রাজু আহমাদ - রাজশাহী

৫২২১. Question

১. একেবারে মাযুর ব্যক্তি নিজে নিজে ইস্তেঞ্জা করতে পারে না। তার ইস্তেঞ্জার কী বিধান হবে? তার স্ত্রী জীবিত নেই। এখন কি ছেলেরা তাকে ইস্তেঞ্জা করিয়ে দিতে পারবে?

২. মহিলাদেরও কি ইস্তেঞ্জার ক্ষেত্রে ঢিলা ব্যবহারের বিধান রয়েছে?

৩. ব্যবহৃত ঢিলা শুকিয়ে গেলে তা দ্বারা কি আবার ইস্তেঞ্জা করা যাবে?

৪. গাছের পাতা কি ঢিলা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে? যদি জায়েয না হয় তাহলে শুধু এভাবে ইস্তেঞ্জা করার পর আদায়কৃত নামাযের কী হুকুম হবে?

Answer

১. অসুস্থতার কারণে নিজে ইস্তেঞ্জা করতে সক্ষম নয়- এমন মাযুর ব্যক্তি পুরুষ হলে ছেলে বা অন্য কোনো পুরুষ যথাসম্ভব সতরের দিকে না তাকিয়ে ইস্তেঞ্জা করিয়ে দেবে। ওযরের কারণে এমনটি করার দ্বারা গোনাহ হবে না। আর মাযুর মহিলা হলে তার মেয়ে বা পুত্রবধু কিংবা অন্য কোনো সেবিকা তাকে ইস্তেঞ্জা করিয়ে দেবে। নারীদের মধ্যে কেউ না থাকলে এমন পরিস্থিতিতে ছেলেও করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সতরকে যথাসম্ভব আড়াল করে নেবে এবং সতরের দিকে নজর না পড়ে এভাবে করার চেষ্টা করবে। আর হাতে গ্লাভস জাতীয় কিছু লাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। -কিতাবুল আছল ২/২৩৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/৩৩৭; আলইখতিয়ার ৪/১০৯; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৯৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬১

২. হাঁ, মহিলাদের জন্যও বড় ইস্তেঞ্জার ক্ষেত্রে পানি ও ঢিলা উভয়টি ব্যবহার করা উত্তম। পায়খানার পর ঢিলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়েই সমান। আর মহিলাদের পেশাবের পর শুধু পানি ব্যবহার করে নিলেই চলবে। এক্ষেত্রে ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। -আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৭

৩. নাপাক বস্তু দ্বারা ইস্তেঞ্জা করা জায়েয নয়। ব্যবহৃত ঢিলা যেহেতু নাপাক তাই এটি পুনরায় ব্যবহার করবে না।

عَنْ مُجَاهِدٍ، أَنهُ كَانَ يَكْرَهُ أَنْ يَسْتَنْجِيَ بِالْحَجَرِ الَّذِي قَدَ اسْتُنْجِيَ بِهِ.

মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, যে পাথর দ্বারা একবার ইস্তেঞ্জা করা হয়েছে তা দ্বারা পুনরায় ইস্তেঞ্জা করা তিনি ঠিক মনে করতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, বর্ণনা ১৬৬৬) -আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০

৪. গাছের পাতা বা এ জাতীয় বস্তু দ্বারাও ইস্তেঞ্জা করাকে ফুকাহায়ে কেরাম মাকরূহ বলেছেন। অবশ্য কেউ এসব বস্তু দ্বারা ইস্তেঞ্জা করলে এর দ্বারা যদি নাপাকী দূর হয়ে যায় তাহলে কাজটি মাকরূহ হলেও পবিত্রতা অর্জিত হয়ে যাবে। তাই এসব বস্তু দ্বারা ইস্তেঞ্জা করে আদায়কৃত নামায কাযা করতে হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৫; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৪০

Sharable Link

আবদুর রকীব - শ্যামপুর, ঢাকা

৫২২২. Question

আমাদের পরিবার দ্বীনদার হওয়ায় ছোটকাল থেকেই আমি সবসময় সচেষ্ট ছিলাম, যেন কখনো নামায ছুটে না যায়। তাই কখনো কোনো কারণে নামায ছুটে গেলেও সাথে সাথে তা কাযা করে নিতাম। কিছুদিন হল, আমি এক কোম্পানিতে সেলসম্যান হিসাবে চাকরি শুরু করেছি। ডিউটিতে ব্যস্ত থাকায় মাঝেমাঝেই যোহর, আসর ও মাগরিব নামায কাযা হয়ে যায়। তবে আমি প্রতিদিন নিয়মিতই রাতে বাসায় এসে উক্ত নামাযগুলোর কাযা পড়ে নিই।

এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমি জানতে চাচ্ছি যে, রাতে কাযা করার সময় আমাকে কি উক্ত নামাযগুলোর নির্ধারিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পড়তে হবে?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি কাযা নামাযগুলো ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই আদায় করবেন। কেননা কাযা নামায ছয় ওয়াক্তের কম হলে তা ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আদায় করা ওয়াজিব।

উল্লেখ্য, পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

اِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا.

নিশ্চয়ই নামায মুমিনদের উপর এমন এক অবশ্যপালনীয় কাজ, যা সময়ের সাথে আবদ্ধ। -সূরা নিসা (৪) : ১০৩

ইচ্ছাকৃত ফরয নামায সময়ের বাইরে পড়া কবীরা গুনাহ। সুতরাং কোনো মুমিনের জন্য এমন কোনো চাকরি বা কর্মে লিপ্ত না হওয়া কর্তব্য, যার দ্বারা সঠিক সময়ে নামায আদায়ে বিঘœ ঘটে। তাই আপনার জন্য আবশ্যক হল ডিউটিতে থাকলেও কোনোভাবে অন্তত ফরযটা পড়ে নেওয়া। আর যদি কোনোভাবেই ফরয নামায পড়ারও ব্যবস্থা না হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এই চাকরি ত্যাগ করে এমন কোনো চাকরি অবলম্বন করা, যেখানে যথা সময়ে ফরয নামায আদাযের সুযোগ পাওয়া যায়।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৭৯; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৭০৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫১৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৮৪, ৮৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৫০

Sharable Link

নাদিরা সুলতানা - সিলেট

৫২২৩. Question

একজন গর্ভবতী মহিলা নামাযে মাটিতে মাথা রেখে সিজদা করতে তার খুব অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি আছে কি না? উত্তম পরামর্শ দিলে উপকৃত হব।

Answer

অসুস্থ বা গর্ভবতী মহিলার যদি মাটিতে মাথা রেখে সিজদা করতে বেশি কষ্ট হয় তাহলে সিজদার সময় জমিনে বা সমতলে বসে ইশারায় সিজদা করবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১১১৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৭২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৭; শরহুল মুনয়া, পৃ. ২৬৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪৭১; রদ্দুল মুহতার ২/৯৮

Sharable Link

আহসান হাবীব - বেরতলা, বি. বাড়িয়া

৫২২৪. Question

একদিন মসজিদে কিবলার দিকে পিঠ করে বসে তিলাওয়াত করছিলাম। এর মধ্যে এক ব্যক্তি এসে আমার সামনে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। প্রশ্ন হল, বলা হয়ে থাকে যে, নামাযীর দিকে মুখ করে বসা জায়েয নয়। কথাটি সঠিক কি না? বাস্তবে বিষয়টি এমন হয়ে থাকলে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গোনাহগার কে হবে? আমি, না ঐ নামাযী ব্যক্তি, যে হঠাৎ আমার সামেন এসে দাঁড়িয়ে গেল?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ নামাযী ব্যক্তি থেকে আপনার চেহারা ফিরিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। কেননা যদিও এভাবে নামাযে দাঁড়ানো তার ভুল হয়েছে। তথাপি সে যেহেতু নামায শুরু করে দিয়েছে তাই আপনার জন্য আর তার দিকে মুখ করে বসা ঠিক হবে না।

লক্ষণীয় যে, যেমনিভাবে কারো মুখের দিকে ফিরে নামায পড়া মাকরূহ। তেমনিভাবে নামাযী ব্যক্তির দিকে মুখ করে বসাও মাকরূহ। অবশ্য যদি নামাযী ব্যক্তি ও তার দিকে ফিরে বসা ব্যক্তির মধ্যখানে দেয়াল, পিলার বা আড়াল হয় এমন কোনো বস্তু থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে এমনভাবে বসতে অসুবিধা হবে না। অনুরূপভাবে এ দুজনের মধ্যখানে যদি তৃতীয় কোনো ব্যক্তি থাকে, যে নামাযী ব্যক্তির দিকে পিঠ করে রয়েছে তাহলেও কোনো অসুবিধা নেই।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৩৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৫; আলকেফায়া ১/৩৬০; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৪

Sharable Link

আব্দুল হক - নিউইয়র্ক, আমেরিকা

৫২২৫. Question

আমি নিউইয়র্ক থাকি। প্রতি রমযানে সাধারণত মসজিদে তারাবীহ পড়ানো হয়। এ রমযানে যে মসজিদে তারাবীহ পড়াচ্ছি, সেখানকার অধিকাংশ মুসল্লীই বিভিন্ন আরব দেশের নাগরিক। তারা ফিকহে হানাফীর অনুসারী নয়। তাদের আবদার হচ্ছে, বিতর নামাযে দুআয়ে কুনূতটা যেন উচ্চ স্বরে পড়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, হানাফী মাযহাবের কারো মতে কী দুআয়ে কুনূত উচ্চ স্বরে পড়ার সুযোগ আছে?

Answer

নিম্ন স্বরে দুআয়ে কুনূত পড়াই উত্তম। অবশ্য উচ্চ স্বরে পড়লেও নামায আদায় হয়ে যাবে। হানাফী মাযহাবের কোনো কোনো ফকীহও উচ্চ স্বরে দুআয়ে কুনুত পড়ার কথা বলেছেন। অতএব আপনার মুসল্লীদের অধিকাংশ যেহেতু অন্য মাযহাবের অনুসারী এবং তাদের মাযহাবে দুআ কুনূত উচ্চ স্বরে পড়ার কথা আছে, আর হানাফী মাযহাবেরও কোনো কোনো ফকীহ থেকে এমন বক্তব্য আছে, তাই আপনি চাইলে সেখানে উচ্চ স্বরেও দুআ কুনূত পড়তে পারেন।

উল্লেখ্য, যে এলাকার সকল বা অধিকাংশ মুসল্লী হানাফী মাযহাবের অনুসারী সেখানে দুআ কুনূত উচ্চ স্বরে পড়বে না; বরং নিম্ন স্বরেই পড়বে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; শরহুল মুনয়া, পৃ. ৪২২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৭

Sharable Link

আবদুর রহীম - কল্যাণপুর, ঢাকা

৫২২৬. Question

আমি আবদুর রহীম ও আমার বন্ধু আবুল কাশেম একদিন তার ইমামতিতে আছরের নামায পড়ছিলাম। সালাম ফেরানোর পর রাকাত নিয়ে তার সন্দেহ হয়। তাই সে আমাকে হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করে যে, নামায তিন রাকাত হয়েছে, না চার রাকাত? আমি হাত ও মাথা দিয়ে ইশারা করে বুঝাই যে তিন রাকাত হয়েছে। সে দাঁড়িয়ে আরেক রাকাত পড়ে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করে। কিন্তু আমার সন্দেহ হয় যে, এভাবে ইশারা করার পর এ নামায সহীহ হয়েছে কি না? তাই আমি পুনরায় নামাযটি পড়ে নিই।

জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত নামায সহীহ হয়েছিল কি না? পুনরায় নামায পড়া কি আমার ঠিক হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুখে কোনো কথা না বলে শুধু ইশারা করে থাকলে ঐ নামায ভঙ্গ হয়নি। বরং এক রাকাত পড়ে নিয়ে সেজদায়ে সাহু করার পর তা সহীহভাবেই আদায় হয়েছে। কারণ এভাবে মাথা বা হাতের ইশারায় রাকাত সংখ্যা বুঝানোর দ্বারা নামায নষ্ট হয় না। সুরতাং সালামের পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ না করে থাকলে উক্ত নামায পুনরায় পড়ার প্রয়োজন ছিল না। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আদায় করা নামায নফল হয়েছে। তবে লক্ষণীয় হল, মাথা বা হাতের ইশারা করার কারণে নামায না ভাঙ্গলেও তা খুশূ-খুযূ পরিপন্থী। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

-আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২০৬; শরহুল মুনয়া, পৃ. ৪৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৪

Sharable Link

যায়েদ আহমাদ - আমেরিকা

৫২২৭. Question

আমি আমেরিকার যে অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা সেখান পুরো দুইশ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র একটি মসজিদ। দূর-দূরান্ত থেকে লোক এখানে নামায পড়তে আসে। রমযান মাসে কোনো হাফেয না পাওয়াতে সূরা তারাবীহ পড়তে হয়। সেখানকার কিছু মুসল্লীর পীড়াপীড়িউৎসাহ প্রদান  ও সাহস যোগানোর কারণে আমি এ বৎসর আল্লাহ্র উপর ভরসা করে কুরআন হেফজ করা শুরু করেছি। আলহামদু লিল্লাহ প্রায় আঠারো পারা মুখস্থ করা শেষ হয়েছে। আমার ইচ্ছা হল, এবারের রমযানে এ আঠারো পারা দিয়ে নামায পড়াব। কিন্তু কিছু লোকের অনুরোধ হচ্ছে, অবশিষ্ট বারো পারা কুরআন শরীফ যেন দেখে পড়ে নিই। যাতে খতম পূর্ণ হয়। প্রশ্ন হল, দেখে দেখে নামাযে এভাবে কুরআন পড়া জায়েয হবে কি না? বিশেষত এক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের মতামত কী?

Answer

হানাফী মাযহাবের মুফতাবিহি (যার উপর ফতওয়া প্রদান করা হয়) মত হচ্ছে, নামাযে দেখে দেখে তিলাওয়াত করলে নামায ফাসিদ হয়ে যায়। সুতরাং কুরআনের যে জায়গাগুলো আপনি হেফজ করেছেন নামাযে কেবল সেগুলো থেকেই পড়বেন। মুখস্থ অংশগুলো একবার পড়ে ফেললে অবশিষ্ট দিনগুলোতে সেখান থেকেই আবার পড়ে নেবেন। দেখে দেখে কুরআন পড়া ঠিক হবে না।

উল্লেখ্য, হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ফকীহদ্বয়-ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. যদিও দেখে কুরআন পড়লে নামায ফাসেদ হবে না- বলেন তবে তাদের মতেও এমনটি করা মাকরূহ। তাই এ থেকে বেঁচে থাকা দরকার।

-কিতাবুল আছল ১/১৭৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৪৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪১৮; আলবাহরুর রায়েক২/১০; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৩

Sharable Link

মাওলানা নোমান আহমদ - রিয়াদ, সৌদি আরব

৫২২৮. Question

আমি রিয়াদের মুহাম্মদ বিন সাউদ ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্র। আমাদের ভার্সিটি থেকে প্রায়ই ছাত্র জামাত ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় গিয়ে থাকে। সুযোগ হলে আমিও তাদের সাথে শরীক হই। আমার সফরসঙ্গীরা তাদের হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী যাত্রাপথে বিরতি দিয়ে দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করে নেয়। কিন্তু আমাদের হানাফী মাযহাব অনুসারে যেহেতু দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে পড়ার নিয়ম নেই, তাই আমি তাদের সাথে জামাতে শরীক না হয়ে শুধু ওয়াক্তের নামায একাকী পড়ি।

পরবর্তী ওয়াক্তের নামায সফরে বিরতি না হওয়ার কারণে বাধ্য হয়েই আমাকে কাযা করতে হয়। অবশ্য আমাকে অনেকে বলেছেন, তুমি চাইলে তাদের সাথে দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে পড়তে পারো। আসলেই কি এভাবে দুই ওয়াক্তের নামায আমার জন্য একত্রে পড়ার সুযোগ রয়েছে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

এ কথা সবারই জানা যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় সুনির্ধারিত রয়েছে। যদিও সফরের হালতে বিভিন্ন মাযহাবে ক্ষেত্রবিশেষে الجمع بين الصلاتين তথা দুই নামায একত্রে পড়ার সুযোগ রয়েছে। তথাপি সেটি তাদের নিকট আবশ্যকীয় নয়। কিন্তু হানাফী মাযহাবে এ ক্ষেত্রেও দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে পড়ার সুযোগ নেই। আর এ বিষয়ে অন্যান্য মাযহাবের তুলনায় হানাফী মাযহাবের বক্তব্যই অধিক শক্তিশালী ও সতর্কতাপূর্ণ। সে হিসেবে সফর অবস্থায় আপনার জন্য প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায ঐ ওয়াক্তে পড়াই জরুরি। তবে এক্ষেত্রে আপনি ওয়াক্তের নামায একাকী না পড়ে তাদের সাথে পড়ে নিতে পারেন। আর পরবর্তী ওয়াক্তের নামায সে ওয়াক্তের সময়ে পড়বেন। যদি তাদেরকে বলেও গাড়ি থামানো সম্ভব না হয় তাহলে গাড়িতে বসেই যেভাবে সম্ভব আদায় করে নেবেন। শুধু গাড়ির সফরের ওজরে ওয়াক্তের নামায আদায়ে বিলম্ব করা বৈধ নয়।

-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/১১৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/১০১; আততাজরীদ, ইমাম কুদুরী ২/৯০৫; আলমাবসুত, সারাখসী ১/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৪

Sharable Link

আরীফুল ইসলাম - কুমিল্লা

৫২২৯. Question

গত রমযানে একদিন আমি তারাবীহের ইমামতি করার সময় ভুলে ২য় রাকাতের পর না বসে দাঁড়িয়ে যাই। যথারীতি কেরাত পড়ে যখন আমি সিজদায় গেলাম তখন আমার স্মরণ হল, আমি তো তিন রাকাত পড়ে ফেলেছি। উপায়ান্তর না দেখে আমি আরেক রাকাত মিলিয়ে চার রাকাত পুরা করে সাহু সিজদার সাথে নামায শেষ করি। সালামের পর আমাদের ইমাম বললেন, নামায হয়নি। এই চার রাকাত আবার পড়তে হবে। উনার কথামত এই চার রাকাত আবার পড়া হয়। কিন্তু পরে আরেকজন আলেমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, নামায তো হয়ে গিয়েছিল। ২য় বার পড়ার প্রয়োজন ছিল না।তাই আমি এখন হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, এখানে আসলে সঠিক বিষয় কোন্টি? এক্ষেত্রে নামায আদায়ের সঠিক পদ্ধতি কি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শেষ দুই রাকাত তারাবীহ সহীহ হয়েছে। আর প্রথম দুই রাকাতের পর বৈঠক না করার কারণে উক্ত দুই রাকাত সহীহ হয়নি। সুতরাং প্রথম দুই রাকাত তারাবীহ পুনরায় আদায় করা যথাযথ হয়েছে। আর পরবর্তী দুই রাকাত যেহেতু সহীহ হয়েছিল তাই শেষ দুই রাকাত পুনরায় পড়ার প্রয়োজন ছিল না। এতদসত্ত্বেও তা পড়ার দ্বারা নফল হিসাবে আদায় হয়েছে।

উল্লেখ্য, তারাবীহ্র নামাযে দুই রাকাতের পর না বসে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে করণীয় হল ৩য় রাকাতের সিজদার আগে মনে হলে বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার সাথে নামায শেষ করবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; শরহুল মুনয়া, পৃ. ৪০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৫v

Sharable Link

মুহাম্মাদ সালাম - বরিশাল

৫২৩০. Question

জনাব কয়েকদিন আগে মৃত অবস্থায় আমার এক বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়। তাকে জানাযার জন্য মসজিদে নেওয়া হলে ইমাম সাহেব বলেন, ‘বাচ্চা মৃত অবস্থায় জন্ম নিলে জানাযা দিতে হয় না’। একথা বলে হালকা দুআ করে আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। জানার বিষয় হল, তার এই কথা কি ঠিক?

Answer

হাঁ, ইমাম সাহেবের কথা ঠিক। মৃত অবস্থায় প্রসবকৃত বাচ্চার জানাযা দিতে হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

الطِّفْلُ لَا يُصَلَّى عَلَيْهِ، وَلَا يَرِثُ، وَلَا يُورَثُ حَتَّى يَسْتَهِلَّ.

বাচ্চা আওয়াজ না করলে (অর্থাৎ মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হলে) তার জানাযা দিতে হয় না এবং সে কারো ওয়ারিস হবে না এবং তারও কেউ ওয়ারিস হবে না। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৩২)

-মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, আছার ১১৭১৭; কিতাবুল আছল ১/৩৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭; রদ্দুল মুহতার ২/২২৮

Sharable Link

সাইফুল ইসলাম - চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ

৫২৩১. Question

বর্তমান কবরস্থানগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় যে, কবরের উপর মৃত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা সম্বলিত একটি ফলক লাগিয়ে দেয়া হয়। কিছুদিন আগে আমার চাচা ইন্তেকাল করেছেন। আত্মীয়স্বজন চাচ্ছেন যে, তার কবরেও নাম ইত্যাদি লিখে দেওয়া হোক, যাতে যিয়ারত করার সময় কবর চিনতে সুবিধা হয়।

তাই আমরা মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, কবরের উপর মৃত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা সম্বলিত কোনো ফলক ইত্যাদি স্থাপন করা কি জায়েয আছে?

Answer

কবর চেনার জন্য নাম-ঠিকানা সম্বলিত ফলক লাগিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে চিহ্ন দেওয়ার অবকাশ রয়েছে। শুধু কবর শনাক্ত করে রাখার প্রয়োজনে এমনটি করা নিষেধ নয়। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে-

لَمَّا مَاتَ عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُونٍ، أُخْرِجَ بِجَنَازَتِهِ فَدُفِنَ، فَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا أَنْ يَأْتِيَهُ بِحَجَرٍ، فَلَمْ يَسْتَطِعْ حَمْلَهُ، فَقَامَ إِلَيْهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَحَسَرَ عَنْ ذِرَاعَيْهِ، قَالَ كَثِيرٌ: قَالَ الْمُطَّلِبُ: قَالَ الَّذِي يُخْبِرُنِي ذَلِكَ: عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ ذِرَاعَيْ رَسُولِ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَ، حِينَ حَسَرَ عَنْهُمَا ثُمَّ حَمَلَهَا فَوَضَعَهَا عِنْدَ رَأْسِهِ، وَقَالَ: أَتَعَلَّمُ بِهَا قَبْرَ أَخِي، وَأَدْفِنُ إِلَيْهِ مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِي.

অর্থাৎ উসমান ইবনে মাযউন রা. ইন্তেকালের পর তাঁর দাফন শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে একটি পাথর নিয়ে আসার আদেশ দেন। কিন্তু সেই সাহাবী তা বহন করে আনতে সক্ষম হননি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথরটি নিজ হাতেই বহন করে উসমান ইবনে মাযউন রা.-এর মাথার কাছে এনে রাখেন এবং বলেন, এর দ্বারা আমার (দুধ) ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করে রাখলাম এবং পরবর্তীতে আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে এর কাছাকাছি দাফন করব। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২০৬; আততালখীসুল হাবীর, ইবনে হাজার, ২/২৬৭)

তবে প্রয়োজন পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত বা নাম-ঠিকানা ব্যতীত অন্য কিছু, যেমন কুরআনের আয়াত বা বড় বড় কবিতা কিংবা প্রশংসা-স্তুতিমূলক বাক্য ইত্যাদি লিখে রাখা নিষেধ। হাদীস শরীফে

এসেছে, জাবের রা. বলেন-

نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُجَصَّصَ القُبُورُ، وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهَا، وَأَنْ تُوطَأَ.

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করা, তার উপর লেখা, কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা এবং তা পদদলিত করা থেকে নিষেধ করেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫২)

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৩৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৬৬

Sharable Link

নূরে আলম - ব্যাংকটাউন, সাভার

৫২৩২. Question

কিছুদিন আগে আমার চাচা ইন্তেকাল করেছেন। মাঝেমাঝেই আমরা তার কবর যিয়ারত করতে যাই। কয়েকদিন যাবৎ আমার চাচাতো বোন ও চাচার কয়েকজন পুত্রবধু চাচ্ছেন, তারাও চাচার কবর যিয়ারত করবেন। কিন্তু এলাকার কিছু লোকজন বলছেন যে, মহিলাদের জন্য নাকি কবর যিয়ারত করা ঠিক নয়।

তাই এখন আমরা মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, উক্ত মহিলাদের জন্য কি চাচার কবর যিয়ারত করা জায়েয হবে?

Answer

সাধারণ অবস্থায় মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতে যাওয়া থেকে বিরত থাকাই উচিত। তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত করা জায়েয। শর্তগুলো হচ্ছে-

১. কবরস্থানে গিয়ে জোরে জোরে কান্না করা, বিলাপ করা ইত্যাদি সবধরনের শরীয়তবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।

২. যাওয়া-আসা নিরাপদ হতে হবে। পথে কোনো ধরনের ফেতনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকতে হবে।

৩. পরিপূর্ণ পর্দাসহ বের হবে।

৪. নিয়মিত বা ঘন ঘন কবর যিয়ারতের জন্য যাবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৪৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী, পৃ. ৩৪০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৪২

Sharable Link

সগীর আহমদ - যাত্রাবাড়ী

৫২৩৩. Question

গত রোযায় আমি এলাকার মসজিদে ইতিকাফে বসেছিলাম। মসজিদের বাথরুম অনেক নোংরা হওয়ায় তা ব্যবহারের অযোগ্য ছিল। ফলে টয়লেটের জন্য বাসায় আসতে হত। একদিন ঘরে এসে জরুরত পূর্ণ করার পর বেগম সাহেবের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় লিপ্ত হই। চার পাঁচ মিনিট পর সে আমাকে ইতিকাফের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তৎক্ষণাৎ আমি মসজিদে চলে আসি। হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, একান্ত আলাপচারিতা দ্বারা কি আমার ইতিকাফটি ভেঙে গেছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ঘরে এসে জরুরত পূর্ণ করার পর আলাপচারিতায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার কারণে আপনার সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট দিনগুলো নফল হিসেবে গণ্য হয়েছে। যেদিন ইতিকাফ ভেঙে গেছে সে দিনটির জন্য আপনি পরবর্তীতে রোযাসহ একদিন ইতিকাফ কাযা করে নেবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/১৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫

Sharable Link

আবদুল জলীল - মনপুরা

৫২৩৪. Question

গত রোযায় প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। অসহনীয় গরমের কারণে আমাদের পাড়ার মসজিদটিতে কেউ ইতিকাফ করতে চাচ্ছিল না। গরমে মুআযযিন সাহেব আগের থেকে অসুস্থ ছিলেন। তাই আমি একাই আল্লাহ্র উপর ভরসা করে ইতিকাফে বসে পড়ি। ইতিকাফে থাকা অবস্থায় পাড়ার তিন ভদ্রলোক বৈরী আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ফলে যথাক্রমে ২৩, ২৪, ২৫ রমযানে মসজিদের পূর্ব পাশের উঠানে জানাযা পড়াই। কারণ আমাদের পাড়ার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে। ইদানীং সময়ে কিছু ছেলে স্কুলে যাওয়া-আসা করে।

হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, এ পরিস্থিতির মাঝেও কি জানাযা পড়ানোর কারণে উক্ত তিন দিনের ইতিকাফ ভেঙে গেছে?

উল্লেখ্য, ২৫ রমযানে জানাযা পড়ানোর পর ইস্তিসকার নামাযও পড়ানো হয়। সংবাদ আসছিল, বিভিন্ন এলাকায় সালাতুল ইস্তিসকা পড়া হচ্ছে। তাই আমরা আগের থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলাম যে, জানাযার পর ইস্তিসকার নামায অনুষ্ঠিত হবে।

Answer

ইতিকাফ অবস্থায় শরীয়ত অনুমোদিত নির্ধারিত কিছু ক্ষেত্র ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া নিষেধ। এই নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলো ছাড়া অন্য কাজে মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। আর জানাযার নামায ঐ নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। হাদীস শরীফে এসেছে-

السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ: أَنْ لَا يَعُودَ مَرِيضًا، وَلَا يَشْهَدَ جَنَازَةً، وَلَا يَمَسّ امْرَأَةً، وَلَا يُبَاشِرَهَا، وَلَا يَخْرُجَ لِحَاجَةٍ، إِلّا لِمَا لَا بُدّ مِنْهُ.

ইতিকাফকারীর নিয়ম হল, সে কোনো রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না। স্ত্রীকে (কামভাবে) স্পর্শ করবে না, সহবাস করবে না। একান্ত প্রয়োজন (যেমন, ওযু, ইস্তিঞ্জা ইত্যাদি) ছাড়া বের হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭৩)

অতএব প্রথম দিন জানাযা পড়ানোর জন্য বের হওয়ার দ্বারাই আপনার সুন্নত ইতিকাফটি ভেঙে গেছে। আপনি যে কোনো দিন রোযাসহ পূর্ণ এক দিনের ইতিকাফ কাযা করে নিবেন। অবশিষ্ট দিনগুলো নফল ইতিকাফের মধ্যে গণ্য হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জানাযা ও ইস্তিসকার নামায পড়ানোর সুযোগ ছিল। তাই পরবর্তী দিনগুলোর জন্য কিছুই করতে হবে না।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৭৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/২৪১; ফাতহুল কাদীর ২/৩১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩২২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলী - পান্থপথ, ঢাকা

৫২৩৫. Question

আমার বাবার এক বন্ধু কয়েকদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। যিনি বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। দ্বীনদার হওয়ায় প্রতি বছর নিয়মিত যাকাত আদায় করতেন। কিন্তু মৃত্যুর প্রায় তিন বছর আগ থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। তাই কিছু দান-সদকা করলেও পরিপূর্ণ হিসাব করে এই তিন বছরের যাকাত আদায় করতে পারেননি এবং তিনি মৃত্যুর আগে এ বিষয়ে কিছু বলেও যাননি।

এখন তার ওয়ারিশ ছেলে-মেয়েসহ অন্যান্যরা জানতে চাচ্ছেন যে, তাদের জন্য কি এখন নিজেদের অংশ থেকে উক্ত বছরগুলোর যাকাত আদায় করে দিতে হবে?

Answer

আপনার বাবার বন্ধু যেহেতু সম্পদ রেখে গিয়েছেন তাই তার প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিসগণের জন্য মায়্যেতের পক্ষ থেকে উক্ত বছরগুলোর যাকাত আদায় করে দেওয়া উচিত হবে এবং তারা যদি আদায় করে দেন তাহলে মায়্যেতের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। তবে তিনি যেহেতু এ বিষয়ে কোনো অসিয়ত করে যাননি তাই তা ওয়ারিসদের উপর জরুরি নয়; দিতে চাইলে স্বতঃস্ফূর্ততায় হতে হবে।

উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মায়্যেতের ওয়ারিসগণ যদি তার মীরাস থেকে উক্ত বছরসমূহের যাকাত আদায় করে দিতে চান, তাহলে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিসদের অংশ থেকেই তা আদায় করতে হবে। নাবালেগ কোনো ওয়ারিস থাকলে তাদের অংশ থেকে নেয়া যাবে না।

-কিতাবুল আছল ২/৭৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৬৫

Sharable Link

সানওয়ার হুসাইন - আরসিন গেইট, পোস্তগোলা, ঢাকা

৫২৩৬. Question

গত বছর আমি হজ্বে যাই। আরাফার দিন সকালে রৌদ্রের কারণে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন আমি মাথার সামনে একটি ছাতা খুলে তার উপর কাপড় ঝুলিয়ে দিই। এরপর বুক পর্যন্ত ছাতার ভিতর ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ি। আর ঝুলানো কাপড়টি আমার বুকের উপর ছিল। মাথা বা মুখ কিছুই স্পর্শ করেনি। জানতে চাচ্ছি, এভাবে মুখ ঢেকে দীর্ঘ সময় ঘুমানোর দ্বারা কি দম ওয়াজিব হয়েছে?

Answer

ইহরাম অবস্থায় ছাতা ব্যবহার করা জায়েয। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার মুখ ও মাথা ছাতার নিচে থাকলেও আপনার উপর কোনো দম বা জরিমানা ওয়াজিব হয়নি।

প্রকাশ থাকে যে, ইহরাম অবস্থায় কাপড় দ্বারা চেহারা ও মাথা আবৃত করে রাখা নিষেধ।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৪৬৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৫৬৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪০৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ নাবীল - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৫২৩৭. Question

এক রমযানে আমার উমরার সফর হয়। শাওয়ালের দশ তারিখ দেশে ফিরি। অনেক পরিচিতজনই বলছে যে, আমার উপর নাকি হজ্ব ফরয হয়ে গেছে।  কেননা হজের মাসে উমরাহ করলে নাকি হজ্ব ফরয হয়ে যায়। কারো কারো বক্তব্য হল, কাবা দেখলে বা যে কোনো সময়ই ওমরা করলে হজ্ব ফরয হয়ে যায়। তাদের এ কথাগুলো সঠিক কি না? আমি একজন আলেমকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কিতাবাদীতে আছে যে, হজ্বের মৌসুমে মক্কায় অবস্থান করলে হজ্ব ফরজ হয়ে যায়। এখানে কোন্ বক্তব্যটি সঠিক?

Answer

কাবা দেখা বা উমরাহ করার দ্বারা হজ্ব ফরয হয়ে যাওয়ার প্রশ্নোক্ত কথাটি সহীহ নয়। হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে কাবা দেখা বা উমরাহ করার কোনো সম্পর্ক নেই। সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপরই কেবল হজ্ব ফরয হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا.

অর্থাৎ, মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বাইতুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা ফরয। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)

সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, হজ্বের মৌসুমে কারো কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত এ পরিমাণ সম্পত্তি থাকা, যার দ্বারা যানবাহনে করে সে মক্কায় আসা-যাওয়া করতে পারে এবং যাদের ভরণ-পোষণ তার জিম্মায় রয়েছে হজ্ব থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের খরচ নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। এমনিভাবে বর্তমানে ভিসা ও হজ্ব আদায়ের অনুমতিও আইনীভাবে হজ্বের সামর্থ্যরে অন্তর্ভুক্ত। আগের যুগে যেহেতু ভিসার আইনী বাধ্যবাধকতা ছিল না, তাই হজ্বের মাসসমূহে কেউ উমরাহ করতে মক্কায় পৌঁছে গেলে বাকি দিনগুলো সেখানে অবস্থান করতঃ হজ্ব আদায় করতে কোনো আইনী বাধা ছিল না। এজন্য ফুকাহায়ে কেরাম এমন ব্যক্তিকে সামর্থ্যবান গণ্য করে তার উপর হজ্ব ফরয হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু উমরার ভিসা দ্বারা হজ্ব করা বা হজ্ব পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করার সুযোগ নেই, সেজন্য এখন হজ্বের মৌসুমেও উমরা করার দ্বারা হজ্ব ফরয হবে না।

-আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/২৫৭; যুবদাতুল মানাসিক, পৃ. ২১; ইরশাদুস সারী ইলা মানাসিকি মুল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪১; ইমদাদুল আহকাম ২/১৬৩

Sharable Link

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক -

৫২৩৮. Question

আজ থেকে ছয় মাস আগে আমাদের এক প্রতিবেশী তার নিকটাত্মীয় এক মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। শুরুতে তাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিছুদিন পর থেকে মেয়ে যে কারণেই হোক স্বামীর সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে। স্বামী সর্বদা স্ত্রীর মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় হঠাৎ একদিন স্ত্রী স্বামীকে কোনো কিছু বলা ছাড়াই তার পিত্রালয়ে চলে যায়। স্বামী তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সে আসতে চায়  না। এমনকি এখন সে স্বামী থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়ে যেতে চায়। কিন্তু স্বামী তাকে তালাক দিতে রাজি নয়। সর্বশেষ স্ত্রী মহরের বিনিময়ে খোলা করতে চাচ্ছে।

জানার বিষয় হল, এভাবে অর্থের বিনিময়ে তালাক দেওয়া জায়েয হবে কি না? এক্ষেত্রে বিনিময় স্বরূপ প্রদত্ত মহরের চেয়ে অতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে কি না? পরবর্তীতে তারা উভয়ে যদি পুনরায় ঘর সংসার করতে চায় তাহলে সেটার কোনো বৈধ সুরত আছে কিনা?

Answer

কোনো মহিলার জন্য যদি তার স্বামীর সাথে পারস্পারিক অধিকার রক্ষা করে দাম্পত্য জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে যায়, ফলে স্ত্রী স্বামী থেকে পৃথক হয়ে যেতে চায়। কিন্তু স্বামী তালাক দিতে রাজী না হয় তাহলে ঐ মহিলার জন্য অর্থের বিনিময়ে খোলা করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বাস্তবে স্বামীর ত্রুটির কারণেই যদি খোলা করা হয়ে থাকে তাহলে স্বামীর জন্য খোলার বিনিময়ে কোনো অর্থ গ্রহণ করা জায়েয হবে না। আর যদি খোলা গ্রহণের মুখ্য কারণ হয়ে থাকে স্ত্রীর ত্রুটিই তাহলে স্বামী খোলার বিনিময় নিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও সে স্ত্রীকে যে অলঙ্কার, মহর ও বিভিন্ন দামী দামী জিনিসপত্র উপহার দিয়েছিল এসবের মূল্যের অতিরিক্ত গ্রহণ করা ঠিক হবে না। বিনিময় স্বরূপ এসব জিনিসের সমপরিমাণ কিংবা এর চেয়ে কম গ্রহণ করা উচিত হবে।

প্রকাশ থাকে যে, খোলার দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়। তাই এ ধরনের তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী যদি পুনরায় ঘর সংসার করতে চায় তাহলে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে নতুন মহর ধার্য করে যথানিয়মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৮৮৩০, ১৮৭৩৬, ১৮৭৪৬; কিতাবুল আছল ৪/৫৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/১৮৪; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৪৫, ৪৪৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ মুনীর - চকবাজার, ঢাকা

৫২৩৯. Question

আল্লাহর নাম ব্যতীত শুধু কসম শব্দ দ্বারা কসম করলে কি কসম সংঘটিত হয়ে যায়? যেমন, কসম, আমি যাব। অনেকে মনে করে শুধু কসম শব্দ দ্বারা কসম করলে কসম হয় না। যেমন নাকি আমিও অনেক সময় এভাবে কসম করার পর মনে মনে ভাবি যে, আমি তো আল্লাহ্র কসম বলিনি তাই কসম হয়নি।

অনেকসময় আমরা ঈমান শব্দ দ্বারা কসম খেয়ে থাকি। ঈমান শব্দ দ্বারা কসম করলে কি কসম সংঘটিত হয়ে যায়? হুজুরের কাছে আরেকটি বিষয় জানতে চাই। তা হচ্ছে, আমরা অনেক সময় কারো পিছনের কোনো বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ঈমান বা কসম শব্দ দ্বারা কসম নিয়ে থাকি। এধরনের কসমের সময় প্রতিপক্ষ যদি মিথ্যা কসম খায় তাহলে কি তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে?

Answer

১. আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে শুধু কসম শব্দ দ্বারা শপথ করলেও কসম সংঘটিত হয়ে যায়। তাই কসম করার পর তা ভঙ্গ করলে কাফফারা আদায় করতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২৪৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৪; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৩

২. ঈমান শব্দ দ্বারা কসম উদ্দেশ্য করলেও কসম সংঘটিত হবে না। তাই এর জন্য কাফফারাও দেওয়া লাগবে না। তবে এ ধরনের বাক্য উচ্চারণ করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/১৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২০

৩. জেনেশুনে পিছনের কোনো বিষয়ে মিথ্যা কসম খাওয়া কবীরা গুনাহ। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

الكَبَائِرُ: الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النّفْسِ وَاليَمِينُ الغَمُوسُ.

কবীরাগুনাহসমূহ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা। পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৭৫)

উল্লেখ্য, কথায় কথায় কসম করা, বিনা প্রয়োজনে কসম করা এ সবকিছুই ঠিক নয়। আর কসম করার প্রয়োজন দেখা দিলে শুধু আল্লাহ্র নামেই কসম করবে। অন্য কারো বা কিছুর নামে কসম করা জায়েয নয়। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَلاَ إِنّ اللهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ، مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ أَوْ لِيَصْمُتْ.

জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের নিজের পিতার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। যদি কসম করতেই হয় তবে যেন আল্লাহ্র নামেই কসম করে। নতুবা চুপ করে থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৪৬)

Sharable Link

মুহাম্মাদ জাবের - ওয়ারী, ঢাকা

৫২৪০. Question

এক মহিলার ছেলে বিদেশ  থেকে দেশে ফিরছিল। তখন সে এ বলে মান্নত করে যে, তার ছেলে নিরাপদে বাড়ীতে ফিরে এলে দশজন লোককে দাওয়াত করে খাওয়াবে। তার ছেলে নিরাপদে বাড়ী ফিরে এসেছে। এখন কি তাকে দশজন গরীবকেই খাওয়াতে হবে, নাকি খুব ভালো করে চার-পাঁচ জনকে খাওয়ালেই চলবে। আর খাওয়ার পরিবর্তে টাকা দেওয়ার সুযোগ আছে কি না। যদি থাকে তাহলে চার-পাঁচ জন বা একজনকে পুরা টাকা দেওয়া যাবে কি?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাকে দশজন গরীবকেই খাওয়াতে হবে। দশজনের খাবারের মূল্য দ্বারা চার-পাঁচ জনের জন্য উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করলে মান্নত আদায় হবে না। আর খাওয়ার পরিবর্তে টাকা দেওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে দশজন লোকের তৃপ্তি সহকারে খেতে যত টাকা লাগে তা একজন দরিদ্রকে একসঙ্গেও দেওয়া যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৩৫; আলহাবিল কুদসী ১/৫৪০; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪১; আননাহরুল ফায়েক ৩/৬৩

Sharable Link

সাদেক হুসাইন - কান্দিরপাড়, কুমিল্লা

৫২৪১. Question

আমাদের এলাকায় ঘন বসতি হওয়ায় পূর্বের ছোট মসজিদে মুসল্লী সংকুলান হয় না। ফলে নামায পড়তে বেশ কষ্ট হয়। বিষয়টা নিয়ে আমাদের মাঝে আলোচনা চলছিল। একদিন আমরা কয়েকজন মিলে এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধাভাজন আবদুল গনী সাহেবের বাসায় যাই। এব্যাপারে তার সাথে আলোচনা করলে তিনি বলেন যে, আমার এ বাড়ির ৫ম তলাটি খালি পড়ে রয়েছে। চাইলে তোমরা এটাকে মসজিদ বানিয়ে ফেলতে পার।

এরপর আমরা ৫ম তলাটিকে সাফাই করে তাতে নামায পড়া শুরু করি। এক সপ্তাহ পর একজন ইমামও নিয়োগ দেওয়া হয়। এভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা সেখানে নামায পড়ে আসছি। কিন্তু কয়েকদিন আগে উনার বড় ছেলে ৫ম তলার উপর আরো দুতলা করবে বলে সেখানে নামায পড়া বন্ধ করে দেয় এবং কাজও শুরু করে দেয়।

তারা বলছে, যখন এটা আমাদের প্রয়োজন ছিল না তখন তা নামায পড়ার জন্য দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের প্রয়োজন পড়েছে; বরং এটা যথেষ্ট হচ্ছে না বিধায় এর উপর আরো দু’তলা করতে হচ্ছে।

তাই জানতে চাচ্ছি, ৫ম তলাটি মসজিদের জন্য দিয়ে পুনরায় তা নিয়ে নেওয়া কি জায়েয হবে? এতে তাদের মসজিদ ভাঙার গুনাহ হবে না?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাড়ীর মালিক উক্ত তলাকে স্থায়ীভাবে মসজিদের জন্য দিয়ে থাকলে তা মসজিদের হুকুমে হয়ে গেছে। কেননা কোনো ভবনের নির্দিষ্ট কোনো তলা বা কোনো একটি অংশ মসজিদের জন্য দিলে তা-ও ওয়াকফ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ওয়াকফকারীর ওয়ারিসগণের জন্য তা বাতিল করা কোনোভাবেই বৈধ হবে না। বরং তাদের উচিত হবে ৫ম তলাটি মসজিদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া।

আর ৫ম তলা মসজিদ হলেও বাড়ীর মালিকগণ এর উপরে তাদের জন্য আরো তলা নির্মাণ করতে পারবেন। তা মসজিদের হুকুমে হবে না।

কিন্তু বাড়ির মালিক ৫ম তলাটি যদি শুধু অস্থায়ীভাবে নামায আদায়ের জন্য দিয়ে থাকেন, স্থায়ী মসজিদ হিসাবে না দেন তাহলে ওয়ারিসদের জন্য তা নিজ ব্যবহারে নিয়ে আসা বৈধ হবে। মুসল্লিদের জন্য এতে বাঁধ সাধা ঠিক হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬১; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৫; আলইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ, পৃ.৭২

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাসনাইন - আদাবর, ঢাকা

৫২৪২. Question

আমাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু গত বছর আফতাবনগরে গরুর দাম পড়ে যাওয়ায় আমি ও এক ভাই দুইটি গরু ক্রয় করি। পরে তা পিকআপ ভ্যানে করে এলাকায় নিয়ে আসি। ভ্যান থেকে গরু নামানোর সময় দুটি গরুই পায়ে প্রচ- আঘাত পায়। ব্যাথার কারণে আমার গরুটির গায়ে জ্বর এসে যায় এবং একপর্যায়ে ঈদের আগের দিন সকালে মারা যায়। আর ভাইয়ের গরুটি কুরবানী করা গেলেও বাসায় নিয়ে কুরবানী করা সম্ভব হয়নি। কারণ ব্যাথায় গরুটি হাঁটতে সক্ষম ছিল না। তাই উক্ত স্থানেই ঈদের দিন পর্যন্ত গরুটিকে বেঁধে রাখা হয়। হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, এ অবস্থায় আমার জন্য কি নতুন একটি পশু ক্রয় করা উচিত ছিল? আর অপর ভাইয়ের উক্ত গরু দ্বারা কি কুরবানী সহীহ হয়েছে?

Answer

বাস্তবেই আপনাদের দুই ভাইয়ের উপর যদি কুরবানী ওয়াজিব না হয়ে থাকে তবে আপনাদের এ পরিস্থিতিতে কিছুই করতে হবে না। আপনার কুরবানীর পশুটি মারা যাওয়ায় নতুন কুরবানী দেওয়া ওয়াজিব নয়। আর আপনার ভাইয়ের উক্ত আহত গরুটি কুরবানী করা সহীহ হয়েছে। কেননা আপনার ভাইয়ের উপর যেহেতু কুরবানী ওয়াজিবই নয় তাই উক্ত পরিস্থিতিতে তার জন্য আহত গরুটি কুরবানী করা জায়েয হবে।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৬; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/২০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৩২; আলবেনায়া ১৪/৩৮৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৫

Sharable Link

ইশতিয়াক - জিনজিরা

৫২৪৩. Question

কুরবানীর সময় কসাই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমরা কয়েকজন মিলে নাটোর থেকে ভালো একদল জাত কসাইয়ের ব্যবস্থা করে থাকি। গরু অনেক হওয়ায় প্রায় দেখা যায়, কারো কারো গরু রাতে জবাই দিতে হচ্ছে। হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি, রাতে কুরবানী দিলে কোনো সমস্যা নেই তো?

Answer

ঈদের নামাযের পর তাড়াতাড়ি কুরবানী করা উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ مِنْ يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، فَمَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا.

আমাদের আজকের এই দিনে সর্বপ্রথম কাজ হল, (ঈদের) নামায আদায় করা। এরপর (নামায থেকে) ফিরে এসে আমরা কুরবানী করব। অতএব যে এরূপ করবে সে আমাদের সুন্নতের অনুসরণ করল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫১)

তাছাড়া ঈদের দিনের সর্বপ্রথম আহারটি নিজ কুরবানীকৃত পশুর গোশত দ্বারা করাও উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, বুরাইদা রা. বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَغْدُو يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ، وَلَا يَأْكُلُ يَوْمَ الْأَضْحَى حَتَّى يَرْجِعَ فَيَأْكُلَ مِنْ أُضْحِيّتِهِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহার দিন নামায থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত কিছু খেতেন না। এরপর প্রথমে কুরবানীর গোশত খেতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৪)

ঈদের নামাযের পর তাড়াতাড়ি কুরবানী করে নিলে এই আমলটি করাও সম্ভব হয়।

অবশ্য কুরবানীর সময় ঈদের দিনসহ মোট তিন দিন। ঈদের নামাযের পর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানীর সুযোগ রয়েছে। এ সময়ে দিনে  রাতে যে কোনো সময় কুরবানী করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে রাতে কুরবানী করলে খেয়াল রাখতে হবে, যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে। যেন জবাই কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬১; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৬

Sharable Link

হাসসান আহমাদ - নরসিংদী

৫২৪৪. Question

আমি চট্টগ্রামে থাকি। কোনো কারণে গত কুরবানীর ঈদটি ঢাকার একটি এতীমখানায় করতে হয়। মুসাফির থাকায় আমার উপর তো আর কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। কিন্তু আমার স্ত্রী ও বড় মেয়ে ছাহেবে নেসাব হওয়ায় তাদের পক্ষ হতে কুরবানী আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি গরু ক্রয় করি এবং তাদের অনুমতিক্রমে গোশত এতীমখানায় দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা করি। ঈদের আগের রাতে শুনি যে, ফজরের আগেই একটি গরু জবাই করা হবে। কারণ অনেক ছাত্র আছে, যাদের কাছে খাবার পৌঁছানো সম্ভব নয় বিধায় আগেই তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে হয় এবং তা পিকআপ ভ্যানে ছাত্রদের সাথে দিয়ে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ফজর নামাযের ২৫ মিনিট পূর্বে আমার গরুটি জবাই করা হয় এবং তা রান্না করে ছাত্রদের সাথে দিয়ে দেওয়া হয়। হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, মুসাফির থাকা অবস্থায় ঈদের নামাযের আগে আমার গরুটি জবাই করা কি সহীহ হয়েছে এবং এর দ্বারা আমার স্ত্রী ও মেয়ের কুরবানী কি আদায় হয়েছে?

Answer

উক্ত কুরবানী সহীহ হয়নি। কারণ যেসকল জায়গায় ঈদের নামায অনুষ্ঠিত হয় (চাই তা শহর হোক বা গ্রাম) সেখানে এলাকার কোনো একটি জায়গায় ঈদের নামায পড়ার পরেই কেবল কুরবানীর সময় হয়। এর পূর্বে কুরবানীর সময় হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَلْيَذْبَحْ مَكَانَهَا أُخْرَى، وَمَنْ كَانَ لَمْ يَذْبَحْ حَتَّى صَلَّيْنَا فَلْيَذْبَحْ عَلَى اسْمِ اللهِ.

ঈদের নামাযের আগে যে কুরবানী করেছে (তার কুরবানী হয়নি) সে যেন এর পরিবর্তে আরেকটি কুরবানী করে। আর যে আমাদের ঈদের নামায পড়ার আগে জবাই করেনি, সে যেন এখন আল্লাহ্র নাম নিয়ে জবাই করে নেয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫০০)

সুতরাং আপনার স্ত্রী ও মেয়ের কুরবানী আদায় হয়নি। এখন তাদের কুরবানীর পরিবর্তে দুইটি ছাগল বা তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, কুরবানী যে এলাকায় করা হয় সময়ের ক্ষেত্রে সে এলাকা ধর্তব্য হয়। কুরবানীদাতা মুসাফির না মুকীম সেটি ধর্তব্য  নয়।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৩৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

Sharable Link