নাজিয়ুল্লাহ ফাতিহ - উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা
২৯৯৩. Question
পাগড়ি পরিধানের হুকুম সবিস্তারে জানতে চাই। অনেককে দেখা যায়, বিশেষ বিশেষ সময় বিশেষ বিশেষ স্থানে পাগড়ি পরিধান করে থাকেন। কেউ ফরয নামাযের সময়, কেউ আবার জুমার নামাযের সময় আর কেউ ঈদ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিধান করেন। দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
Answer
পাগড়ি পোশাকের একটি সুন্নত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যেসকল পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের নিকট পাগড়ি একটি পছন্দনীয় পোশাক ছিল এটি আরবের একটি ঐতিহ্যও বটে।
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। এখানে দু’ একটি হাদীস উল্লেখ করা হল।
জাবির রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৮
মুগীরা ইবনে শুবা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮১
সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আমর ইবনে হুরাইস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার লোকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিলেন। সে সময় তিনি কালো পাগড়ি পরিহিত ছিলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৯
তাঁর পাগড়ি পরিধান সংক্রান্ত এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
সাহাবা, তাবেয়ীগণও নামাযে এবং নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি ব্যবহার করতেন। দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী ১/৫৬
সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ রাহ. বলেন, আমি মুহাজির সাহাবীগণকে কালো, সাদা, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৪৮৯
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মক্কা মুকাররমার উদ্দেশে বের হলে সঙ্গে পাগড়ি নিতেন এবং তা পরিধান করতেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৫২
আবু উবাইদ রাহ. বলেছেন, আমি আতা ইবনে ইয়াযিদকে পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৮০
উপরোক্ত হাদীস ও আছার থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, সাহাবা, তাবেয়ীন নামাযে ও নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন। তাঁদের কাছে পোশাক হিসেবে পাগড়ির একটি বিশেষ অবস্থান ও গুরুত্ব ছিল।
তাই পোশাকের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফের অভ্যাসের অনুসরণ করা ভালো এবং তাদের মহববতে এই অনুসরণের কারণে ইনশাআল্লাহ সওয়াবও হবে।
তবে জেনে রাখা দরকার যে, পাগড়ি নির্দিষ্ট কোনো সময়, স্থান বা বিশেষ ইবাদতের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। পাগড়িকে নামাযের জন্য অপরিহার্য মনে করা অথবা পাগড়িসহ নামায আদায় করলে বিশেষ ছওয়াব (যেমন, এক রাকাতে পঁচিশ রাকাত বা সত্তর রাকাতের সওয়াব) হবে-এমন ধারণা করা ভুল; বরং পাগড়ি পোশাকেরই একটি ঐচ্ছিক অংশ।
পোশাক হিসাবে তা পরিধান করা বা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো অনুষ্ঠানে পরা বা সকল নামাযের জন্য পাগড়ি পরা কিংবা জুমা-ঈদ ইত্যাদিতে বা কোনো কোনো নামাযে পরা সবই ঠিক আছে।
উল্লেখ্য, পাগড়িকে এমন সীমাবদ্ধতার সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়, যার কারণে বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় যে, পাগড়ি ঐ সময়ের একটি বিশেষ আমল। এমনভাবে সীমাবদ্ধ করে নেওয়া তার ব্যবহার রীতিরও পরিপন্থী। যেমনটি কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ফরয নামাযের ইকামত যখন শুরু হয় তখন পাগড়ি বাঁধে আবার সালাম ফেরানোমাত্রই তা খুলে ফেলে। পাগড়িকে এভাবে নামাযের সাথে সম্পৃক্ত মনে করা ঠিক নয়।
আরো উল্লেখ্য যে, পাগিড় পরিধান করে নামায আদায় করলে ছওয়াব বেশি হওয়া সংক্রান্ত যেসকল বর্ণনা রয়েছে সেগুলোর কোনোটি সহীহ নয়।