Zilqad 1436 || September 2015

মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম - সখিপুর, টাঙ্গাইল

৩৪৭৫. Question

আমার নানার দুই ছেলে। বড় ছেলে সরকারি চাকরি করে। ছোট ছেলে সিংগাপুর থাকে। ছোট ছেলে সিংগাপুর যাওয়ার পর নানা বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করে। ছোট মামা বলেছিল, বিল্ডিংয়ের পুরো টাকা সে পাঠিয়ে দিবে। আর বিল্ডিংটি নেওয়া হয়েছে তার কথা অনুযায়ী। কিন্তু সিংগাপুর যাওয়ার পর কিছু টাকা পাঠিয়ে আর কোনো টাকা দেয়নি। হয়তো তার স্ত্রী কোনো বদনাম করেছে এবং নানার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি নানীর সাথেও। বর্তমানে বংশের কারো সাথে কথা বলে না। তাই নানা রাগ করে ছেলেকে বাড়িতে আসতে মানা করে দিয়েছে। মামাও তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে নানা তার সকল সম্পত্তি বড় মামার নামে লিখে দিয়েছে।

প্রশ্ন হল, তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি রাখা কি ঠিক হয়েছে? আর নানার মৃত্যুর পর বড় মামা যদি উত্তরাধিকার হিসেবে ছোট মামাকে কিছু সম্পত্তি দিতে চায় তাহলে তা বৈধ হবে কি?


Answer

মা-বাবার সাথে সর্বাবস্থায় সদাচরণ করা সন্তানের কর্তব্য। কুরআন মাজীদে অনেক আয়াতে এবং অসংখ্য হাদীসে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঅর্থতোমার রব আদেশ করেছেন যে,  তিনি ছাড়া আর কারো ইবাদত তোমরা করবে না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায় তবে তুমি তাদের উফ’ বলবে না এবং তাদের ধমক দিবে নাবরং তাদের সঙ্গে নম্রভাবেকথা বলবে। আর করুণাভরে তাদের সামনে বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দাও এবং বলহে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুনযেমন তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।

আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিতরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,আমি কি তোমাদেরকে জঘন্যতম কবীরা গুনাহ কী তা বলবএভাবে তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন আমরা বললামইয়া রাসূলাল্লাহ অবশ্যই বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (জঘন্যতম কবীরা গুনাহ হল) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ৫৯৭৬সহীহ মুসলিমহাদীস ৮৭

এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে।

এছাড়া পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়াও কবীরা গুনাহ। এতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ হবে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনআত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ৫৯৮৪সহীহ মুসলিমহাদীস ২৫৫৬

আর আত্মীয় বা কোনো মুসলমানের সাথে কথা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনকোনো মুসলমানের জন্য অপর ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা বৈধ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। Ñসুনানে আবু দাউদহাদীস ৪৮৭৮

সুতরাং আপনার মামার কর্তব্যতার মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা,মা-বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করা এবং তাদের দেখাশুনা ও খোঁজ-খবর নেওয়া। উল্লেখ্যছেলের উক্ত অপরাধের কারণে বাবার জন্যও তাকে মীরাস থেকে একেবারে বঞ্চিত করে দেওয়া এবং সব সম্পত্তি বড় ছেলের নামে লিখে দেওয়া ঠিক হয়নি। হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনযে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত মীরাস থেকে কাউকে বঞ্চিত করল আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মীরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ৩৪৬৮৮

তাই আপনার নানার কর্তব্যউভয় ছেলেকেই সম্পত্তি দেওয়া। প্রয়োজনে বড় ছেলেরও এ ব্যাপারে পিতাকে সহযোগিতা করা উচিত। আবার সে নিজে থেকেও ছোট ভাইকে সম্পত্তির অংশ দিয়ে বাবাকে দায়মুক্ত করতে পারে। 

Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩১৯

Read more Question/Answer of this issue