মুগদা, ঢাকা - ৫২৬৯

মোজ্জাম্মেল হক. Question

আমি একজন সিএনজি চালক। আমার নিজেরই একটি সিএনজি ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমি এখন এক মহাজনের সিএনজি নিয়ে চালাচ্ছি। আমি তার সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছি যে, সিএনজি চালিয়ে যা আয় হবে তার ৪০র্% তাকে দিব আর ৬০% আমি নিব। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে তিনিও এ চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন।

হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, আমাদের জন্য এভাবে চুক্তি করা কি বৈধ হয়েছে? না হলে সঠিক পন্থা কী হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি নাজায়েয হয়েছে। কারণ এক্ষেত্রে লাভের অংশ বণ্টনের চুক্তি সহীহ নয়। কারণ এতে আপনি শ্রমদাতা। আর শ্রমদাতার মজুরি সুনির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। তাই মুনাফার হার বণ্টনের চুক্তি করলে তা শুদ্ধ হবে না। এক্ষেত্রে সহীহভাবে চুক্তি করতে চাইলে নি¤œর দুটি পদ্ধতির যে কোনোটি অবলম্বন করা যেতে পারে।

এক. নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে সিএনজিটি ভাড়া নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সিএনজির সকল আয় আপনার হবে। আর মালিক নির্দিষ্ট ভাড়া পাবে।

দুই. সিএনজির সম্পূর্ণ আয় মালিক নিজে পাবে। আর চালক হিসেবে আপনি দৈনিক বা মাসিক নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবেন। এক্ষেত্রে আপনার পারিশ্রমিক পূর্বেই নির্ধারণ করে নিতে হবে। আয় যা-ই হোক আপনার প্রাপ্য আপনি পেয়ে যাবেন। এই চুক্তিতে আপনার যতটুকু সময় গাড়ি চালানোর কথা হবে তা আপনাকে আমানতের সাথে আদায় করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/১১৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৪১১; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩২৬

Sharable Link

কাউসার আহমদ - ভোলা

৫২৪৫. Question

বর্তমানে মোবাইলের জন্য কুরআন শরীফের যেসকল অ্যাপ পাওয়া যায়, সেগুলো খোলা অবস্থায় অযু ছাড়া স্ক্রিনের মাঝে স্পর্শ করা যাবে কি? এক হুজুরকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, ‘অযু ছাড়া তো আপনি গ্লাসের উপর স্পর্শ করছেন লেখার উপর নয়, তাই এতে কোনো অসুবিধা নেই। তার এ কথা কি ঠিক?

Answer

মোবাইলের স্ক্রিনে কুরআন শরীফের আয়াত দৃশ্যমান থাকা অবস্থায় অযু ছাড়া স্ক্রিনে আয়াতের উপর স্পর্শ করা যাবে না। প্রয়োজনে স্ক্রিনের পাশের খালি জায়গায় আঙুল দেওয়া যাবে।

আর স্ক্রিনটাচ মোবাইলে প্লাস্টিক বা কাঁচের আবরণ যেহেতু মূল স্ক্রিনের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত এবং তাতে হাতের স্পর্শও কার্যকর তাই এক্ষেত্রে অযু ছাড়া আপনি গ্লাসের উপর স্পর্শ করছেন; লেখার উপর নয়- এ ধরনের কথা বলা ঠিক নয়।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; রদ্দুল মুহতার ১/১৭৩

Sharable Link

শফিকুল ইসলাম - পাবনা

৫২৪৬. Question

আমার এক আত্মীয়ের এক্সিডেন্টে ডান পা ভেঙে গিয়েছে। ডাক্তার তার এ পায়ের রানের গোড়া থেকে পূর্ণ পা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন। জানার বিষয় হল, এখন তিনি অযু কীভাবে করবেন? যদি কোনো কারণে গোসল ফরয হয় তাহলে তখন গোসল না করে তায়াম্মুম করলে জায়েয হবে কি? বিস্তারিত জানানোর আবেদন রইল।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আত্মীয় অযুর সময় স্বাভাবিকভাবেই অযু করবেন এবং ডান পায়ের ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করে নিবেন। আর গোসল ফরয হলে তখন গোসল করলে যেহেতু ব্যান্ডেজ ভিজে যাওয়ার আশংকা আছে তাই যতদিন ব্যান্ডেজ থাকে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নেবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮; হালবাতুল মুজাল্লী ১/২০৯; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৬৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৭

Sharable Link

হাবীবুর রাহমান - ময়মনসিং

৫২৪৭. Question

একদিন আসরের নামাযে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে পাই। তখন আমি তাড়াতাড়ি তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাই। কিন্তু রুকুতে পৌঁছার সাথে সাথেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যান। তখন আমিও ইমামের সাথে আবার দাঁড়িয়ে যাই। এই অবস্থায় কি দ্বিতীয় রাকাত পেয়েছি বলে ধর্তব্য হবে? নাকি আমি এই রাকাত পাইনি? আবার কখনো এমন হয় যে, রুকুতে পুরোপুরি পৌঁছার আগেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যান। তখনই বা কী করণীয়? রুকু পাওয়ার জন্য ন্যূনতম অবস্থা কী?

Answer

রাকাত পাওয়ার জন্য ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হওয়া আবশ্যক। ইমাম রুকু থেকে উঠে যাওয়ার পর, অর্থাৎ মাথা এবং হাঁটু থেকে হাত উঠে যাওয়ার পর রুকুতে গেলে রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে না।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-

إِذَا أَدْرَكتَ الْإِمَامَ رَاكِعًا فَرَكَعْتَ قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ فَقَدْ أَدْرَكْتَ، وَإِنْ رَفَعَ قَبْلَ أَنْ تَرْكَعَ فَقَدْ فَاتَتْكَ.

তুমি যদি ইমামকে রুকুতে পাও এবং ইমাম রুকু থেকে ওঠার আগে তুমিও রুকুতে চলে যাও তাহলে তুমি রাকাত পেয়েছ বলে গণ্য হবে। কিন্তু তুমি রুকুতে যাওয়ার আগেই যদি ইমাম রুকু থেকে উঠে যান তবে তুমি এই রাকাত পাওনি। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৩৬১)

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যাওয়ার আগেই যেহেতু আপনি রুকুতে গিয়েছেন তাই আপনি দ্বিতীয় রাকাত পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনার রুকুতে পৌঁছার আগেই যেহেতু ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে গেছেন তাই আপনি উক্ত রাকাতটি পাননি। তবে ইমামের সাথে যথারীতি এই রাকাতের সিজদাগুলো আদায় করবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১১৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪২০; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; রদ্দুল মুহতার ২/৬১

Sharable Link

আব্দুল্লাহ - টাঙ্গাইল

৫২৪৮. Question

আমার নাম মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ। আমাদের বাড়ি মসজিদের খুব নিকটে। এ কারণে আলহামদু লিল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই সর্বদা মসজিদেই আদায় করি। কিন্তু একদিন ফজরে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে যায়। তাই ফজরের নামাযটি ঘরেই একাকী পড়ি। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, একাকী ফজরের নামায পড়লে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া কি জরুরি; যেমনটি মসজিদের ইমাম সাহেব করে থাকেন? আস্তে আস্তে পড়ার কোনো অবকাশ আছে কি না?

Answer

ফজর, মাগবির ও এশার নামায একাকী পড়লে তাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া জরুরি নয়। আস্তে আস্তেও কিরাত পড়া যাবে। অবশ্য উচ্চস্বরে কিরাত পড়া উত্তম।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৬৫৫; কিতাবুল আছল ১/১৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪১; আলবেনায়া শরহুল হেদায়া ২/৩৩৯; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৫২

Sharable Link

আবদুল বারী - নরসিংদী

৫২৪৯. Question

একদিন যোহরের নামাযে মসজিদে যেতে দেরি হয়ে যায়। ফলে মাসবুক হই। যখন বাকি নামায আদায় করি তখন প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়তে ভুলে যাই। তবে অন্য একটি সূরা তিলাওয়াত করেছি। প্রশ্ন হল, এমন অবস্থায়ও কি আমার জন্য সাহু সিজদা করা আবশ্যক?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সূরা ফাতেহা না পড়ার কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা করা ওয়াজিব। মাসবুকের জন্যও ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর মধ্যে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতেহাসহ আরো একটি সূরা বা নির্ধারিত পরিমাণের আয়াত পড়া ওয়াজিব। তা ছুটে গেলে সাহু সিজদা করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১১২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৫১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১০০

Sharable Link

নাদিম আহমাদ - ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা

৫২৫০. Question

নামায পড়া অবস্থায় বিভিন্ন কারণেই অনেকসময় মাথা থেকে টুপি খুলে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে করণীয় কি? টুপি উঠিয়ে মাথায় পরে নিতে হবে, না মাথা খোলা অবস্থায়ই নামায পড়ব? সঠিক সমাধান জানতে চাচ্ছি।

Answer

নামায অবস্থায় টুপি পড়ে গেলে সেজদা বা বসা অবস্থায় এক হাত দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া উত্তম। কিন্তু যদি এক হাত দিয়ে মাথায় পরা সম্ভব না হয় তাহলে টুপি না উঠিয়ে মাথা খোলা অবস্থায়ই বাকি নামায সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রে মাথা খোলা অবস্থায় নামায পড়লে কোনো অসুবিধা হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৪২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩২০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৮

Sharable Link

আবুল কালাম - বাংলাবাজার, ঢাকা

৫২৫১. Question

আমি দেশের একটি স্বনামধন্য অভিজাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে টাইপিস্টের চাকরি করি। মাঝেমাঝে আমাকে টাইপ করতে গিয়ে কুরআন শরীফের অন্যান্য আয়াতের পাশাপাশি সিজদার আয়াতও টাইপ করতে হয়।

তাই মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, দেখে দেখে সিজদার আয়াত টাইপ করার কারণে কি আমাকে সিজদা করতে হবে

Answer

মুখে উচ্চারণ না করে শুধু দেখে দেখে সিজদার আয়াত টাইপ করলে সিজদা ওয়াজিব হবে না। সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য সিজদার আয়াত মৌখিকভাবে উচ্চারণ করা বা অন্য কোনো ব্যক্তি থেকে শোনা জরুরি।

তাই টাইপ করতে গিয়ে সিজদার আয়াত যদি মুখে উচ্চারণ হয়ে যায় তাহলে সিজদা ওয়াজিব হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/১০৩

Sharable Link

মাহমুদুল হাসান - যাত্রাবাড়ি

৫২৫২. Question

অনেক দিন পর আমি ও আমার বড় ভাই ছোট মামার বাসায় যাই। সেখানে আমরা যেই রুমে নামায পড়ি তাতে আমাদের মরহুম নানা-নানীর ছবি ঝোলানো ছিল। ছবিটি বেশ বড় ছিল। নামাযের পর আমার সন্দেহ হয় যে, এ রুমে পড়া নামায আদায় হয়েছে কি না? বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, নামায হয়ে গেছে। কেননা ছবিটি আমাদের সামনে ছিল না; বরং ডানপাশে ছিল। জানার বিষয় হল, তার কথাটা কি ঠিক? পাশে ছবি থাকা অবস্থায় নামায পড়লে কি নামাযে কোনো সমস্যা হবে না?

Answer

সামনে প্রাণীর ছবি রেখে নামায পড়লে যেভাবে নামায মাকরূহ হয় তেমনিভাবে ডানপাশে বা বামপাশে ছবি ঝোলানো থাকলেও নামায মাকরূহ হয়। সুতরাং আপনাদের উক্ত নামায মাকরূহ হয়েছে। তবে তা আদায় হয়ে গেছে। পুনরায় পড়তে হবে না।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১৪; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২০৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৮

Sharable Link

রেজাউল করীম - সাভার, ঢাকা

৫২৫৩. Question

আমাদের দেশে সাধারণত খতীবগণ জুমার দ্বিতীয় খুতবায় কুরআনুল কারীমের আয়াত-

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ  یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا

 তিলাওয়াত করে থাকেন।

হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, আমরা তো জানি, খুতবা চলাকালীন মুসল্লীদের জন্য নীরব থাকা আবশ্যক। কিন্তু খতীব সাহেব যদি খুতবার মধ্যে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন তারপরও তারা নীরবই থাকবেন, না খতীবের ন্যায় দরূদ শরীফ পাঠ করবেন? সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

জুমা ও ঈদের খুতবা চলাকালীন মুসল্লীদের চুপ থাকা ওয়াজিব। এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা এমনকি যিকর থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ রয়েছে।

হযরত  আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

وَجَبَ الْإِنْصَاتُ فِي أَرْبَعَةِ مَوَاطِنَ: الْجُمُعَةِ وَالْفِطْرِ وَالْأَضْحَى وَالِاسْتِسْقَاءِ.

চারটি স্থানে চুপ থাকা ওয়াজিব: জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা এবং ইসতিসকার (খুতবার) সময়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬৪২)

সুতরাং খতীব সাহেব প্রশ্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করলেও মুসল্লীগণ চুপ থাকবেন। মুখে উচ্চারণ করে দরূদ শরীফ পড়বেন না। বরং মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করবেন।

-তাফসীরে তাবারী ৬/১৬৪; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৫৩৬৯; কিতাবুল আছল ১/৩০৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬০; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৫৬৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৫

Sharable Link

রফিকুল ইসলাম - দিলালপুর, পাবনা

৫২৫৪. Question

কবর যিয়ারতের ক্ষেত্রে অনেককে দেখা যায় যে দুআ করার সময় কবরের দিকে ফিরেই দুআ করেন। আবার অনেক লোককে দেখা যায় কেবলামুখী হয়ে দুআ করেন। আসলে এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি কোন্টি? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

কবর যিয়ারতের পর দুআ করতে চাইলে কবরকে সামনে রেখে দুআ করবে না। বরং কবর থেকে সরে কিবলামুখী হয়ে দুআ করবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন রা.-এর দাফনের ঘটনায় তিনি বলেন-

فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ يَقُولُ: اللهُمَّ إِنِّي أَمْسَيْتُ عَنْهُ رَاضِيًا فَارْضَ عَنْهُ.

আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন-এর কবরে দেখেছি, যখন তিনি তার দাফন থেকে ফারেগ হলেন, দুই হাত তুলে কেবলামুখী হয়ে তার জন্য দুআ করেন, ইয়া আল্লাহ, আমি তার উপর সন্তুষ্ট, আপনিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস ১৭০৬; হিলয়াতুল আওলিয়া ১/১২২; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)

-আলবেনায়াহ শরহুল হেদায়াহ ৩/২৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০

Sharable Link

মাওলানা মাহফুজ আহমাদ - চতুল, কানাইঘাট

৫২৫৫. Question

গত বছর রমযানে প্রায় এক সপ্তাহ সফরে ছিলাম। সফরের কিছুদিন রোযা রাখতে পারিনি। মুহাররাম মাসে তা কাযা করতে শুরু করি। কতদিন রোযা রাখিনি- নিশ্চিতভাবে এ সংখ্যাটি মনে ছিল না। চারদিন রোযা রাখার পর পঞ্চম দিন রোযা রাখা অবস্থায় ঘটনাক্রমে এক সাথীর সাথে দেখা হয় যে ঐ সফরে আমাদের সাথে ছিল। সে আমাকে জানালো যে, আমরা কেবল তিন দিন রোযা রাখিনি। অবশিষ্ট দিনগুলোতে নিশ্চিতভাবেই রোযা রেখেছি। বিষয়টি জানার পর আমি পঞ্চম দিনের রোযাটি ভেঙে ফেলি। কিন্তু পরে জানতে পারলাম যে, রোযা শুরু করার পর তা পূর্ণ করা জরুরি। শুরু করার পর ভেঙে ফেললে এর কাযা করতে হবে। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও কি আমাকে এ রোযার কাযা করতে হবে?

Answer

না, আপনাকে উক্ত রোযার কাযা করতে হবে না। তবে নফলের নিয়তে রোযা শুরু করার পর তা ভেঙে ফেললে এর কাযা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কেননা কাযা বা মান্নতের রোযার নিয়তে রোযা শুরু করার পর যদি জানতে পারে যে, তার যিম্মায় উক্ত রোযা নেই, অতঃপর সে তা ভেঙে ফেলে তাহলে এর কাযা আদায় করা তার জন্য জরুরি নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ওয়াজিব রোযার নিয়ত করেছেন তাই তা ভেঙে ফেলার কারণে এর কাযা করতে হবে না। তবে এক্ষেত্রেও রোযা না ভেঙে তা পূর্ণ করাই উত্তম। এর দ্বারা নফল রোযার সওয়াব হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৬৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; জামেউর রুমূয ১/২৫৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩৭৭

Sharable Link

নাসিরুদ্দীন - উত্তরা, ঢাকা

৫২৫৬. Question

গত রমযানে অসুস্থতার কারণে একদিনের রোযা রাখতে পারিনি। আজ সকাল আটটার দিকে ঘুম থেকে জেগে কাযা রোযাটি রাখার নিয়ত করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বাড়িতে মেহমান আসায় তাদের পীড়াপীড়িতে তা ভেঙে ফেলি। জানার বিষয় হল, এখন আমাকে কয়টি রোযা রাখতে হবে? একটি, না দুটি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে দুটি রোযা আদায় করতে হবে। একটি রমযানের কাযা রোযা। আর অপরটি রোযা রাখার পর তা ভেঙে ফেলার কারণে নফল রোযার কাযা। কেননা রমযানের কাযা রোযা রাখার জন্য রাতেই নিয়ত করা জরুরি। দিনের বেলা কাযা রোযার নিয়ত করা সহীহ নয়। দিনের বেলা কাযা রোযার নিয়ত করলেও তা নফল রোযা হিসেবে গণ্য হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি সকাল আটটায় কাযা রোযার নিয়ত করলেও তা রমযানের কাযা রোযা হয়নি; বরং নফল রোযা হিসেবে শুরু হয়েছে। আর নফল রোযা শুরু করার পর ভেঙে ফেললে তা কাযা করা জরুরি। তাই আপনাকে দুটি রোযাই কাযা করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৬৪; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৭১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০

Sharable Link

হাসান যায়েদ - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৫২৫৭. Question

আমরা দুই বন্ধু একসাথে এক বাসায় ভাড়া থাকি। আমি ব্যবসা করি আর সে পড়াশোনা করে। গত কয়েকদিন আগে আর্থিক কিছু সমস্যার কারণে সে এই বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চাচ্ছিল। আমি ওকে বললাম, এই বাসা ছাড়ার দরকার নেই। তুমি থাকতে থাক। তোমার বাসা ভাড়া আমি দিয়ে দিব। আমার এই কথা শুনে সে থেকে যেতে রাজি হয়।

আমি এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, আমি যদি আমার ব্যবসার যাকাতের টাকা থেকে তার বাসা ভাড়া আদায় করে দিই তাহলে কি জায়েয হবে? এবং এর দ্বারা কি আমার যাকাত আদায় হবে? অনুগ্রহ করে সঠিক সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বন্ধুর বাসা ভাড়া আদায়ের অনুমতি যেহেতু পূর্বেই নেওয়া ছিল তাই তিনি যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন তাহলে যাকাতের টাকা দিয়ে তার বাসা ভাড়া আদায় করে দেওয়া জায়েয হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৪

Sharable Link

যয়নুল আবেদীন - সিলেট

৫২৫৮. Question

এক ব্যক্তি বিমানে করে নিজ দেশ থেকে উমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। তার ইচ্ছা ছিল যে, বিমানে ইহরাম করে নেবেন। কিন্তু যখন ইহরাম করার সময় এল তখন তার স্মরণ হল যে, তিনি তো ইহরামের কাপড় বাড়িতে ভুলে রেখে গেছেন। তাই তিনি ইহরাম ছাড়াই জিদ্দা পৌঁছে তার এলাকার একজন আলেমের সাথে যোগাযোগ করেন। ঐ আলেম তাকে বলেন যে, কাছের কোনো মীকাতে গিয়ে ইহরাম করে আসতে হবে। এবং জরিমানা স্বরূপ একটি পশু জবাই করতে হবে। কিন্তু তিনি এসব কিছু না করে জিদ্দায় ইহরাম করে ফেলেন। এবং এভাবেই উমরা শেষ করেন। প্রশ্ন হল, এসব ক্ষেত্রে জিদ্দায় ইহরাম করার দ্বারা কি উমরা সহীহ হয়ে যায়, নাকি মীকাতের দিকে যাওয়া জরুরি? যদি মীকাতের দিকে যাওয়া আবশ্যক হয় তাহলে কোন্ মীকাতের দিকে যাবে? ইহরাম ছাড়া যে মীকাত অতিক্রম করেছে, সেই মীকাতে যেতে হবে, না অন্য কোনো মীকাতে গিয়ে ইহরাম করলেও হবে?

Answer

ইহরামের নিয়ম হল, হজ¦ বা উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা। ইহরাম সম্পন্ন হওয়ার জন্য সেলাইবিহীন কাপড় পরা শর্ত নয়। বিমানে মীকাত অতিক্রম করার সময় কারো কাছে যদি সেলাইবিহীন কাপড় না থাকে তাহলে সেলাইযুক্ত কাপড় পরা অবস্থায়ই ইহরাম করে নেবে। তাই প্রশ্নোক্ত লোকটির জন্য মীকাত অতিক্রমের সময় বিমানেই ইহরাম করে নেওয়া জরুরি ছিল। তিনি জিদ্দায় পৌঁছে ইহরামের কাপড় পরতে পারতেন। সেক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টার কম সময় সেলাইযুক্ত কাপড় পরার কারণে তাকে শুধু এক ফিতরা সমপরিমাণ সদকা করতে হত; অন্য কিছু করা লাগত না। কিন্তু যেহেতু তিনি তা করেননি; বরং ইহরাম করা ছাড়াই মীকাত অতিক্রম করে জিদ্দা চলে গেছেন তাই তার জন্য জিদ্দা অবতরণের পর কোনো মীকাতে গিয়ে ইহরাম করা জরুরি ছিল। এসব ক্ষেত্রে যে কোনো মীকাতে গিয়ে ইহরাম করা যায়।

অবশ্য ইহরাম ছাড়া যে মিকাত অতিক্রম করা হয়েছে তাতে গিয়ে ইহরাম করা উত্তম। কিন্তু তিনি যেহেতু তাও করেননি; বরং জিদ্দায়ই ইহরাম করে উমরাহ সম্পন্ন করে ফেলেছেন তাই তার উপর একটি দম ওয়াজিব হয়েছেযা হেরেমের এলাকায় আদায় করতে হবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৯, ৪৮১; মানাসকি মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৯৪; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ৭১

Sharable Link

সুলতান আহমাদ - শ্যামলি, ঢাকা

৫২৫৯. Question

আমার ফুফুর উপর হজ্ব ফরয। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তার হজ্ব করার শারীরিক সক্ষমতা নেই। তিনি অন্য কাউকে দিয়ে তার হজ্বটি করাতে চাচ্ছেন এবং এর জন্য আমাকে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু আমি নিজের ফরয হজ্ব আদায় করলেও কখনো অন্যের বদলি হজ্ব করিনি। মুফতী সাহেবের কাছে দরখাস্ত হল, বদলি হজ্বের পদ্ধতিটা সংক্ষেপে একটু বলবেন। এক্ষেত্রে কী কী বিষয়গুলো বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে? বদলী হজ্বের আলাদা কোনো রোকন আছে কি না- তাও জানাবেন।

Answer

বদলি হজ্বের পদ্ধতি আর সাধারণ হজ্বের পদ্ধতি একই। আপনি যে পদ্ধতিতে আপনার ফরয হজ্ব আদায় করেছেন সে পদ্ধতিতেই বদলি হজ্ব আদায় করবেন। শুধু ইহরাম করার সময় যার পক্ষ থেকে হজ্ব করছেন তার পক্ষ থেকে হজ্ব করার নিয়ত করবেন। মৌখিকভাবে নিয়ত করা উত্তম। উদাহরণস্বরূপ এভাবে বলবেন যে, আমি আমার ফুফুর পক্ষ থেকে হজ্বের ইহরাম করছি। তামাত্তু হজ্ব করার ইচ্ছা করলে উমরার নিয়ত করার সময়ও এভাবে বলবেন।

বদলি হজ্বকারীর জন্য লক্ষ্য রাখা উচিত যে, যাতায়াত ও পানাহারের খরচ যেন ইনসাফের সাথে হয়। কেননা হজ্বের খরচের টাকাটা তার কাছে আমানত। সর্তকতার সাথে তা খরচ করা উচিত। কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় খরচ করবে না। হজ্ব শেষে যে পরিমাণ টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে তা ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি। অবশ্য যদি হজ্বে প্রেরণকারী তাকে উদ্বৃত্ত টাকা হাদিয়া হিসাবে দিয়ে দেন তাহলে সেটা ভিন্ন।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৯৭১; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৪৯২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪২৯; ইলইখতিয়ার ১/৫২২

Sharable Link

আলী আহসান - আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়া

৫২৬০. Question

আমার নানার উপর হজ্ব ফরয ছিল। হজ্বে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। হজ্বের  টাকা-পয়সাও  চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়ে যায়। মৃত্যুর সময় তিনি বদলি-হজ্ব করানোর অসীয়ত করে যান। কিন্তু মৃত্যুর পর তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ৫০ হাজার টাকার বেশি নয়। এ দিয়ে হজ্ব করানো অসম্ভব। আমাদের এক আত্মীয় সৌদিতে থাকেন। তিনি উক্ত টাকায় বদলি হজ্ব করতে রাজি হয়েছেন। জানতে চাই উক্ত সৌদি প্রবাসীকে দিয়ে হজ্ব করানো যাবে কি না?

Answer

বদলি হজ্বের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে তা আদায় করা হচ্ছে তার দেশ থেকে প্রেরণ করা আবশ্যক। কিন্তু প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃত-ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা যেহেতু এ দেশ থেকে বদলি হজ্বে প্রেরণ করা সম্ভব নয়। তাই এক্ষেত্রে সৌদি থেকেও বদলি হজ্ব করানো যাবে এবং এর দ্বারা তার অসীয়ত পূর্ণ হয়ে যাবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩১৪৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৮; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৪০; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৫

Sharable Link

শিহাব উদ্দীন - কুমিল্লা

৫২৬১. Question

আমার এক আত্মীয় অনেক দিন যাবৎ মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে জেলখানায় আটক ছিলেন। তখন তিনি মান্নত করেন যে, যদি আল্লাহ তাকে জেলখানা থেকে মুক্তি দান করেন তাহলে তিনি হজ্ব করবেন। আল্লাহর মেহেরবানীতে কিছুদিন আগে তিনি মুক্তি পেয়েছেন এবং মান্নত পূর্ণ করার জন্য আগামী বছর হজ্ব করার ইচ্ছা করেছেন। এর আগে কখনো তিনি হজ্ব করেননি। কিন্তু আগে থেকেই তার উপর হজ্ব ফরয ছিল। জানার বিষয় হল, এই হজ্বের মাধ্যমে কি তার ফরয হজ্ব আদায় হবে, নাকি ফরয হজ্ব আদায়ের জন্য পৃথকভাবে আরেকটি হজ্ব করতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আত্মীয় হজ্ব করলে ফরয হজ্ব এবং তার মান্নতের হজ্ব উভয়টিই আদায় হয়ে যাবে। কেননা এভাবে মান্নত করার দ্বারা মানুষের সাধারণত ফরয হজ্ব আদায় করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এতদসত্ত্বেও তার জন্য হজ্ব করার সময় ফরয হজ্ব এবং মান্নতের হজ্ব উভয়টি আদায়ের নিয়ত করা ভালো হবে।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, সামারকান্দী, পৃ. ১৪২; খিযানাতুল আকমাল ১/৩৮৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/২৬৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৮৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/৭৬

Sharable Link

আমাতুল্লাহ হাবিবা - কেশবপুর, যশোর

৫২৬২. Question

আমি একটি মহিলা মাদরাসায় হিফয বিভাগে পড়ি। আমার এক বছর বয়সে একদিন আমার বড় আপার ননদ আমাকে দুধ পান করান। এ কারণে আমি আপার বাড়িতে গেলে বা তারা আমাদের বাড়িতে আসলে আপা আমাকে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করতে বলেন। আমাকে তার সামনে নিয়ে যান। কিন্তু আমি এখন বড় হয়েছি। বিষয়টা আমার কাছে খুবই সংকোচ লাগে। হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে আমার দুলাভাই কি আমার মাহরাম? আমি কি তার সাথে দেখা করতে পারব? আশা করি বিস্তারিত জানাবেন।

Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার আপার ননদ আপনাকে দুধ পান করানোর কারণে তিনি আপনার দুধ-মা হয়ে গেছেন। হাদীস শরীফে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعِ مَا يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ.

রক্তের (বংশীয়) সম্পর্কের কারণে যেসকল আত্মীয় মাহরাম হয়, দুধ-সম্পর্কের কারণেও (দুধমায়ের) সে সকল আত্মীয় মাহরাম হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৪৫)

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দুলাভাই যেহেতু আপনার দুধ-মায়ের ভাই তথা আপনার দুধ-মামা তাই তিনি আপনার মাহরাম। তার সাথে দেখা করা আপনার জন্য বৈধ।

তবে যেহেতু বর্তমান সময়ে সাধারণত দুলাভাইদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গলদ রেওয়াজ রয়েছে। তাই এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। দুধ-মামা হিসেবে সামনে গেলেও হাসি-তামাশা থেকে বিরত থাকা কাম্য।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২২২-২২৫

Sharable Link

আমিনুল ইসলাম - রাজশাহী

৫২৬৩. Question

স্বামীর মৃত্যু-পরবর্তী ইদ্দতরত মহিলার জন্য পাশর্^বর্তী বাড়িতে যাওয়া জায়েয হবে কি? বিশেষত যখন একা থাকার কারণে খারাপ লাগে বা বিশেষ প্রয়োজনে পাশে মায়ের বাড়ি যেতে হয় সেক্ষেত্রে  পাশে মায়ের বাড়ি যেতে পারবে কি? আর মেয়েদের তালীমের জন্য নিকটতম বা দূরবর্তী কোনো বাসায় যাওয়া-আসা করতে পারবে কি?

Answer

স্বামীর মৃত্যু পরবর্তী ইদ্দত চলাকালীন বিধবার জন্য বাসায় অবস্থান করাই শরীয়তের বিধান। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ। তবে বিশেষ প্রয়োজনে বা খুব বেশি একাকীত্ব অনুভব হলে দিনের বেলা পূর্ণ পর্দার সাথে পাশে মায়ের বাড়ি যেতে পারবে এবং রাতের আগেই ইদ্দতের জায়গায় ফিরে আসবে। আর এ অবস্থায় তালীমের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। বরং বাসাতে থেকেই তালীম বা দ্বীনী কিতাবাদি পড়াশোনা করবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১২০৬৪, ১২০৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬

Sharable Link

সাফওয়ান আহমাদ - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৫২৬৪. Question

আমার মুহতারাম আব্বা অনেক আগে কোনো এক প্রসঙ্গে মসজিদে নববীতে চার রাকাত নফল নামায পড়ার মান্নত করেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার মসজিদে নববীতে যাওয়ার তৌফিক হয়নি। এখন তার বয়স অনেক বেড়েছে, শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শারীরিক দুর্বলতার কারণে লম্বা সফর করা তার জন্য কঠিন। তো এখন তিনি কী করতে পারেন? মান্নতটি পূর্ণ করার কী পদ্ধতি হতে পারে?

Answer

উক্ত চার রাকাত নামায মসজিদে নববীতেই পড়া জরুরি নয়। যে কোনো মসজিদে বা জায়গায় চার রাকাত নামায পড়ে নিলেও মান্নত পূর্ণ হয়ে যাবে। হাদীস শরীফে এসেছে যে, জাবির রা. বলেন-

أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَوْمَ الْفَتْحِ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي نَذَرْتُ إِنْ فَتَحَ اللهُ عَلَيْكَ مَكَّةَ أَنْ أُصَلِّيَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ، فَقَالَ: صَلِّ هَاهُنَا، فَسَأَلَهُ، فَقَالَ: صَلِّ هَاهُنَا، فَسَأَلَهُ، فَقَالَ: شَأْنَكَ إِذًا.

মক্কা বিজয়ের দিন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি মান্নত করেছিলাম যে, আল্লাহ তাআলা যদি আপনার দ্বারা মক্কার বিজয় দান করেন তাহলে বায়তুল মাকদিসে নামায পড়ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (বায়তুল মাকদিসে গিয়ে পড়া লাগবে না) এখানেই পড়ে নাও। লোকটি আবারো জিজ্ঞাসা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই উত্তর দিলেন যে, এখানেই পড়ে নাও। লোকটি তৃতীয়বার একই কথা জিজ্ঞেস করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার যা ইচ্ছা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৯১৯)

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৯; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৪০-১

Sharable Link

জসিম উদ্দীন - ভোলা

৫২৬৫. Question

আমি একবার আমার চাচাতো ভাইয়ের বাসায় যাই। সেখানে তার সাথে একটি বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমি কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে বলি যে, ‘আমি কুরআন শরীফের কসম করে বলছি, ‘আর কখনো তোর বাসায় আসব না।পরবর্তীতে তার সাথে রাগ মিটে যায়। এখন জানতে চাচ্ছি, আমার উক্ত কথার দ্বারা কি কসম হয়ে গেছে? এখন যদি আমি তার বাসায় যাই তাহলে কি আমাকে কাফফারা দিতে হবে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

কুরআন শরীফের কসম করে কোনো কাজের প্রতিজ্ঞা করলে কসম সংঘটিত হয়ে যায়। তাই আপনি যদি এখন আপনার চাচাতো ভাইয়ের বাসায় যান তাহলে আপনার কসম ভেঙ্গে যাবে এবং এর কারণে আপনাকে কাফফারা দিতে হবে।

কসমের কাফফারা হল, দশজন গরিবকে দুই বেলা তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়ানো অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করা। যদি এমন আর্থিক সামর্থ্য না থাকে তাহলে ধারাবাহিকভাবে তিন দিন রোযা রাখবে।

উল্লেখ্য, কোনো বৈধ কাজ করবে না বলে কসম করার পর যদি ঐ কাজটি করাই কল্যাণকর সাব্যস্ত হয় তাহলে ঐ কাজটি করে কসমের কাফফারা দিয়ে দেওয়াই উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ، فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا، فَلْيَأْتِهَا، وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ.

কেউ যদি কোনো বিষয়ে কসম করে অতঃপর এর বিপরীত করার মাঝে কল্যাণ দেখতে পায় তাহলে সে যেন ঐ কল্যাণকর কাজটিই করে এবং কসমের কাফফারা দিয়ে দেয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৫০

আরও উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের কসম করার দ্বারা যদিও কসম সংঘটিত হয়ে যায় তথাপি কুরআন শরীফের কসম করা জায়েয নেই। কসম কেবলমাত্র আল্লাহ্র নামেই করা যায়। তাই ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া কর্তব্য। আর বর্তমান কসমের কারণে ইস্তিগফার করবে।

-রামযুল হাকায়েক ১/২০৫; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১২

Sharable Link

মুহাম্মাদ নুমান খান - ঢাকা

৫২৬৬. Question

আমি মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করি। আমাদের কলেজের অনেক স্টুডেন্ট মাঝেমধ্যে পরীক্ষার সময় এভাবে মান্নত করে যে, আমি যদি এ পরীক্ষায় পাস করি বা ফার্স্ট ক্লাসে উত্তীর্ণ হই তাহলে এত টাকা আল্লাহ্র রাস্তায় দান করব, কিংবা এতদিন রোযা রাখব। কেউ কেউ আবার কাক্সিক্ষত ফলাফলে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মান্নত করে যে, আমি শুকরিয়া আদায়ের জন্য দুই রাকাত নামায বা একদিনের রোযা রাখব। ইদানীং কিছু ছাত্র বলাবলি শুরু করেছে যে, মান্নত করা ঠিক নয়। হাদীসে মান্নত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মান্নতের দ্বারা বাস্তবে কোনো উপকার হয় না; বরং এটা গুনাহের কাজ। প্রশ্ন হচ্ছে, বাস্তবে এ ধরনের কোনো হাদীস আছে কি না? থাকলে সেটা কোন্ কিতাবের হাদীস এবং হাদীসটি সহীহ কি না? হাদীসের অর্থ কি সেটাই, যেটা তারা বলছে যে, মান্নত করা গোনাহ? বিষয়গুলোর উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

মান্নত করার অর্থ হচ্ছে- ওয়াজিব নয় এমন কোনো নেক কাজকে নিজের উপর ওয়াজিব করে নেওয়া। এটা দুভাবে হতে পারে।

১. কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া এভাবে মান্নত করা যে, আমি দুই রাকাত নামায পড়ার মান্নত করছি বা কিছু টাকা সদকা করার মান্নত করছি। এ ধরনের মান্নত করা জায়েয। এতে অসুবিধা নেই।

২. শর্তযুক্ত মান্নত করা। এভাবে যে, আমি যদি পরীক্ষায় পাশ করি তাহলে এত টাকা সদকা করব। অথবা আমার ছেলে যদি সুস্থ হয়ে যায় তাহলে দুই দিন রোযা রাখব।

মান্নতের এই দ্বিতীয় প্রকারের প্রতি হাদীসে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত হাদীস সহীহ বুখারী-মুসলিমসহ হাদীসের অনেক কিতাবাদীতে বিশুদ্ধ সনদে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّذْرِ، وَقَالَ: إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا، وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ البَخِيلِ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মান্নত করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন যে, মান্নত কোনো কিছু ফিরিয়ে দিতে পারে না। মান্নত দ্বারা কেবল কৃপণদের থেকে কিছু সম্পদ বের করে নিয়ে আসা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬০৮)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنَّ النَّذْرَ لَا يُقَرِّبُ مِنِ ابْنِ آدَمَ شَيْئًا لَمْ يَكُنِ اللهُ قَدَّرَهُ لَهُ، وَلَكِنِ النَّذْرُ يُوَافِقُ الْقَدَرَ، فَيُخْرَجُ بِذَلِكَ مِنَ الْبَخِيلِ مَا لَمْ يَكُنِ الْبَخِيلُ يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَ.

আল্লাহ তাআলা বনী আদমের জন্য যা নির্ধারণ করে রাখেননি তারা তা মান্নত করার মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারবে না। তবে  কখনো কখনো মান্নত তাকদীরের মোতাবেক হয় এবং এর দ্বারা কৃপণ লোকদের থেকে এমন সম্পদ বের করে নিয়ে আসা হয়, যা সে বের করতে চায়নি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৪০)

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কেরাম দুটি কথা বলেছেন-

এক. এ বিশ্বাসের সাথে মান্নত করা নিষেধ যে, মান্নত তাকদীর পরিবর্তন করে দেয়।

দুই. ইবাদতের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অন্য কাজের সাথে শর্তযুক্ত করা যে, যদি আমার এ কাজ পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে আমি এত টাকা সদকা করব- কোনো ইবাদতকে এভাবে শর্তযুক্ত করা প্রশংসনীয় কাজ নয়; বরং তা অপছন্দনীয় ও অসুন্দর পদ্ধতি।

বিপদ-মসিবত থেকে মুক্তি বা কোনো প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে মাসনূন পদ্ধতি হচ্ছে, বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকা। শর্তহীন নফল নামায ও দান সদকা করে আল্লাহ তাআলার নিকট কাকুতি-মিনতি সহকারে দুআ করা। নফল নামায ও দান-সদকা করার বিষয়টিকে অন্য কোনো কাজের সাথে শর্তযুক্ত করবে না; বরং বিপদের সময় তাৎক্ষণিক সামর্থ্যানুযায়ী এসব কাজ করবে। বিপদ-মসিবত থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে অধিক উপকারী।

অবশ্য মান্নত করার এ দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অপছন্দনীয় হলেও তা গোনাহ নয়। কেউ এমনটি করলে সে গোনাহগার হবে না। ইমাম তহাবী রাহ. বলেন-

ولم يكن نهيه عنه لأنه معصية.

অর্থাৎ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মান্নত করতে যে নিষধ করেছেন এটা এ কারণে নয় যে, মান্নত করা গুনাহের কাজ। (শরহু মাআনিল আছার ২/৩০৭)

প্রকাশ থাকে, হাদীসের উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞাটি হচ্ছে, মান্নত করা প্রসঙ্গে তথা মান্নত করা উচিত কি না- এ বিষয়ে। কিন্তু কেউ মান্নত করে ফেললে তার জন্য সেটা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কুরআন-হাদীসে মান্নত পূর্ণ করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কুরআন মাজীদের الْأَبْرَار (নেককারদের) সিফাতের বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে-

یُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ.

অর্থাৎ তারা মান্নত করার পর তা পূর্ণ করে। [সূরা দাহ্র (৭৬) :৭]

সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ.

অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের মান্নত করে তাহলে সে যেন তা করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৯৬)

লক্ষণীয় যে, হাদীসে যে মান্নত পূর্ণ করার কথা এসেছে তা হচ্ছে ভালো কাজের মান্নত; কোনো গুনাহের কাজের মান্নত নয়। গুনাহের কাজের মান্নত করা হারাম। এবং তা পূর্ণ করাও জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلاَ يَعْصِهِ.

আর যে কোনো গুনাহের মান্নত করল সে যেন গুনাহের কাজটি না করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৯৬)

-শরহু মাআনিল আছার তহাবী ২/৩০৭; ফাতহুল বারী ১১/৫৮৭; মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৫৪৩; বযলুল মাজহুদ ১৪/২৪৬

Sharable Link

মিযানুর রহমান - মুন্সিপাড়া, গাইবান্ধা

৫২৬৭. Question

মসজিদের জন্য দানকৃত কুরআন শরীফ কি বাড়িতে নিয়ে পড়া জায়েয হবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

Answer

মসজিদে যেসকল কুরআন শরীফ দান করা হয় তা সাধারণত মসজিদে তিলাওয়াতের জন্যই দেওয়া হয়। তাই মসজিদের কুরআন শরীফ বাসায় নেওয়া যাবে না।

-ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৫৯; আননাহরুল ফায়েক ৩/৩১৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৫৩৯

Sharable Link

সাইফুল ইসলাম - বাসাবো, ঢাকা

৫২৬৮. Question

পাবনা শহরে আমাদের একটি বাড়ি আছে। ঢাকা থেকে বাবার জন্য সেটার পরিপূর্ণ দেখভাল করা সম্ভব হয় না বিধায় তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বাড়িটি বিক্রি করতে চাচ্ছেন। কিন্তু দূর থেকে তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাই আমার মেজ চাচাকে বাবা বলেছেন যে, আমার বাড়িটা ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিন। এর অতিরিক্ত যত টাকায় বিক্রি করতে পারবেন তা আপনার। চাচা এখন বাড়িটি বিক্রি করে দেয়ার জন্য বেশ তোড়জোড় শুরু করেছেন।

মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, বাবার জন্য চাচার সাথে এভাবে বাড়ি বিক্রি করে দেয়ার চুক্তি করা বৈধ হয়েছে কি? না হলে সঠিক পদ্ধতি কী?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচার সাথে এভাবে চুক্তি করা বৈধ হয়নি। বাড়িটি বিক্রি করে দেয়ার জন্য আপনার চাচা যদি পারিশ্রমিক নিতে চান তবে তা সুনির্ধারিত করতে হবে। কেননা পারিশ্রমিক নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। এছাড়াও প্রশ্নোল্লিখিত পদ্ধতিতে চুক্তি করলে যেমন তার ন্যায্য পারিশ্রমিকের চেয়ে কম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তদ্রূপ অনেক চড়া মূল্যে বিক্রি করে বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এতে ক্রেতার উপর জুলুম হয়। পণ্য-মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় এবং ধোঁকা ও প্রতারণাযুক্ত অবৈধ দালালীর পথ সুগম হয়। তাই এ ধরনের চুক্তি করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০২১-২২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ২০৭৭৭; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ১১/৪৩০; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৩৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩

Sharable Link

আসাদ আহমদ - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৫২৭০. Question

অনলাইনে কিছু ওয়েবসাইট থেকে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ আমি একটি সাইট থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকি। কিছুদিন আগে সাইটটি থেকে একটি মেসেজ আসে যে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এক হাজার টাকা বা তার চেয়ে বেশি টাকার পণ্য কিনলে দশ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেবে। এ সময়ে আমার এক বন্ধুর চার শ টাকা মূল্যের একটা পণ্যের প্রয়োজন হলে সে আমাকে তা কিনে দিতে বলে। আমি তাকে এ সাইট থেকে পণ্যটি কিনে দিই। দশ পার্সেন্ট ডিসকাউন্টের কারণে চার শ টাকার বদলে আমাকে তিন শ ষাট টাকা পরিশোধ করতে হয়। ডিসকাউন্টের বিষয়টি আমার বন্ধুর জানা ছিল না। এজন্য সে আমাকে চার শ টাকাই দেয়। আমিও তা নিয়ে নিই এবং খরচ করে ফেলি। জানার বিষয় হল, আমার এ কাজটি কি ঠিক হয়েছে? আমার জন্য অতিরিক্ত চল্লিশ টাকা নেওয়া কি বৈধ হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি হচ্ছেন আপনার বন্ধুর ক্রয় প্রতিনিধি। আর পণ্যের মূল্য থেকে বিক্রেতা কিছু কম রাখলে তা ক্রেতার হক, ক্রয় প্রতিনিধির নয়। সুতরাং সাইটটি যে ডিসকাউন্ট দিয়েছে এর মালিক আপনি নন; বরং আপনার বন্ধু। তাই এ টাকা আপনার নিয়ে যাওয়া জায়েয হয়নি। আপনার কর্তব্য হচ্ছে, টাকাটা তাকে ফিরিয়ে দেওয়া। অবশ্য ডিসকাউন্টের বিষয়টি জানার পর সে যদি খুশি মনে টাকাটা আপনাকে দিয়ে দেয় তাহলে তা নিতে অসুবিধা নেই।

-কিতাবুল আছল ১১/২৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৪/৩৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/৫১৬    

Sharable Link

হুসাইন আহমাদ - তারাকান্দা

৫২৭১. Question

কিছুদিন আগে আমি আমার বড় খালামণির বাসায় গিয়েছিলাম। বাসায় যাওয়ার পর খালাতো ভাই বড় একটি চামড়া এনে তাতে বসতে বলল। আমি বললাম, এটা কিসের চামড়া? কোত্থেকে কিনেছ? সে বলল, এটা আমাদের গত কুরবানীর গরুর চামড়া। আমি বললাম, কুরবানীর চামড়া তো গরীবদের দিয়ে দিতে হয়। এটা তাদেরই হক। সে বলল, নিজরাও ব্যবহার করা যায়। হুজুরের কাছে কুরবানীর চামড়ার বিষয়টি বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি।

Answer

কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতার জন্য ব্যবহার করা জায়েয। কারণ, কুরবানীর চামড়ার হুকুম গোশতের মতই। গোশতের মত এটিও কুরবানীদাতা নিজে ব্যবহার করতে পারবে। আবার চাইলে কাউকে তা হাদিয়াও দিতে পারবে। তবে যদি কেউ নিজ কুরাবনীর চামড়া বিক্রি করে দেয়, তাহলে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা গরীব-মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮

Sharable Link

রাশেদ আহমদ - কুষ্টিয়া

৫২৭২. Question

আমার এক আত্মীয়, জনাব মোস্তফা আহমদ সাহেবের দুই ছেলে। বড় ছেলে বিদেশে থাকে। ছোট ছেলে অনেক দিন থেকেই বাড়িতে মা-বাবার খেদমতে আছে। মোস্তফা আহমদ সাহেব তার ছোট ছেলের নামে কিছু জমি কেনেন এবং বিষয়টি তাকে জানান যে, আমি তোমার নামে কিছু জমি কিনেছি। পরিবারের অন্যান্যরাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু জমিটা কোথায়- সেটা তাকে জানাননি। কিছুদিন পর তার ইন্তেকাল হয়। তার ইন্তেকালের পর বিদেশে অবস্থানরত বড় ছেলে এ জমিটিকেও মীরাসী সম্পদ হিসাবে ধরতে চায়। কিন্তু সরকারি ও অন্যান্য জরুরি কাগজ-পত্রে ছোট ছেলের নামেই জমিটি রেজিস্ট্রি করা। দেশীয় আইন অনুযায়ী এ জমির মালিক তো ছোট ছেলে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর মালিক কে? এটাকে কি মরহুম মোস্তফা সাহেবের মীরাসী সম্পদ হিসাবে গণ্য করা যাবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু মোস্তফা সাহেব জমিটি ছোট ছেলের নামে কিনেছেন এবং জীবদ্দশায়ই তার নামে রেজিস্ট্রিও করে দিয়েছেন তাই ছোট ছেলেই এ জমির মালিক।

প্রকাশ থাকে যে, কাউকে কিছু দান করলে এর উপর গ্রহীতার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দানকৃত বস্তুটি কবজা তথা বুঝে পাওয়া জরুরি। বর্তমানে জমি ফ্ল্যাট বা এজাতীয় স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে দান করার পর সরকারিভাবে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার দ্বারা জমিটির উপর গ্রহীতার কবজা সাব্যস্ত হয়ে যায়। অতএব উপরোক্ত জমিটি মীরাসী সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে না; বরং মোস্তফা সাহেবের ছোট ছেলেই জমিটির একক মালিক। বড় ছেলের জন্য জমিটিকে মীরাসী সম্পদের মধ্যে শামিল করা জায়েয হবে না। এ জমিটি বাদ দিয়ে অন্যান্য মীরাসী সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৭০; দুরারুল হুক্কাম ২/৪১৩; মাজমাউল আনহুর ৪/৪৯১; আলমাদখালুল ফিকহী আলআম ১/২৭৮

Sharable Link

এম এ লতিফ - মেহেরপুর

৫২৭৩. Question

আমি একটি সরকারী হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার। প্রায় সময় হাসপাতালের গেইটে ভিক্ষুকেরা কিছুদূর পর পর বসা থাকে। তাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় তারা পথচারীদেরকে একের পর এক সালাম দেয়। জানতে চাই, ভিক্ষুকদের এই সালামের উত্তর দেওয়া কি ওয়াজিব?

Answer

ভিক্ষার উদ্দেশ্যে পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সালাম দিলে ঐ সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। কিন্তু চাওয়ার জন্য সালাম না দিয়ে যদি সুন্নত আদায়ের উদ্দেশ্যে দেয় তবে তার সালামেরও উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। তাই কারো অবস্থা দেখে বাস্তবে সালাম দিচ্ছে বলে মনে হলে জবাব দিতে হবে। আর যেহেতু কারো অন্তরের অবস্থা জানা নেই তাই সকলের সালামের উত্তর দিয়ে দেওয়াই ভালো।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩২; ফাতাওয়া খানিয়া  ৩/৪২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৭

Sharable Link