Zilhajj 1436 || October 2015

মুহাম্মাদ মারূফ - খিলগাও, ঢাকা

৩৪৮২. Question

আমাদের সমাজে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, কোনো বড় ব্যক্তি মারা গেলে তার গায়েবানা জানাযা পড়া হয়ে থাকে। আমাদের এলাকার কয়েকজন আলেমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এ পদ্ধতিকে সঠিক বলেন। তারা বলেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবাশার বাদশাহ নাজাশীর গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন।

এখন জানার বিষয় হল, গায়েবানা জানাযা নামায বৈধ কি না? আর নাজাশীর ঘটনা দ্বারা গায়েবানা জানাযা প্রমাণিত হয় কি না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

Answer

জানাযা নামায আদায়ের জন্য মৃতের লাশ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাযা নামায সহীহ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তাঁর অসংখ্য সাহাবী মদীনার বাইরে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম থেকে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়ার প্রমান নেই। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের জানাযার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি ঘোষণাও দিয়েছিলেন যেতোমাদের যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে জানাবে। কারণ আমার জানাযা নামায তার জন্য রহমত।-সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ৩০৮৩

আর শুধু নাজাশীর জানাযা পড়াটা ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাযা জায়েয হওয়াকে প্রমাণ করে না। এছাড়া মুসনাদে আহমদ ও সহীহ ইবনে হিব্বানে নাজাশীর জানাযা সম্পর্কিত একটি হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যেনাজাশীর লাশ কুদরতিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনেই উপস্থিত ছিল।

ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনতোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় করো। ইমরান রা. বলেনঅতপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। আর আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যেনাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা ছিল। -মুসনাদে আহমদহাদীস ২০০০৫;সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ৩০৯৮

এছাড়া অনেক মুহাদ্দিসগণ নাজাশীর জানাযা সংক্রান্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনএ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হলনাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাযা পড়িয়েছেন।

আল্লামা যায়লায়ী রাহ.আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহআল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ও আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ.  এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (দেখুন : নাসবুর রায়া ২/২৮৩যাদুল মাআদ ১/৫০২ফয়যুল বারী ২/৪৭০

উলামায়ে কেরাম এ ঘটনার আরো অন্যান্য ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন।

যা হোকএটা ছিল নববী জীবনের স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। এর উপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে প্রচলিত গায়েবানা জানাযাকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। কেননা অনুসৃত সুন্নাহর সাথে এটির কোনো মিল নেই।

এছাড়া যে লাশের কোথাও জানাযার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাযা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাযা পড়ার একটি ঘটনাও হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তাই এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। 

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০৯০; ফাতহুল কাদীর ২/৮০, ৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২০৯; ইলাউস সুনান ৮/২৮৩

Read more Question/Answer of this issue