কিছুদিন আগে আমি বাজার থেকে গরুর গোশত কিনি। আসার সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের নামায আদায় করি। পরে দেখি, কাপড়ের নিম্নাংশে গোশতের ব্যাগ থেকে কিছু রক্ত লেগে আছে। জানতে চাই, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে?
কিছুদিন আগে আমি বাজার থেকে গরুর গোশত কিনি। আসার সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের নামায আদায় করি। পরে দেখি, কাপড়ের নিম্নাংশে গোশতের ব্যাগ থেকে কিছু রক্ত লেগে আছে। জানতে চাই, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে?
যবাইয়ের সময় বের হওয়া প্রবাহিত রক্ত নাপাক, কিন্তু গোশতের রক্ত নাপাক নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কাপড়ে যদি গোশতের রক্তই লেগে থাকে তাহলে তা নাপাক হয়নি এবং আদায়কৃত নামায সহীহ হয়েছে।
ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০১; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩১Sharable Link
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলাতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে কি?
তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত সময়ের আমল। তাই তাশরীকের দিনগুলোর কাযা নামায এই সময়ের পরে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। তবে এ সময়ের ছুটে যাওয়া নামায যদি এ দিনগুলোতেই কাযা করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাশরীকের দিনগুলোতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯Sharable Link
অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের জামাতের সময় হয়ে গেছে বা জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায় যোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়া হয় না। জানার বিষয় হল, পরবর্তীতে কি ঐ সুন্নত পড়ে নেওয়া যাবে? পড়া গেলে যোহরের পরের দুই রাকাত সুন্নতের আগে পড়ব নাকি পরে?
জ্বী। যোহরের পূর্বের সুন্নত ছুটে গেলে তা ফরয-পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করে নিবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যোহরের পূর্বের চার রাকাত (কখনো) ছুটে গেলে তিনি তা যোহরের (ফরয) পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করতেন।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯; মাআরিফুস সুনান ৪/১০৭Sharable Link
এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহার স্থানে ভুলে তাশাহহুদ পড়া শুরু করে দেয়। তাশাহহুদ পড়া শেষ হওয়ার পর তার এ ভুলের কথা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র সূরা ফাতেহা পড়া শুরু করে। কিন্তু নামায শেষে সে সাহু সিজদা করেনি। এখন জানার বিষয় হল, তার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, না তা আবার পড়তে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা না করার কারণে এ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫১Sharable Link
আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। বাড়ি উত্তরবঙ্গের নাটোরে। গ্রামের বাড়ি যেতে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে বাসে উঠি। উত্তরা থেকে গাবতলী বেশ লম্বা পথ। মাঝপথে অনেক সময় নামায পড়তে হয়। বিপাকে পড়ে যাই নামায কীভাবে পড়ব। তাই জানার বিষয় হল, উত্তরা থেকে গাবতলী আসার পথে যেসব নামায পড়ব তা কি কসর পড়ব? সঠিক উত্তরটি জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও ঢাকা সিটির ভিতরে আপনাকে পূর্ণ নামায আদায় করতে হবে। গাবতলীর দিকে আমিনবাজার ব্রীজ বর্তমান ঢাকা সিটির শেষ সীমানা। তাই আমিনবাজার ব্রীজ অতিক্রম করার পর থেকে কসর শুরু করবেন।
-কিতাবুল আছল ১/২৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮Sharable Link
জামাতে নামায আদায় করার সময় কারো অযু ছুটে গেলে নিয়ত ছেড়ে দিয়ে রুকু-সিজদায় ইমামের অনুসরণ করা হয় তাহলে তা জায়েয হবে কি?
একটি কিতাবে তা জায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব বলছেন, এটা জায়েয হবে না। সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই।
জামাতে নামায পড়া অবস্থায় কোনো ব্যক্তির অযু ছুটে গেলে সম্ভব হলে তৎক্ষণাৎ অযুর জন্য বের হয়ে যাবে। ইমামের নামায শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবে না। সাহাবা-তাবেয়ীদের একাধিক আছার দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত।
যেমন আমর ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাযরত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কী করণীয় এ সম্পর্কে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, সে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৯৫০)
সালমান ফারেসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কারো যদি নামাযে অযু ছুটে যায় তাহলে সে যেন বের হয়ে অযু করে আসে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৯৫৪)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর নাক থেকে নামায অবস্থায় রক্ত বের হলে তিনি ফিরে গিয়ে অযু করে আসতেন। (মুআত্তা মালেক, হাদীস : ৫০)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, নামায অবস্থায় যে ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হবে অথবা অযু ছুটে যাবে সে (মসজিদ থেকে) বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (কিতাবুল আছার ১/১৬২)
সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এ ধরনের আরো বর্ণনা রয়েছে। এ সকল বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নামাযে অযু ছুটে গেলে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে।
অবশ্য মসজিদে মুসল্লী সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে কাতারের মাঝখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে নামায শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও অযু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জা, সংকোচ বা অন্য কোনো কারণে বিনা অযুতে ইমামের সাথে রুকু সিজদা করতে থাকা ঠিক হবে না। কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে এমনটি করার কথা পাওয়া যায়নি। প্রশ্নোক্ত কিতাবের ঐ বক্তব্য ঠিক নয়।
Sharable Link
আমার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। প্রতি এক মাস পর পর গ্রামের বাড়িতে যাই। জানার বিষয় হল, আসা-যাওয়ার পথে মুসাফির হিসেবে নামায পড়ব, নাকি মুকীম হিসেবে? দলিল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার গ্রাম থেকে ঢাকা শহর যেহেতু সফরসম দূরত্বে অবস্থিত তাই যাওয়ার সময় ঢাকা সিটি থেকে বের হওয়ার পর থেকে আপনার গ্রামে প্রবেশের আগ পর্যন্ত এবং ফেরার সময় আপনার গ্রাম থেকে বের হওয়ার পর হতে ঢাকা সিটিতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত পুরো সময় মুসাফির থাকবেন। তাই এ সময় আপনি মুসাফির হিসেবে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়বেন। তবে মুকীম ইমামের পিছনে পড়লে চার রাকাত বিশিষ্ট নামায পুরোই পড়তে হবে।
-মুসনাদে আবু ইয়ালা ৫/৩৩০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৫৩১; শরহুল মুনইয়াহ ৫৩৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১০৭Sharable Link
বেশ কিছুদিন আগে একদিন আসরের নামাযে আমি ও আমার আববু একসাথে মাসবুক হই। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর বাকি নামায পড়তে যখন দাঁড়ালাম তখন নামায কত রাকাত পেয়েছি, কত রাকাত পড়তে হবে তা আমি ভুলে যাই। আববু আর আমি যেহেতু একই সাথে মাসবুক হয়েছি তাই তখন আববুকে দেখে দেখে বাকি নামায পূর্ণ করলাম। প্রশ্ন হল, আমার উক্ত নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?
জী, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে। কেননা ছুটে যাওয়া রাকাত সংখ্যা মনে না থাকলে পাশেরজনের প্রতি লক্ষ্য করে নিজের নামায স্মরণ করা এবং সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করা জায়েয আছে। এভাবে নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যায়। তাই আপনার নামাযও আদায় হয়ে গেছে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৭Sharable Link
আমার আববা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাড়িতে অবসরে আছেন। পরিবারের সকল খরচ আমি বহন করি। আমার ব্যবসায় আববা বা পরিবারের কেউ শরিক নেই। পরিবারের জরুরি খরচ আববার হাতে দেই। আমার ছোট প্রাপ্তবয়ষ্ক দুই ভাই লেখাপড়া করে। জানার বিষয় হল, আমার ঐ দুই ভাইকে তাদের লেখাপড়ার জন্য বিভিন্ন কিতাবাদি ও অন্যান্য যাবতীয় খরচের জন্য কি যাকাতের টাকা দিতে পারব? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পরিবারের খরচের পাশাপাশি ছোট ভাইদের জরুরি খরচ বহন করাও আপনার দায়িত্ব। তাই জরুরি খরচ যাকাত থেকে গণ্য করতে পারবেন না। তবে জরুরি খরচ থেকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দরিদ্র ভাইদেরকে প্রদান করলে তা যাকাতের নিয়তে দিতে পারবেন।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬Sharable Link
গত বছর হজ্ব আদায়ের সময় আরাফার ময়দানে পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে আমার বাম পায়ের একটি নখ ভেঙ্গে যায় এবং তা কোনো রকম চামড়ার সাথে লেগে থাকে। এই অবস্থায় আমার হাঁটতে প্রচ- কষ্ট হয়। তাই ভাঙ্গা নখটি কেটে ফেলি। এর ফলে কি আমার উপর কোনো দম বা সদকা ওয়াজিব হয়েছে?
না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ নখ কেটে ফেলার কারণে কোনো কিছু ওয়াজিব হয়নি। কেননা ইহরাম অবস্থায় হাত বা পায়ের কোনো নখ ভেঙ্গে গেলে তা কেটে ফেলা জায়েয। এ ধরনের নখ কেটে ফেললে দম বা সদকা কিছুই ওয়াজিব হয় না।
-কিতাবুল আছল ২/৪৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪২৫; মানাসিক ৩৩১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৪Sharable Link
পুরুষদের জন্য তাদের দাদী শাশুড়ি বা নানী শাশুড়ির সাথে দেখা করার কী হুকুম? অনেকে মনে করে তাদের সাথে দেখা করার অনুমতি নেই। আসলে শরীয়ত এ ব্যাপারে কী বলে?
দাদী শাশুড়ি ও নানী শাশুড়ির সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা জায়েয। তারা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) এবং তোমাদের স্ত্রীদের মা’দেরকে তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে।-সূরা নিসা : ২৩ সকল মুফাসসির ও ফকীহগণ একমত যে উক্ত বিধানে স্ত্রীর মায়ের মা ও স্ত্রীর পিতার মাও অন্তর্ভুক্ত।
তাফসীরে মাযহারী ২/২৭০; কিতাবুল আছল ৪/৩৬১; হেদায়া ৮/৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২৮;Sharable Link
বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন মহর কত? আর মহরে ফাতেমী কত? এক দিরহামের পরিমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
বিবাহের সর্বনিম্ন মহর দশ দিরহাম। অর্থাৎ দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা বা ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা। আর মহরে ফাতেমী হল ৫০০ দিরহাম। অর্থাৎ ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রূপা। এক দিরহামের ওজন হল ৩.০৬১৮ গ্রাম। বর্তমানে প্রতি তোলা রূপার মূল্য ১২০০/- টাকা হলে ১০ দিরহামের মূল্য দাঁড়ায় ৩,১৫০/- টাকা। আর মহরে ফাতেমীর মূল্য হয় ১,৫৭,৫০০/- টাকা।
-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/৩৯৮Sharable Link
অসুস্থ অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে রক্ত দিতে পারবে কি?
হ্যাঁ, স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে রক্ত দিতে পারবে। এতে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না।
Sharable Link
আমার ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। আমি আল্লাহর কাছে মান্নত করেছি যে, আমার ছেলের পরীক্ষার ফলাফল ভালো হলে আমার এ ছাগলটি আমাদের মাদরাসার গরীব ছাত্রদের জন্য দান করব। প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি উক্ত ছাগলের পরিবর্তে তার মূল্য সদকা করা জায়েয হবে? আর এ মাদরাসা ছাড়া অন্য কোনো মাদরাসায় দান করলে কি মান্নত আদায় হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ছাগলের মূল্য সদকা করলেও মান্নত আদায় হয়ে যাবে। আর তা অন্য মাদরাসাতেও দান করা যাবে। তবে যে মাদরাসায় দেওয়ার জন্য মান্নত করা হয়েছিল সেখানে দেওয়াই উত্তম হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৫-৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪১Sharable Link
জনৈক ব্যক্তি দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মান্নত করল যে, যদি আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করেন তাহলে যতদিন বেঁচে থাকবে প্রতিদিন দুই রাকাত করে শোকরিয়ার নামায আদায় করবে। পরবর্তীতে আল্লাহর মেহেরবানিতে লোকটি আরোগ্য লাভ করে। প্রশ্ন হল, এখন কি তাকে প্রতিদিন দুই রাকাত শোকরিয়ার নামায পড়তে হবে, নাকি এর পরিবর্তে কাফফারা দিলেই যথেষ্ট হবে?
প্রশ্নোক্ত মান্নত সহীহ হয়েছে। তাই তাকে প্রতিদিন দুই রাকাত করে নামায আদায় করতে হবে। নামায আদায়ের সামর্থ্য থাকা পর্যন্ত তাকে নামাযই পড়তে হবে। সামর্থ্য থাকলে নামায না পড়ে এর পরিবর্তে কাফফারা দেওয়া যাবে না। প্রকাশ থাকে যে, এমন বিষয়ের মান্নত করা উচিত, যা পরবর্তীতে সহজে পূর্ণ করা যায়। পরবর্তীতে আদায় করা কষ্টকর হয়-এমন মান্নত করা উচিত নয়।
-আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪১-২৪২; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৫; হেদায়া ৪/৩৭৫Sharable Link
কয়েকদিন আগে আমাদের মাদরাসা সংলগ্ন মহল্লার মসজিদের জায়গা মাপা হলে দেখা গেল, মসজিদের অনেক জায়গা পাশের এক বিত্তবান প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির ভেতর চলে গেছে। তিনি আমাদের মাদরাসায় প্রচুর পরিমাণ দান করে থাকেন এবং মসজিদের প্রয়োজনীয় খরচও বহন করে থাকেন। তাকে জানানো হলে তিনি বললেন, মসজিদের যে পরিমাণ জায়গা তার বাড়ির ভেতরে চলে গেছে তা তাকে বিক্রি করে দিতে বা এর পরিবর্তে অন্য কোনো জায়গা নিয়ে নিতে।
জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় মসজিদের জায়গা তার কাছে বিক্রি করা বা অন্য আরেকটি জায়গার সাথে বদল করা জায়েয হবে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
মসজিদের জমি বিক্রি করা জায়েয নেই। অন্যায়ভাবে মসজিদের জায়গা ভোগ-দখলের কারণে উক্ত ব্যক্তি গুনাহগার হবে। এখন তার কর্তব্য, মসজিদের যে পরিমাণ জায়গা তার বাড়ির ভেতর চলে গেছে তার দখল ছেড়ে দিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষের নিকট তা বুঝিয়ে দেওয়া। আর উক্ত জায়গার বদলে অন্য জায়গা নেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা করা বৈধ হবে কি না, তা বলার জন্য মসজিদের জায়গার দলীল ও নকশা লাগবে এবং ঐ ব্যক্তি যে জায়গা দিতে চাচ্ছেন তার অবস্থান কী এবং তা মসজিদের জন্য কতটা উপকারী, এসব বিষয়ে অবগত হলে এ সম্পর্কে কী করণীয় তা নির্ধারণ করা সম্ভব হতে পারে ইনশাআল্লাহ।
-সহীহ বুখারী ১/৩৮৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪০১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৮৬Sharable Link
আমাদের মহল্লার মসজিদের সীমানায় কিছু আম গাছ আছে। আমের মৌসুমে অনেক আম হয়। মসজিদের কিছু মুসলিস্ন মাঝেমধ্যেই আম পেড়ে নিয়ে যায়। প্রশ্ন হল, এই গাছগুলো থেকে আম পেড়ে নেওয়া কি বৈধ?
মসজিদের গাছের ফলমূল মসজিদেরই সম্পদ। বিনামূল্যে তা পেড়ে নেওয়া কারো জন্য বৈধ নয়। কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হল, গাছের ফলগুলো বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা মসজিদের ফান্ডে জমা করা এবং মসজিদের প্রয়োজনে তা ব্যয় করা। তাই মুসলিস্নদের কেউ নিতে চাইলে ন্যায্য মূল্য দিয়ে নিতে পারবে। বিগত দিনে যারা বিনামূল্যে আম নিয়েছে তাদের কর্তব্য হল এর ন্যায্য মূল্য মসজিদের ফান্ডে আদায় করে দেওয়া।
-কিতাবুল ইসআফ ২২; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩২Sharable Link
আমি একদিন স্বাভাবিক গতিতে মটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি মুরগি এসে আমার মটর সাইকেলের সামনে পড়ে যায়। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করা সত্ত্বেও মটর সাইকেল থামাতে সক্ষম হইনি। ফলে মুরগিটি চাকার নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। কিছুক্ষণ পর মুরগির মালিক এসে আমার নিকট মুরগির জরিমানা তলব করে। আমি জরিমানা দিতে অস্বীকার করি। কারণ, আমার কোনো ত্রুটি ছিল না। আরো লোক জড়ো হল। তারা আমাকে জরিমানা দিতে বাধ্য করে। ফলে আমি বাধ্য হয়ে জরিমানা দেই। প্রশ্ন হল, আমার উপর কি আসলে জরিমানা ওয়াজিব হয়েছিল? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নের বর্ণনা যদি সঠিক হয় অর্থাৎ আপনি যদি নিয়ম অনুযায়ী স্বাভাবিক গতিতেই মটর সাইকেল চালিয়ে থাকেন আর হঠাৎ করে মুরগিটি এর নিচে পড়ে যায়। আর আপনি চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি তাহলে এক্ষেত্রে আপনার উপর ঐ মুরগির জরিমানা দেওয়া জরুরি নয়। তাই এক্ষেত্রে তাদের জন্য জরিমানা আদায় করা বৈধ হয়নি। কিন্তু আপনার অনিয়ম বা অসতর্কতার কারণে যদি মুরগিটি মারা যায় তাহলে জরিমানা আদায় করা জায়েয হয়েছে।
-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, খ- : ২, সংখ্যা : ৮/১৯৮-১৯৯; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/২৯৯Sharable Link
ছেলে মেয়েরা যতদিন পিতার সাথে একই সংসারে থাকে ততদিন ছেলেদের আয়ের মালিক পিতা হবে কি না? হাওয়ালাসহ জানাবেন।
ছেলে পিতার সংসারে থাকা অবস্থায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে পিতার সহযোগী হিসেবে কাজকর্ম করলে এবং ছেলের প্রাপ্য সম্পর্কে পূর্ব থেকে কোনো কথা না হলে প্রতিষ্ঠানের সকল আয়-উপার্জনের মালিক পিতাই হবেন। ছেলে এ থেকে কোনো কিছুর মালিক হবে না। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে ছেলের জন্য কোনো লভ্যাংশ বা পারিশ্রমিক দেওয়ার চুক্তি থাকলে সে এর মালিক গণ্য হবে।
আর ছেলের কর্মস্থল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি সম্পূর্ণ পৃথক হয় তাহলে তার উপার্জনের মালিক সে নিজেই হবে। এক্ষেত্রে ছেলে পিতার সংসারে একত্রে থাকার কারণে পিতা ছেলের উপার্জনের মালিক হয়ে যাবে না।
অবশ্য এ অবস্থায় ছেলে সংসার খরচের জন্য বা এমনিতেই যে পরিমাণ অর্থ পিতাকে দিয়ে দিবে পিতা তার মালিক হবে।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৩৯৮; ফাতাওয়া খায়রিয়া ২/৯২; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩২০Sharable Link
একটি ব্যবসার ১ম ব্যক্তি মূলধন বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবেন। দুজনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসার মালিকানা, লাভ-লোকসান বণ্টন ৫৫% (২য় ব্যক্তি) ও ৪৫% (১ম ব্যক্তি) নির্ধারিত হয়। এই ব্যবসা থেকে ২য় ব্যক্তি কোনো বেতন অথবা অন্য কোনো বাড়তি সুবিধা (যেমন, যাতায়াত খরচ ইত্যাদি) নিতে পারবেন কি না? যথাযথ দলিলপ্রমাণসহ জানালে বিশেষ উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ব্যবসায়িক চুক্তিটিকে ফিকহে ইসলামীর পরিভাষায় ‘মুদারাবা’ চুক্তি বলে। এতে মূলধন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসা পরিচালনাকারীর জন্য শতকরা হারে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি করতে হয়। কারো জন্য নির্দিষ্ট বেতনভাতা বা নির্দিষ্ট কোনো কিছুর চুক্তি করা জায়েয নেই। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনাকারী কেবল নির্ধারিত পরিমাণ লভ্যাংশই গ্রহণ করতে পারবে। তার জন্য ভিন্নভাবে কোনো বেতনভাতার চুক্তি করা যাবে না। অবশ্য ব্যবসার স্বার্থে যে খরচ হবে যেমন, পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যাতায়াত ভাড়া, থাকা-খাওয়ার বাস্তব খরচাদি গ্রহণ করতে পারবে এবং এ ধরনের খরচ পরিশোধের পরই ব্যবসার লাভ-লোকসানের হিসাব হবে। উলেস্নখ্য যে, ব্যবসা পরিচালনাকারীর নিকট পূর্ব নির্ধারিত লভ্যাংশ যদি কম মনে হয় তাহলে উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে ভবিষ্যতের জন্য লভ্যাংশের হার পরিবর্তন করা যাবে।-
কিতাবুল আছল ৪/২৯১; মাজাল্লা মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী ১৩/৩/২৯৪; আলমাআইরুশ শরইয়াহ ২৪০, ২৪২, ২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯Sharable Link
গত ছয় মাস আগে আমি এক ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য দুই লক্ষ টাকা ঋণ দেই। তিন মাস পর টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সে এখন টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পর সে আমাকে বলে, ভাইজান! আমার তো চাকরি শেষ, তাই একটা ব্যবসা করার ইচ্ছা করছি। আপনার টাকাটা আমাকে মূলধন হিসাবে দেন, অর্ধেক লাভ আপনাকে দিব।
আমি জানতে চাচ্ছি যে, তার প্রস্তাবমত ব্যবসা করা জায়েয হবে কি?
ঋণ উসূল না করে ঐ টাকা দ্বারা তার সাথে ব্যবসা করা জায়েয হবে না। তার সাথে ঐ টাকা দ্বারা ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে তা উসূল করতে হবে এরপর তা ব্যবসার জন্য দেওয়া যাবে।
-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩৩০; আলমাআঈরুশ শরইয়্যাহ ২৪০, ২৪৯Sharable Link
আমাদের গ্রামে লোকেরা সাধারণত গাছ থেকে সুপারি পাড়ায় এ শর্তে যে, এক গাছ সুপারি পেড়ে দিলে দু গণ্ডা সুপারি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী?
প্রশ্নোক্ত শর্তে সুপারি পাড়ানো জায়েয। তবে এক্ষেত্রে তার পাড়া সুপারি থেকেই বিনিময় দেওয়া হবে এমন শর্ত করা যাবে না এবং বিনিময় হিসেবে কোন মানের সুপারি দেওয়া হবে তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে।
অবশ্য পাড়া সুপারি থেকে দেওয়ার শর্ত না করা হলে পরবর্তীতে ঐ সুপারি থেকেও পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৫৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৯-৩৩০Sharable Link
আমাদের এলাকায় একটি লন্ড্রি দোকান আছে। সেখানে খুব ভিড় হয়। কেউ কেউ দোকানের শোকেস থেকে ইস্ত্রিকৃত জামা নিজ হাতে বের করে নিয়ে আসে। দোকানদার খেয়াল করে না, কে সে কার জামা নিচ্ছে। কেউ চাইলে অন্যের জামা নিয়ে নিতে পারবে। এই রমযানের পরে আমার দুই সেট জামা সেখান থেকে চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি সেট একদমই নতুন ছিল। দুই সপ্তাহ পর পুরাতন সেটটা পাওয়া গেছে। কিন্তু নতুন সেটটি আর পাওয়া যায়নি। এখন প্রশ্ন হল, আমি কি দোকানদার থেকে এর জরিমানা নিতে পারব?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দোকানদার থেকে হারানো জামার জরিমানা নেওয়া জায়েয। কেননা তার অবহেলার কারণেই তা হারিয়েছে। যে কাউকে দোকানের ভিতর ঢুকে জামা বের করতে দেওয়াটাই এক প্রকার অসতর্কতা। আর অসতর্কতাবশত দোকানদার থেকে কিছু হারিয়ে গেলে তার জরিমানা নেওয়া বৈধ।
-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া ১১৪, মাদ্দাহ : ৬১১; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৭২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৮২, ২৮৩; আদ্দররুল মুখতার ৬/৬৬, ৬৭Sharable Link
আমি কুমিল্লায় থাকি। গত বছর কুরবানীর জন্য একটি খাসী ক্রয় করি। ঈদের দিন বাড়িতে যাওয়ার প্রোগ্রাম থাকায় ফজরের পরপরই তা যবাই করে ফেলি তখনো কোথাও ঈদের নামায হয়নি। সপ্তাহখানেক পর জনৈক ব্যক্তি আমাকে বললেন আমার কুরবানী সহীহ হয়নি। প্রশ্ন হল, আমার উক্ত কুরবানী সহীহ হয়েছে কি না? যদি না হয় তাহলে এখন আমার করণীয় কী? দয়া করে বিস্তারিত দলিলপ্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। আপনার উক্ত কুরবানী আদায় হয়নি। কেননা এলাকার কোথাও ঈদের নামায হওয়ার আগে কুরবানী করলে তা আদায় হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের আগে কুরবানীর পশু যবাই করবে সেটা তার নিজের জন্য হবে (কুরবানী হবে না।) আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পর কুরবানী করবে তার কুরবানী আদায় হবে এবং সে মুসলমানদের পথ অনুসরণ করেছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫০৩১
হযরত বারা’ রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈদের দিন আমরা প্রথমে ঈদের নামায আদায় করি তারপর এসে কুরবানী করি। যে ব্যক্তি এভাবে আদায় করবে সে আমাদের তরীকা মোতাবেক করল। আর যে নামাযের আগেই পশু যবাই করল সেটা তার পরিবারের গোশতের প্রয়োজন পূরণ করবে। এটা নুসুক (কুরবানী) হবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫০৩৫
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কুরবানী যেহেতু আদায় হয়নি তাই এখন করণীয় হল, কুরবানীর যোগ্য একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দেওয়া। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে নামাযের আগে পশু যবাই করেছে সে যেন (নামাযের পর) অন্য আরেকটি পশু যবাই করে।
-সহীহ বুখারী ২/৮৩৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৪Sharable Link
আমার এক ভাই কুরবানীর ঈদের পরপরই ওলিমার তারিখ নির্ধারণ করে। এরপর কুরবানীর গোশত দিয়ে ওলিমার দাওয়াতে খানা খাওয়ায়। জানতে চাই, এভাবে কুরবানীর গোশত দিয়ে ওলিমার দাওয়াত খাওয়ালে কুরবানী আদায় হবে কি?
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানী করার পর তা নিজে খাওয়া বা অন্যকে খাওয়ানো উভয়টিই জায়েয। তাই খালেস নিয়তে কুরবানী করার পর সে গোশত দ্বারা ওলিমার মেহমানদারি করলেও কুরবানীর কোনো সমস্যা হবে না। তবে যদি কুরবানী দ্বারা ওলিমার গোশত লাভ করাই উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী আদায় হবে না।
-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৯; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, ২২৪Sharable Link
হযরত থানভী রাহ.কৃত ‘কামালাতে আশরাফীয়া’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ২৪২) উল্লেখ রয়েছে-
حديث میں آيا ہے كہ اے عائشہ كسی نيك عمل كو حقير نہ سمجهنا ہر نيك عمل میں خاصيت مغفرت كی ہے، اسى طرح ہر گناہ میں خاصيت عذاب كی ہے چاہے چهوٹا ہو چاہے بڑا ہو
এ হাদীসটি কোন কিতাবে আছে? হাদীসের পূর্ণ আরবী পাঠ এবং হাদীসের মান সম্পর্কে পূর্ণ তাহকীক জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত উর্দু ইবারতের মধ্যে
كسی نيك عمل كو حقير نہ سمجهنا
‘কোনো নেক কাজকে নগণ্য মনে করো না।’ এ অংশের সমার্থক হাদীসটি হল, لا تحقرن من المعروف شيئا
পূর্ণ হাদীসটি নিম্নরূপ :
لا تحقرن من المعروف شيئا ولو أن تلقى أخاك بوجه طلق
অর্থ : কোনো পুণ্যকাজকে নগণ্য ভেবো না। যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করার মতো নেক কাজ হোক। কোনো কোনো সূত্রে হাদীসটি আরো দীর্ঘভাবেও এসেছে।
হাদীসটি সহীহ মুসলিম (হাদীস : ২৬২৬), মুসনাদে আহমদ (হাদীস : ২১৫১৯), সুনানে আবু দাউদ (হাদীস : ৪০৮১) ও জামে তিরমিযী (হাদীস : ১৮৩৩)-এ বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন আবু যর রা. ও জাবের ইবনে সুলাইম রা.।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে হাদীসটিকে আমরা আয়েশা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত পাইনি এবং যাদের সূত্রে উপরোক্ত কিতাবসমূহে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে সেগুলোতে আয়েশা রা.-কে সম্বোধন করার কথাও পাওয়া যায়নি।
অবশ্য আয়েশা রা.-কে সম্বোধন করে কাছাকাছি অর্থের যে হাদীসটি পাওয়া যায় তা হল-
يا عائشة إياك ومحقرات الذنوب فإن لها من الله طالبا
অর্থ : হে আয়েশা! ছোট ছোট গুনাহসমূহ থেকে সতর্ক থাকো। কেননা এগুলো সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।
এ বর্ণনাটি সুনানে ইবনে মাজাহ (হাদীস : ৪২৪৩) ও মুসনাদে আহমদ (হাদীস : ২৫১৭৭)-এ রয়েছে। এ হাদীসটির সনদও সহীহ।
আর উর্দু ইবারতের বাকি অংশ-
ہر نيك عمل میں خاصيت مغفرت كی ہے، اسى طرح ہر گناہ میں خاصيت عذاب كی ہے چاہے چهوٹا ہو چاہے بڑا ہو
অর্থ : ‘প্রত্যেক নেক কাজে মাগফিরাতের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনুরূপ প্রত্যেক গুনাহের মধ্যে আযাবের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চাই তা ছোট হোক বা বড়।’ এটি উক্ত হাদীসের অংশ নয়; বরং এটি থানভী রাহ.-এর নিজের বক্তব্য, যা তিনি উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যাস্বরূপ পেশ করেছেন।
Sharable Link
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন তাই আমরাও দাঁড়িয়ে পান করি। এক আলেম হজ্ব করে যমযমের পানি নিয়ে এলে আমরা তা দাঁড়িয়ে পান করলাম। তখন তিনি ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন এবং বলেন, আল্লাহর রাসূল ভীড় থাকার কারণে যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন। তাই ভীড় থাকলে যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয অন্যথায় জায়েয নেই।
জানার বিষয় হল, যমযমের পানি পান করার সুন্নত তরীকা কী? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
যমযম পানি সাধারণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে-বসে দুভাবেই পান করা জায়েয। ভীড় না থাকলে দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয নেই-প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। ভীড় ছাড়াও যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করা যে জায়েয আছে এ সম্পর্কে ফিকহ-ফাতাওয়ার অনেক কিতাবে এবং হাদীসের শরাহগ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে। যেমন আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৪; উমদাতুল কারী ৯/২৭৮; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/১৬৫-১৬৬
উপরন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন-এ হাদীসের ভিত্তিতে বহু ফকীহ ও মুহাদ্দিস যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করাকে উত্তম ও আদব বলেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শামসুল আইম্মা হালওয়ানী রাহ., শাইখুল ইসলাম খাহারযাদা রাহ. (আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৯), ইবরাহীম হালাবী রাহ. (শরহুল মুনইয়াহ ৩৬), মোল্লা আলী কারী রাহ. (শরহুশ শামায়েল ১/২৫০), সহ প্রমুখ ফকীহ ও হাদীসবিশারদ।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত ভীড়ের কারণেই যমযম দাঁড়িয়ে পান করেছেন এটি কোনো সুনিশ্চিত ও চূড়ান্ত কথা নয় এবং তা হাদীস ও আছার দ্বারা প্রমাণিতও নয়; বরং ফিকহ ও হাদীসবিশারদগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁড়িয়ে যমযম পান করার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি ভীড়ের কারণকেও উল্লেখ করেছেন। তারা আরো যে সমস্ত কারণকে উল্লেখ করে থাকেন তা হল,
১. যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করাও যে জায়েয তা বুঝানোর জন্য।
২. বসার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা অর্থাৎ পান করার স্থানটি ভেজা বা স্যঁতস্যঁতে হওয়ার কারণে তিনি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।
সুতরাং এ সব কারণের মধ্যে শুধু একটিকে গ্রহণ করে বাকিগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া আদৌ ঠিক নয়।
Sharable Link
আমি এক মাদরাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষক। এ বিভাগের প্রায় সব ছাত্রই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তারা নিজেদের জন্য বাসা থেকে বিভিন্ন খাবার ও টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। তারা সেই খাবার আমাকে দিতে চায় এবং তাদের টাকা দিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন জিনিস কিনে এনে আমাকে দেয়।
জানার বিষয় হল, আমার জন্য তাদের দেওয়া খাবার ও অন্যান্য জিনিস গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয নেই। তাদের হাদিয়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। অবশ্য নাবালেগের অভিভাবকগণ যদি আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে কোনো কিছু পাঠায় তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/১১০; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৮৭; জামিউ আহকামিস সিগার ১/২১১Sharable Link
স্বর্ণের চামচ ও রূপার গ্লাস ব্যবহার করা কি জায়েয আছে? নারীদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা তো জায়েয। তাহলে তাদের জন্য এগুলোর ব্যবহার কি জায়েয হবে? এছাড়া আজকাল কিছু কিছু গ্লাস এবং প্লেট এমন পাওয়া যায় যেগুলো স্বর্ণের পানি দ্বারা প্রলেপযুক্ত। উপর থেকে দেখতে স্বর্ণের মতোই লাগে, কিন্তু বাস্তবে স্বর্ণ নয়। এগুলো ব্যবহারের হুকুম কী?
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৮৩৭; ইলাউস সুনান ১৭/২৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬
মহিলাদের জন্য স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা জায়েয হলেও স্বর্ণ-রূপার তৈরি চামচ, গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করা পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই নাজায়েয।
আর স্বর্ণ-চাঁদির পানি দ্বারা প্রলেপযুক্ত আসবাবপত্র ব্যবহার করা জায়েয আছে। এগুলো হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে এগুলোও ব্যবহার না করা উত্তম। কেননা এতে বিজাতিদের সাথে কিছুটা হলেও সাদৃশ্য হয়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৮৩৭; ইলাউস সুনান ১৭/২৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬Sharable Link