Jumadal Akhirah 1435 || April 2014

মুহাম্মাদ আদনান - কুমিল্লা

৩০৮৪. Question

পিতা তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েকে সমান সমান দিতে হবে কি না?

এ অবস্থায় এমদাদুল মুফতীনের ৯৫৮ নং প্রশ্নের উত্তরে ৮৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ছেলে ও মেয়েকে সমান সমান দিতে হবে। মিরাসের নিয়মে মেয়েকে অর্ধেক দিবে না বা দেওয়া উচিত নয়। এ মাসআলা কি সঠিক? বিস্তারিত জানতে চাই।

 

Answer

পিতামাতা জীবদ্দশায় সন্তানদিগকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেওয়ার বিষয়টি দুভাবে হতে পারে।

এক. সন্তানদিগকে সম্পত্তির অংশবিশেষ প্রদান করা।

দুই. জীবদ্দশায় সকল সম্পত্তি সম্ভাব্য ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া।

প্রথম ক্ষেত্রে অর্থাৎ পিতামাতা যদি সন্তানদেরকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে কোনো কিছু প্রদান করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে সকলকে সমানভাবে দেওয়া কর্তব্য। শরীয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া তাদের মাঝে উলেখযোগ্য কমবেশি করা ঠিক নয়।

তদ্রূপ মীরাসের নীতি অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেওয়া  যাবে না। কেননা হাদীস শরীফে সন্তানদিগকে কোনো কিছু হেবা করার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

যেমন, নুমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমার পিতা আমাকে রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে সাক্ষী রেখে আমাকে একটি জিনিস হাদিয়া দিবেন। তখন তিনি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে ছাড়া তোমার আর কোনো সন্তান আছে? তিনি বললেন, জ্বী, আছে।

রাসূলুলাহ  সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা কর।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯

সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানদেরকে হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা কর।-সহীহ বুখারী ১/৩৫২

অবশ্য সন্তানদের মধ্যে কেউ যদি পিতামাতার অধিক অনুগত হয় এবং তাদের খেদমত ও দেখাশোনার প্রতি অধিক যত্নবান হয় অথবা ইলম-আমল, তাকওয়া ও পরহেযগারিতে কোনো সন্তান অধিক অগ্রগণ্য হয় সেক্ষেত্রে পিতামাতা খুশি হয়ে তাকে কিছু বেশি দিতে চাইলে তা জায়েয।

এভাবে দেওয়া সাহাবা থেকে প্রমাণিত আছে। যেমন, আবু বকর রা. আয়েশা রা.-কে, উমর রা. আসেম রাহ.-কে এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. তাঁর কোনো কোনো সন্তানকে অধিক দিয়েছেন। (মুআত্তা, ইমাম মালেক পৃষ্ঠা : ৬৪৩; শরহু মাআনিল আছার ২/২২৫; ফাতহুল বারী ৫/২৫৪)

 

আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ পিতামাতা যদি মৃত্যুর পূর্বে সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করে দিতে চায় তাহলে এক্ষেত্রেও যেহেতু তা মূলত হেবা বা দানেরই অন্তর্ভুক্ত তাই ফকীহগণের অনেকের মতে এ অবস্থায়ও ছেলেমেয়ে সকলকে সমহারে দিতে হবে। মীরাসের নীতি অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের চেয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া যাবে না। ইমদাদুল মুফতীনে এ মতকে গ্রহণ করা হয়েছে। এ মত অনুযায়ী কেউ সন্তানদের মাঝে সমুদয় সম্পত্তি সমহারে বণ্টন করে দিলেও তা অন্যায় হবে না।

তবে এক্ষেত্রে আরেকটি মত হল, জীবদ্দশায় সকল সম্পত্তি বণ্টন বাহ্যিকভাবে হেবা বা দান হলেও উদ্দেশ্যের দিক থেকে যেহেতু তা মৃত্যু পরবর্তী মীরাসের পূর্ববণ্টন তাই উদ্দেশ্যের বিবেচনায় মীরাসের নীতি অনুযায়ীই বণ্টন করা উচিত এবং ছেলেকে মেয়ের চেয়ে দ্বিগুণ দেওয়া উচিত। এটি ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-

এর মত।

 

আর কিফায়াতুল মুফতী ও ফাতাওয়া রহীমিয়াতে একটি প্রশ্নের উত্তরে এ মত অনুযায়ী ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। আর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিমেও এ মতকে গ্রহণ করা হয়েছে।

 

তাই উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে এ মত অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের চাইতে দ্বিগুণ দেওয়া উত্তম হবে। এছাড়া বর্তমানে যেভাবে নিজের সমুদয় সম্পদ পূর্বেই বণ্টন করে দেওয়ার প্রবণতা হয়েছে তাতে এই দ্বিতীয় মত অনুযায়ী বণ্টন করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ বর্তমানে অনেকেই নিজের জীবদ্দশাতেই সমুদয় সম্পদ ছেলেমেয়েদের নামে লিখে দিয়ে থাকে। এখন যদি প্রথমোক্ত বক্তব্যের উপর আমল করে সমান সমান দেওয়া হয় তাহলে পিতামাতার সম্পদে ছেলেমেয়েদেরকে শরীয়ত যেভাবে অংশ দিতে চেয়েছে তার উপর আর আমলের সুযোগই থাকে না। কারণ এক্ষেত্রে তার কোনো সম্পদই তো অবশিষ্ট থাকবে না।

-সহীহ বুখারী ১/৩৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৫৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭; আমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৬৩

Read more Question/Answer of this issue