মুহাম্মাদ আরমান - নোয়াখালী

২০৬৩. Question

আমাদের এলাকায় এক রমযানে ইতিকাফের জন্য কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে মহল্লাবাসী মিলে একজন দিনমজুরকে ঠিক করল যে, সে মসজিদে ইতিকাফ করবে। বিনিময়ে তাকে ঐ দিনগুলোতে কাজ করলে যে পরিমাণ মজুরি সে পেত তাকে তা দেওয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে টাকা দিয়ে ইতিকাফে বসানোর দ্বারা ইতিকাফের দায়িত্ব আদায় হবে কি না?

Answer

বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ ইতিকাফ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। ঐ লোকের ইতিকাফ দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) এর দায়িত্ব আদায় হবে না।

জামে তিরমিযী ১/৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪; মাবসূত,সারাখসী ১৬/৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুশাররফ হুসাইন - মানিকগঞ্জ

২০৫৯. Question

এক চাচাত ভাইয়ের ছেলের ছেলে অপর চাচাত ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছে। কুরআন, হাদীস ও ফিকহে ইসলামীর আলোকে এ বিয়ে কি শুদ্ধ হয়েছে?


Answer

হ্যাঁতাদের বিবাহ সহীহ হয়েছে। কারণ তারা পরস্পর মাহরাম নয়।

সূরা নিসা : ২৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৭১৫; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৩৯; তাফসীরে রুহুল মাআনী ৫/৪; সূরাতুল আহযাব : ৫০;সুনানে নাসাঈ ২/৫৮; বাদায়েউ স সানায়ে ২/৫৩১; ফাতহুল কাদীর ৩/১১৭; তাফসীরে মাযহারী ২/৫৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলমগীর - গাজীপুর

২০৬০. Question

এক ব্যক্তির একটি গরু আছে। সে মান্নত করেছে যে, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে এ বছর গরুটি কুরবানী করব। লোকটি গরীব। বর্তমানে সে চাচ্ছে উক্ত গরুর পরিবর্তে আরেকটি গরু কিনে কুরবানী করবে। তার জন্য কি ওই গরুটির পরিবর্তে অন্য গরু কুরবানী করা জায়েয হবে?

Answer

তাকে ওই গরুটিই কুরবানী করতে হবে। এটা রেখে অন্য গরু কুরবানী করা জাযেয় হবে না।

বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২; মাজমাউল আনহুর ৪/১৭০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল বারী - কনিয়া, নেত্রকোণা

২০৬১. Question

চার ব্যক্তি সমান হারে অর্থ দিয়ে মাছ শিকার করার জন্য একটি জাল ক্রয় করেছে। তারা এভাবে চুক্তি করেছে যে, এ জাল দিয়ে বিল ও নদী থেকে মাছ শিকার করবে এবং সমানভাবে বণ্টন করে নিবে। তবে মাছ শিকার করার জন্য সকলকে থাকতে হবে না। দুজন মিলে শিকার করলেও চার জন ভাগ করে নিবে। প্রশ্ন হল, মাছ শিকারের উক্ত চুক্তিটি সহীহ কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চারজন একসাথে মাছ শিকার করে সমানভাবে বণ্টন করে নেওয়া জায়েয হবে। কিন্তুমাছ শিকারে কেউ অনুপস্থিত থাকলে সে মাছের ভাগ পাবে না। এক্ষেত্রে অন্যদের মতো মাছের সমান অংশ নেওয়া জায়েয হবে না। হ্যাঁউক্ত জালে তার যে অংশ রয়েছে সেটার ন্যায্য ভাড়া সে পাবে। অথবা ভাড়া হিসেবে ইনসাফ করে মাছও নিতে পারবে।

- হেদায়া ২/৬৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬২৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৭; ফাতহুল কাদীর ৫/৪০৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ সামছুল আলম - টাঙ্গাইল

২০৬২. Question

আমাদের পরিবারের পূর্বপুরুষ (আমার মার ফুফা আমাদের নানা) ৮০ বছর পূর্বে একটি মসজিদের জন্য মৌখিকভাবে জায়গা দান করেন, সে জায়গায় একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়। মসজিদঘরের দক্ষিণ পাশে মসজিদের জায়গার একটি অংশে দাতার মেয়ে, নাতনি ও আমার দাদির কবর হয়। পরবর্তীকালে তার ওয়ারিশ যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন (আমার বাবা) তিনি মসজিদের নামে একটি দলিল করে দেন। এরপর মসজিদ বড় করার প্রয়োজন হলে কবরগুলো ঠিক রেখে দক্ষিণে একতলা বিল্ডিং করা হয় এবং পূর্বের জায়গায় একটি হিফযখানা তৈরি করা হয়। হিফযখানার একটি অংশের নিচে কবরগুলো চলে আসে। স্থানীয় আলেমরা বলেছিলেন, হেফযখানা কবরের উপর হলে কেনো অসুবিধা নেই। বর্তমানে মসজিদকমিটি সেই হিফযখানা উঠিয়ে দিয়ে সেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করছেন। তাদের কাছে মাসআলা হল ২৫ বছরের পুরনো কবরের উপর মসজিদ করা যাবে।

আসলে কুরআন্তহাদীসের আলাকে কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি না এবং সেখানে নামায পড়া ঠিক হবে কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নের  বিবরণ এবং প্রশ্নকারীর মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু ওই ১৫ শতাংশ জায়গার পুরোটাই মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত এবং এতে বিদ্যমান কবরগুলো বেশ পুরনো তাই বর্তমানে ওই জায়গায় মসজিদ সমপ্রসারণ করা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে যদি সেখানে কবরের কোনো চিহ্ন থাকে তাহলে তা সমান করে দিতে হবে। মসজিদের ভিতরে কবরের কোনো চিহ্ন রাখা যাবে না। আর কবরবাসীদের আত্মীয়-স্বজনের কর্তব্য হবে এতে বাধা না দেওয়া।

ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩২; মাজমাউল আনহুর ২/৫৮১;আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৫, ২/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৫০; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫১-৩৫২,২/২৩৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৩৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ নুমান আহমদ - ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

২০৬৪. Question

মহিলারা যদি রমযান মাসে কোনো ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখে তাহলে ওই দিনগুলোতে রোযা রাখতে পারবে কি না এবং এতে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি না?

Answer

রমযান মাসে কোনো মহিলা ওষুধ সেবন করে স্রাব বন্ধ রাখলে তাকে রোযা রাখতে হবে। এ রোযাগুলো ত্রুটিযুক্ত হবে না; বরং পূর্ণ সহীহ বলেই গণ্য হবে। উল্লেখ্য, ঋতুস্রাব মহিলাদের একটি স্বাভাবিক বিষয়। তাই শরীয়ত এ অবস্থায় রোযা না রাখার হুকুম দিয়েছে এবং এর পরিবর্তে অন্য সময় রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং রমযানে স্রাববন্ধকারী ওষুধ ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কারণ এতে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

-জামিউ আহকামিন নিসা ১/১৯৮; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৬/৪০৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - ফেনী

২০৬৫. Question

 

কোনো ব্যক্তি রমযানের দিনে সফর করার ইচ্ছা করেছে। রোযা রাখা কষ্টকর হবে ভেবে এবং সফরকালে রোযা না রাখার সুযোগ আছে বলে সে ঐ দিনের রোযার নিয়ত না করে সকাল বেলা পানাহার করে সফরে বের হয়। এভাবে সফর শুরুর পূর্ব থেকে রোযা না রাখা বৈধ হয়েছে কি না? আর এ অবস্থায় তার নাকি শুধু কাযা করা ওয়াজিব হবে?

 

Answer

এভাবে সফর শুরুর আগে থেকেই রোযা না রাখাটা বৈধ হয়নি। এজন্য তাকে ইস্তিগফার করতে হবে। কেননা সফরের কারণে রোযা না রাখার সুযোগ তখন প্রযোজ্য হবে যখন দিনের শুরু অর্থাৎ সুবহে সাদিকের সময়ই মুসাফির থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে তার উপর কাফফারা আসবে না। ঐ দিনের জন্য শুধু একটি রোযা কাযা করতে হবে।

আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১; আননাহরুল ফায়েক ২/২৭; ফাতহুল কাদীর ২/২৮৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ মামুন - হবিগঞ্জ

২০৬৬. Question

আমাদের এলাকায় মাগরিবের পর থেকে পরদিন সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন বলা ও ব্যাখ্যা দেওয়া কুলক্ষণ বা দোষ মনে করা হয়। শরীয়তের এর কোনো ভিত্তি আছে কি?

Answer

 

নাএসময় স্বপ্ন বলতে এবং এর ব্যাখ্যা করতে শরীয়তের দৃষ্টিতে দোষের কিছু নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর পর সাহাবায়ে কেরাম থেকে স্বপ্ন শুনতেন এবং তার তাবীর বর্ণনা করতেন।

কেউ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বা তাবীর জানতে চাইলে তার জন্য স্বপ্ন বলার উত্তম সময় এটিই। কেননাএতে স্বপ্ন দেখা ও বলার মাঝে সময়ের ব্যবধান কম থাকে। ফলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।


 

উমদাতুল কারী ২৪/১৭১;ইরশাদুস সারী ১৪/৪৯০; ফাতহুল বারী ১২/৪৫৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ শহীদ - বগুড়া

২০৬৭. Question

একবার মুসাফির অবস্থায় আমি আসরের নামায আদায় করছিলাম। নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের পর ভুলবশত দাঁড়িয়ে যাই। তৃতীয় রাকাতে দাঁড়ানো অবস্থায় ভুল বুঝতে পেরেও নামায চার রাকাতই পূর্ণ করি। প্রশ্ন হল, আমার নামায কি  আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু  দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠক করেছেন তাই নামাযটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্রথম দুরাকাত ফরয আর শেষ দুরাকাত নফল হয়েছে। তবে তৃতীয় রাকাতে ভুল বোঝার পরও না বসে চার রাকাত পূর্ণ করা মাকরূহ হয়েছে।

প্রকাশ থাকে যে, মুসাফিরের জন্য চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুরাকাত পড়া জরুরি। দুরাকাত না পড়ে ইচ্ছাকৃত চার রাকাত পূর্ণ করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হয়। তাই মুসাফির দুরাকাত পর ভুলে দাড়িয়ে গেলে স্মরণ হওয়ামাত্র বসে যাবে এবং সাহু সিজদা করে যথানিয়মে নামায শেষ করবে।

আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩০; ফাতহুল কাদীর ২/৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলাউদ্দীন - সোনারগাঁ

২০৬৮. Question

নামাযের মধ্য আমার প্রায়ই হাই আসে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী, জানালে উপকৃত হব।

Answer

হাদীস শরীফে আছে, ‘হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।’ (সহীহ বুখারী ১/৬৪৬) তাই নামাযে হাই আসলে যথাসাধ্য তা দমন করার চেষ্টা করবে। একান্তই দমন করা সম্ভব না হলে হাত বাঁধা অবস্থায় হাই এলে ডান হাতের পিঠ মুখের উপর রাখবে। এছাড়া অন্য অবস্থায় বাম হাত রাখবে।

আলবাহরুর রায়েক ২/২৫;শরহুল মুনইয়া ৩৪৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৮

Sharable Link

সেনপাড়া, মিরপুর - ২০৬৯

২০৬৯ . Question

 

এই কুরবানীর ঈদের নামাযে ইমাম সাহেব রুকুর আগে দাড়িয়ে তিনটি তাকবীর দেন এরপর ভুলে রুকুর তাকবীর না বলে রুকুতে চলে যান। ইমামের মতো মুক্তাদিগণও তিন তাকবীর দাড়িয়ে বলেন। এরপর রুকুতে চলে যান। নামাযের পর মুসল্লীদের মধ্যে হট্টগোল লেগে যায়। এরপর ইমাম সাহেব পুনরায় নামায আদায়ের এলান করেন। মুসল্লীদের একজন দ্বিতীয় জামাতের ইমামতী করেন। আমাদের নামায কি হয়েছে? দ্বিতীয় জামাত করা কি ঠিক হয়েছে? 

 

Answer

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ইমাম সাহেব যেহেতু রুকুতে যাওয়ার আগেই দাড়িয়ে তিন তাকবীর সমাপ্ত করেছেন তাই ঈদের নামযের  অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবীরগুলো আদায় হয়ে গেছে। শুধু রুকুর তাকবীর ছুটেছে। রুকুর তাকবীর বলা সুন্নত। এটা ছুটে গেলে সাহু সিজদাও আসে নানামাযও নষ্ট হয় না। তাই প্রথম জামাতের নামাযই শুদ্ধ হয়েছে। দ্বিতীয় জামাত করা ঠিক হয়নি। এরকম পরিসি'তিতে কোনো বিজ্ঞ আলেম/মুফতী থেকে মাসআলা জেনে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২; শরহুল মুনইয়াহ ১৩, ৩৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৮৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৬, ৪৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫১

Sharable Link

মুহাম্মাদ সুমন - জকিগঞ্জ, সিলেট

২০৭০. Question

যোহরের নামায কোনো কারণবশত একাকী আদায় করছিলাম। দ্বিতীয় রাকাতে ভুলবশত সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলাইনি। তাই তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর অন্য  সূরা পড়ে নিয়েছি। যেহেতু আমি দ্বিতীয় রাকাতের ক্ষতি তৃতীয় রাকাতে পূরণ করে নিয়েছি তাই সিজদায়ে সাহু করিনি। কাজটি কি সঠিক হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতে সূরা না পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। তৃতীয় রাকাতে সূরা পড়ার দ্বারা ঐ ক্ষতি পূর্ণ হয়নি। ক্ষতিপূরণের জন্য সাহু সিজদা জরুরি ছিল। যেহেতু আপনি সাহু সিজদা করেননি তাই ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।

মারাকিল ফালাহ ১৩৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৯

Sharable Link

ফরহাদ হোসেন - উত্তরা

২০৭১. Question

আমাদের এলাকার মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত সাড়ে সাতটায় শুরু হয়েছে। আর মাঠে শুরু হয়েছে আটটায়। যারা ঈদগাহে নামায পড়েছেন তারা প্রায় সকলেই মাঠের জামাত শেষে কুরবানী করেছেন। কিন্তু দু চার জনের কুরবানী এলাকার মসজিদের জামাতের পর তাদের ছেলে ও আত্মীয়দের পরামর্শে মাঠের জামাত শেষ হওয়ার আগেই জবাই করা হয়েছে। এখন অনেকেই বলছে, যেহেতু কুরবানীদাতাদের নামাযের আগে জবাই হয়েছে তাই তাদের কুরবানী আদায় হয়নি। এভাবে কিছু শরীকানা কুরবানী ঈদগাহে নামায আদায়কারী শরীকের নামায শেষ হওয়ার আগেই মসজিদের জামাতের পর জবাই করা হয়েছে।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সকলের কুরবানী সহীহ হয়েছে। কুরবানীদাতা ঈদের নামায না পড়ে থাকলেও এলাকার যেকোনো স্থানে ঈদের জামাত হয়ে গেলেই কুরবানীর পশু জবাই করা যায়। তবে ঈদের নামায পড়েই কুরবানী করা উত্তম।

মাবসূত, সারাখসী ১২/১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১; মাজমাউল আনহুর ৪/১৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৮; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/৩৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন - দাউদকান্দি

২০৭৩. Question

জনৈক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে রমযানের একটি রোযা রাখতে পারেনি। রমযানের পর ঐ রোযাটি কাযা করার জন্য সাহরী খেয়ে রোযার নিয়ত করে। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে কোনো শরয়ী কারণ ছাড়াই রোযাটি ভেঙ্গে ফেলে। জানার বিষয় হল, উক্ত ব্যক্তিকে কি কাফফারা আদায় করতে হবে, না শুধু কাযা করলেই চলবে। কাযা করতে হলে কয়টি রোযা কাযা করতে হবে?

Answer

রোযাটি ভেঙ্গে ফেলার দ্বারা তার উপর কোনো কিছু ওয়াজিব হয়নি। কাফফারাও ওয়াজিব হয়নি। তবে বিনা ওজরে কোনো ইবাদত নষ্ট করা ঠিক নয়। এখন রমযানের ঐ কাযা রোযাটি রাখলেই চলবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৮; মুলতাকাল আবহুর ১/৩৫৪; আননাহরুল ফায়েক ২/২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৫;আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আমীরুল ইসলাম - কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

২০৭৪. Question

কিছুদিন আগে ধানক্ষেতে একটি লাশ পাওয়া যায়। লাশটি এতই নরম ছিল যে, ডলে ডলে গোসল দিতে গেলে চামড়া খসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে লাশকে গোসল দেওয়া কি জরুরি? যদি জরুরি হয় তাহলে কীভাবে গোসল দিবে?

Answer

এ ধরনের নরম লাশকেও গোসল দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে শরীরের উপর শুধু পানি ঢেলে দিবে। ডলে ডলে ধোয়ার প্রয়োজন নেই।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮; মারাকিল ফালাহ ৩১২

Sharable Link

মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান - ঢাকা

২০৭৫. Question

আমার জায়নামাযের উপরের অংশে এক কোণে বাচ্চার পেশাব লেগে প্রায় অর্ধ হাত ছড়িয়ে যায়। নামাযের ওয়াক্ত হলে ওই জায়নামায বিছিয়েই নামায আদায় করি। যেহেতু পেশাব এক কোণে ছিল তাই নামায পড়ার সময় শরীর ও কাপড়ের কোনো অংশ নাপাক স্থানটিতে পড়েনি। জানতে চাই, আমার নামায কি আদায় হয়েছে?


Answer

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী নামাযের হালতে শরীরের কোনো অংশ যেহেতু নাপাক জায়গায় লাগেনি তাই নামায সহীহ হয়ে গেছে। অবশ্য এ ধরনের আংশিক নাপাক জায়নামাযেও নামায পড়া ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা পবিত্রতিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪১৮;শরহুল মুনইয়াহ ২০০; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৩

Sharable Link

সোহেল - লালমনিরহাট

২০৭৬. Question

আমাদের গ্রামে কুরবানীর গরুতে সাত ভাগের এক ভাগ তিন/চার জন গরীব ব্যক্তি মিলে দিয়ে থাকে। তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। শুনেছি, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারা নাকি এভাবে কুরবানীর পশুতে শরীক হতে পারে। সঠিক মাসআলা জানতে চাই।


Answer

আপনার শোনা কথাটি ঠিক নয়। এক গরুতে সাত জনের বেশি শরীক হওয়া বৈধ নয়। সাত জনের বেশি শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। চাই অংশিদারগণ গরীব হোক বা ধনী। তাই কুরবানীর পশুতে ঐভাবে শরীক নেওয়া যাবে না। একান্ত কখনো এমন করতে চাইলে এক ভাগের সকল অংশিদারগণ একজনকে মালিক বানিয়ে দিবে। অতপর ঐ ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে ঐ অংশ কুরবানী দিবে। গোশত পাওয়ার পর অংশিদারদের মধ্যে গোশত বণ্টন করে দিতে পারবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৬; মাজমাউল আনহুর ৪/১৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫; মাবসূত সারাখসী ১২/১২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম - বরিশাল

২০৭৭. Question

যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নতে যদি প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া অবস্থায় ইকামত শুরু হয়ে যায় তাহলে করণীয় কী? সালাম ফিরিয়ে ফরয নামাযে শরীক হবে, নাকি চার রাকাত পূর্ণ করবে? জানালে উপকৃত হব।


Answer

এ অবস্থায় বাকি দুই রাকাত পড়বে নাবরং বৈঠক পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরীক হবে। জামাত শেষ হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে পূর্বের চার রাকাত সুন্নতও পড়ে নিবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; ফাতহুল কাদীর ১/৪১১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ আশরাফ - দরগাহ, সিলেট

২০৭৮. Question

জানাযার নামায পড়িয়ে বিনিময় নেওয়া কি জায়েয?


Answer

জানাযার নামাযের ইমামতি করে বিনিময় নেওয়া জায়েয নয়।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪;আলইখতিয়ার লিতালীলিল মুখতার ২/৬২; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফাহীম - শরীয়তপুর

২০৭৯. Question

আমাদের এলাকায় কবরস্থানের পাশে ছোট একটি কুঁড়েঘর বানিয়ে এক দরবেশ বসবাস করেন। তিনি প্রতি দিন সেখানে বসে বসে মৃতদের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম দেন। মৃতের আত্মীয়-স্বজন তার কাছে এসে খতমের কথা বললে তার চাহিদা অনুযায়ী হাদিয়া দিতে হয়। জানতে চাই, এভাবে কুরআন খতম করে বিনিময় নেওয়া কি জায়েয?


Answer

মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু তা হতে হবে শরীয়তের তরীকা মোতাবেক। যেমন নিজেরা কুরআন মজীদ পড়ে মৃতের জন্য সওয়াব পৌঁছানো যায়। অন্যকে দিয়েও করানো যায়কিন্তু এ জন্য কোনো পারিশ্রমিক বা হাদিয়ার আদান্তপ্রদান বৈধ নয়।

আপনাদের কবরস্থানের দরবেশ সাহেবের ঐ কাজ সম্পূর্ণ শরীয়তবিরোধী। মৃতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করে,দুআ-দরূদ পড়ে হাদিয়ার নামেও টাকা নেওয়া যাবে না। নিলে হারাম হবে। এতে মৃতের কোনো উপকার হয় না। কোনো সওয়াবও পৌঁছে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ হেদায়েতুল্লাহ - মাদানী নগর মাদরাসা

২০৮০. Question

ঈদের খুতবায় অনেককে প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার, দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে ৭বার এবং খুতবা শেষে ১৪ বার তাকবীর বলতে লক্ষ্য করা যায়। জানার বিষয় হল, এভাবে তাকবীর বলার হুকুম কী? এটি কি হাদীস বা আছার দ্বারা প্রমাণিত? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


Answer

ঈদের নামাযের প্রথম খুতবার শুরুতে নয়বার ও দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে সাতবার ধারাবাহিকভাবেআল্লাহু আকবার’ বলা মুস্তাহাব। এটি বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ ইবনে মাসউদ রাহ. থেকে বর্ণিত আছে। আর খুতবাহ শেষে ১৪ বার তাকবীর বলার কথা হাদীস বা আছারে পাওয়া যায়নি।  ফিকহের কোনো কোনো কিতাবে এভাবে ১৪বার তাকবীর বলার কথা উল্লেখ আছে। তবে উভয় ঈদের খুতবায়ই ব্যাপকভাবে বেশি বেশি তাকবীর বলা সাহাবী ও তাবেয়ীদের আছার দ্বারা প্রমাণিত।


মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/২৯০; সুনানে বাইহাকী ৩/২৯৯; মাআরিফাতুস সুনান ওয়াল আছার ৩/৪৯; আলআওসাত ৪/৩২৮; কিতাবুল উ্‌মম,শাফেয়ী ১/২৭৩; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/২৭৭; আলবয়ান ওয়াততাহসীল ১/৩০০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; ইলাউস সুনান ৮/১৬১-১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৫

Sharable Link

শরীফ আহমদ - মিরপুর, ঢাকা

২০৮১. Question

মুরগী জবাই করার সময় আল্লাহু আকবার বলা এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকে দাঁড়ানো জরুরি কি না? এই শর্ত না মানলে মুরগী খাওয়া যাবে কি?


Answer

পশু-পাখি যবাইয়ের সময় যবাইকারীর জন্য আল্লাহ তাআলার নাম বলা  জরুরি। হাদীস শরীফে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলার কথা উল্লেখ আছে। যদি যবাইয়ের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ তাআলার নাম না বলে তাহলে উক্ত পশু খাওয়া জায়েয হবে না।

-সূরা আনআম : ১২১সহীহ বুখারী ২/৮২৭ইলাউস সুনান ১৭/৫৮রদ্দুল মুহতার ৬/৩০১ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৫ফাতহুল কাদীর ৮/৪০৯

আর জবাইয়ের সময় পশুর মাথা কিবলামুখী করে বাম কাতে শোয়ানো মুস্তাহাবজরুরি নয়। অবশ্য ডান কাতে শোয়ালেও জবাই সহীহ হয়ে যাবে। জবাইকারীর কিবলামুখী হওয়া সুন্নত। জবাই সহীহ হওয়ার জন্য এটিও শর্ত নয়।

-শরহু মুসলিম,নববী ১৩/১২১তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৩/৫৬৩বাযলুল মাজহূদ ১৩/১৪;বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৮৮মাজমাউল আনহুর ৪/১৫৯আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১৪৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাব্বীর আহমদ - মুহাম্মদপুর, ঢাকা

২০৮২. Question

আমরা জানি, প্রসিদ্ধ চার ফেরেশতার নাম হল : জিবরাঈল, ইসরাফীল, মিকাঈল ও আযরাঈল আ.। জানতে চাই, এ নামগুলো কোনো সহীহ হাদীসে আছে কি না? থাকলে হাদীসটির মূল পাঠ উল্লেখ করার অনুরোধ রইল।


Answer

প্রশ্নে বর্ণিত চার ফেরেশতার আলোচনা কুরআন্তহাদীসের বহু জায়গায় আছে। কারো নামসহ আছে,কারো নাম ছাড়া তাঁর সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। সূরা বাকারার ৯৮ নং আয়াতে জিবরাঈল আ. ও মিকাঈল আ.-এর নামসহ তাদের আলোচনা রয়েছে। এছাড়া একাধিক সহীহ হাদীসে জিবরাঈলমিকাঈল ও ইসরাফীল আ. এ তিন ফেরেশতার নাম উল্লেখ রয়েছে। যেমন্তসহীহ মুসলিমহাদীস : ৭৭০মুসনাদে আহমাদ ৩/২২৪

আর জান কবযকারী ফেরেশতাকে কুরআন ও হাদীসে মালাকুল মাউত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার সুনির্দিষ্ট কোনো নাম উল্লেখ হয়নি। তবে কতক তাবেয়ীর বর্ণনায় আযরাঈল নামটি পাওয়া যায়।

হাফিযুল হাদীস ইবনে কাসীর রাহ. বলেনজান কবযকারী ফেরেশতার কোনো নাম কুরআন মজীদ এবং সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি। তবে কিছু আছারে আযরাঈল নামটি আছে।-আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ১/১০৬

আরো দেখুন : আজবিবাতু ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. পৃ. ৯৭-১০৯আলআযামা লিআবিশ শায়খ পৃ. ৪৪৫

উল্লেখ্যফেরেশতাদের উপর ঈমান আনার জন্য তাদের নাম জানা জরুরি নয়। কুরআন-হাদীসে ফেরেশতাদের যেসব গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর উপর ঈমান আনাই যথেষ্ট।

Sharable Link

মুহাম্মাদ সানাউল্লাহ - কুমিল্লা

২০৮৩. Question

হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের এবং হযরত আনাস বিন নযর রা. কোন যুদ্ধে শহীদ হন তাদের শাহাদাতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাই।

Answer

তাঁরা দুজনই উহুদ-যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। হযরত মুসআব রা. ইসলাম গ্রহণের আগে অত্যন্ত বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর দুনিয়ার আরাম-আয়েশ সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেন। তিনিই ওই সাহাবীযার জন্য পূর্ণ শরীর আবৃতকারী কাফনও ছিল না। পায়ের দিক ইযখির ঘাস দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

আনাস বিন নযর রা. বদর-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তাই উহুদ-যুদ্ধে অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে হযরত সাদ ইবনে মুআয রা.-এর সাথে দেখা হলে তাকে বললেনহে সাদ! আমি উহুদের ঐ প্রান্ত থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। এ যুদ্ধেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। শরীরে এত বেশি আঘাত পেয়েছিলেন যেতার লাশ চেনা যাচ্ছিল না। তাঁর বোন আঙ্গুলের নখ বা তিলক দেখে তাঁকে সনাক্ত করেছিলেন।

-সহীহ বুখারী ২/৫৭৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ গুলশানুর রহমান - বরিশাল

২০৮৪. Question

নিম্নে বর্ণিত ঘটনাটি সঠিক কি না জানতে চাই। একজন নবী তার কওমকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা সবাই পিপাসার্ত ছিল। আল্লাহ হুকুম দিলেন যে, সামনে যে নদী আছে কেউ যেন ঐ নদীর পানি তিন ঢোকের বেশি পান না করে। আর একেবারে পান না করলে আরো ভালো।

এরপর যারা আল্লাহর হুকুম মেনে পানি পান করেনি তারা জীবনে কখনো পিপাসিত হয়নি। আর যারা তিন ঢোক পান করেছে তাদের ঐ সময়ের পিপাসা মিটেছে। আর যারা বেশি পান করেছে তাদের ঐ সময়েও পিপাসা মিটেনি; বরং পানি পান করতে করতে তারা মারা গেছে।

Answer

মূল ঘটনাটি কুরআন মজীদে বর্ণিত হয়েছে। সূরা বাকারার ২৪৬ নং আয়াত থেকে ২৫২ নং আয়াত পর্যন্ত মোট : ৭টি আয়াতে ঘটনাটি উল্লেখ হয়েছে। তবে প্রশ্নে ঘটনাটি যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা পুরোপুরি সহীহ নয়। ঘটনাটির বর্ণনা কুরআন মজীদে এভাবে এসেছে যে, (তরজমা) অতপর তালূত যখন সৈন্যদের নিয়ে রওনা হলতখন সে (সৈন্যদেরকে) বললআল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। যে ব্যক্তি সে নদীর পানি পান করবে সে আমার লোক নয়। আর যে তা আস্বাদন করবে না সে আমার লোক। অবশ্য কেউ নিজ হাত দ্বারা এক আঁজলা ভরে নিলে কোনো দোষ নেই। তারপর অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া বাকি সকলে নদী থেকে (প্রচুর) পানি পান করল।

সুতরাং যখন সে (তালূত) এবং তাঁর সঙ্গের মুমিনরা নদীর ওপারে পৌঁছল তখন তারা (যারা তালূতের আদেশ মানেনি) বলতে লাগলআজ জালূত ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করার কোনো শক্তি আমাদের নেই। (কিন্তুযাদের বিশ্বাস ছিল যেতারা অবশ্যই আল্লাহর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হবেতারা বললএমন কত ছোট দলই না রয়েছেযারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের উপর জয়যুক্ত হয়েছে। আর আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেনযারা সবরের পরিচয় দেয়। (সূরা বাকারা : ২৪৯)

প্রশ্নে উল্লেখিত বিবরণ এবং কুরআন মজীদ ও তাফসীরগ্রন্থসমূহে বর্ণিত বিবরণে কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে : ১. প্রশ্নে একজন নবীর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কুরআন মজীদে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম তালূত’ বলা হয়েছে। তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশাহ ছিলেন।

২. প্রশ্নে বলা হয়েছেযারা পানি পান করেনি তারা সারা জীবন পিপাসিত হয়নি। যারা তিন ঢোক পান করেছে তাদের ঐ সময়ের পিপাসা মিটেছে। পক্ষান্তরে যারা বেশি পান করেছে তাদের ঐ সময়েও পিপাসা মিটেনি;বরং পানি পান করতে করতে তারা মারা গেছে। কুরআন মজীদ বা নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহে এভাবে বলা হয়নি। তাফসীরে শুধু এতটুকু আছে যেযারা নিজ হাত দ্বারা এক আঁজলা ভরে পানি পান করেছে এতটুকু পানিই তাদের পিপাসা নিবারণ করেছে। কিন্তু যারা বেশি পান করেছে তাদের পিপাসা মিটেনিবরং আরো বেড়েছে। সুতরাং এর চেয়ে বাড়িয়ে বলা উচিত নয়।-তাফসীরে কুরতুবী ৩/১৬৪১৬৬তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪৪৯৪৫২তাফসীরে তাবারী ২/৬৩৩তাফসীরে আবুস সাউদ ১/২৮৬২৯০

Sharable Link

মুহাম্মাদ সালেহী রাশেদ - ফুলপুর, ময়মনসিংহ

২০৮৫. Question

 

সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট জানতে চাই। আর এর উপকারিতাও জানতে চাই। শুনেছি, এই সূরার আমল করলে যাদুটোনা বা অন্যের অনিষ্ট থেকে হেফাযতে থাকা যায়।

 

Answer

 

প্রশ্নোক্ত সূরা দুটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট বা শানে নুযূল হলহুদাইবিয়ার ঘটনার পর লাবীদ ইবনে আসাম এবং তার কন্যারা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যাদু করেছিল। ফলে তিনি কিছুটা কষ্ট অনুভব করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা যাদুকরের নাম এবং কোথায়কিভাবে যাদু করা হয়েছে এ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। চিরুনী ও চুলের সাহায্যে যাদু করা হয়যা যারওয়ান কূপের তলদেশে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। এই অসুস্থতার সময় প্রশ্নোক্ত সূরাদ্বয় নাযিল হয়েছে। সূরা দুটি নাযিল হওয়ার পর ফেরেশতাদের বিবরণ অনুযায়ী ওই কূপ থেকে তা তুলে আনা হয়। অতপর ওই সূরা দুটি পড়ে গিরা খুললে তৎক্ষণাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ হয়ে উঠেন। 

এই সূরা দুটি পড়লে অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাযতে থাকা যায়। হাদীস শরীফৈ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তা পড়ার গুরুত্ব এসেছে। এক বর্ণনায় এসেছেযে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ইখলাস ও এই দুই সূরা পড়বে সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।

 

জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৯০৩; সুনানে আবু দাউদ,হাদীস : ১৫২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৯২৬৬; সুনানে নাসাঈ ২/১৫৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৯১৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আনোয়ার - মিরবাড়ি, ময়মনসিংহ

২০৮৬. Question

আমরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে রাখার সময় তা চুমু  দিয়ে থাকি। একজন বলল, এভাবে চুমু দেওয়া ঠিক নয়। জানতে চাই, কুরআন মজীদকে চুমু দেওয়া জায়েয কি না? আমরা আল্লাহ তাআলার কালামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চুমু দিয়ে থাকি।


Answer

হ্যাঁকুরআন মজীদ চুমু খাওয়া জায়েয। এতে আল্লাহ তাআলার কালামের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ পায়। প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৪; আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন, পৃষ্ঠা : ২১২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম - ডেমরা, ঢাকা

২০৮৭. Question

(ক) মুহাররম মাস সম্মানিত এবং এই মাসে যেহেতু হযরত হুসাইন রা. শহীদ হয়েছেন তাই এই মাসে বিবাহ-শাদি করাকে কুলক্ষুণে মনে করা হয়। এ কথা কি ঠিক?

(খ) ১০ মুহাররম এক শ্রেণীর লোক হযরত হুসাইন রা.-এর শাহাদাতের শোক পালনার্থে তাজিয়া মিছিল বের করে। ধারণা করা হয়, এই টং-এ হযরত হুসাইন রা.-এর রূহ সমাসীন থাকেন। তার কবরের আকৃতি থাকে। শোক মিছিলের সামনে তাজিয়া টং থাকে। এর পাদদেশে নযর-নিয়ায পেশ করা হয় এবং এর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকে ইত্যাদি। এসব কর্মকাণ্ড শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?

Answer

(ক) নাএকথা ঠিক নয়। এই বিশ্বাস রাখা এক ধরনের শিরক। হাদীস শরীফে এসেছেকুলক্ষুণে বিশ্বাসের কোনো বাস্তবতা নেই। অপর এক হাদীসে আছেকুলক্ষুণে শিরক।-সুনানে আবু দাউদহা. ৩৯০৪;মুসনাদে আহমাদ ১/৩৮৯

সুতরাং মুহাররম মাসে বিয়েশাদি করতে কোনো অসুবিধা নেই। উপরন্তু বহু হাদীসের ভাষ্যমতে এই মাস বরকতপূর্ণ ও মহিমান্বিত।

সহীহ মুসলিম ১/৩৬৮জামে তিরমিযী ১/১২৫৭

 

(খ) তাজিয়া’ সম্পূর্ণ শিরকী কাজ। হযরত হুসাইন রা.-এর রূহকে হাযির মনে করাসেখানে নযর-নিয়ায পেশ করাহাত জোড় করে দাঁড়ানো প্রত্যেকটি কাজই শিরক। এছাড়া এই দিনে শোক মিছিল বের করা,হাইহুতাশ করাবুক চাপড়ানো ইত্যাদিও সম্পূর্ণ মনগড়া এবং ভিত্তিহীনযা বিদআত।

ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/৩৩২৩৩৬আহসানুল ফাতাওয়া ১/৩৯৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম - সাভার, ঢাকা

২০৮৮. Question

ক) আশুরার রোযার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাই।


খ) আশুরার দিনের ফযীলত কী এবং এই দিনে রোযা রাখলে কী সওয়াব?

গ) শুনেছি, এই দিনে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইউসুফ আ. জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন। মুসা আ. দলবলে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন আর ফেরআউন তার দলসহ ডুবে মরেছে। এ ঘটনাগুলি কি ঠিক?

Answer

ক) আশুরার তাৎপর্য সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ করছি।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করার পর দেখলেনইহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রোযার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তারা বলেছিলএটি মহিমান্বিত একটি দিন। এই দিনে মুসা আ. ও তার কওম নিস্তার পান। আর ফেরআউন ও তার দল ডুবে মারা যায়। সেই থেকে মুসা আ. শুকরিয়াস্বরূপ এই দিনে রোযা রাখতেন। সে হিসেবে আমরাও রোযা রাখি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনমুসা আ.-এর ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমরা অধিক হকদার। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রোযা রাখলেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ করলেন।

- (সহীহ বুখারীহাদীস : ৩৩৯০মুসনাদে আহমাদহাদীস : ২৬৪৪সহীহ মুসলিমহাদীস : ১১২৫

 

খ) আশুরার দিনটি মহিমান্বিত। হাদীস শরীফে এসেছে-এই দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যদের তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিযী ১/১৫৭)

আর এই দিনে রোযা রাখলে পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭জামে তিরমিযী ১/১৫৮)

 

গ) এই দিনে মুসা আ. তার কওমসহ ফেরআউনের হাত থেকে রক্ষা পান এবং ফেরআউন তার দলবলসহ সমুদ্রে ডুবে মারা যায়-একথা সত্য। এ উত্তরের অংশে সহীহ বুখারীর যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়েছে তাতে একথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কিন্তু প্রশ্নের অন্যান্য ঘটনা লোকমুখে প্রসিদ্ধ থাকলেও এ সম্পর্কে কোনো বিশুদ্ধ বর্ণনা নেই। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদগণ বলেন, এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। দেখুন : আলআছারুল মারফূআ পৃষ্ঠা : ৯৪-১০০; মা সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ, পৃষ্ঠা : ২৫৩-২৫৭

Sharable Link

আমাতুল্লাহ তামান্না - কাদিরপুর, নোয়াখালী

২০৮৯. Question

আমরা জানি যে, কারো নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত (১ বছর অতিক্রম হলে) ও কুরবানী ওয়াজিব। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার এমন অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন, যারা বাহ্যত গরীব। কষ্ট করে সংসার চলে। কিন্তু তারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যেমন মেয়ের বিবাহ দেওয়া, ঘরবাড়ি বানানো ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন বীমা ও ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে টাকা জমা দিয়ে আসছেন। যা ইতোমধ্যেই নিসাব পরিমাণ হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, এই টাকা কিন্তু বর্তমানে তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত। এমতাবস্থায় তাদের উপর কুরবানী ও যাকাত ওয়াজিব হবে কি না এবং তাদের জন্য যাকাতের মাল খাওয়া বৈধ হবে কি না? সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে বাধিত করবেন।  

Answer

জমা টাকা নেসাব পরিমাণ হলে তা যে উদ্দেশ্যেই রাখা হোক তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে এবং বছরান্তে উক্ত সম্পদের যাকাতও দিতে হবে। এমন ব্যক্তি যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। উল্লেখ্যপ্রচলিত বীমা কোম্পানিগুলোর লেনদেন সুদ ও জুয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই এতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম।

মাবসূত সারাখসী ২/১৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬, ৮/৪৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯, ৬/৩১২

Sharable Link