না নিয়ে ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঐ টাকা করয হিসাবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে। এ কাজ বৈধ হবে কি না? যদি বৈধ না হয় তাহলে অতীতে কেউ এ টাকা ব্যবহার করে থাকলে তার করণীয় কী? বিষয়গুলো দলীল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

 


Answer

ভাড়াগ্রহীতা থেকে ভাড়া চুক্তির সময় অগ্রিম কিছু অর্থ গ্রহণের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে।

১. ভাড়াদাতা জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে একটি অংকের অর্থ গ্রহণ করে থাকে। ভাড়া-চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহীতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়। যাকে সিকিউরিটি মানি বলে। ২. ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং প্রতি মাসেই এর থেকে কিছু কিছু করে ভাড়া কাটা হয়। যাকে এ্যাডভান্স বলে।

সিকিউরিটি মানি তথা জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেনআবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললআমার নিকট এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি এতে আরোহন করেছি। (এর কী হুকুম?) তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেনতুমি এর পিঠ থেকে (আরোহন করে) যে উপকৃত হয়েছ তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। ( মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস ১৫০৭১)

সুতরাং ভাড়াদাতার জন্য সিকিউরিটি মানি ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়েয নয়। অতীতে এ টাকা ব্যবহার করে থাকলে এজন্য আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা-ইসতিগফার করতে হবে এবং এ টাকা দ্বারা কোনো লাভ অর্জন করে থাকলে তা সদকা করে দিতে হবে।

আর এক্ষেত্রে সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঋণ হিসেবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে বলে যে কথা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। কেননা সিকিউরিটি মানির টাকাকে ঋণ ধরা হলে যেক্ষেত্রে সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কম নেওয়া হবে সেক্ষেত্রে ঋণের কারণে ভাড়া কম নেওয়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। আর ঋণের কারণে কোনো সুবিধা ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত।

তাছাড়া এভাবে একটি চুক্তির সাথে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করে কারবার করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে করয হিসাবে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বরং ভাড়াদাতা নিজে ব্যবহারের জন্য ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ নিতে চাইলে তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়া হিসাবে নিতে পারবে। যা চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া হিসেবে কর্তিত হবে।

উল্লেখ্যপ্রথম পদ্ধতি অর্থাৎ সিকিউরিটি মানি নিয়ে যেহেতু অনেকেই নাজায়েযভাবে তা ব্যবহার করে গুনাহে পড়েন তাই আমরা এক্ষেত্রে এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়ার পদ্ধতিটি গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহিত করে থাকি। এতে করে দোকান বা বাড়ির মালিক একত্রে বেশি টাকাও নিতে পারে এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধও বটে।

Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬২৮; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল আসল ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৪৬৮

Read more Question/Answer of this issue