মুহাম্মাদ আদনান - মুসলিম বাজার, ঢাকা

২৭০৪. Question

 

মহিলাগণ ঋতুস্রাব অবস্থায় হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন প্রকারের দোয়া, যিকির-আযকার এবং তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি পড়তে পারবে কি?


 

Answer

হ্যাঁ, ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাগণ হাদীসে বর্ণিত দোয়া, যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি পড়তে পারবে। কিন্তু কুরআন মজীদের তিলাওয়াত করতে পারবে না।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আননাহরুল ফায়েক ১/১৩৩; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৯

Sharable Link

জহিরুল ইসলাম - কালিয়াকৈর, গাজিপুর

২৭০৫. Question

আমার পিতা অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে দীর্ঘ সময় নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তাই রমযানে ইশা ও তারাবীহ আদায় করার সময় মাঝেমধ্যে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে নামায পড়েছেন। এতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?


Answer

আপনার পিতার ঐ নামাযগুলো সহীহ হয়েছে। অসুস্থতা বা বার্ধক্যের কারণে স্বাভাবিকভাবে নামাযে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হলে দেয়ালে হেলান দিয়ে কিংবা লাঠি বা অন্য কিছুর উপর ভর করে দাঁড়ানো জায়েয আছে।

উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ বয়সে যখন তাঁর শরীর মুবারক ভারী হয়ে যায় তখন তিনি নামাযের স্থানে একটি লাঠি রাখতেন যার উপর ভর দিয়ে তিনি নামায আদায় করতেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৯৪৫

বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, কোন ব্যক্তির জন্য দেয়ালে হেলান দিয়ে নামায পড়া মাকরূহ; তবে ওজর হলে পারবে।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৭৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৪২৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০

Sharable Link

মুহাম্মাদ নাজমুল হাসান্ - তাহেরপুর, সুনামগঞ্জ

২৭০৬. Question

অনেক সময় যোহরের নামাযের আগে সময় না থাকায় সুন্নত পড়তে পারি না এবং সুন্নত পড়া ছাড়াই জামাতে শরিক হই। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় ঐ ছুটে যাওয়া সুন্নত কোন সময় আদায় করব? পরবর্তী দু রাকাতের আগে না পরে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে যোহরের পরে দু’ রাকাত সুন্নত আদায়ের পর তা পড়বে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যোহরের পূর্বের চার রাকাত কখনো ছুটে গেলে তিনি তা যোহরের পরে দু’ রাকাত সুন্নতের পর আদায় করতেন।

-সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৪৩৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; আলবহারুর রায়েক ২/৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৮

Sharable Link

ইবনে আবদুল মুমিন - শান্তিবাগ, ঢাকা

২৭০৭. Question

অনেক সময় আমরা আমাদের আশেপাশের একাধিক মসজিদের আযান শুনে থাকি। এক্ষেত্রে কি আমাদের সবগুলো আযানের উত্তর দিতে হবে? না শুধু আমাদের মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দিলেই চলবে? বিষয়টির সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

পর্যায়ক্রমে একাধিক আযান শুরু হলে প্রথমটির উত্তর দিবে। অবশ্য কেউ চাইলে প্রত্যেকটির উত্তরও দিতে পারে। আর যদি সবগুলো আযান প্রায় একই সাথে শুরু হয় তাহলে নিজ মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দিবে।

-শরহুল মুনইয়া ৩৭৯; ফাতহুল কাদীর ১/২১৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১১০; আসসিআয়াহ ২/৫৩

Sharable Link

শেখ জিয়াদ হোসেন - ১০১ বি.কে মেইন রোড, খুলনা

২৭০৮. Question

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায ঘরে পড়া সুন্নত, না মসজিদে পড়া সুন্নত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করতেন? মসজিদে পড়ার কোনো প্রমাণ আছে কি? অনুগ্রহপূর্বক উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

ফজরের সুন্নতসহ সকল সুন্নত ও নফল নামায ঘরে আদায় করা উত্তম। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ... তোমরা ঘরে নামায আদায় কর। কেননা ফরয নামায ছাড়া অন্যান্য নামায ঘরে আদায় করাই উত্তম।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৭৮১

আর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত সাধারণত ঘরেই আদায় করতেন।

আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত আদায় করে প্রয়োজন হলে আমার সাথে কথা বলতেন। অন্যথায় ফরয আদায় করার জন্য মসজিদে চলে যেতেন।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪১৮

অবশ্য সাহাবা ও তাবেঈন থেকে ফজরের সুন্নত মসজিদে আদায় করাও প্রমাণিত আছে। তাই মসজিদেও সুন্নত আদায় করা যাবে।

এক বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলেন যখন ইমাম নামায পড়াচ্ছিলেন। তিনি (প্রথমে) ফজরের দু’ রাকাত

সুন্নত আদায় করলেন।-শরহু মাআনিল আছার ১/২৫৫

আবু উসমান আনসারী রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. মসজিদে এমন সময় এলেন যখন ইমাম ফজরের নামায পড়াচ্ছেন। আর তিনি তখনো ফজরের সুন্নত পড়েননি। তিনি প্রথমে পেছনে ফজরের সুন্নত আদায় করলেন। অতপর জামাতে শরিক হলেন।-শরহু মাআনিল আছার ১/২৫৬

অন্য বর্ণনায় আছে, বিশিষ্ট তাবেয়ী সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহ. মসজিদে এমন সময় এলেন যখন ইমাম ফজর নামায পড়াচ্ছেন। তিনি মসজিদের দরজার সামনে সুন্নত পড়লেন অতপর জামাতে শরিক হলেন।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৬৪৭৪; বাযলুল মাজহূদ ৬/৩৭২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবু তাসনীম আললাবীব - মালিবাগ, ঢাকা

২৭০৯. Question

 

আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর পূর্বে আমাদের গ্রামে মৃতদের দাফনের জন্য ২০ শতাংশ পরিমাণ একটি জমি ওয়াকফ করে কবরস্থান বানানো হয়। এ পর্যন্ত কিছু অংশ বাদে জমিটির বাকি অংশে মৃতদের দাফন করা হয়ে গেছে। হয়তবা এ বছর খালি অংশটুকুও ভরে যাবে।তাই প্রশ্ন হচ্ছে, পুরাতন কবরগুলো খনন করে তাতে নতুন করে দাফন করা দুরস্ত হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

কবরস্থ লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে সে স্থানে নতুন করে অন্য লাশ দাফন করা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

উল্লেখ্য, পুরাতন কবরগুলোতে নতুন লাশ দাফন করার জন্য কবর খননের সময় আগের লাশের হাড় পাওয়া গেলে সেগুলো কবরের এক পাশে পৃথক করে রেখে দিবে কিংবা ভিন্ন স্থানে দাফন করে দিবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৮; ফাতহুল কাদীর ২/১০২

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাফিক হাসান - খিলগাও, ঢাকা

২৭১০. Question

আমাদের এলাকায় প্রচলন রয়েছে যে, কেউ মারা গেলে তার বাড়িতে তিনদিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো যাবে না। এ সময় আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী তার বাড়িতে খাবার পৌঁছিয়ে দেয়। মানুষ এটাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আসলেই কি মৃতের পরিবারের জন্য তিন দিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো নিষেধ? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

আপনাদের এলাকার প্রচলনটি শরীয়তসম্মত নয়। কেউ মারা গেলে সে বাড়িতে তিনদিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো যাবে না-এ ধারণা ভুল। তবে প্রথম দিন মৃতের পরিবারের জন্য অন্যদের কর্তৃক খাবার ব্যবস্থা করার কথা হাদীসে এসেছে।

জাফর রা. শহীদ হওয়ার পর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার প্রস্ত্তত কর। কেননা তারা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে যা তাদেরকে (খাবার প্রস্ত্তত করা থেকে) বিরত রাখবে।

-জামে তিরমিযী ২/৩১২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০

Sharable Link

এম আবু বকর - উত্তরা, ঢাকা

২৭১১. Question

আমার নিকট নগদ বিশ হাজার টাকা আছে। পাশাপাশি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি আছে, যার মূল্য  প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে কি? জানার অপেক্ষায় রইলাম।


Answer

যদি আপনার নিকট প্রশ্নোক্ত টাকা ছাড়া অন্য কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকে তবে আপনার উপর যাকাত ফরয হয়নি। কেননা পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমির মূল্যের উপর যাকাত ফরয নয়। আর নগদ যে বিশ হাজার টাকা আছে তাও বর্তমান বাজারে যাকাতের নেসাব পরিমাণ নয়। তাই সেই টাকারও যাকাত দেওয়া লাগবে না।

-খিযানাতুল ফিকহ ৭২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৪, ২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ জিকরুল হক - গফরগাও, ময়মনসিংহ

২৭১২. Question

গত রমযানে আমি তাবলীগে ছিলাম। একদিন রোযার মাসআলা সংক্রান্ত আলোচনায় বলা হল, রোযার জন্য নিয়ত করা জরুরি। নিয়ত হল এ কথা বলা যে, আজ আমি রোযা রাখছি। তখন আমি বললাম, আমি তো কোনোদিন এভাবে নিয়ত করিনি। তখন একজন বলল, তাহলে আপনার রোযা হয়নি। জানার বিষয় হল, সত্যিই কি আমার রোযাগুলো আদায় হয়নি? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

রোযার জন্য মৌখিক নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং শুধু অন্তরে রোযার সংকল্প করাই যথেষ্ট। এমনকি রোযার জন্য সাহরী খেলেও রোযার নিয়ত হয়ে যায়। তাই আপনি যদি মনে মনে রোযা রাখার ইচ্ছা করে থাকেন, কিংবা সাহরী খেয়ে থাকেন তাতেই আপনার রোযার নিয়ত হয়ে গেছে, এবং আপনার রোযাও সহীহ হয়েছে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - কমলাপুর, ঢাকা

২৭১৩. Question

 

জনৈক মহিলা অন্তঃসত্তা হওয়ার কারণে রোযা রাখতে কষ্ট হয় এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে কি?


 

Answer

রোযা রাখার কারণে যদি মহিলাটি স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা হয় তাহলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে পরবর্তীতে এ রোযাগুলোর কাযা করে নিতে হবে। কাফফারা দেওয়া লাগবে না।

-সূরা বাকারা : ১৮৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯০৪৭; কিতাবুল আছল ২/২৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুর রহমান - কল্যাণপুর, ঢাকা

২৭১৪. Question

এ বছর আমার আববার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। তাই তিনি বিলম্ব না করে এ বছরই হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু পথিমধ্যেই তিনি মারা যান। ফলে তিনি ফরয হজ্ব আদায় করে যেতে পারেননি। জানার বিষয় হল, আমার আববার যিম্মায় ঐ ফরয হজ্ব থেকে গেছে কি না? তার পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব করানো জরুরি কি না?

উল্লেখ্য, মৃত্যুর সময় এ ব্যাপারে তিনি কোনো অসিয়ত করে যাননি।


Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার পিতা যেহেতু হজ্ব আদায়ে বিলম্ব করেননি; বরং হজ্ব ফরয হওয়ার পর সে বছরই হজ্বের সফরে বেরিয়ে গেছেন তাই এই পরিস্থিতিতে তার জন্য বদলি হজ্বের অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি ছিল না। আর তিনি যেহেতু অসিয়ত করে যাননি তাই আপনাদের উপরও তার পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব করানো জরুরি নয়। তবে আপনারা চাইলে তার পক্ষ থেকে নফল হিসেবে হজ্ব করাতে পারবেন।

-ফাতহুল কাদীর ২/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফয়যুল ইসলাম - চিটাগাং রোড, ঢাকা

২৭১৫. Question

এক মহিলাকে তার স্বামী তালাক দেয়। সে সময় তাদের একটি পুত্রসন্তান ছিল। দুই মাস আগে গ্রামের এক লোকের সাথে ঐ মহিলার দ্বিতীয় বিবাহ হয়েছে। ঐ লোকটির সাথে এদের ইতিপূর্বে আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। সন্তানের বর্তমান বয়স তিন বছর। এখন পিতা তার সন্তানকে নেওয়ার জন্য পিড়াপীড়ি করছে। এক্ষেত্রে শরয়ী হুকুম কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্তক্ষেত্রে সন্তানের মা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে তার ঐ সন্তান লালনপালনের অধিকার শেষ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় শিশুর নিম্নোক্ত আত্মীয়গণের কেউ থাকলে ক্রমান্বয়ে তারা ঐ শিশুর লালনপালনের অধিকারী হবে-১. নানী ২. দাদী ৩. বোন ৪. খালা ও ৫. ফুফু।

যদি এদের কেউ না থাকে বা তারা সন্তানের দায়িত্ব নিতে না চায় তবে পিতা শিশুটিকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে মা তাকে আটকে রাখতে পারবে না। উল্লেখ্য যে, সর্বক্ষেত্রে সন্তানের লালন-পালনের খরচাদি পিতাকেই বহন করতে হবে।

-সুনানে আবু দাউদ ৩/১১০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৯১; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৬২

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবীব - চাদপুর

২৭১৬. Question

আমার ফুফাতো বোন এক বছর বয়সে একদিন আমার মায়ের দুধ পান করে। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার স্বামী আমার আম্মার সাথে সাক্ষাত করতে আসে। কিন্তু আম্মা তার সাথে দেখা দেননি। প্রশ্ন হল, তার সাথে আমার আম্মার পর্দা করা জরুরি কি না?


Answer

দুধ মেয়ের স্বামীর সাথে দেখা দেয়া জায়েয। তাই আপনার আম্মা আপনার ঐ ফুফাতো বোনের স্বামীর সাথে দেখা দিতে পারবেন।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৯; আলমুফাসসাল ৬/২৪২

Sharable Link

এইচ. এম আমিনুল ইসলাম - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

২৭১৭. Question

সাঈদ একটি ইট ভাটার মালিক। আমি তার সাথে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হই যে, আমি এখন তাকে দুই লক্ষ টাকা দিব। তিন মাস পর সে আমাকে ২০ হাজার ইট দিবে। কিন্তু সে নির্ধারিত সময় ১০ হাজার ইট দেয় আর বলে যে, ভাটায় এখন অনেক চাপ তাই অবশিষ্ট ইট দিতে পারব না। আমাকে বলেছে, আরো এক মাস অপেক্ষা করতে অথবা বাকি ১ লক্ষ টাকা ফেরত নিতে। আমারও টাকা প্রয়োজন। জানতে চাই, এখন কি আমি ঐ টাকা ফেরত নিতে পারব?


Answer

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অবশিষ্ট দশ হাজার ইট না নিয়ে আপনার দেওয়া ১ লক্ষ টাকা ফেরত নিতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি নেওয়া জায়েয হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাছুম - মানিকগঞ্জ

২৭১৮. Question

আমার চাচার এক লক্ষ টাকার প্রয়োজন হলে সে তার এক বন্ধুকে বললেন, আমার ৫ শতাংশ জমি তোমার কাছে এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করলাম। এক মাস পর তা আমি সাড়ে সাত হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনে নিব। সে এতে রাজি হয়ে এক লক্ষ টাকা দিয়ে দেয়। তবে এখানে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হয়নি। ঐ জমির দখলও বুঝিয়ে দেয়নি; বরং তা চাচার কাছেই আছে। তিনিই তা ভোগ করছেন। আর বাস্তবে ঐ জমির মূল্য এক লক্ষ টাকা নয়; বরং নিম্নে দশ লক্ষ টাকা। এ অবস্থায় তাদের এ বেচাকেনা কি বৈধ হয়েছে?


Answer

প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি নাজায়েয ও সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ এক্ষেত্রে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কথা বলা হলেও বাস্তবে উভয় পক্ষের কারো জমি কেনা-বেচা উদ্দেশ্য নয়; বরং এখানে ঋণ দেওয়া নেওয়া করে মেয়াদান্তে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণই মূল উদ্দেশ্য। এ কারণেই এ ক্ষেত্রে জমির বাস্তব দাম নির্ধারণ করা হয়নি এবং জমির রেজিস্ট্রি ও দখল দেওয়া হয়নি।

-আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ (বাবুল) - যশোর

২৭১৯. Question

আমি ঢাকা থেকে যশোর যাওয়ার জন্য ৫,০০০/- টাকায় একটি মাইক্রো বাস ভাড়া করি। তা ফরিদপুর গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়, যা মেরামত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। ড্রাইভার আমাকে ঢাকা-যশোরগামী একটি বাসে তুলে দেয়। ঐ বাসের ভাড়া আমি দিয়েছি। কিন্তু মাইক্রোবাসের ভাড়া নিতে চাইলেও আমি দেইনি। এখন জানতে চাই, মাইক্রোর ভাড়া না দেওয়া কি ঠিক হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মাইক্রোবাসে করে যেহেতু আপনি ফরিদপুর পর্যন্ত গেছেন তাই আপনার জন্য ঐ পর্যন্তের ভাড়া আদায় করা জরুরি। তা না দেওয়া অন্যায় হয়েছে। মাইক্রোর ড্রাইভারের ঐ টাকা আপনার নিকট পাওনা রয়েছে।

-আলজামিউস সগীর ৪৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৮৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল হান্নান - দিনাজপুর

২৭২০. Question

 

 আমাদের অনেকগুলো হাঁস আছে। গত বর্ষায় অন্যের একটি হাঁস আমাদের হাঁসের সাথে চলে আসে। অনেক খোঁজার পরও হাঁসটির মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখন ঐ হাঁসটি ডিম দিচ্ছে। প্রশ্ন হল, ঐ হাঁস ও ডিমের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী?


 

Answer

বাস্তবেই যদি হাঁসটির মালিক পাওয়া না যায় তাহলে ঐ হাঁস ও ডিমগুলো কোনো গরীবকে সদকা করে দিতে হবে। আর যদি আপনারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিজেরাও তা ভোগ করতে পারবেন। তবে উভয় অবস্থাতেই পরবর্তীতে যদি মালিকের সন্ধান পাওয়া যায় এবং সে সদকার বিষয়টি মেনে না নেয়; বরং হাঁস ও ডিম দাবি করে তাহলে তাকে এগুলোর মূল্য দিয়ে দিতে হবে।

-আসসুনানুল কুবরা ৬/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮০

Sharable Link

ইবরাহীম খলিল - রূপগঞ্জ

২৭২১. Question

আমাদের অঞ্চলে ইট ভাটাগুলোতে একটি পদ্ধতি চালু আছে যে, ভাটার মালিকগণ সিজনের শুরুতে বিভিন্ন জন থেকে টাকা নিয়ে সিজন শেষে অর্থাৎ ৩/৪ মাস পর ইট দেয়। অনেকেই এই কারবারে জড়িত হচ্ছে। বিশেষভাবে যারা নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণের ইচ্ছা করেছে। এ কারবারের একটি লাভজনক দিক এই যে, ইট প্রতি ৫ টাকা হলে ৫০,০০০ টাকায় ১০,০০০ ইট কেনা যাবে। কিন্তু উক্ত পদ্ধতিতে দেড় হাজার বা ততোধিক ইট বেশি পাওয়া যায়। আমি একটি বিল্ডিং তৈরি করব। এখন এই পদ্ধতিতে ইট ক্রয় করা কি বৈধ হবে, না এটা সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত হবে? দয়া করে জানাবেন।


Answer

কিছু শর্ত সাপেক্ষে ঐভাবে অগ্রিম ইট ক্রয় করা জায়েয আছে। শর্তগুলো হল, ১. ইটের পূর্ণ মূল্য চুক্তির সময়ই পরিশোধ করে দেওয়া।

২. ইটের ধরণ ও গুণগত মান নির্ধারণ করা (যেমন, এক নাম্বার ইট)। ৩. ইটের পরিমাণ নির্ধারণ করা। ৪. ইট প্রদানের তারিখ ও তা হস্তান্তরের স্থান নির্ধারণ করা। ৫. বিক্রেতার নিকট পুনরায় ঐ ইট বিক্রি না করা।

উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে অগ্রিম ইট ক্রয় করলে যদি নগদ লেনদেনের চেয়ে  কিছু কম মূল্যে পাওয়া যায় তাতে অসুবিধা নেই। তবে এ ধরনের লেনদেনে মেয়াদান্তে ইটই গ্রহণ করতে হবে। ইট না নিয়ে এর মূল্য নেওয়া যাবে না।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২২৪০; হেদায়া ৩/৯৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২০৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাসিবুল ইসলাম - মেহেরপুর

২৭২২.. Question

আমি একজনকে দশ লক্ষ টাকা ঋণ দিই। সে আমার কাছে একটি আম বাগান বন্ধক রেখেছে। বাগানে যে ফল হয় তা সে নিয়ে যায়। আমের সিজনে সে আমাকে দুইটি গাছের আম খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আমার জন্য উক্ত গাছ দুইটির আম খাওয়া জায়েয হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাগানের মালিক অনুমতি দিলেও আপনার জন্য ঐ গাছগুলোর ফল গ্রহণ করা বৈধ হবে না। কারণ ঋণদাতার জন্য বন্ধকী বস্ত্ত থেকে উপকৃত হওয়া সুদ। ফাযালা বিন উবাইদ রা. বলেন, যে ঋণ লাভ টেনে আনে তা সুদ।

-আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৫/৩৫০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১০৭৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২

Sharable Link

মুহাম্মাদ জাকারিয়া - রংপুর

২৭২৩. Question

আমার মা শেষ বয়সে আমার বাসাতেই থাকতেন। আমিই তার দেখাশোনা করতাম। তিনি অনেক দিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর এক মাস পূর্বে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন এবং নানা রোগে আক্রান্ত হন। ফলে তার বিবেক ঠিকমতো কাজ করত না। অতপর মা সে রোগেই মারা যান। তখন আমিই তার সেবা-শুশ্রূষা করি। অন্যান্য ভাইয়েরা শুধু মাঝেমধ্যে আসতেন। মা এতে আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তার পাঁচ ভরি স্বর্ণ আমাকে দিয়ে দেন। ভাইয়েরা বলছেন যে, আমি মাকে ফুসলিয়ে স্বর্ণ নিয়েছি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্বর্ণ নেওয়া আমার জন্য জায়েয কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

আপনার মায়ের অন্যান্য ওয়ারিসগণ দিতে সম্মত না হলে ঐ স্বর্ণগুলো নেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না। কেননা মৃত্যু শয্যায় কোনো ওয়ারিসকে কোনো কিছু হেবা (দান) করলে সে হেবা গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই ঐ স্বর্ণগুলোও ওয়ারিসদের মাঝে প্রত্যেকের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৬০; রদ্দুল মুহতার ৫/৬১০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪০১

Sharable Link

মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম - পুরানা থানা, কিশোরগঞ্জ

২৭২৪. Question

আমি মানত করেছিলাম, যদি আমি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাই তাহলে কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদে দু রাকাত নামায পড়ব। আল্লাহর রহমতে ঐ নাম্বারই পেয়েছি। এবং পরবর্তীতে আমি দু রাকাত নামায পাগলা মসজিদে না পড়ে শহীদী মসজিদে পড়ে নিয়েছি। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার মানত কি আদায় হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে কি পুনরায় আদায় করতে হবে?


Answer

শহিদী মসজিদে দু রাকাত নামায পড়ার দ্বারা আপনার মানতটি আদায় হয়ে গেছে। কারণ কোনো নির্দিষ্ট মসজিদে নামায পড়ার মানত করলে সে মসজিদে পড়া জরুরি হয়ে যায় না। অন্য মসজিদে কিংবা অন্য কোথাও পড়ে নিলেও তা আদায় হয়ে যায়। তাই নির্দিষ্ট মসজিদে গিয়ে পুনরায় তা আদায় করতে হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - রানাভোলা, টঙ্গী

২৭২৫. Question

আমাদের মসজিদের উত্তরপার্শ্বে মসজিদের জমিতে বেশ কয়েকটি পেয়ারা গাছ আছে। তাতে প্রচুর পেয়ারা ধরে। অনেক সময় দেখা যায় কিছু মুসল্লি পেয়ারা ছিড়ে খেয়ে ফেলে। কেউ কেউ সাথে করে নিয়ে যায়। আমার জানার বিষয় হল, এভাবে মসজিদের গাছের ফল খাওয়া কি বৈধ?


Answer

মসজিদের ঐ গাছগুলোর ফল মুসল্লি বা অন্য কারো জন্য বিনামূল্যে খাওয়া জায়েয হবে না। মসজিদ কর্তৃপক্ষ ফলগুলো বিক্রি করে তার মূল্য মসজিদের কাজে ব্যয় করবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ মাসুম - দক্ষিণ গোড়ান

২৭২৬. Question

আমাদের পরিবারে আম্মু এবং আমরা তিন ভাই আছি। পিতার মৃত্যুর পর সম্পদ বণ্টন করা হয়নি। ছোট ভাইদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের সকল আয়-ব্যয় অভিন্ন। এমন অবস্থায় আমাদের সকলের পক্ষ থেকে কি একটি ছাগল কুরবানী যথেষ্ট হবে নাকি প্রত্যেকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব?


Answer

একটি ছাগল দ্বারা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা যায়। একাধিক ব্যক্তি বা পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানী দিলে তা যথেষ্ট হবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যৌথ সম্পত্তি যদি এ পরিমাণ হয় যে, বণ্টন করলে প্রত্যেক সদস্য প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায় তাহলে প্রত্যেকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।

অবশ্য আপনাদের কেউ নেসাব থেকে কম সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। তদ্রূপ কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব নয়।

-মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৭৬৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৪২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৫

Sharable Link

আবু নোমান - শর্শদি মাদরাসা, ফেনী

২৭২৭. Question

আমরা জানি, খানা খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত এবং হাদীস শরীফে বিসমিল্লাহ পড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহি ওয়া আলাবারাকাতিল্লাহ এই ইবারতে কোনো দুআ হাদীস শরীফে কিংবা সাহাবা-তাবেয়ীনের আছারে বর্ণিত আছে কি না?


Answer

খানা খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ পড়ার কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসে এসেছে-‘তোমরা বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ বলে খাবার গ্রহণ কর।’ (মুসতাদরাকে হাকেম ৫/১৪৬, হাকেম ও হাফেয যাহাবী রাহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)

আর ‘আলা’ শব্দটি যুক্ত করে ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলাবারাকাতিল্লাহ’ এভাবে দুআটি উল্লেখ করেছেন ইবনুল জাযারী রাহ. তার আলহিসনুল হাসীন গ্রন্থে (পৃ. ২৫৫)। তিনি উদ্ধৃতি দিয়েছেন আলমুসতাদরাক-এর। কিন্তু আমাদের কাছে আলমুসতাদরাক-এর যে সংস্করণটি রয়েছে তাতে ‘আলা’ শব্দটি নেই। বরং শুধু বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ রয়েছে।

অবশ্য কেউ যদি আলা শব্দটি যুক্ত করে বিসমিল্লাহি ওয়া আলাবারাকাতিল্লাহ পড়ে তাহলে সমস্যা নেই। কেননা এতে অর্থগত কোনো পরিবর্তন হয় না এবং ভাষার দিক থেকে আলা এর ব্যবহারকে ভুলও বলা যায় না।

এক্ষেত্রে অর্থ হয়, আল্লাহর নামে ও তাঁর বরকতের উপর ভরসা করে খানা শুরু করছি।

Sharable Link

মাওলানা ইলিয়াস - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

২৭২৮. Question

আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআন মজীদে বলেছেন-

واعبد ربك حتى يأتيك اليقين.

উক্ত আয়াতে ‘আলইয়াকীন’ শব্দের অর্থ কী? কেউ কেউ এই শব্দের অর্থ মারেফত দ্বারা করে তদানুযায়ী আয়াতের ব্যাখ্যা করে থাকে। তাই হযরত মুফতী সাহেবের নিকট নিবেদন যে, নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে আয়াতের অর্থসহ সঠিক ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

আয়াতের অর্থ : আপনি মৃত্যু আসা পর্যন্ত আপনার প্রতিপালকের ইবাদত করুন।-সূরা হিজর : ৯৯

আয়াতের ‘আলইয়াকীন’ বলে মৃত্যুকেই বোঝানো হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কিত কিছু দলিল পেশ করা হল :

واعبد ربك حتى يأتيك اليقين.

আয়াতের ‘আলইয়াকীন’ শব্দের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসিরীন আবদুললাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আয়াতে ইয়াকীন শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মৃত্যু। মৃত্যুকে ইয়াকীন শব্দ দ্বারা নামকরণের কারণ হল, মৃত্যু একটি সুনিশ্চিত বিষয়।-তাফসীরে কবীর ১৯/২২১

ইমাম বুখারী রাহ. প্রশ্নোক্ত আয়াতের ইয়াকীন শব্দের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট সাহাবী সালেম ইবনে আবদুল্লাহ রাহ.-এর কথা র্বণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আয়াতে ইয়াকীন শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃত্যু।-সহীহ বুখারী ২/৬৮৩

হযরত মুজাহিদ রাহ. হযরত কাতাদাহ রাহ. ও হযরত হাসান রাহ. প্রমুখ বিশিষ্ট তাবেয়ীগণ বলেছেন, আয়াতে ইয়াকীন শব্দটি মৃত্যুর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।-দেখুন তাফসীরে তবারী ৭/৫৫৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৮৬৮; তাফসীরে কুরতুবী ১০/৪২-৪৩

আল্লামা ইবনে কাছীর রাহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাসীরে (২/৮৬৮) বলেছেন, বাতিলপন্থীদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা ইয়াকীন শব্দ দ্বারা মারেফত উদ্দেশ্য নিয়েছেন। সুতরাং যখন কেউ মারেফত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তার থেকে শরীয়তের বিধি-বিধান রহিত হয়ে যাবে।

(তিনি বলেন) এ ধরনের মতবাদ হল কুফরী, ভ্রষ্টতা ও মূর্খতা। কেননা সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম ও তাদের অনুসারীগণ সকল মানুষ অপেক্ষা আল্লাহকে অধিক ভালোভাবে জানতেন এবং আল্লাহর গুণাবলি ও সর্ববিষয়ে সবচেয়ে বেশি জানতেন। তথাপি তারাই ছিলেন সর্বাধিক ইবাদতকারী ও মৃত্যু পর্যন্ত সকল নেক কাজের প্রতি অগ্রগামী ও অটল-অবিচল। সুতরাং ইয়াকীন শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃত্যু।

এমনিভাবে আল্লামা মাহমুদ আলুসী রাহ., আল্লামা কুরতুবী রাহ., ইমাম তবারী রাহ., ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রাহ., মুফতী শফী রাহ. ও আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী রাহ. প্রমুখ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ব্যাখ্যাকার উক্ত ব্যাখ্যাটিই গ্রহণ করেছেন।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আয়াতের প্রকৃত অর্থ হল, আপনি মৃত্যু পর্যন্ত আপনার প্রতিপালকের ইবাদত করুন।

সুতরাং যারা ‘আলইয়াকীন’ শব্দের অর্থ মারেফত বলে এবং তাদের তথাকথিত মারেফত হাসিল হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করতে হয় এরপর আর প্রয়োজন নেই-এমন দাবি করে তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ বাতিল ও ভ্রান্ত এবং এটি নিতান্তই একটি কুফরী মতবাদ।

এ বিষয়ে আরো জানতে দেখুন : তাফসীরে তবারী ৭/৫৫৪; তাফসীরে কুরতুবী ১০/৪২-৪৩; তাফসীরে ফখরে রাযী ১৯/২২১; তাফসীরে রূহুল মাআনী ১৪/৮৭; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৫/৩১৩ 

Sharable Link