মাছুম আহমদ - সিলেট

৪৫৯৪. Question

মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমার জানার বিষয় হল, ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে নখের ভিতরের ময়লা পরিষ্কার করা বা তার ভিতরে পানি পৌঁছানো জরুরি কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

নখের ভিতরে সাধারণত যে ময়লা জমে থাকে তা নখের ভিতরে পানি পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে না। তাই এ ধরনের ময়লা থাকা অবস্থায়ও অযু-গোসল সহীহ হয়ে যাবে। তবে নখের ভিতর যদি এমন ময়লা জমে, যা ভেদ করে ভেতরে পানি পৌঁছতে বাধা দেয় তাহলে সেটি পরিষ্কার করে নেওয়া আবশ্যক। অন্যথায় এ ময়লা থাকা অবস্থায় অযু-গোসল হবে না।

উল্লেখ্য, নখ অধিক বড় রাখা সুন্নতের খেলাফ। নখের ভেতর ময়লা জমে থাকা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তাই নখ বড় হলেই তা কেটে ফেলা উচিত।

-আলবাহরুর রায়েক ১/৪৭; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৬৩; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৮

Sharable Link

আহমদ হাসান - সিলেট

৪৫৯৫. Question

ইস্তেঞ্জা করার ক্ষেত্রে পানি বা ঢিলা তিন বার ব্যবহার করা কি আবশ্যক? কেউ যদি ৩ বার থেকে বেশি ব্যবহার করে তাহলে কি তা ঠিক হবে?

Answer

তিন বার ঢিলা ব্যবহারের কথা হাদীস শরীফে এসেছে। এ কারণে ফকীহগণ তিন বার ব্যবহারকে উত্তম বলেছেন। তাই প্রয়োজন ছাড়া তিন বারের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে প্রয়োজন হলে তিনের বেশিও ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে সংখ্যাটি বেজোড় হওয়া উত্তম। আর পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খরচ করবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬১; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৮

Sharable Link

শহীদুল ইসলাম - জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া

৪৫৯৬. Question

১. কোন মাসবুক ব্যক্তি যদি ইমামের সাথে প্রথম বৈঠকে শরীক হয় , আর এমতাবস্থায় ইমাম সাহেব বৈঠক থেকে উঠে যান তাহলে মাসবুকের তাশাহহুদ পড়া লাগবে কী?

২. যদি তাশাহহুদ পড়া জরুরি হয় তাহলে আগে মাসআলা না জানার কারণে তাশাহুদ না পড়ে যে নামায পড়েছি সেগুলোর হুকুম কী হবে?

Answer

হাঁ, মাসবুক ব্যক্তি প্রথম বৈঠকে ইমামের সাথে শরীক হলেও তার তাশাহহুদ পড়তে হবে। তাশাহহুদ শেষ করার আগে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মাসবুক তাশাহহুদ পূর্ণ করার পরই ইমামের সাথে শরীক হবে। তবে কেউ যদি তাশাহহুদ না পড়েই ইমামের সাথে শরীক হয়ে যায় তার নামাযও হয়ে যাবে।

অতএব আপনার এক্ষেত্রে তাশাহহুদ না পড়া ভুল হয়েছে। তবে  সে নামাযগুলো আদায় হয়ে গিয়েছে। ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬

Sharable Link

হাবীব হাসান - মাগুরা

৪৫৯৭. Question

বড়দের জামাতে কাতারের ফাঁকে ছোট ৭/৮ বছরের বাচ্চারা দাঁড়ালে বড়দের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি? যদি ক্ষতি হয় তবে বাচ্চারা কোথায় দাঁড়াবে? বিশেষ করে যখন বড় কোনো জামাতে বাচ্চাদেরকে অভিভাবকের সঙ্গেই দাঁড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়, তখনই বা কী করবে?

Answer

নামাযের জ্ঞান রাখে এমন নাবালেগ ছেলেকে বড়দের সাথে দাঁড় করানো মাকরূহ নয়। এতে বড়দের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না; বরং কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, ছোট বাচ্চারা বড়দের কাতারের পিছনে দাঁড়ালে যদি তাদের দুষ্টুমি করার আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে বড়দের সাথে কিংবা বড়দের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড় করানোই শ্রেয়। তবে সাধারণ নিয়ম হল, বাচ্চাদেরকে পিছনের কাতারে দাঁড় করানো ভালো।

উল্লেখ্য, নামাযের জ্ঞান নেই বা অন্যের নামাযে বিঘœ ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে এমন নাবালেগ বাচ্চাকে মসজিদে না আনাই উচিত।

-সহীহ মুসলিম ১/১৮১; জামে তিরমিযী ১/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯২; ইলাউস সুনান ১/২৬৪; তুহফাতুল মুহতাজ ৩/১০৬-১০৭

Sharable Link

মাহমুদ হাসান - রংপুর

৪৫৯৮. Question

আমি একটি কাপড় পরে কয়েকদিন ধরে নামায পড়ছি। একদিন নামাযের দুই ঘণ্টা পরে দেখি যে, কাপড়ের একাংশে দুই ইঞ্চি পরিমাণ রক্ত লেগে আছে। এ রক্ত কখন লেগেছে তা আমার জানা নেই। নামাযের সময় এ রক্ত ছিল কি না তাও জানা নেই। এখন কি এই কাপড় পরে যত নামায পড়েছি তার কাযা পড়তে হবে? জানালে উপকৃত হব।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রক্ত কখন লেগেছে তা যেহেতু আপনার জানা নেই, এবং আদায়কৃত কোন নামাযের সময় রক্ত ছিল বলে যদি প্রবল ধারণাও না হয় তাহলে যখন থেকে দেখতে পেয়েছেন তখন থেকেই এর হুকুম প্রযোজ্য হবে। সুতরাং আগের আদায়কৃত কোনো নামায দোহরাতে হবে না। কিন্তু বিগত কোনো নামায অবস্থায় কাপড়ে এ রক্ত লাগার প্রবল ধারণা হলে সেই ওয়াক্ত ও তার পরবর্তী ওয়াক্তের নামাযসমূহ দোহরিয়ে নিতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৮; মাবসূত সারাখসী ১/৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০; রদ্দুল মুহতার ১/২২০

Sharable Link

হাফসা জান্নাত - হবিগঞ্জ, সিলেট

৪৫৯৯. Question

আমরা জানি, নামাযে মহিলাদের হাতের তালু ও পিঠ কোনোটিই সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। এজন্য অনেক সময় উভয় হাত  কব্জি পর্যন্ত অনাবৃত রেখেই নামায পড়ি। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে আমাদের গ্রামের এক মহিলা বলল যে, নামাযে নাকি কব্জিসহ পুরো হাতই ঢেকে রাখতে হবে, নতুবা নামায হবে না। তার কথা কি ঠিক? এব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী মহিলাদের হাতের তালু ও পিঠ নামাযে ঢেকে রাখা জরুরি নয়। বরং তা খোলা রাখার অবকাশ আছে। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত মহিলার কথাটি ঠিক নয়।

-আসসিআয়াহ ২/৭২; শরহুল মুনয়া ২১১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৯-২৭০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৩১; মিনহাতুল খালেক ১/২৬৯-২৭০

Sharable Link

মুশতাক আমীন - রংপুর

৪৬০০. Question

হামিদা বানু মৃত্যুর আগে তার এক হাফেজ ভাতিজাকে জানাযা পড়ানোর অসীয়ত করে গেছেন। মৃত্যুর পর তার পরিবারও চাচ্ছে মরহুমার ইচ্ছানুযায়ী সে-ই জানাযা পড়াক। কিন্তু সে ভাতিজা এখনো প্রাপ্তবয়স্ক নয়।

প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় সে জানাযা পড়াতে পারবে কি?

 

Answer

জানাযার ইমামতির জন্যও বালেগ হওয়া জরুরি। নাবালেগের পেছনে জানাযা পড়া সহীহ নয়। তাই মরহুমার ওই নাবালেগ ভাতিজার জানাযা পড়ানো সহীহ হবে না।

-জামেউ আহকামিস সিগার ১/৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৭৭, আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫১৬

Sharable Link

ইহতেশাম বিল্লাহ - ঢালকানগর, ঢাকা

৪৬০১. Question

মৃতব্যক্তির পাশে বসে কুরআন তিলাওয়াতের হুকুম কী? এ সম্পর্কে বিভিন্নজনকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে শোনা যায়। কেউ বলে, গোসল দেওয়ার পূর্বে মৃতব্যক্তি নাপাক তাই সেখানে কুরাআন তিলাওয়াত করা যাবে না। কেউ বলে, মনে মনে তিলাওয়াত করা যাবে। কেউ বলে, জোরে তিলাওয়াত করাও জায়েয। আসলে সঠিক মাসআলা কোনটি? দলীল-প্রমাণ উল্লেখপূর্বক বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

Answer

মৃত ব্যক্তির পাশে নিঃশব্দে গোসলের আগেও কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয। আর লাশ আপাদমস্তক ঢেকে দিলে গোসল দেওয়ার পূর্বেও তার পাশে সশব্দে তিলাওয়াত করা জায়েয আছে। তবে গোসল দেওয়ার আগে মায়্যিতকে না ঢেকে তার পাশে বসে সশব্দে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহ।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৬৫

Sharable Link

যাকারিয়া আহমদ - উত্তরা, ঢাকা

৪৬০২. Question

হতারাম মুফতী সাহেব। আমার জানার বিষয় হল, যাকাত আদায়ের জন্য কি নিয়ত করা শর্ত? যদি শর্ত হয় তাহলে কখন করবে? যাকাত প্রদানের সময়ই কি নিয়ত করা আবশ্যক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় যাকাতের জন্যও নিয়ত করা জরুরি। আর এ নিয়ত করবে যাকাত প্রদানের সময়। অবশ্য কেউ যদি যাকাতের টাকা অন্যান্য টাকা থেকে আলাদা করার সময় যাকাতের নিয়ত করে নেয়। এরপর সেই টাকা থেকে গরীবদের দিতে থাকে তবে ঐ নিয়তও যথেষ্ট হবে এবং যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা পৃ. ২৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফরিদউদ্দীন - হুমায়ূন রোড, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা, ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪৬০৩. Question

আমি আমার এক নিকটাত্মীয়কে ৩ বছর আগে ২০ লক্ষ টাকা করজে হাসানা হিসেবে দিয়েছি; কোনো রকম মুনাফার শর্ত ছাড়া। তিনি আমার ২০ লক্ষ টাকা তাঁর এক ব্যবসায়ী বন্ধুকে ব্যবসার কাজে দিয়েছেন। কিন্তু তার বন্ধু প্রতারণা করে টাকাটা তাকে দিচ্ছে না এবং টাকাটা পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। আমার ঐ আত্মীয়ের পক্ষে আমার টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্যও নেই। মোটকথা এ টাকাটা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এমতাবস্থায় আমার ঐ বিশ লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

Answer

 প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি আপনার উক্ত বিশ লক্ষ টাকা না পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল হয় তাহলে আপনাকে উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে না। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে কখনো এ টাকা হস্তগত হলেও বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে না।

-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ২, ১/১১৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/৩৩

Sharable Link

মুহাম্মাদ হুসাইন - মুসলিম বাজার, ভোলা

৪৬০৪. Question

আমাদের সমাজের কিছু লোক বিবাহের জন্য পাত্রী দেখার সময় হাতের কনুইর নিচ পর্যন্ত ও পায়ের হাঁটুর নিচ পর্যন্ত দেখে। আবার অনেকে তখন নিজ হাতে আংটি পরিয়ে দেয়।

প্রশ্ন হল, এভাবে পাত্রী দেখা কি বৈধ? এ পদ্ধতি অবৈধ হলে শরীয়তসম্মত পদ্ধতি কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

বিবাহিচ্ছুক পাত্রের জন্য পাত্রীর শুধু চেহারা এবং দু’ হাত কব্জি পর্যন্ত ও দু’ পা টাখনুগিরা পর্যন্ত দেখা জায়েয। এ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ, এমনকি হাতের কব্জি থেকে উপরের অংশ এবং পায়ের গিরার উপরের অংশ দেখাও নাজায়েয। আর পাত্রীর হাত বা কোনো অঙ্গ স্পর্শ করাও জায়েয নয়। তাই পাত্রের জন্য পাত্রীকে আংটি পরিয়ে দেওয়া জায়েয হবে না। আংটি পরিয়ে দিতে চাইলে পাত্র পক্ষের মেয়েদের কেউ গিয়ে পরিয়ে দিতে পারে। অথবা পাশে পাত্রীর মাহরাম যারা থাকে তাদের কাছে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭০; ইলাউস সুনান ১৭/৩৮০

Sharable Link

আবুল খায়ের - পাবনা

৪৬০৫. Question

এক মেয়ে ও এক ছেলের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে তাদের বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়ের পরিবার দুই সপ্তাহের মধ্যে অন্য ছেলের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। তখন গ্রামের এক ব্যক্তি আপত্তি তোলে যে, ঐ মেয়ের যেহেতু পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল তাই ইদ্দত পালনের আগে তার বিবাহ শুদ্ধ হবে না।

এখন জিজ্ঞাসা হল, প্রশ্নোক্ত বিবাহটি শুদ্ধ হয়েছে কি না? না হলে বর্তমানে তাদের কী করণীয়?

Answer

প্রশ্নের ঐ কথা ঠিক নয়। অবৈধ সম্পর্কের কারণে ইদ্দত ওয়াজিব হয় না। অতএব প্রশ্নোক্ত বিবাহটি শুদ্ধ হয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, বেগানা নারী-পুরুষের মাঝে এমন সম্পর্ক গড়া মারাত্মক গুনাহ। শরীয়তের পর্দার হুকুম অমান্য করা এবং আরো নানা কারণে বর্তমানে মুসলিম সমাজেও এ ধরনের গুনাহের ব্যাপকতা বাড়ছে। তাই পর্দার ব্যাপারে পূর্ণ যত্নশীল হওয়া দরকার।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/১০৭; মাজমাউল আনহুর ২/১৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৫০৩

Sharable Link

রিজওয়ান - মিরপুর, ঢাকা

৪৬০৬. Question

আমাদের প্রতিবেশী এক তালাকপ্রাপ্তা মহিলা অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার অপূর্ণাঙ্গ একটি সন্তান জন্ম হয়। এখন আমি জানতে চাই-

১. অসম্পূর্ণ সন্তান প্রসব করার  দ্বারা কি ইদ্দত শেষ হয়ে যায়?

২. যদি আকৃতি ধারণ করার পূর্বেই শুধু গোশতের টুকরা প্রসব করে তাহলে এর দ্বারা কি ইদ্দত শেষ হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

গর্ভের শিশুর কোনো ধরনের আকৃতি, যেমন হাত, পা, আঙ্গুল ইত্যাদি হয়ে গেলে প্রসবের পর ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। পরিপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হওয়া আবশ্যক নয়। আর যদি গর্ভের কোনো অঙ্গই তৈরি না হয় বরং শুধু গোশত বা রক্তের টুকরো বের হয়, তাহলে এর দ্বারা ইদ্দত শেষ হবে না। এক্ষেত্রে তালাকের ইদ্দত হলে তিন হায়েয শেষ হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে আর স্বামী মৃত্যু পরবর্তী ইদ্দত হলে স্বামীর মৃত্যুর সময় থেকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১১

Sharable Link

শহিদুল হক - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৬০৭. Question

আমাদের এলাকায় একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘আফজাল উদ্দীন জামে মসজিদ’। মসজিদের জন্য জমি ওয়াকফকারীর নামে এই নামকরণ। এখন কিছু মানুষ বলছে, মসজিদ আল্লাহর ঘর। আর আল্লাহর ঘর মানুষের নামে হতে পারে না। যদি রাখা হয় তাহলে এই মসজিদে নামায হবে না। তাছাড়া ঐ ব্যক্তি জমি দিয়েছে বলে কি তার নামে নামকরণ করতে হবে? এর নির্মাণ কাজে তো এলাকার সকলেই অংশগ্রহণ করেছে।

এখন বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ফেতনার আশংকা দেখা দিয়েছে। এলাকার কিছু বিচক্ষণ মুরুব্বি এ বিষয়ে দারুল ইফতার শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন। তাই মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, মানুষের নামে মসজিদের নামকরণ করা জায়েয আছে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে উক্ত ফেতনা নিরসন করার অনুরোধ রইল।

Answer

মসজিদের জন্য জমি দিয়ে বা এর নির্মাণ কাজে সহায়তা করে নিজের নামে নামকরণ করা ঠিক নয়। কারণ এটা রিয়া বা লৌকিকতার নিদর্শন। আর রিয়া সম্পূর্ণ হারাম। এর দ্বারা দানের সওয়াব একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

অবশ্য এভাবে কোনো মসজিদের নাম রাখা হলেও তা শরীয়তের দৃষ্টিতে মসজিদ হয়ে যাবে এবং সেখানে নামাযও সহীহ হবে। মসজিদ হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয় নিয়ে আপত্তি করা ও জনমনে সংশয় সৃষ্টি করা ঠিক  হবে না।

-উমদাতুল কারী ৪/১৫৮, ২১৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২৫; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৫৮

Sharable Link

মঈনুল ইসলাম - কাপাসিয়া, গাজীপুর

৪৬০৮. Question

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের জন্য কিছু জায়গা ওয়াকফ করেন। এর এক পাশে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। প্রায় এক বছর পর ঐ মসজিদটি ওয়াকফকৃত জমিনের অন্য  প্রান্তে স্থানান্তর করা হয়।

ঐ মসজিদের স্থায়ী আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার জানার বিষয় হল, ঐ পুরাতন মসজিদের স্থানে মসজিদের স্থায়ী আয়ের জন্য দোকানঘর করে ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে কি না?

Answer

প্রশ্নোক্ত জমিটির এক পাশে প্রথমে যে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা যদি নির্মাণের সময়ই অস্থায়ীভাবে কিছুদিন নামায পড়ার জন্য নির্মাণ করা হয়ে থাকে তাহলে ঐ প্রথম ঘরটি শরয়ী মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে না। সেক্ষেত্রে ঐ স্থানটি মসজিদ নয়; বরং মসজিদের মালিকানাধীন জায়গা হিসাবে ধর্তব্য হবে এবং তাতে মসজিদের আয়ের জন্য দোকানপাট ইত্যাদি করা যাবে। আর যদি এ ঘরটি নির্মাণের সময় অস্থায়ীভাবে মসজিদ করা হচ্ছে এমন নিয়ত না করা হয়ে থাকে তাহলে মসজিদের জন্যই স্থায়ীভাবে নির্ধারিত হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে। এতে মসজিদের আয়ের জন্য দোকানপাট ইত্যাদি করা যাবে না; বরং ভবিষ্যতে মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য স্থানটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, এলাকাবাসীর কর্তব্য হল, মসজিদের ব্যয় নির্বাহের জন্য তারা যথাসাধ্য দান করবে। এবং এর কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের অধিকারী হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯০, ২৯৩; হাশিয়াতুশ শিলবী আলাত তাবয়ীন ৪/২৭১; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম - মাদারীপুর

৪৬০৯. Question

আমাদের এলাকায় মাদরাসার জন্য জমির প্রয়োজন ছিল। এলাকার এক ব্যক্তি একদিন জুমার পর মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে তার একটি জমি মাদরাসার জন্য দান করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার অমুক জমিটি মাদরাসার জন্য দান করলাম। আপনারা সাব-কবলা করে নিবেন’। সে সময় এ লোকের ছেলেরা বিদেশে ছিল। তারা বিষয়টি জানত না। ঐ লোকের মৃত্যুর পর তারা দেশে আসে এবং তখন বিষয়টি জানতে পারে। কিন্তু তারা জমিটি দিতে চাচ্ছে না। তারা বলছে, জমিটি আমাদের প্রয়োজন। আব্বা না বুঝে দান করে দিয়েছিলেন। আমাদের জন্য এটা দেওয়া সম্ভব নয়।

আমরা জানতে চাচ্ছি, তাদের জন্য এ দান প্রত্যাহার করা জায়েয হবে কি না?

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত জমিটি মাদরাসার নামে রেজিষ্ট্রি করা হয়নি। আর ঐ ব্যক্তি যখন জমিটি দান করেছিলেন তখন তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেক মানুষের উপস্থিতিতে জমিটি দান করেছিলেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত বর্ণনামতে ঐ ব্যক্তির ছেলেদের জন্য পিতার ওয়াকফকৃত জমিটি ফেরত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ তাদের পিতা মুসল্লীদের সামনে মৌখিকভাবে ঘোষণা করার দ্বারাই জমিটির ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং তা মাদরাসার জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে।

এখন এলাকাবাসীর কর্তব্য হল, লোকটির সন্তানদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে জমিটি মাদরাসার নামে রেজিষ্ট্রি করিয়ে নেওয়া। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় উমর রা. নিজের কিছু সম্পত্তি সদকা করেছিলেন। আর তা ছিল ছামগ নামক একটি খেজুর বাগান। উমর রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি সম্পদ পেয়েছি, যা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। আমি এটি সদকা করতে চাচ্ছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

تَصَدّقْ بِأَصْلِهِ، لاَ يُبَاعُ وَلاَ يُوهَبُ وَلاَ يُورَثُ.

মূল সম্পদটি এভাবে সদকা কর যে, তা বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না এবং কেউ এর ওয়ারিশ হবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৬৪)

-মাজমাউল আনহুর ২/৫৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৪৯

Sharable Link

আবদুস ছাত্তার মোল্লা - রাজবাড়ী

৪৬১০. Question

আমি এক বিদেশী পর্যটকের ভ্রমণ কাহিনী পড়েছি। বাংলাদেশে এসে তিনি সকল ধর্মের উপসনালয়গুলো ঘুরে দেখেছেন। সেক্ষেত্রে কোনো এক মসজিদে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

আমি আপনাদের বহুল প্রচারিত সাময়িকী মাসিক আলকাউসার এর মাধ্যমে জানতে চাই যে, কোনো অমুসলিম পর্যটককে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া কি নিষেধ?

অমুসলিমদের মসজিদে প্রবেশের ব্যাপারে শরীয়তের নীতিমালা কী?

Answer

মসজিদের আদব ও সম্মান রক্ষা করে অমুসলিমরাও মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুসলিমদেরকে মসজিদে অবস্থান করতে দিয়েছেন এ মর্মে হাদীসে একাধিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে অবশ্যই শালীন পোশাক পরিহিত হতে হবে এবং মসজিদের পবিত্রতা বিনষ্টকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে স্মরণ রাখতে হবে, মসজিদ হচ্ছে মুসলমানদের ইবাদাতের স্থান এবং ঈমানের প্রতীক; কোন পর্যটনস্থল বা বিনোদনকেন্দ্র নয়। মসজিদকে পর্যটনকেন্দ্র বানিয়ে ফেলা মসজিদের উদ্দেশ্য ও মর্যাদা পরিপন্থী কাজ।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৬৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৩২৮; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৮৮; উমদাতুল কারী ৪/২৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১

Sharable Link

ইমরান হুসাইন - গাজীপুর, ঢাকা

৪৬১১. Question

আমি একটি ফ্যাক্টরীতে চাকরি করি। আমার দায়িত্ব হল, ফ্যাক্টরীর পণ্য উৎপাদনের যাবতীয় কাঁচামাল বাজার থেকে ক্রয় করা। দীর্ঘদিন যাবৎ এ পোষ্টে কাজ করার সুবাদে অনেক ব্যবসায়ীর সাথে আমার পরিচয় ও সম্পর্ক আছে। এখন এক ব্যবসায়ী আমার সাথে এভাবে চুক্তি করতে চাচ্ছে যে, আমি যদি ফ্যাক্টরীর সব কাঁচামাল তার থেকে ক্রয় করি তাহলে সে আমাকে শতকরা ৩% কমিশন দিবে। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার জন্য উক্ত কমিশন গ্রহণ করতে শরয়ীভাবে কোনো অসুবিধা আছে কি না? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু উক্ত ফ্যাক্টরীতে চাকরি করেন। তাই ফ্যাক্টরীর পণ্য ক্রয়ের জন্য আপনি কেবল প্রতিনিধি; মূল ক্রেতা নন। অতএব বিক্রেতা যে মূল্য ছাড় বা কমিশন দিবে তা আপনার জন্য নেওয়া জায়েয হবে না; বরং পুরো কমিশনই ফ্যাক্টরীতে জমা দিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১১/২৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৪/৪৭৮

Sharable Link

গিয়াস উদ্দীন - জামালপুর

৪৬১২. Question

আমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ বিঘা জমি এক বছর চাষাবাদ করার জন্য ৯ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছি। আমাদের এলাকায় এক বছরে তিনবার ফসল হয়। জমি ভাড়া নেওয়ার পর আমি প্রথমবার ঘরে ফসল উঠাই। এরপর দ্বিতীয়বার ফসল লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করছিলাম। কিন্তু ইতোমধ্যেই নদীতে জোয়ার এসে জমিটি পানিতে তলিয়ে যায় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী বন্যার রূপ লাভ করে। এভাবে তৃতীয় ফসলের মৌসুম শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে বন্যার পানি চলে গেলে জমিটি ভেসে উঠে। ফলে আমি দুইটা ফসলই করতে পারিনি।

কিন্তু এদিকে জমির মালিক আমার কাছে পূর্ণ এক বছরের ভাড়া চাচ্ছে। তার কথা হল, আমি পূর্ণ এক বছরের জন্য জমি ভাড়া দিয়েছি। বন্যার কারণে জমিতে ফসল করতে না পারায় আমার কোনো দোষ নেই। তাই মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, শরীয়তের আলোকে সে কি আমার কাছে পূর্ণ এক বছরের ভাড়া পাবে?

Answer

বছরের যে সময় জমিটি চাষের অনুপযোগী ছিল এবং পানিতে ডুবে ছিল, ঐ সময়ের ভাড়া জমির মালিক প্রাপ্য হবে না; বরং বছরের যতদিন জমিটি চাষের উপযোগী ছিল কেবল ততদিনের ভাড়াই সে পাবে। আর এ পরিমাণ ভাড়া পরিশোধ করাই আপনার জন্য আবশ্যক। এক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরের ভাড়া দাবি করা জমির মালিকের জন্য জায়েয নয়।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/১০১; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৬১-৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩৬

Sharable Link

বজলুর রহমান - খিলগাঁও, ঢাকা

৪৬১৩. Question

আমি একটি জেনারেল (সুদী) ব্যাংকে প্রায় ৯ বছর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেছি এবং এ সময়ে প্রাপ্ত বেতন-বোনাস দিয়ে গাড়ি-বাড়ি করেছি। পরবর্তীতে একসময় ‘সুদী ব্যাংকে চাকরি করা বৈধ নয়’ এ মাসআলা জানার পর সুদী কারবারের সাথে জড়িত থাকার কারণে নিজের মাঝে অনুশোচনা জাগে। ফলে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য একটি চাকরিতে যোগদান করেছি।

এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আগের চাকরির বেতন-বোনাস দিয়ে যে গাড়ি-বাড়ি করেছি তা আমার জন্য বৈধ কি না? যদি বৈধ না হয়ে থাকে তাহলে আমার এখন করণীয় কী? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

Answer

সুদী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যে আয় দিয়ে গাড়ি-বাড়ি বা অন্য যে সম্পদ গড়েছেন, তা ভোগ করা জায়েয হবে না। এখন আপনি যদি এ গাড়ি-বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান, তাহলে যে পরিমাণ টাকা দিয়ে এ গাড়ি-বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ ক্রয় করেছেন, সে পরিমাণ টাকা সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। এভাবে যতটুকু সদকা করবেন ততটুকু সম্পদ আপনার জন্য হালাল বলে বিবেচিত হবে।

উল্লেখ্য, গাড়ি-বাড়ি করার পর এগুলো ভাড়ায় দিয়ে থাকলে তা থেকে উপার্জিত টাকাও সদকা করে দিতে হবে এবং পিছনের জীবনে হারাম উপার্জন ও হারাম ভোগ-ব্যবহারের কারণে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৪৫; ফাতহুল কাদীর ৮/২৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/১১৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ ফয়সাল - নারায়ণগঞ্জ

৪৬১৪. Question

আমার বাবা রাষ্ট্রীয় একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বাবার ইন্তেকালের পর আমরা তার থেকে একটি বাড়ি ও উক্ত বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে পেনশনের টাকা মীরাস হিসাবে পাই। তারা আমাদেরকে পেনশনের ৫০% একত্রে দেয়। আর বাকী ৫০% প্রতি মাসে সাড়ে আঠার হাজার টাকা করে দেয়। আমাদের বাড়িটি নির্মাণে মোট ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তার মধ্যে ৫০ লাখ জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন বাবদ প্রাপ্ত টাকা। আর বাকি টাকার বেশির ভাগই বৈধভাবে উপার্জিত। বর্তমানে আমরা বাড়ি ভাড়া আর মাসিক পেনশনের টাকা দিয়ে চলি। এ ছাড়া আমাদের আর কোনো আয় নেই। তবে আমাদের পরিবারে দুজন সদস্য কর্মক্ষম।

জানতে চাই, বাবার ওয়ারিসদের জন্য এ বাড়ীতে থাকা ও তার ভাড়া এবং পেনশনের টাকা গ্রহণ করা কি জায়েয হবে? নাজায়েয হলে করণীয় কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

জীবন বীমা সম্পূর্ণ নাজায়েয। তাতে সুদ ও জুয়া বিদ্যমান। তাই সেখানে চাকরি করাও নাজায়েয। এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত বেতন ও পেনশন যেভাবে আপনার বাবার জন্য হারাম তেমনি তার ওয়ারিসদের জন্যও হারাম। তারা এগুলো ভোগ না করে সদকা করে দিবে এবং তাদের অংশে উক্ত বাড়ির যে পরিমাণ হারাম অংশ রয়েছে তা সদকা করে দিবে। তবে তাদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম ও চলার মত অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই তারা প্রয়োজন অনুযায়ী এ সম্পদ ভোগ করতে পারবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৩; আলইখতিয়ার ২/৫৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০১; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৭৫; আহকামুল মালিল হারাম পৃ. ৭৪

Sharable Link

আবরারুজ্জামান - মোমেনশাহী

৪৬১৫. Question

আমি পৈত্রিকসূত্রে বাজারে একটি দোকান পেয়েছি। ব্যবসা করার মত বর্তমানে আমার কাছে তেমন কোন পুঁজি নেই। আমার এক বন্ধু কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে। এতদিন সে অন্যের অধীনে বাইরে কাজ করত। এখন স্বতন্ত্রভাবে একটা দোকান নিতে চাচ্ছে। সে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে যে, সে তার সকল সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে আমার দোকানে কাজ শুরু করবে। দোকানের প্রয়োজনীয় ডেকোরেশনও সে নিজ খরচে করবে। আমাকেও তার সাথে কাজে নিবে এবং প্রয়োজনীয় কাজ শিখিয়ে নিবে। মাসে যা উপার্জন হবে খরচ বাদ দিয়ে তা দুজনের মাঝে অর্ধা অর্ধি বণ্টন করা হবে।

প্রশ্ন হল, এভাবে চুক্তি করা কি জায়েয?

Answer

জ্বী হাঁ, প্রশ্নোক্ত পন্থায় চুক্তি করা জায়েয। তাই চাইলে আপনি আপনার বন্ধুর সাথে উক্ত চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারেন।

-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২২৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল কাদীর - সাতপাই, নেত্রকোণা

৪৬১৬. Question

আমাদের এলাকায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে মানুষের অভাব-অনটন দেখা দেয়। তখন অভাবী মানুষ ধনী লোকের নিকট থেকে এই শর্তে টাকা নেয় যে, এখন এক হাজার টাকা দিব, এক/দুই মাস পর সে টাকার বিনিময়ে দুই মণ ধান দিতে হবে। মেয়াদ শেষে ঋণদাতা কখনো ধান না নিয়ে সে সময়ের বাজারদর হিসেবে ধানের মূল্য নিয়ে নেয়। অনেকে এ ধরনের লেনদেনকে সুদী কারবার বলে। কারণ, এর দ্বারা ঋণদাতার লাভ হয়।

মাননীয় মুফতী সাহেবের নিকট বিনীত নিবেদন, উক্ত লেনদেনের শরয়ী হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এভাবে অগ্রিম টাকা দিয়ে মেয়াদান্তে ধান না নিয়ে মূল্য আদান-প্রদান করা সহীহ নয়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা যা গ্রহণ করা হবে তা নাজায়েয হবে। আর চুক্তির সময় পরবর্তীতে ধানের মূল্য নিবে এমন বললে তা সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য যে, প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি বাইয়ে সালামের একটি বিকৃত রূপ। শরীয়তসম্মত পন্থায় বাইয়ে সালাম (মূল্য আগে পরিশোধ করে নির্ধারিত মেয়াদের পর পণ্য গ্রহণের চুক্তি) করতে চাইলে নি¤েœর শর্তগুলো পালন করতে হবে। অন্যথায় তা জায়েয হবে না।

১. চুক্তিকৃত পণ্যটির প্রকার ও গুণগতমান সুনির্ধারিত হতে হবে।

২.পণ্যের পরিমাণ নির্ধারিত হতে হবে।

৩. পণ্য আদায়ের সময় ও স্থান নির্ধারিত হতে হবে।

৪. চুক্তির মজলিসেই পুরো মূল্য বিক্রেতার হস্তগত হতে হবে।

৫. মেয়াদ শেষে চুক্তিকৃত নির্ধারিত পণ্যটিই গ্রহণ করতে হবে। এর পরিবর্তে তার বাজারমূল্য বা অন্য কিছু গ্রহণ করা যাবে না। একান্ত কোনো কারণে নির্ধারিত পণ্য নেয়া সম্ভব না হলে এ বাবদ পূর্বে পরিশোধ করা মূল টাকাই ফেরত নিতে পারবে। এর চেয়ে বেশি নেওয়া জায়েয হবে না। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন-

إِذَا سَلّفْتَ فِي شَيْءٍ فَلَا تَأْخُذْ إِلّا رَأْسَ مَالِكَ أَوِ الّذِي سَلّفْتَ فِيهِ.

অর্থাৎ বাইয়ে সালামের লেনদেন করলে তুমি নির্ধারিত পণ্যই গ্রহণ কর, বা মূল টাকা ফেরত নাও। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, ১৪১০৬)

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৬৮; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/৪৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/২৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৪, ২১৮

Sharable Link

ফয়সাল - লালমোহন, ভোলা

৪৬১৭. Question

আমরা ছয় ভাই। প্রতি ঈদে আমরা সবাই মিলে একটি গরু কুরবানী করি। গরুটির ছয় ভাগ ছয় ভাইয়ের নামে আর এক ভাগ ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে মাতা-পিতার নামে কুরবানী করা হয়। আমরা সকলে সে এক ভাগের মূল্য সমানহারে বহন করি। বণ্টনের সময় গরুটি ছয় ভাগে ভাগ করে সকলে সমান সমান অংশ নিয়ে যাই। প্রশ্ন  হল, উক্ত পদ্ধতিতে কুরবানী করা শরীয়তসম্মত কি না? দ্রুত মাসআলাটির সমাধান চাই।

 

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে কুরবানী করা জায়েয। এভাবে ছয় শরীক মিলে এক সপ্তমাংশ এক বা একাধিক মৃতের জন্য ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয আছে। তবে উত্তম হল এক ভাগ একাধিকজন মিলে না দিয়ে এক জনেই দেওয়া।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; ফাতাওয়া উসমানী ৪/১১৩

Sharable Link

আবু দাউদ তাওহীদ - মাদারীপুর

৪৬১৮. Question

আমার বড় ভাই স্ত্রীসহ কানাডা থাকেন। এবছর কুরবানী ঈদের আগে কিছু টাকা পাঠিয়ে আমাকে তাদের দু’জনের পক্ষ থেকে দেশে কুরবানী করতে বলেছিলেন। আমি ঐ টাকা দিয়ে দু’টি খাসি কিনে তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করে দিয়েছি। তবে খাসি কেনার সময় এবং পরে যবাইয়ের সময় কোনটা কার জন্য তা নির্দিষ্ট করিনি। গ্রামের এক ব্যক্তি বলছে, এভাবে নির্দিষ্ট না করার কারণে তাদের কারো কুরবানী আদায় হয়নি। সম্মানিত মুফতী সাহেবের কাছে ঐ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দুজনের পক্ষ থেকে যেহেতু দুটি খাসি কুরবানী করা হয়েছে তাই উভয়ের কুরবানী সহীহ হয়ে গেছে। কেননা এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করা না হলেও প্রত্যেকের পক্ষ থেকে একটি করে খাসি কুরবানী হয়েছে। ‘নির্দিষ্ট না করায় কুরবানী সহীহ হয়নি’ প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেকের কুরবানীর পশু নির্দিষ্ট করে নেওয়াই উত্তম ছিল।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৫

Sharable Link

নুরুল হুদা - বাখরাবাদ, কুমিল্লা

৪৬১৯. Question

আমার আব্বুর দুই সংসার। প্রথম সংসারে আমরা দুই ভাই তিন বোন। আর দ্বিতীয় সংসারে এক ভাই দুই বোন। আব্বুর সম্পদ বলতে ১০ শতাংশের একটা বাড়ি। আর ২০ শতাংশের এক খ- জমি। আব্বু মারা যাওয়ার প্রায় দুই বছর আগে এ পুরো সম্পত্তি সবার মাঝে বণ্টন করে দিয়ে যান। দুই আম্মুকে এক শতাংশ করে দুই শতাংশ বাড়ি দিয়েছেন। আর বাকি সম্পত্তি আমাদের ৮ ভাই-বোনের মাঝে সমানহারে বণ্টন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রত্যেকে ১ শতাংশ করে বাড়ি এবং আড়াই শতাংশ করে জমি পেয়েছে। আর আব্বুর জীবদ্দশাতেই আমরা নিজেদের জায়গায় ঘর করি এবং গাছ-গাছালি লাগিয়ে দেই।

 

এখন মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, এভাবে সম্পত্তি বণ্টনের পর আব্বুর জীবদ্দশায় কি আমরা তার মালিক হয়েছি? নাকি আব্বুর মৃত্যুর পর তা মিরাসী সম্পত্তি হিসাবে পুনরায় বণ্টন করতে হবে? আর ভাই-বোনদেরকে এভাবে সমানহারে সম্পত্তি দেওয়া কি ঠিক হয়েছে?

Answer

আপনার পিতা সম্পত্তি বণ্টন করে প্রত্যেককে তার অংশ বুঝিয়ে দেওয়ার দ্বারাই সকলে নিজ অংশের মালিক হয়ে গেছে। সুতরাং পিতার মৃত্যুর পর সেগুলো মিরাসী সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না। পূর্বের বণ্টন অনুযায়ী প্রত্যেকের নিজ নিজ অংশের মালিকানা বহাল থাকবে। আর আপনার পিতার জন্য আপনাদের সকল ভাই-বোনকে সমান হারে সম্পত্তি দেওয়া বৈধ হয়েছে। কেননা জীবদ্দশায় ছেলে-মেয়েদেরকে সমান হারে সম্পত্তি দেওয়াও জায়েয আছে।

-মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৭৮৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৬, ২৮৮; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ৮৬১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৯১; রদ্দুল মুহতার ৫/২৯৬

Sharable Link

আবু আহমাদ - পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা

৪৬২০. Question

কয়েক বছর আগে আমাদের পাশের মহল্লায় একটি খ্রিস্টান পরিবারের একটি মেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিছুদিন পূর্বে তার পিতা খ্রিস্টান অবস্থায় মারা যায়। এর কিছুদিন পর মেয়েটিও মারা যায়।

মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, এই মেয়েটি কি তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে অংশ পাবে? এবং মেয়েটির সম্পত্তি থেকেও কি তার খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা অংশ পাবে?

 

Answer

না, মেয়েটি তার খ্রিস্টান পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে অংশ পাবে না। তেমনি মেয়েটির খ্রিস্টান ভাই-বোনেরাও মেয়েটির ওয়ারিস হবে না। উসামা বিন জায়েদ রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لاَ يَرِثُ المُسْلِمُ الكَافِرَ وَلاَ الكَافِرُ المُسْلِمَ.

মুসলমান কোনো কাফিরের ওয়ারিস হবে না, তেমনি কাফিরও কোনো মুসলমানের ওয়ারিস হবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস  ৬৭৬৪)

-আলমাবসূত, সারাখসী ২৯/১৩৮; আলইখতিয়ার ৪/৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৫৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/২১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৬৭

Sharable Link

আবু হাতেম মুস্তফা - রানীর বাজার, কুমিল্লা

৪৬২১. Question

আমাদের পাশের বাড়িতে এক হিন্দু পরিবার থাকে। আর্থিকভাবে তারা অসচ্ছল। খেটে খাওয়া মানুষ। গত কয়েকদিন আগে ঐ পরিবারের বড় ছেলে অসুস্থ হয়ে যায়। অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরলে আমার স্ত্রী বলল, রাকেশ বাবুর বড় ছেলেটা খুব অসুস্থ। বেচারা গরিব মানুষ। হয়ত চিকিৎসাও করতে পারবে না। যদি একটু দেখে আসতেন। কথাটা খুব যৌক্তিক মনে হল। তাই বাজার থেকে কিছু ফলমূল ও শুকনো খাবার নিয়ে ছেলেটাকে দেখতে গেলাম। আর আসার সময় ছেলেটিকে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য বেশ কিছু টাকাও দিয়ে এলাম।

কিন্তু পরের দিন ফজর নামাযের পর আমার এক চাচাতো ভাই বলল, আপনি নাকি রাকেশ বাবুর ছেলেকে ফলমূল ইত্যাদি নিয়ে দেখতে গেছেন এবং আর্থিক সাহায্যও করেছেন? আমি বললাম, হাঁ। সে বলল, তারা তো হিন্দু, মুশরিক। এরা তো ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু। আপনি অনেক বড় গুনাহ করেছেন। আপনার তওবা করা উচিত। তাই মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, তাদেরকে সহযোগিতা করায় আমার কি গুনাহ হয়েছে? এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কী?

Answer

প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও তার সাথে সদাচরণ করা, বিপদাপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা, অসুস্থ হলে খোঁজ-খবর নেওয়া ও সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

لَا یَنْهٰىكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِیْنَ لَمْ یُقَاتِلُوْكُمْ فِی الدِّیْنِ وَلَمْ یُخْرِجُوْكُمْ مِّنْ دِیَارِكُمْ اَنْ تَبَرُّوْهُمْ وَ تُقْسِطُوْۤا اِلَیْهِمْ، اِنَّ اللهَ یُحِبُّ الْمُقْسِطِیْنَ.

দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। [সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ৮]

হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস রা. বলেন-

أَنّ غُلاَمًا لِيَهُودَ كَانَ يَخْدُمُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَمَرِضَ فَأَتَاهُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَعُودُهُ، فَقَالَ: أَسْلِمْ، فَأَسْلَمَ.

এক ইহুদী বালক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। অতপর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। ফলে সে মুসলমান হয়ে  গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৫৭

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হিন্দু ছেলেটাকে দেখতে যাওয়া ও আর্থিক সহযোগিতা করা অন্যায় হয়নি; বরং প্রতিবেশীর হক আদায়ের কারণে তা প্রসংশনীয় গণ্য হবে।

তবে অসুমলিমদের সাথে ঘনিষ্ঠতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়া নিষেধ। কুরআনুল কারীমে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

-ফাতহুল বারী ৩/২৬২; ১০/১২৫; উমদাতুল কারী ২১/২১৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৮;

Sharable Link

হাসান ফিরোজ - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৪৬২২. Question

অনেক সময় রাস্তাঘাটে টাকা-পয়সা পাওয়া যায়। খোঁজাখুঁজির পরও যদি মালিক না পাওয়া যায় তাহলে কী করা হবে? অনেকে বলে, মসজিদে দিয়ে দিতে। মসজিদে দেয়া কি জায়েয হবে? অন্যথায় করণীয় কী?

Answer

রাস্তা-ঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, যদি টাকার পরিমাণ এত কম হয় যে, মালিক তা অনুসন্ধান করবে না বলে মনে হয় তবে কোনো ফকীরকে তা সদকা করে দিবে। আর যদি অনেক টাকা বা মূল্যবান কোনো বস্তু পাওয়া যায় এবং মালিক এর খোঁজে থাকবে বলে মনে হয় তাহলে ঐ স্থান ও আশপাশ এবং নিকটবর্তী জন-সমাগমের স্থানে (যথা মসজিদের সামনে, বাজারে, স্টেশনে ইত্যাদিতে) প্রাপ্তির ঘোষণা দিতে থাকবে এবং প্রকৃত মালিক পেলে তার কাছে হস্তান্তর করে দিবে। কিন্তু এরপরও যদি মালিক না পাওয়া যায় এবং মালিকের সন্ধান পাওয়া যাবে না বলে প্রবল ধারণা হয় তাহলে তা কোনো গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দিবে। প্রাপক দরিদ্র হলে সে নিজেও তা রেখে দিতে পারবে। আর কুড়িয়ে পাওয়া টাকা মসজিদে দেওয়া যাবে না। প্রশ্নের ঐ কথা ঠিক নয়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৭৮; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৭১

Sharable Link