মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে গিয়ে হাত ছিলে যায়। এ অবস্থায়ই নামাযে শরীক হয়ে যাই। নামায শুরু করার সময় হাতের ছিলা জায়গাটা সাদা হয়ে ছিল। যখন নামায শেষ করি তখন দেখি রক্তে চামড়াটা লাল হয়ে আছে। এখন জানার বিষয় হল, আমার এই নামায কি সহীহ হয়েছে?
মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে গিয়ে হাত ছিলে যায়। এ অবস্থায়ই নামাযে শরীক হয়ে যাই। নামায শুরু করার সময় হাতের ছিলা জায়গাটা সাদা হয়ে ছিল। যখন নামায শেষ করি তখন দেখি রক্তে চামড়াটা লাল হয়ে আছে। এখন জানার বিষয় হল, আমার এই নামায কি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্ষত স্থান হতে রক্ত আশপাশে না গড়ালে আপনার নামায সহীহ হয়েছে। শুধু চামড়া লাল হওয়ার কারণে অযু নষ্ট হয় না।
Sharable Link-আলজামেউস সাগীর পৃ. ৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫
একবার দূরে কোথাও যাচ্ছিলাম। রাতে গাড়িতে উঠেছি। ফজরের সময় দশ মিনিটের জন্য বিরতি দেওয়া হল। আমি এবং আমার পাশের সিটের সাথী একসাথে নামায আদায় করলাম। আমি তো অযু করেছি কিন্তু সে অযু করেনি। তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, আমি অযু করে উঠেছিলাম, আর বাসের সিটে বসে ঘুমালে অযু ভাঙে না। এখন মুফতী সাহেবের কাছে আবেদন, এ বিষয়ে সঠিক মাসআলাটি জানিয়ে বাধিত করবেন।
বাসের সিটে যদি মোটামুটি সোজা হয়ে বসা হয় এবং নিতম্ব সিটের সাথে এঁটে থাকে তাহলে এ অবস্থায় ঘুমালে অযু নষ্ট হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যদি ওভাবে ঘুমিয়ে থাকে তাহলে তার অযু নষ্ট হয়নি। সেক্ষেত্রে তার আদায়কৃত নামায সহীহ হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, চেয়ার কোচের স্লিপিং জাতীয় সিট একেবারে ফেলে দিয়ে ঘুমালে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা এক্ষেত্রে নিতম্ব সিটের সাথে এঁটে থাকে না।
Sharable Link-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/১৩০; মাজমাউল বাহরাইন পৃ. ৭৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৮; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৯০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১; রদ্দুল মুহতার ১/১৪১
অযু করার সময় অনেকে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে থাকে। উত্তর দিতে না পারায় নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগে। জানার বিষয়, তার মনের দিকে লক্ষ করে যদি উত্তর দেওয়া হয়, তাহলেও কি অযু মাকরূহ হবে?
বিনা প্রয়োজনে অযুতে কথা বলা অনুচিত। তবে কথা বললেও অযু মাকরূহ হবে না।
Sharable Link-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৯৪; আসসেআয়া ১/৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২৭, ১৮০
মসজিদের চত্বরে বসে নামাযের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ কবুতরের বিষ্ঠা জামায় এসে পড়ে। পরে টিস্যুপেপার দিয়ে মুছে নামায পড়েছি। আমার জানার বিষয় হল, উক্ত কাপড় পরে নামায সহীহ হয়েছে, নাকি ওই নামায পুনরায় পড়তে হবে?
কবুতর ও হালাল পাখির বিষ্ঠা নাপাক নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। পুনরায় ওই নামায পড়তে হবে না। তবে হালাল পাখির বিষ্ঠা নাপাক না হলেও তা যেহেতু ময়লা তাই সম্ভব হলে নামাযের আগে তা ধুয়ে নিবে।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২৬১; কিতাবুল আছল ১/২৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৮; আননাহরুল ফায়েক ১/৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২২
আমি একটি বারে চাকরি করি। ডিউটির সময় পরিবেশন করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ইউনিফর্মে মদ লেগে যায়। একদিন ইউনিফর্মে কিছু মদ লেগে থাকা অবস্থায় নামাযের জন্য মসজিদে প্রবেশ করছিলাম। মুআযযিন সাহেব সেটা দেখে বললেন, মদ নাপাক, তা কাপড়ে লাগলে নামায হবে না।
হুযুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, মুআযযিন সাহেবের এই কথা কি ঠিক যে, মদ নাপাক? আমার নামায কি সত্যি শুদ্ধ হয়নি? না হলে এখন আমার করণীয় কী?
হাঁ, মুআযযিন সাহেব ঠিকই বলেছেন। মদ নাপাক। তা কাপড়ে বা শরীরে লাগলে নাপাক হয়ে যাবে। তা না ধুয়ে নামায হবে না। অবশ্য এক দিরহাম তথা হাতের তালুর গভীরতা পরিমাণ বা তার কম লাগলে সে অবস্থায় নামায পড়ে নিলে নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে কোনো ওজর ছাড়া এমনটি করা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য, মদ নিকৃষ্টতম হারাম ও নাপাক বস্তু। এর সাথে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততাই বৈধ নয়। মদ পানকারীর ন্যায় মদ পরিবেশনকারীর উপরও হাদীসে লানত করা হয়েছে।
عَنْ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: لَعَنَ اللهُ الْخَمْرَ، وَلَعَنَ شَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا، وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ وَآكِلَ ثَمَنِهَا.
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা লানত করেন- মদের উপর, লানত করেন তা পানকারী, পরিবেশনকারী, মদ প্রস্তুতকারী, যে প্রস্তুত করতে বলে, বিক্রেতা-ক্রেতা, বহনকারী, যার নিকট বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার মূল্য ভক্ষণকারী- সকলের উপর। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৭১৬
সুতরাং আপনার জন্য আবশ্যক হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা করা।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৩৯, ২০৪০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২০৬; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/১৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪২; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৭
রমযান মাসে একদিন বিতির নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হই। ফলে দুআ কুনূত পড়ার আর সুযোগ হয়নি। এমতাবস্থায় ছুটে যাওয়া নামায আদায় করার সময় শেষ রাকাতে আমার কী করণীয়? আমি কি দুআ কুনূত পড়ব, না পড়ব না? কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছি। একেকজন একেকরকম বলেছে। ফলে বিষয়টি আমার কাছে অস্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই সঠিক মাসআলাটি জানালে কৃতজ্ঞ হব।
না, এক্ষেত্রে আপনাকে দুআ কুনূত পড়তে হবে না। ইমামকে রুকুতে পেলে রাকাত পাওয়া গণ্য হয়। সুতরাং বিতির নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমামকে রুকুতে পেলে দুআ কুনূতসহ পূর্ণ রাকাতই পেয়েছেন বলে গণ্য হবে। তাই পরবর্তী রাকাতে আর দুআ কুনূত পড়তে হবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫; ফাতহুল কাদীর ১/৩৮০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৫; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১
মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে দুটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছি :
ক. জুমার নামাযে কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতের রুকু না পায়; যেমন শেষ বৈঠকে শরীক হল, তবে তার করণীয় কী? সে কি ইমাম সাহেবের সঙ্গে নামাযে শরীক হয়ে যাবে, নাকি মসজিদের এক পাশে একা একা চার রাকাত যোহর পড়ে নেবে?
খ. এমন ব্যক্তি যদি ইমামের নামাযে শরীক হয়, তবে সে ইমামের সালাম ফেরানোর পর কত রাকাত পড়বে; দুই রাকাত না চার রাকাত? আমি আগে একজন থেকে শুনেছিলাম, দ্বিতীয় রাকাতের রুকু না পেলে চার রাকাত পড়তে হয়। এখন শুনি দুই রাকাত পড়া নাকি নিয়ম। মাসআলাদুটির সঠিক সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
ইমামের সালাম ফেরানোর পূর্বে কেউ মসজিদে হাযির হলেও সে জুমার নামাযের জন্য ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে। অতঃপর ইমাম সালাম ফেরালে সে দাঁড়িয়ে ছুটে যাওয়া দুই রাকাত জুমা যথারীতি আদায় করে নেবে। এটিই সঠিক নিয়ম।
عَنْ إِبْرَاهِيمَ أَنّهُ قَالَ فِي الرّجُلِ يَأْتِي الْمَسْجِدَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالْإِمَامُ قَدْ جَلَسَ فِي آخِرِ صَلَاتِهِ، قَالَ: يُكَبِّرُ تَكْبِيرَةً، فَيَدْخُلُ مَعَهُمْ فِي صَلَاتِهِمْ، ثُمّ يُكَبِّرُ تَكْبِيرَةً، فَيَجْلِسُ مَعَهُمْ فَيَتَشَهّدُ، فَإِذَا سَلّمَ الْإِمَامُ، قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ.
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, কেউ যদি জুমার দিন মসজিদে আসার পর ইমামকে শেষ বৈঠকে পায়, তবে সে এক তাকবীর বলে নামাযে শরীক হয়ে যাবে এবং আরেক তাকবীর বলে বৈঠকে গিয়ে তাশাহহুদ পড়বে। এরপর যখন ইমাম সালাম ফেরাবে তখন দাঁড়িয়ে যাবে এবং দুই রাকাত নামায পড়ে নেবে। (কিতাবুল আসার, মুহাম্মাদ, বর্ণনা ১২৮)
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি জামাতে শরীক হওয়ার পর তাশাহহুদ পড়ার আগেই যদি ইমাম সালাম ফিরিয়ে নেয় তাহলে সে নিজে তাশাহহুদ পূর্ণ করে বাকি নামাযের জন্য দাঁড়াবে।
Sharable Link-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৫৪৮১; কিতাবুল আছল ১/৩১২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/১১৮; আলহাবিল কুদসী ১/২৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৯
নামায আদায় করতে গিয়ে মাঝে মাঝে আমার সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার মত ভুল হয়ে যায়। কখনো এমন ভুল একই নামাযে একাধিক হয়ে থাকে। আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে ভুল একাধিক হওয়ার কারণে কি আমাকে সাহু সিজদাও একাধিকবার করতে হবে?
এক নামাযে একবারই সাহু সিজদা করা যায়। একাধিকবার সাহু সিজদা করার নিয়ম নেই। একাধিক ভুল হলেও একটি সাহু সিজদাই যথেষ্ট।
Sharable Link-মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৪৫৭৩; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ২/৩৪৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৪; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৪৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৬৬; আলইখতিয়ার ১/২৪৯
আমি একদিন যোহরের নামাযের ইমামতি করছিলাম। প্রথম রাকাতে ভুলে সূরা ফাতিহার ১ম আয়াত উচ্চস্বরে পড়ে ফেলি। খেয়াল হতেই পরক্ষণে ২য় আয়াত থেকে আস্তে পড়া শুরু করি। এক্ষেত্রে কি আমাকে সাহু সিজদা করতে হবে?
না, সাহু সিজদা করতে হবে না। কেননা অনুচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট নামাযে সূরা ফাতিহার এক-দুই আয়াত উচ্চস্বরে পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২২; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪০-৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৮১; এলাউস সুনান ৭/১৯০
কিছুদিন আগে যোহরের সুন্নত আদায়কালে দ্বিতীয় রাকাতে অসতর্কতাবশত ভুলে আমার মুখ থেকে উচ্চস্বরে কিছু কথা বের হয়ে যায়। ভুলে বলে ফেলার কারণে কি আমার নামায নষ্ট হয়ে গিয়েছে?
হাঁ, আপনার ঐ নামায নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেননা অনিচ্ছাকৃত বা ভুলে কথা বললেও নামায নষ্ট হয়ে যায়। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنّ هَذِهِ الصّلَاةَ لَا يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلَامِ النّاسِ، إِنّمَا هُوَ التّسْبِيحُ وَالتّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ.
মনে রেখ, নামাযে কথাবার্তা বলা ঠিক নয়। এ তো হল- তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন তিলাওয়াতের সমষ্টি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩৭)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
إذَا تَكَلّمَ فِي الصّلاَة أَعَادَ الصّلاَة، وَلَمْ يُعِدَ الْوُضُوءَ.
নামাযে কথাবার্তা বললে তা আবার পড়তে হবে। তবে পুনরায় অযু করা লাগবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৮১৯৬)
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৩৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৩৬
শুক্রবার মসজিদের তৃতীয় তলায় কাতার ঠিক হতে হতে নামায শুরু হয়ে যায়। মুসল্লিদের কেউ কেউ ইমামের সাথে নিয়ত বেঁধে ফেলেছে। আর কেউ নিয়ত না বেঁধে খালি জায়গা পূরণ করছে। আমার পাশের লোককে দেখলাম, সে নামাযের নিয়ত বেঁধে ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর তার সামনের লোক খালি জায়গা পূরণের জন্য সামনে গেলে সে নামাযে থাকাবস্থায় সামনের কাতারে চলে যায়। তারপর আবার তার সামনে খালি হয়ে যায় এবং সে নামাযে থেকে সামনের কাতারে যায়। জানার বিয়ষ হল, উক্ত ব্যক্তির নামায কি সহীহ হয়েছে? এভাবে নামাযরত আবস্থায় হাঁটার হুকুম কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির নামায সহীহ হয়েছে। নামাযে থাকাবস্থায় সামনের কাতার খালি হয়ে গেলে তা পূরণ করার জন্য এক কাতার অগ্রসর হয়ে যাওয়া জায়েয আছে। তবে যদি পরপর দুই কাতার খালি হয়ে যায় তাহলে এক কাতার অগ্রসর হওয়ার পর কিছুক্ষণ দাঁড়াবে। তারপর পরবর্তী কাতারে যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, নামায শুরু করার আগেই সতর্কতার সাথে ডানে-বামে, সামনে-পিছনে লক্ষ করে কাতার পূরণ করে দাঁড়ানো উচিত। যেন নামায শুরু করার পর আর ফাঁকা বের না হয়।
Sharable Link-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৭২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৬০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩১; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৫০; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬২৭
আমি একবার ফজরের সুন্নত পড়ার সময় তাশাহহুদ পড়ে সামান্য ঘুমিয়ে যাই। ঘুম ভাঙার পর পুনরায় তাশাহহুদ পড়েছি এবং দরূদ শরীফ ও দুআ মাছূরা পড়ে নামায শেষ করেছি। জানার বিষয় হল, তাশাহহুদ দুইবার পড়ার কারণে কি আমার উপর সাহুসিজদা ওয়াজিব হয়েছিল? এবং সাহুসিজদা না দেওয়াতে কি নামায সহীহ হয়নি?
শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ দুইবার পড়া ভুল হলেও এর কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৫; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৪৪; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৫; ফাতহুল কাদীর ১/৩৯
যোহরের নামাযের পর সুন্নত পড়ছিলাম। ইতিমধ্যে মসজিদে জানাযার নামায শুরু হয়ে যায়। সুন্নত শেষ করতে করতে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় তাকবীর বলে ফেলেন। সুন্নত শেষ করে দুই তাকবীর বলে ইমামের সাথে শরীক হয়েছি এবং যথারীতি ইমামের সাথে নামায শেষ করেছি। জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? অন্যথায় এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আপনি যেহেতু দ্বিতীয় তাকবীরের পরেই ইমামের সাথে যোগ দিয়েছেন, তাই এক্ষেত্রে আপনার জন্য করণীয় ছিল ইমামের সাথে বাকি নামায শেষ করে তাঁর সালাম ফেরানোর পর শুধু ছুটে যাওয়া প্রথম তাকবীরটি বলে সালাম ফেরানো। কিন্তু আপনার জন্য প্রথমেই ছুটে যাওয়া তাকবীর আদায় করা বিধিসম্মত হয়নি। ছুটে যাওয়া তাকবীর ইমামের সালাম ফেরানোর পর আদায় করতে হয়।
Sharable Link-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯২; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩২৬
একদিন আমি জামাতের সাথে এশার নামায পড়ছিলাম। প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে দরূদ শরীফ অর্ধেকের বেশি পড়ে ফেলি। ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের তাকবীর বলার পর স্মরণ হয় যে, আমি প্রথম বৈঠকে আছি। তারপর যথারীতি ইমামের সাথে নামায শেষ করি। জানার বিষয় হল, উক্ত ভুলের কারণে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল? এবং সাহু সিজদা না করার কারণে কি ওই নামায পুনরায় পড়তে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপানার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কারণ মুক্তাদীর নিজের ভুলের কারণে ইমাম বা মুক্তাদী কারো উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই সাহু সিজদা না দিয়ে ইমামের সাথে নামায শেষ করা যথার্থ হয়েছে। ওই নামায পুনরায় পড়তে হবে না।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫৬১; কিতাবুল আছার, আবু ইউসুফ, বর্ণনা ১৮৭; কিতাবুল আছল ১/১৯৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৯
আমি এক মাদরাসার ছাত্র। আমরা আমাদের মাদরাসার নিজস্ব মসজিদে নামায পড়ে থাকি। একদিন ইমাম সাহেবকে রুকুতে যেতে দেখে তাড়াহুড়া করে তার একতেদা করি। আমার পাশেই উস্তায দাঁড়িয়েছিলেন। নামায শেষে তিনি আমাকে বললেন, অযু শেষ করে জামার হাতা ঠিক কর না কেন, নামাযে হাতা গুটিয়ে রাখা মাকরূহ। জানতে চাচ্ছি- সঠিক কথা কী?
আপনার উস্তাযের কথাই সঠিক। নামাযে জামার হাতা গুটিয়ে রাখা মাকরূহ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أُمِرْنَا أَنْ نَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ، وَلاَ نَكُفّ ثَوْبًا وَلاَ شَعرًا.
আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদা করতে এবং (নামাযে) চুল ও কাপড় না গুটাতে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৮১০)
নামাযে দাঁড়াবার আগেই পরনের পোশাক স্বাভাবিক করে নিতে হবে। অযু করার পর রাকাত পাওয়ার জন্য যদি তাড়াহুড়া করে হাতা গুটানো অবস্থায় নামাযে শরীক হয়ে যায় তবে নামাযের ভিতরেই ধীরে ধীরে হাতা ঠিক করে নেওয়া উচিত।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ১/১৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৪৮; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪০
আমরা ছোটকাল থেকে শুনে আসছি যে, শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়ার পর দুআ মাছূরা পড়তে হয়। অথচ আমাদের মসজিদের খতীব সাহেব গত জুমায় বলেছেন, নামাযের শেষ বৈঠকে প্রসিদ্ধ দুআ মাছূরা ছাড়াও কুরআন-হাদীসে বর্ণিত যে কোনো দুআ পড়া যায়। জানতে চাচ্ছি, তাঁর কথা কি ঠিক?
আপনাদের খতীব সাহেব ঠিকই বলেছেন। অর্থাৎ শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়ার পর কুরআন-হাদীসে বর্ণিত যে কোনো দুআ পড়া যায়। প্রসিদ্ধ দুআ মাছূরাটিও এ সময়ে পড়ার মতো হাদীসে বর্ণিত একটি দুআ। আপনি সে দুআও পড়তে পারেন। হাদীস শরীফে এসেছে, আবু বকর সিদ্দীক রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন-
عَلِّمْنِي دُعَاءً أَدْعُو بِهِ فِي صَلاَتِي، قَالَ: قُلْ: اللّهُمّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلاَ يَغْفِرُ الذّنُوبَ إِلّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرّحِيمُ.
আমাকে একটি দুআ শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাযে পড়ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বল- ...اللّهُمّ إِنِّي ظَلَمْتُ। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৩৪)
Sharable Link-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৬৩৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৬
আমার বাবা অনেক দিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। তবে এতদিন আল্লাহ্র রহমতে নামাযগুলো স্বাভাবিকভাবেই আদায় করে আসছিলেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ হল প্যারালাইসিস হয়ে পুরো শরীর অচল হয়ে গিয়েছে। মাথাটাও এদিক সেদিক করতে পারেন না। মাঝেমাঝে চোখ খুলে তাকান আর কখনো দুই-এক শব্দ বলেন। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, বাবার নামাযগুলোর কী হবে? আমরা কি ফিদয়া আদায় করে দেব, নাকি তিনি সুস্থ হলে তা কাযা করবেন?
কোনো ব্যক্তি যদি মাথা নাড়িয়েও ইশারা করতে অক্ষম হয়ে যায় আর এ অবস্থা একদিন ও এক রাত থেকে বেশি দীর্ঘ হয় তাহলে তার উপর এই সময়ে আর নামায ফরয থাকে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপানার বাবার উপর নামায ফরয নয়। তার নামাযের ফিদয়া দিতে হবে না।
Sharable Link-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৭১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১০৫; আলহাবিল কুদসী ১/২২৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৯১
নামাযের মধ্যে মহিলাদের চুল ঢেকে রাখার বিষয়ে বিভিন্ন রকম কথা শুনেছি। তাই মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, চুল বা মাথার কতটুকু অংশ খোলা থাকলে নামায ভাঙবে বা ভাঙবে না?
নামাযে মহিলাদের পুরো মাথার চুল ঢেকে রাখতে হবে। মাথার চুলের এক চতুর্থাংশ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায ভেঙে যাবে। অনুরূপভাবে পুরো মাথার চারভাগের এক ভাগ ঐ পরিমাণ সময় খোলা থাকলেও নামায ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য উক্ত পরিমাণের কম খোলা থাকলে নামায নষ্ট হবে না।
Sharable Link-হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫৮৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭০; শরহুল মুনয়া পৃ. ২১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৫
আমরা চরাঞ্চলে বসবাস করি। এ অঞ্চলটি নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে কেউ মারা গেলে কখনো কখনো তার দাফনের বিষয়ে আমরা বেশ ঝামেলায় পড়ি। কবরস্থানের জায়গাটা তুলনামূলক উঁচু স্থানে হলেও মাটি খুঁড়তেই সেখান থেকে পানি উঠতে থাকে। ফলে লাশ রাখতেই কাফন নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ কাঠের কফিনে করে দাফন দেয়। এভাবে দাফন করতে কি কোনো অসুবিধা আছে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় কবরে শুকনা বালি ইত্যাদি দিয়ে সরাসরি দাফন করাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে কাঠের কফিনে করে দাফন করা জায়েয হবে। তবে কফিনের ভেতরে লাশের নিচে এক স্তর পর্যন্ত মাটি দিয়ে দেয়া উচিত। আর কফিনের উপরের অংশের কাঠ সরিয়ে নেবে এবং সাধারণ নিয়মে বাঁশ-চাটাই বিছিয়ে মাটি দেবে।
Sharable Link-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৪; মাজমাউল আনহুর ১/২৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৪
গত ঈদে আমি চাচার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আলোচনার একপর্যায়ে চাচা বললেন, তোমাকে একটা বিষয় বলে রাখছি। তা হল, আমার জানাযার নামায বড় ছেলে জাকির পড়াবে। সে যদি না পড়ায় তাহলে তুমি পড়াবে।
উল্লেখ থাকে যে, আমার জানা মতে জাকির ভাইয়ের কুরআন পড়া সহীহ-শুদ্ধ নয় এবং সে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও পড়ে না। এমনকি তার দাড়িও নেই এবং সে দেওয়ানবাগীর মুরিদ ও তার আকীদার প্রচারক। এমতাবস্থায় আমার জানার বিষয় হল-
ক. ইমাম হওয়ার জন্য কী কী গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন?
খ. সে জানাযার নামায পড়াতে পারবে কি না?গ. তার ইমামতি যদি জায়েয না হয় তাহলে জানাযায় উপস্থিত হাফেজ আলেম ও সাধারণ দ্বীনদার শ্রেণীর করণীয় কী হবে? কুরআন-সুন্নাহ্র আলোকে দলীল-প্রমাণসহ দিকনির্দেশনাদানে জনাব মুফতী সাহেবের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল।
শরীয়তে ইমামতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অন্যান্য নামাযের ন্যায় জানাযার নামাযের ইমামতির জন্যও ইমামের সহীহ আকীদা-বিশ্বাসের অধিকারী হওয়া এবং কবীরা গুনাহে জড়িত না থাকা আবশ্যক। কোনো ভ্রান্ত আকীদার অনুসারী বিদআতী বা প্রকাশ্যে গোনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে জানাযার নামাযের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া শরীয়তসম্মত নয়।
অতএব প্রশ্নোক্ত লোকটি যদি বাস্তবেই নিয়মিত ফরয নামায আদায় না করে অথবা বিদআতী গোমরাহ পীরের আকীদা-বিশ্বাসের অনুসারী ও প্রচারক হয় তাহলে এমন ব্যক্তিকে জানাযায় ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া সহীহ হবে না। এক্ষেত্রে পিতা ওসিয়ত করলেও সে ইমামতির হকদার হবে না। এমন ব্যক্তির জন্য পিতা ইমামতির ওসিয়ত করে গেলেও তার উপর আমল করা যাবে না; বরং উপস্থিত লোকদের মধ্যে উপযুক্ত দ্বীনদার ব্যক্তির মাধ্যমে জানাযা পড়াতে হবে।
Sharable Link-মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৫০৩৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪৫; ফাতহুল কাদীর ২/৮৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৪০৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৯
গত রোযায় কোনো এক রাতে এশার নামাযের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে মলদ্বারে ঔষুধ প্রয়োগ করি। পরে তারাবীহ পড়ানো শেষ হলে পায়জামায় হাত দিলে ভেজা ভেজা অনুভব হয়। জানার বিষয় হল, মলদ্বারের ভিতর ঔষধ প্রয়োগ করার পর তা যদি বের হয়ে যায়, তাহলে কি অযু ভেঙে যায়?
হাঁ, মলদ্বারে ঔষধ বা সাপোজিটর প্রবেশ করার পর ভেতর থেকে যদি কোনো কিছু বের হয়ে আসে তাহলে অযু নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঐদিন এশার সময়ও যদি আপনার ভেজা অনুভব হয়ে থাকে, তাহলে এশা ও বিতরের কাযা পড়ে নিতে হবে।
Sharable Link-ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; আলবেনায়া ১/১৬০; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৪৬
শাহেদ সাহেব বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তার উপর হজ¦ ফরয। কিন্তু হজে¦ যাওয়ার সামর্থ্য নেই। অন্যকে দিয়ে বদলী হজ¦ করাতে চান। আব্দুল কারীম সরকারি মুআল্লিম। বাংলাদেশ থেকে সরকারি খরচে মক্কা যায়। হাজ¦ীদের খেদমত করে এবং নিজেও হজ¦ করে। সে শাহেদকে বলল, আমি আপনার বদলী হজ¦ করে দিব। পুরো খরচ দিতে হবে না। ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিলেই চলবে। কেননা আমার তো খরচ নেই। তাই আপনার থেকে কম নিব। এখন শাহেদ সাহেব কি আব্দুল কারীমকে দিয়ে বদলী হজ¦ করাতে পারবে?
বদলী হজে¦র ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় হল, হজে¦র খরচাদি প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে ব্যয় হওয়া এবং যাকে প্রেরণ করা হচ্ছে সে ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকেই যাওয়া। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো অনুপস্থিত। কেননা আব্দুল কারীম সাহেব মূলত যাচ্ছেন এজেন্সির কাজে সরকারি খরচে। তিনি শাহেদ সাহেবের পক্ষ থেকে হজ¦ করার জন্য যাচ্ছেন না। আর বদলী হজ¦ বাবদ তিনি যে টাকা নিচ্ছেন তাও হজে¦র কাজে ব্যবহার হচ্ছে না। কারণ যাতায়াত ভাড়া ও মৌলিক খরচাদি তো ঐ ব্যক্তি তার নিয়োগকর্তা থেকে পাচ্ছেন। তাই এভাবে বদলী হজ¦ আদায় হবে না। বদলী হজে¦ পাঠাতে হবে এমন ব্যক্তিকে, যে শুধু ঐ লোকের হজ¦ আদায়ের উদ্দেশ্যেই তার খরচে যাবে।
Sharable Link-আলবাহরুর রায়েক ৩/৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ৩২৩; রদ্দুল মুহতার ২/৬০০
আমাদের সমাজে বিয়ের পূর্বে কিছু ব্যাপার ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে; যেমন ক. বরপক্ষ যখন মেয়ে দেখতে যায় এবং কথা প্রসঙ্গে মেয়ের উচ্চতা সম্পর্কে জানতে চায় তখন বলা হয় যে, মেয়ের উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। যদিও বাস্তবে মেয়ের উচ্চতা চার ফুট দশ ইঞ্চি। খ. অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শ্যামবর্ণের মেয়েদের বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে ফর্সা হিসেবে বরপক্ষের সামনে উপস্থাপন করা হয়। গ. আবার ছেলের মাসিক বেতনের ব্যাপারে কথা উঠলে যা প্রকৃত বেতন তার থেকে অনেক বাড়িয়ে বলা হয়।
এখন সম্মানিত মুফতী ছাহেবানের নিকট আমার জানার বিষয় হচ্ছে, উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবাহের মত একটা পবিত্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধোঁকা বা প্রতারণার শামিল কি না এবং এই ধরনের ইস্যু নিয়ে বিয়ের পর সমস্যা দেখা দিলে কী করা উচিত?
বিবাহ শরীয়তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। এর সাথে জড়িয়ে আছে পুরো জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই তা খুবই স্বচ্ছতা ও আমানতদারীর সাথে সম্পন্ন হওয়া জরুরি। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা এসেছে। এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَحَقّ الشّرُوطِ أَنْ تُوفُوا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الفُرُوجَ.
বিবাহকেন্দ্রিক শর্ত ও অঙ্গিকারগুলো অন্যান্য যে কোনো শর্ত ও অঙ্গিকারের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ও পূরণ করার সর্বাধিক দাবিদার। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭২১
বিবাহের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের বিষয়গুলোর যথাযথ ও বাস্তবসম্মত বর্ণনা দেওয়া আমানতদারীর অন্তর্ভুক্ত। এর বিপরীত করাটা খেয়ানত ও বড় ধরনের গুনাহ। আর এ কারণে পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবনে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই ভবিষ্যতে বৈবাহিক সম্পর্কটিকে ঝামেলামুক্ত রাখতে এবং সর্বপরি নিজেদের দ্বীন ও ঈমানের হেফাজতের জন্য এসব মিথ্যা ও ধোঁকা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
ছেলে পক্ষ থেকে হোক বা মেয়ে পক্ষ থেকে হোক মিথ্যা, ধোঁকা তো এমনিতেই মারাত্মক গোনাহের কাজ। এ ধরনের ক্ষেত্রে তা আরো জঘন্যতম। কোথাও এমন ঘটনা ঘটে গেলে সার্বিক অবস্থা জানিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেমের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে হবে।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ৫/৯৮, ৩০; ফাতহুল কাদীর ৪/১৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৪৬
আমি আমার ল্যাপটপ মেরামতের জন্য একজন মেকারের দোকানে যাই। সব যন্ত্রপাতি খুলে দেখার সময় তার হাতে একটি দামি পার্টস ভেঙে যায়। আমি জরিমানা দাবি করি। কিন্তু সে তা দিতে অস্বীকার করে এবং বলে, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য আমি কেন জরিমানা দিব? জানার বিষয় হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য কি তার থেকে জরিমানা নেওয়া অবৈধ হবে?
মেরামতকারী কাজ করতে গিয়ে তার দ্বারা কোনো কিছু নষ্ট হয়ে গেলে এর ক্ষতিপূরণ তাকেই দিতে হয়। এক্ষেত্রে কাজটি কি ইচ্ছাকৃত হল, না অনিচ্ছাকৃত হল তা বিবেচ্য হয় না। তাই উক্ত ব্যক্তি থেকে আপনি ক্ষতিপূরণ নিতে পারবেন।
Sharable Link-কিতাবুল আছার ২/৬৬১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৭৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৬১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৬
বাইয়ে মুযারাবার মাঝে মুযারিব যদি মুযারাবা ব্যবসার মালামাল রাখার উদ্দেশ্যে কোনো ঘর ভাড়া নেয় কিংবা ব্যবসার প্রয়োজনে নিজের জন্য কোনো ঘর ভাড়া নেয় কিংবা ব্যবসায়িক কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে সে ঘরের ভাড়া বাবদ বা চিকিৎসা বাবদ মুযারাবার সম্পদ থেকে ব্যয় করতে পারবে কি না? আর মুযারিবের জন্য আর কী কী সুবিধা আছে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
মুযারাবার মালামাল রাখার জন্য ঘর বা গোডাউন ভাড়া নেয়া হলে তার খরচ ব্যবসার টাকা থেকে নেয়া যাবে। এমনিভাবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোথাও যাওয়া হলে সেখানে থাকা-খাওয়ার ন্যায় সঙ্গত খরচও ব্যবসার হিসাব (মুযারাবার সম্পদ) থেকে যাবে। কিন্তু ব্যবসার কাজে বের হয়ে অসুস্থ হলে চিকিৎসার খরচ ব্যবসা থেকে নেয়া যাবে না। বরং এ খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। অবশ্য রাব্বুল মাল তথা বিনিয়োগকারী নিজ থেকে সহযোগিতা করতে চাইলে তা নিতে পারবে।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ৪/১৫৪, ১৯০; হাশিয়াতুশ শিলবী আলাততাবয়ীন ৫/৫৪৭; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৪/৩৩৯, ৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৪৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ১৩৫
আমি একজন চা বিক্রেতা। কোনো কোনো সময় কাস্টমারের হাত থেকে কাপ পড়ে ভেঙ্গে যায়। এক্ষেত্রে আমি কি জরিমানা দাবি করতে পারি। অনুরূপভাবে কাস্টমারের হাত থেকে পড়ে যাওয়া চায়ের দামও কি নিতে পারব?
ক্রেতা যদি সাধারণ নিয়মে সতর্কতার সঙ্গে কাপটি ব্যবহার করে। এরপরেও হাত ফসকে পড়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে এর ক্ষতিপূরণ দাবি করা জায়েয হবে না। কিন্তু যদি তার অসতর্কতা বা খামখেয়ালির কারণে এমনটি ঘটে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে।
আর কাস্টমারকে চা বুঝিয়ে দেওয়ার পর তার হাত থেকে কাপ ঐচ্ছিক বা ভুলবশত যে কারণেই পড়–ক না কেন আপনি তার থেকে চায়ের দাম নিতে পারবেন।
Sharable Link-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৮৬; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/১৩১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৭৭১, ২৯৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৮১
আমাদের একটি মুরগিফার্ম আছে। প্রায় প্রতিদিন তাতে কিছু মুরগি মারা যায়। জনৈক মাগুর মাছচাষী সেই মুরগিগুলো স্বল্পমূল্যে আমাদের থেকে কিনে নিয়ে যায়। মুফতী সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা হল, আমরা কি এই মৃত মুরগিগুলো বিক্রি করতে পারব?
শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃত মুরগি বিক্রিযোগ্য সম্পদ নয়। তাই কোনো ক্রেতার নিকট এগুলো বিক্রি করা বৈধ হবে না এবং বিক্রিলব্ধ অর্থও হালাল হবে না। তাছাড়া মাছকে মৃত জন্তু, পাখি খেতে দিলে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
Sharable Link-ফাতহুল কাদীর ৬/৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩৯০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৫৯১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ২১০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫০
আমরা ছয় ভাই-বোন আমাদের চাচার পক্ষ থেকে হেবাসূত্রে তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের মালিকানা লাভ করি। ভবনে আমার ফ্ল্যাটটি আমি সম্প্রতি বাইরের একজনের কাছে বিক্রি করে দেই। এখন আমার ভাই-বোনেরা আমাকে চাপ দিচ্ছে, ঐ বিক্রি প্রত্যাহার করে তাদের কোনো একজনের কাছে তা বিক্রি করার জন্য। আমি জানতে চাচ্ছি, ফ্ল্যাটটি বিক্রি করতে কি তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিবেচনা করা আমার জন্য জরুরি?
ফ্ল্যাট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পার্শ্ববতী ফ্ল্যাটমালিকদের ‘শুফা’ তথা ক্রয়ের অগ্রাধিকার থাকে। তাই তাদের অবগতি ছাড়া তা অন্যত্র বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করে দিলে নিকটবর্তী ফ্ল্যাটমালিকরা উক্ত ফ্ল্যাটের প্রিয়েমশন (ক্রয় অগ্রাধিকার) অর্থাৎ বিক্রিত মূল্য পরিশোধ করে তা নিজেদের মালিকানাভুক্ত করে নেওয়ার দাবি করতে পারেন।
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই ফ্ল্যাটটি আপনার পাশর্^বর্তী ব্যক্তি যথাযথ দামে (যে মূল্যে আপনি অন্যত্র বিক্রি করেছেন) কিনে নিতে চাইলে আপনার দায়িত্ব হবে, আগে যিনি ক্রয় করেছেন তার সাথে বিক্রয় চুক্তি প্রত্যাহার করে বাড়িটি এ ব্যক্তির নিকট বিক্রি করা।
Sharable Link-আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/১৩২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১০৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৭
কুরবানী ঈদের দুদিন আগে আমার ছেলে ভূমিষ্ঠ হয়। ঈদের দিন কুরবানীর সঙ্গে তার আকীকা আদায় করি। এক লোক বললেন, ‘আমার এই আকীকা আদায় সহীহ হয়নি। কেননা আকীকা করতে হয় বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাত দিন পর। এর আগে করলে আদায় হয় না।’ তার এই কথা কি ঠিক?
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। আপনার শিশুর উক্ত আকীকা সহীহ হয়েছে। সপ্তম দিনের আগেও আকীকা করা জায়েয। যদিও মুস্তাহাব হল সপ্তম দিনে করা। অর্থাৎ এখানে দুটি সুন্নত। ১. আকীকা করা। ২. সপ্তম দিনে করা। এক্ষেত্রে আপনার আকীকার মূল সুন্নতটি আদায় হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় সুন্নতটি আদায় হয়নি।
Sharable Link-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৪৭৩৯; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ২/২৩৩; এলাউস সুনান ১৭/১১৯
আমাদের বাসার পাশে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। তাতে এক বাবুর্চি অপর আরেকজনের সহযোগিতায় সব মুরগি জবাই করে। কিন্তু সে প্রত্যেকটি মুরগি জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলেনি। শুরুতে কিছুক্ষণ বিসমিল্লাহ বলেছে, এরপর মাঝে মাঝে বলেছে। এমনটি দেখে আমি আপত্তি করলে সে বিষয়টি হালকাভাবে নেয় এবং উল্টা যুক্তি দিয়ে আমাকে বলে, ‘একজনই তো সব জবাই করছে, আর একজন সব জবাই করলে প্রতিবার ‘বিসমিল্লাহ’ না বললেও চলে।’ আমার প্রশ্ন হল, তার যুক্তিটি কি ঠিক, এক ব্যক্তি অনেক মুরগি জবাই করলে কি প্রত্যেক মুরগির জন্য বিসমিল্লাহ বলা আবশ্যক নয়, এতে কি কোনো ছাড় আছে? নতুবা যেসমস্ত মুরগি জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলা হয়নি, তা খাওয়ার হুকুম কী? সঠিক বিষয়টি জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রশ্নোক্ত কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। একাধিক মুরগি বা পশু জবাই করলে প্রত্যেকটির জন্য পৃথক পৃথকভাবে বিসমিল্লাহ বলা জরুরি। নতুবা যে প্রাণীর জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলা হবে না তার জাবাই সহীহ হবে না এবং তা খাওয়া হালাল হবে না।
উল্লেখ্য, হালাল-হারামের মত এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে অহেতুক যুক্তির আশ্রয় না নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে সঠিক মাসআলা জেনে নেওয়া জরুরি।
Sharable Link-কিতাবুল আছল ৫/৩৯৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৫৩