মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান - যশোর

৪২১৪. Question

আমাদের এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবের বাম হাতটি অচল। তাই তাকবীরে তাহরীমার সময় তিনি শুধু ডান হাত কান পর্যন্ত ওঠাতে পারেন। বাম হাত ওঠাতে পারেন না। তবে তাকবীরে তাহরীমার পর কিয়ামে স্বাভাবিকভাবেই দুই হাত নাভীর নীচে বাঁধতে পারেন।

কিছু কিছু লোক বলছে, অন্য সুস্থ ইমাম পাওয়া গেলে এই ইমামের পেছনে নামায সহীহ হবে না। সুস্থ ইমাম পাওয়া পর্যন্ত তিনি ইমামতি করতে পারবেন।

মুফতী সাহেবের কাছে বিনীত নিবেদন উক্ত ইমামের পেছনে নামায পড়ার হুকুম কী, তা জানিয়ে বাধিত করবেন। সুস্থ ইমাম পাওয়া যাওয়ার পর তার পেছনে নামায সহীহ হবে কি না? দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

প্রশ্নোক্ত ইমামের পেছনে নামায পড়তে সমস্যা নেই। তার ইমামতি সহীহ আছে। ইমামতির যোগ্য ব্যক্তি তার পেছনে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য যে, ইমামতির দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং শারীরিক ত্রুটি আছে এমন ব্যক্তির তুলনায় পরিপূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি স্থায়ী ইমাম হওয়া উত্তম। তবে যারা বলেছেন, সুস্থ ইমাম পাওয়া গেলে এই ইমামের পেছনে নামায সহীহ হবে না, তাদের কথা ঠিক নয়।

Ñআদ্দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার ১/৫৬২

Sharable Link

নাফিসা জুয়াইরিয়া - সেগুনবাগিচা, ঢাকা

৪২১৫. Question

কম্পাসের যে দিকটা পশ্চিম সাব্যস্ত হল তার থেকে কতটুকু পরিমাণ ডান বা বাম দিকে ঘুরে নামায পড়লেও নামায হয়ে যাবে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

Answer

শরীয়তের হুকুম হল, যারা কাবা শরীফ দেখছে তারা তো সরাসরি কাবা বরাবর মুখ করেই নামায পড়বে। আর যারা দূরে; কাবা দেখছে না, তারা কাবা ঘর যেদিকে অবস্থিত সেদিকে ফিরে নামায পড়বে।

এক্ষেত্রে নির্ধারিত ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি পরিমাণ ডানে বা বামে সিনা সরে গেলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে। এর চেয়ে বেশি পরিমাণ ঘুরে গেলে নামায সহীহ হবে না।

উদাহরণস্বরূপ কোনো এলাকার কিবলার দিক যদি ২৭৭ ডিগ্রিতে হয়  তাহলে এর থেকে উত্তরে ২৭৭+৪৫=৩২২ ডিগ্রি পর্যন্ত সিনা ঘুরে গেলেও নামায হয়ে যাবে। এর চেয়ে বেশি ঘুরলে নামায সহীহ হবে না। তেমনি এর থেকে দক্ষিণে ২৭৭-৪৫=২৩২ ডিগ্রি পর্যন্ত সিনা ঘুরে গেলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে। এর চেয়ে বেশি দক্ষিণে ঘুরলে নামায সহীহ হবে না।

উল্লেখ্য, কম্পাসের মাধ্যমে দিকনির্ণয় করতে হলে প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে যে, কম্পাসটি সঠিক দিক নির্দেশ করছে কি না।

প্রকাশ থাকে যে, নামায আদায় করতে হবে সরাসরি কিবলার দিকে ফিরেই। ইচ্ছা করে ডানে বা বামে ঘুরবে না। তারপরও কখনো ডানে বা বামে ঘোরা হয়ে গেলে কতটুকু ঘোরা হচ্ছে সে অনুযায়ী কী হুকুম হবে তাই আগে বলা হয়েছে।

Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৪; মাআরিফুস সুনান ৩/৩৭৫; আলফাতাওয়াল খাইরিয়্যা ১/১৭; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম - পলাশ, নরসিংদী

৪২১৬. Question

আমাদের এলাকায় এক মহিলা মারা যাওয়ার পর তার স্বামী তাকে গোসল দিতে চাইলে কিছু লোক তাকে মানা করে বলে যে, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে দেখা, স্পর্শ করা এবং গোসল দেওয়া সবই হারাম হয়ে যায়। কিন্তু লোকটি কারো কথা না শুনে স্ত্রীকে গোসল দিয়ে দেয়। পরে মসজিদের ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এ কাজটি মাকরূহ হয়েছে। তাই এখন জানার বিষয় হল এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী স্বামীর জন্য তার মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখা জায়েয। মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখা হারাম বলা ঠিক নয়। কিন্তু স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে স্পর্শ করা, গোসল দেওয়া জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির জন্য তার মৃত স্ত্রীকে গোসল দেওয়া অন্যায় হয়েছে। এজন্য তাকে ইস্তেগফার করতে হবে।

Ñকিতাবুল আছল ১/৩৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮

Sharable Link

আবদুল্লাহ - সদর, মোমেনশাহী

৪২১৭. Question

আমি যে মসজিদে ইতিকাফ করি সে মসজিদে প্রায় প্রতি বছরই একটা বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়। কেউ বলেন, ইতিকাফকারী জানাযার নামাযের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। আর কেউ বলেন, বের হতে পারবে। কোন্ কথাটি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

ইতিকাফকারী জানাযার নামাযের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে তার ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে তাকে পরবর্তীতে রোযাসহ ঐ দিনের ইতিকাফ কাযা করে নিতে হবে।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,

السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ أَنْ لَا يَعُودَ مَرِيضًا، وَلَا يَشْهَدَ جَنَازَةً.

ইতিকাফকারীর জন্য নিয়ম হল, সে রোগীর সেবা-শুশ্রুষার জন্য বের হবে না এবং জানাযায় শরীক হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৬৫)

Ñফাতহুল বারী ৪/৩২১; কিতাবুল আছল ২/১৮৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪

Sharable Link

আতিকুর রহমান - সদর, ময়নসিংহ

৪২১৮. Question

আমি গত বছরের শেষদিকে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছি। সিকিউরিটি এ্যাডভান্স

হিসেবে দশ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। এ দশ লক্ষ টাকা থেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে কিছু কিছু করে ভাড়া হিসেবে কাটা হবে। আমি প্রতি বছর আমার যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ হিসেব করে তা থেকে দেনা মাইনাস করে বাকি সম্পদের ২.৫% যাকাত দিয়ে থাকি।

এখন আমি জানতে চাচ্ছি, সিকিউরিটি এ্যাডভান্স হিসেবে যে দশ লক্ষ টাকা আমি দিয়েছি, তার যাকাত আমাকে দিতে হবে কি না? যতি দিতে হয় তাহলে তার হিসাব কীভাবে হবে? এ টাকা থেকে তো প্রতিমাসে একটা অংশ ভাড়া হিসেবে কেটে নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জানানোর বিনীত অনুরোধ রইল।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি আপনি ফ্ল্যাট মালিককে দশ লক্ষ টাকা এ শর্তে দিয়ে থাকেন যে, তা থেকে মাসে মাসে কিছু ভাড়া কর্তন হবে তবে তা অগ্রীম ভাড়া হিসেবে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে দোকানওয়ালা ঐ টাকার মালিক হয়ে যাবে। তাই এর যাকাত তাকেই আদায় করতে হবে। আপনাকে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।

Ñফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৯

Sharable Link

তামান্না - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২১৯. Question

মাননীয় সম্পাদক সাহেব, আমি একটি মাসআলা জানতে চাচ্ছি। দুই বছর পূর্বে বিবাহের সময় আমি আট ভরি স্বর্ণের মালিক হয়েছি। আমরা জানি, সাড়ে সাত ভড়ি স্বর্ণ থাকলে যাকাত ফরজ হয়। আমার কাছে সব সময় নগদ টাকা থাকে না। এ বছর আমার কাছে নগদ কিছু টাকা এসেছে। আমি চাচ্ছি, একসাথে কয়েক বছরের যাকাত অগ্রিম আদায় করে দিব। এভাবে কয়েক বছরের যাকাত একসাথে দিলে যাকাত আদায় হবে কি না? যদি এভাবে যাকাত আদায় না হয়, তাহলে আমার কী কারণীয়? কারণ, আমার কাছে তো সবসময় নগদ টাকা থাকে না। বিষয়টির সঠিক সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।

Answer

আপনি যেহেতু নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক তাই আপনার জন্য কয়েক বছরের অগ্রীম যাকাত আদায় করা সহীহ হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাস রা. থেকে দুই বছরের অগ্রীম যাকাত উসূল করেছিলেন।

Ñআলমুজামুল কাবীর তাবারানী, হাদীস ৯৯৮৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৫৬; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক ৪/৮৬; কিতাবুল আছল ২/১২৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৬৬; বাদায়েউস সনায়ে ২/১৬৪; এলাউস সুনান ৯/৫৪

Sharable Link

নাফিসা জুয়াইরিয়া - যাত্রবাড়ি, ঢাকা

৪২২০. Question

কোনো ব্যক্তির উপর হজ¦ ফরয হওয়ার পর সে তা আদায় করল না। এভাবে বিলম্ব করার পর একসময় তার সম্পদ খরচ হয়ে গেল। এবং তার ঐ পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকল না, যা দ্বারা তার উপর হজ¦ ফরয হয়। এমতাবস্থায় তার করণীয় কী?

 

Answer

হজ¦ ফরয হওয়ার পর তা আদায় করার আগেই সম্পদ অন্য কোনো খাতে ব্যয় হয়ে গেলেও সে ব্যক্তির যিম্মায় হজ¦ বাকি থেকে যায়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব হজ্বের জন্য টাকা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। যদি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সামর্থ্য ফিরে না পায় তাহলে অসিয়ত করে যাবে যেন তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একতৃতীয়াংশ থেকে বদলি হজ¦ আদায় করা হয়।

উল্লেখ্য, হজ¦ ফরয হয়ে যাওয়ার পর তা আদায়ে বিলম্ব করা কিছুতেই উচিত নয়। বরং সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে তা আদায় করে নেয়া আবশ্যক।

Ñফাতহুল কাদীর ২/৩২০; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৪৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪; ইমদাদুল আহকাম ২/১৫৭

Sharable Link

আশরাফ হোসাইন - সদর মোমেনশাহী

৪২২১. Question

এ বছর হজে¦র সময় ফরজ তাওয়াফের পূর্বে আমার পা অনেকটা কেটে যায়। ফরজ তাওয়াফ করার সময় ক্ষত স্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। তখন তাওয়াফ ছেড়ে দিয়ে ক্ষত স্থান ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করে নতুন করে অযু করে তাওয়াফ করি। তাওয়াফের পর মীনায় চলে যাই। মীনায় যাওয়ার পর দেখি জামার পেছনে প্রায় এক বিঘত পরিমাণ জায়গায় রক্ত লেগে আছে। জামায় রক্ত কোন্ সময় লেগেছে তা নিশ্চিতভাবে জানা নেই। তবে আমার প্রবল ধারণা হল, তাওয়াফের সময় যখন রক্ত গড়িয়ে পড়েছিল তখন লেগেছে অথবা ব্যান্ডেজ করার সময় লেগেছে। কারণ ব্যান্ডেজ করার পর আর রক্ত বের হয়নি।

মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলে ঐ কাপড় পরে তাওয়াফ করা সহীহ কি না? এবং ঐ কাপড় পরে তাওয়াফ করলে কোনো জরিমানা দিতে হবে কি না? আর উপরে বর্ণিত ঘটনায় আমার ঐ তাওয়াফ সহীহ হয়েছে কি না? এবং আমার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে কি না? দ্রুত উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

 

Answer

তাওয়াফের জন্য অযু থাকা ওয়াজিব। আর শরীর ও কাপড় পাক থাকা সুন্নাতে মুআক্কাদা। অপবিত্র কাপড় পরে তাওয়াফ করা মাকরূহ হলেও তাওয়াফ হয়ে যায়। এবং কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয় না। তাই আপনার তাওয়াফ আদায় হয়ে গেছে এবং কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। তবে জেনেশুনে অপবিত্র কাপড় নিয়ে তাওয়াফ করা উচিত নয়।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৪/৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩; বাদায়েউস সনায়ে ২/৩১০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৫৩০; মানাসিক, মোল্লা আলি আলকারী পৃ. ১৫১

Sharable Link

মুজীবুর রহমান - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২২২. Question

হজে¦র পর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় গিয়েছিলাম। এরপর সেখান থেকে ইহরাম না বেঁধেই মক্কায় চলে এসেছি। এবং দেশেও চলে এসেছি। এখন উপায় কী?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মদীনা থেকে মক্কায় আসার সময় মীকাত থেকে ইহরাম করে আসা জরুরি ছিল। এক্ষেত্রে মক্কায় চলে আসলেও আপনার কর্তব্য ছিল, আবার কোনো মিকাতে ফিরে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসা। কিন্তু আপনি তা না করে ভুল করেছেন। সুতরাং আপনি যদি মক্কায় এসে কোনো উমরা না করে থাকেন তাহলে আপনাকে উক্ত উমরার কাযা করতে হবে। আপনি পুনরায় হারামাইনের সফরে গেলে ঐ উমরার কাযা করে নিবেন।

আর যদি আপনি মক্কায় এসে মীকাতের ভেতরের কোনো স্থান থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা করে থাকেন তাহলে আপনাকে উমরার কাযা করতে হবে না। তবে এক্ষেত্রে মীকাত থেকে ইহরাম না বাঁধার কারণে জরিমানাস্বরূপ একটি দম দিতে হবে।

উল্লেখ্য, দম অর্থ এক বছর বয়সী ছাগল,

ভেড়া বা দুম্বা যবাই করা। অথবা গরু, মহিষ বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ কুরবানী করা।

আর এ দমের পশু মক্কার হেরেমের সীমানার ভেতরেই যবাই করা জরুরি। অতএব, মক্কায় অবস্থানকারী অথবা গমণকারী কারো মাধ্যমে সেখানেই তা জবাই করতে হবে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪১৩; আহকামুল কুরআন জাস্সাস ২/৪৭৭; আদ্দুররুর মুখতার ২/৫৭৯, ৬১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬১; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৮৭, ৩৯৩; এলাউস সুনান ১০/৩৯৫

Sharable Link

জাহিদুল কবির ভূইয়্যা - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২২৩. Question

সন্তান যদি ব্যাংকে চাকরী করে তবে কি সন্তানের বেতনের টাকায় তার বাবা-মা হজ্ব করতে পারবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

Answer

ব্যাংকের চাকুরী থেকে উপার্জিত টাকা হালাল নয়। আর হারাম টাকা দ্বারা হজ্ব করলে তা কবুল হয় না। তাই সন্তানের ব্যাংকের চাকুরি থেকে উপার্জিত টাকা দ্বারা বাবা-মা হজ্ব করতে পারবে না। এমনকি ছেলে নিজেও এ টাকা দিয়ে হজ্ব করবে না। বরং পবিত্র হালাল টাকা দিয়ে হজ¦ করবে। মুসলমানের জন্য হারাম পন্থায় উপার্জন করা এবং তা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

Ñআদ্দুররুল মুখতার ২/৪৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৯; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ০৮

Sharable Link

ইবনে আবদুস সামাদ - মোমেনশাহী

৪২২৪. Question

এক ব্যক্তি ওমরা করার সময় সাঈতে ছয় চক্কর দিয়েই মাথা মু-িয়ে হালাল হয়ে যায়। এরপর সে আর সাঈর বাকি চক্কর পূর্ণ করেনি। এভাবেই দেশে চলে আসে।

প্রশ্ন হল, তার ওমরা সহীহ হয়েছে কি না? সহীহ না হলে তার কী করণীয়? আর যদি সহীহ হয়ে থাকে তাহলে তার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাঈর সপ্তম চক্কর ছুটে গেলেও ওমরা আদায় হয়ে গেছে। তবে এক চক্কর ছুটে যাওয়ার কারণে এক ফিতরা পরিমাণ সদকা করা ওয়াজিব হয়েছে। এক্ষেত্রে মক্কা এলাকার হিসাব অনুযায়ী সদকা দিবে। আর এ সদকা চাইলে দেশের ফকীর-মিসকীনকেও দেওয়া যাবে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৪/৫১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৮

Sharable Link

আমেনা বেগম - সদর, রংপুর

৪২২৫. Question

১. কিছুদিন আগে আমি ওমরার সফরে গিয়েছিলাম। সাথে ছিলেন বয়স্ক চাচাতো ভাই এবং চাচীজান। যেহেতু চাচী সার্বক্ষণিক সাথেই থাকবেন এবং ছিলেনও, তাই ভেবেছি চাচাতো ভায়ের সাথে সফর করতে দোষ নেই। তাছাড়া অনেকে এমনটা বলেছিলো। কিন্তু মাদরাসা পড়–য়া আমার ভাগিনা বলেছে আমাদের সফর করা ঠিক হয়নি। আবার কিছু কিছু লোক (যাদের মধ্যে আলেমও আছেন) বলেছেন কোনো অসুবিধা নেই।

বিষয়টা দলীলসহ জানতে চাই?

২. আরেকটি কথা হল আমার বয়স কিন্তু ষাট পার হয়ে সত্তরের কোঠায়। কোনো কোনো আলেমের মুখে শুনেছি, বয়স বেড়ে গেলে তার পর্দা করা জরুরি না। তা কি ঠিক?

৩. ইদানিং অনেক মহিলাকে দেখি হিজাব পরে, কিন্তু চেহারা ঢাকে না। তারা বলে যে, পর্দার জন্য চেহারা ঢাকতে হয় না। এসব কথা আমার কাছে কেমন কেমন লাগে। কথাগুলো আসলেই ঠিক না হলে বিষয়গুলো একটু দলীলসহ মজবুতভাবে যদি পেশ করেন হযরতের জন্য বিশেষ দুআ থাকবে ইনশাআল্লাহ!

Answer

১. মাহরাম পুরুষ ছাড়া আপনার জন্য ওমরার সফরে যাওয়া জায়েয হয়নি। নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া সফরসম কিংবা এর চেয়ে বেশি দূরত্বের সফরে যাওয়া বৈধ নয়। এমনকি হজে¦র সফরে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لَا تَحُجّنّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا ذُو مُحْرِمٍ.

কোন নারী যেন মাহরাম ছাড়া হজ¦ না করে। Ñসুনানে দারাকুতনী, ২/২২২-২২৩

সুতরাং এজন্য আল্লাহর দরবারে তাওবা ইসতেগফার করতে হবে। তবে আপনার ওমরাটি আদায় হয়ে গেছে। Ñতাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৪; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৯৯

২. বয়স বেড়ে গেলে পর্দা করা জরুরি নয়Ñ এ কথা ঠিক নয়। ৬০ বছর বা এর বেশি হলেও পর্দার বিধান থাকে। তবে কোনো নারী যদি অনেক বেশি বৃদ্ধা হয়ে যান সেক্ষেত্রে তার জন্য চেহারা ঢাকার হুকুম শিথিল হয়ে যায়। তবে এমন বৃদ্ধার জন্যও পরিপূর্ণ পর্দা করে চলাই উত্তম। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনÑ

وَ الْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَآءِ الّٰتِیْ لَا یَرْجُوْنَ نِكَاحًا فَلَیْسَ عَلَیْهِنَّ جُنَاحٌ اَنْ یَّضَعْنَ ثِیَابَهُنَّ غَیْرَ مُتَبَرِّجٰتٍۭ بِزِیْنَةٍ ؕ وَ اَنْ یَّسْتَعْفِفْنَ خَیْرٌ لَّهُنَّ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ.

আর বয়স্কা বৃদ্ধা নারীগণ, যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাদের কোনো অপরাধ নেই যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বহির্বাস খুলে রাখে। তবে এটা থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।  [সূরা নূর (২৪) : ৬০] Ñআহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩৩৪; আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ১২/২০৩, ৯/৩৪৯; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ৩/১৪০১; এলাউস সুনান ১৭/৩৭৩

৩. পরপুরুষের সামনে নারীদের চেহারাও পর্দার অন্তুর্ভুক্ত। চেহারা ঢাকা জরুরি নয়Ñ এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনÑ

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَ بَنٰتِكَ وَ نِسَآءِ الْمُؤْمِنِیْنَ یُدْنِیْنَ عَلَیْهِنَّ مِنْ جَلَابِیْبِهِنَّ ؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤی اَنْ یُّعْرَفْنَ فَلَا یُؤْذَیْنَ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا

হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিন নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। Ñসূরা আহযাব (৩৩) : ৫৯

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখম-ল আবৃত করে। আর শুধু এক চোখ খোলা রাখে। (তাফসীরে তাবারী ১০/৩৩২)

মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. বলেন, আমি আবীদা সালমানী রহ.-কে উক্ত আয়াত সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কাপড় দ্বারা ঢাকবে। তারপর তিনি এটি  (বোঝানোর জন্য) দেখাতে গিয়ে মাথা ও চেহারা ঢেকে নিলেন এবং একটি চোখ খোলা রাখলেন।

একই রকম ঘটনা ইবনে আওন রাহ. প্রমুখ

তাবেঈ থেকেও বর্ণিত আছে। (তাফসীরে তাবারী ১০/৩৩২)

আয়েশা রা. বলেনÑ

يَرْحَمُ اللَّهُ نِسَاءَ المُهَاجِرَاتِ الأُوَلَ لَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ {وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ} شَقَّقْنَ مُرُوطَهُنَّ فَاخْتَمَرْنَ بِهَا.

আল্লাহ তাআলা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহ তাআলা যখন وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ আয়াতটি নাযিল করলেন তখন তারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭৫৮

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন,

فَاخْتَمَرْنَ أَيْ غَطَّيْنَ وُجُوهَهُنَّ.

তখন তারা মুখম-ল আবৃত করেছেন। (ফাতহুল বারী ৮/৩৪৭)

আল্লামা আইনী রাহ.ও উমদাতুল কারীতে একই ব্যাখ্যা করেছেন। (উমদাতুল কারী ১৯/৯২)

সুতরাং কুরআন-হাদীসের দলীল দ্বারা চেহারা ঢাকার বিষয়টি প্রমাণিত।

এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : মাসিক আলকাউসার, অক্টোবর ২০১২ ঈ.। Ñআহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৩৭২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৮২৪; বাদায়েউস সনায়ে ৪/২৯৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ কুদরাতুল্লাহ - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২২৬. Question

হুযুর! আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি পথে কোনো শিশুকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে নিয়ে লালন পালন করে বড় করল। এখন সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে পরিচয়পত্রে বাবা হিসেবে ঐ ব্যক্তির নাম ব্যবহার করতে পারবে কি? যদি না পারে তাহলে সে পিতার নামে কী লিখবে?

 

Answer

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। নিজ পিতার স্থলে যে লালনপালন করছে তার নাম লেখা বা পিতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া জায়েয হবে না। পালক পুত্রদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম হল, তারা নিজ জন্মদাতা পিতার নামেই পরিচিত হবে। পিতৃপরিচয় জানা না থাকলে মুসলমানদের দ্বীনী ভাই হিসেবে পরিচিত হবে। কোনো অবস্থাতেই জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কাউকে নিজ পিতা হিসেবে পরিচয় দেয়া যাবে না।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ

اُدْعُوْهُمْ لِاٰبَآىِٕهِمْ هُوَ اَقْسَطُ عِنْدَ اللّٰهِ ۚ فَاِنْ لَّمْ تَعْلَمُوْۤا اٰبَآءَهُمْ فَاِخْوَانُكُمْ فِی الدِّیْنِ وَ مَوَالِیْكُمْ .

তোমরা পালকপুত্রদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এ পদ্ধতিই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ ন্যায়সঙ্গত। তোমাদের যদি তাদের পিতৃপরিচয় জানা না থাকে তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই ও তোমাদের বন্ধু। Ñসূরা আহযাব (৩৩) : ৫

সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ.

যে নিজ পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে পরিচয় দেয়, অথচ সে জানে যে, ঐ ব্যক্তি তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৭৬৬

প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত শিশুটি যেহেতু তার পিতার নাম জানেই না, তাই নিজ থেকে কোনো একটি নাম নির্ধারণ করে নিবে। যেমন, আবদুল্লাহ (‘আল্লাহর বান্দা’  অর্থে) লিখবে। কিন্তু পিতার স্থানে যে লালনপালন করছে তার নাম লিখতে পারবে না।

Ñআহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৩৫৪; আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ১৪/৮০; ফাতহুল বারী ১২/৫৪

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ মাসুম - খিলগাও, ঢাকা

৪২২৭. Question

কিছুদিন পূর্বে আমাদের প্রতিবেশী এক ব্যক্তি ইনতেকাল করেছেন। লোকটির বাড়ি কুমিল্লায়। তবে তার কুমিল্লার বাড়িতে বর্তমানে তার মেয়ে পরিবারসহ বসবাস করছে। লোকটি তার কর্মস্থল টাঙ্গাইলে জায়গা-জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি পরিবারসহ টাঙ্গাইলেই বসবাস করছিলেন। তবে কখনো কখনো তারা দীর্ঘদিনের জন্য কুমিল্লায় মেয়েদের কাছেও থাকতেন। লোকটি তার বর্তমান বাড়ি টাঙ্গাইলেই মারা গিয়েছে। এখন তার স্ত্রী সে বাড়িতেই ইদ্দত পালন করছে। পনের দিন হয়েছে তার স্বামী মারা গিয়েছে। এখন মহিলাটি ইদ্দতের বাকি সময় কুমিল্লার বাড়িতে তার মেয়ের নিকট কাটাতে চাচ্ছে। তার জন্য কি কুমিল্লার বাড়িতে ইদ্দত পালন করা জায়েয হবে?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের ঐ বাসায় যদি ইদ্দত পূর্ণ করা সম্ভব হয় তাহলে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করতে হবে। কেননা স্বামীর বাসস্থান থেকে ইদ্দত অবস্থায় বিশেষ ওযর ছাড়া সফর করা নাজায়েয।

তবে যদি একাকিত্ব বা অন্য কোনো কারণে সেখানে বসবাস করা অধিক কষ্টকর হয়ে যায় তাহলে ইদ্দতের বাকি অংশ কুমিল্লায় গিয়েও পালন করতে পারবে।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৪; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩৬

Sharable Link

মাহফুজ - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২২৮. Question

আমার একটা প্রশ্ন ছিল। আমি শুনেছি যে, ব্যভিচারী নারীদের পবিত্র পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।

এমন একজন পুরুষ যে কখনও কোনো নারীর সাথে অপবিত্র সম্পর্ক করেনি, সজ্ঞানে কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়নি। এমন পুরুষের কাছে এমন এক নারীর পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসল, যে নারী অতীতে ব্যভিচারী ছিল। কিন্তু লোকমুখে শোনা যায়, বর্তমানে সেই নারী সম্পূূর্ণভাবে পর্দা করে, দ্বীনের উপর চলে। এমতাবস্থায় সেই পুরুষের জন্য বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হওয়া কি ঠিক হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ পুরুষের জন্য উক্ত নারীকে বিয়ে করা জায়েয হবে। ঐ নারী যেহেতু তাওবা-ইস্তিগফার করে ভালো হয়ে গেছে তাই কোনো সৎপুরুষের জন্য তাকে বিয়ে করতে দোষ নেই। কারণ পূর্বে গুনাহের কাজ করে থাকলেও তাওবা-ইসতিগফার করে পর্দা-পুশিদার সাথে শরিয়তসম্মতভাবে চললে সে সৎ নারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

উল্লেখ্য যে, পবিত্র পুরুষদের জন্য পূর্বে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল এমন নারীকে বিয়ে করা হারামÑ প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়।

Ñআলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ১২/১১৩; আলজামেউস সগীর পৃ. ১৭৯; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৩৬৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১০৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫০

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাহমুদ হাসান - সিলেট

৪২২৯. Question

জনাব মুফতী সাহেব! আমার এলাকায় একটি বড় ওয়াক্ফকৃত কবরস্থান আছে। আমাদের এলাকার লোকদের জন্য চার ভাগের এক ভাগ জায়গাই যথেষ্ট। তাই মুতাওয়াল্লী সাহেব চাচ্ছেন উক্ত অবশিষ্ট জায়গাতে গাছ রোপণ করতে এবং উক্ত

কবরস্থানে অনেক লম্বা লম্বা ঘাস থাকার কারণে তা বিক্রি করতে চাচ্ছেন। এদিকে কিছু আলেম বলেছেন, কবরস্থানের ঘাস কাটা মাকরূহে তাহরীমি। তা নিয়ে এলাকায় দ্বন্দ্ব চলছে। এখন হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল,

ক. উক্ত কবরস্থানে গাছ লাগানো এবং তা কাটা জায়েয হবে কি না?

খ. ঘাস কাটা জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয হয় তাহলে তা নিলামে (বিক্রি) করা যাবে কি না?

গ. গাছ বা ঘাস বিক্রি করে কোন্ খাতে ব্যয় করতে হবে। কবরস্থানের খাত ছাড়া অন্য খাতে তা ব্যয় করা যাবে কি না?

Answer

ক. প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী উক্ত কবরস্থানের যে অংশটুকু বর্তমান প্রয়োজন-অতিরিক্ত সে অংশে কবরস্থান কর্তৃপক্ষের জন্য গাছ লাগানো এবং তা কাটা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে এই জায়গার আয় কবরস্থানেরই হবে। ভবিষ্যতে যখন এই জায়গা কবরের জন্য প্রয়োজন হবে তখন তা খালি করে দিতে হবে।

খ. প্রশ্নে কবরস্থানের যে ঘাস কাটার কথা বলা হয়েছে তা কোন্ অংশের ঘাস তা উল্লেখ করা হয়নি। যদি খালি জায়গার ঘাস হয় তবে তা কেটে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ বিক্রি করতে পারবে। নিলামেও বিক্রি করতে পারবে। এবং এ টাকাও কবরস্থানের মালিকানা গণ্য হবে।

আর ঘাস যদি সরাসরি কবরের উপরের বা কবরের সাথে লাগানো জায়গার হয় এবং তাজা ঘাস হয় তাহলে তা না কাটাই উত্তম। কেননা, সরাসরি কবরের উপরের ও তার আশপাশের তাজা ঘাস বিনা প্রয়োজনে কাটা মাকরূহে তানযিহী তথা অনুত্তম।

প্রকাশ থাকে যে, যারা কবরস্থানের ঘাস কাটা মাকরূহে তাহরীমি বলেছেন তাদের কথা ঠিক নয়। ফুকাহায়ে কেরামের আলোচনাকে সামনে রেখে মুফতী কেফায়াতুল্লাহ দেহলভী রাহ. ও আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী রাহ. বিনা প্রয়োজনে কবরের উপরের তাজা ঘাস কাটাকে মাকরূহে তানযিহী বলেছেন।

গ. ওয়াক্ফকৃত কবরস্থানের গাছ ও ঘাস ইত্যাদি যাই বিক্রি করা হোক তা কবরস্থানের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের কাজেই ব্যয় করতে হবে। অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। Ñফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৫, ৩/৩১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৪৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬০৭; ফতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৪৫; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৮৪; কেফায়াতুল মুফতী ১০/৫০০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলী আকবর - কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

৪২৩০. Question

 আমাদের এলাকায় হিন্দুদের একটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। এবার তারা আমাদের এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় তারা এলাকার মসজিদেও উন্নয়নের জন্য অনুদান দিতে চাচ্ছে।

এখন আমরা জানতে চাচ্ছি, হিন্দুদের সংগঠনের দেয়া অনুদান মসজিদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয হবে কি না? জায়েয হলে তা মসজিদের কোন্ কোন্ কাজে ব্যয় করা যাবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

মসজিদ মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের স্থান। ইসলামের অন্যতম প্রধান শিআর। এর রক্ষণাবেক্ষণ, প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করা মুসলমানদেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনÑ

اِنَّمَا یَعْمُرُ مَسٰجِدَ اللّٰهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ وَ لَمْ یَخْشَ اِلَّا اللّٰهَ فَعَسٰۤی اُولٰٓىِٕكَ اَنْ یَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِیْنَ.

আল্লাহর মসজিদসমূহকে তো তারাই আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, নামায কায়েম করেছে, যাকাত প্রদান করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করেনি, এরূপ লোকদের সম্পর্কে আশা করা যায় যে, তারা হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। Ñসূরা তাওবা (৯) : ১৮

উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. বলেন,

فَاقْتَضَتْ الْآيَةُ مَنْعَ الْكُفَّارِ مِنْ دُخُولِ الْمَسَاجِدِ وَمِنْ بِنَائِهَا وَتُوَلِّي مَصَالِحِهَا وَالْقِيَامِ بِهَا لِانْتِظَامِ اللَّفْظِ لِلْأَمْرَيْنِ.

এ আয়াতের দাবি হল, মসজিদে প্রবেশ, মসজিদ নির্মাণ, এর রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে কাফেরদেরকে শরীক না করা। Ñআহকামুল কুরআন ৩/৮৭

তাই মসজিদের প্রয়োজনীয় খরচের ব্যবস্থা মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদানের মাধ্যমেই হতে হবে। এক্ষেত্রে অমুসলিমদের অনুদান গ্রহণ করা, মুসলমানদের দ্বীনী চেতনা ও মূল্যবোধপরিপন্থী।

Ñআলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৪১

Sharable Link

মুহাম্মাদ মাহদী হাসান - রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

৪২৩১. Question

আমাদের গ্রামের মসজিদের আর্থিক প্রয়োজন পূরণের জন্য বেশ কিছু ওয়াক্ফকৃত জমি আছে। এতে চাষাবাদ হয় এবং ভালো ফলন হয়। মসজিদ কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য  (সেক্রেটারী) এই ওয়াক্ফকৃত জমির একটি অংশ মুতাওয়াল্লীকে না জানিয়ে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। ক্রেতা এই জায়গাটিকে পারিবারিক কবরস্থান বানিয়েছে। তবে এতে এখনো কোনো মুর্দা দাফন করা হয়নি। বিনিময় হিসেবে সে অন্যত্র সমপরিমাণ জায়গা ও কিছু নগদ টাকা দিয়েছে। জানার বিষয় হল, এই বিক্রি সহীহ হয়েছে কি না? সহীহ না হলে এখন কী করণীয়? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
 

Answer

অনাবাদ বা বেদখল হয়ে যাওয়ার আশংকা না হলে ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি বিক্রি করা শরীয়তসম্মত নয়। সেক্রেটারী বা মুতাওয়াল্লী কারোই এমন অধিকার নেই।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদের জমি বিক্রি করা জায়েয হয়নি। কারণ প্রশ্নকারীর মৌখিক বর্ণনায় জানা গেছে যে, মসজিদের নিকটস্থ জমি বদল করেই দূরের জমি কেনা হয়েছে।

সুতরাং মুতাওয়াল্লী, মসজিদ কমিটি ও মুসল্লীদের দায়িত্ব হল, উক্ত জায়গার বিক্রয়চুক্তি বাতিল করে তা মসজিদের মালিকানায় পুনর্বহাল করা।

Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৬৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৭; আলইসআফ পৃ. ৩২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫১, ৩৮৮

Sharable Link

আবু নাবীল - প্রবাসী, কুয়েত

৪২৩২. Question

হুযুর! আমি মসজিদ নির্মাণের জন্য আমার একটি জায়গা ওয়াক্ফ করেছি। জায়গাটি অনেক নিচু হওয়ার কারণে শীঘ্রই সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তাই অস্থায়ীভাবে নামায চালিয়ে নেয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী উচুঁ জায়গাতে একটি ঘর বানিয়েছি। এখন আমি জানতে চাচ্ছি, এ ঘরটিও সাধারণ মসজিদের মতই কি না? এটাতে পাঞ্জেগানা নামায, জুমা, এতেকাফ সবকিছু আদায় করা যাবে কি না? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

 

Answer

অস্থায়ীভাবে নামাযের জন্য যে ঘরটি বানিয়েছেন তা মসজিদ নয়। এভাবে কোনো জায়গায় দীর্ঘদিন নামায পড়লেও তা মসজিদ হবে না। আর পাঞ্জেগানা নামায ও জুমার জন্য যেহেতু মসজিদ শর্ত নয় তাই উক্ত ঘরটিতে জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা সহীহ। তবে এখানে ইতিকাফ সহীহ হবে না। কেননা ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য মসজিদ হওয়া শর্ত।

Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯০; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৫১; আহাকামুল কুরআন জাস্সাস ১/২৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪০

Sharable Link

শেখ আসলাম - ফরিদপুর

৪২৩৩. Question

আমরা অনেক সময় দেখি, দোকানদার বা তার কর্মচারীরা পণ্য বিক্রয়ের সময়ই বলে দেয়, এখনই ভালোভাবে দেখে নিন। পরবর্তীতে কোনো সমস্যার কারণে আপত্তি করলে বা পণ্য ফেরত দিতে চাইলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা এ ব্যাপারে দায়মুক্ত। জানতে চাই, এ ধরনের শর্ত দিয়ে পণ্য বিক্রয় করার বিধান কী?

 

Answer

এ ধরনের শর্তের সাথে পণ্য বিক্রয় করা জায়েয আছে। ক্রেতা এ শর্ত মেনে নিয়ে ক্রয় করলে পরবর্তীতে পণ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে পণ্যটি ফেরত দেওয়ার বা ত্রুটির কারণে কিছু মূল্য ফেরত নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

Ñমুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৩৩৭; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/৭২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১৫৬; বাদায়েউস সনায়ে ৪/৫৪৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ রাসেল মিয়া - আলীপুর, কেরানীগঞ্জ

৪২৩৪. Question

আমার একটি সেলুনের দোকান আছে। সেটি খুব সাধারণ মানের। সেদিন আমার পরিচিত একজন প্রস্তাব দিল, তোমার দোকানটি তো খুব সাধারণ। এতে উন্নত ও সুন্দর কোনো ব্যবস্থা নেই। আর আমার কাছে প্রায় লাখ খানেক টাকা আছে। সেটা দিয়ে দোকানটাকে সুন্দর করে ডেকোরেশন করে নাও। আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও ক্রয় করে নাও। তাহলে কাস্টমারও বেশি হবে এবং চার্জও বেশি নিতে পারবে। আর আমিও তোমার সাথে থেকে কাজ শিখতেও থাকলাম, করতেও থাকলাম। এরপর মোট ইনকামের ৪০ ভাগ নেবে তুমি আর ৬০ ভাগ আমি।

তার প্রস্তাব আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। আর এতে বর্তমানের চেয়ে ইনকাম বেশি হবে বলেই মনে হচ্ছে। আর আমি সব বিষয়ে হালাল-হারামের প্রতি লক্ষ রেখে চলার চেষ্টা করি। তাই মুফতী সাহেবের কাছে বিশেষ আবেদন, দ্রুত বিষয়টির সমাধান জানালে অত্যন্ত উপকৃত হব।

Answer

বর্তমানে প্রচলিত সেলুনগুলোর অধিকাংশ কাজ শরীয়ত পরিপন্থী। তাই এর থেকে উপার্জনের সিংহভাগই অবৈধ। তবে কেউ যদি শরীয়তের গ-ির ভেতরে থেকে বৈধভাবে চুল কাটার কাজ বা অন্য কোনো বৈধ কাজ করে এবং দাড়ি কামানোসহ অন্যান্য নাজায়েয কাজ থেকে বিরত থাকে তাহলে উপার্জন হালাল হবে। সেক্ষেত্রে তার টাকা দিয়ে ডেকোরেশন ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করে আপনার দোকানে উভয়ে একত্রে কাজ করার চুক্তি করতে পারবেন। চুক্তির সময়ই উভয়ের লাভের অংশ নির্ধারণ করে নিতে হবে। তখন খরচ বাদে অর্জিত নীট মুনাফা থেকে উভয়ে নির্ধারিত হারে মুনাফার অধিকারী হবে।

উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উভয়ের একত্রে কাজ করার মাধ্যমে শরীকানা চুক্তি সম্পন্ন হবে। তবে এর কারণে সেলুনের আসবাবপত্র যৌথ মালিকানাধীন হয়ে যাবে না। বরং সেলুনের প্রত্যেকের খরচে কেনা বা বানানো জিনিসপত্র তার নিজেরই থাকবে। অতএব আপনারা কখনো পৃথক হয়ে গেলে নিজ নিজ সামানপত্র এককভাবে নিজেই নিতে পারবেন।

Ñআলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২২৮; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১৩৯১; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩২১

Sharable Link

মুহাম্মাদ মহিউদ্দিন - সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী

৪২৩৫. Question

কোনো মসজিদ কমিটির নিকট মসজিদের কিছু টাকা আছে। এখন কমিটির লোকজন চাচ্ছে, সেগুলো কোনো কাজে খাটিয়ে মুনাফা অর্জন করতে। তাই তারা একটি দোকান/ঘর এভাবে বন্ধক নিল যে, এক লক্ষ টাকা দোকান মালিককে দিয়ে তার থেকে দোকান বুঝে নিবে। অতপর সে দোকানটিকে দোকানের মালিক বা অন্য কারো নিকট ভাড়া দিয়ে দোকানের মাসিক ভাড়া মসজিদের ক্যাশে রাখবে। অতপর যখন মালিক এক লক্ষ টাকা দিয়ে দিবে তখন কমিটি তার দোকান তাকে বুঝিয়ে দিবে।

এখন প্রশ্ন হল, ১. মসজিদের টাকা মুনাফার আশায় খাটানো অথবা কাউকেও ঋণ দেওয়া যাবে কি না?

২. উপরোক্ত সুরতকে বন্ধক বলা যাবে কি না?

 

Answer

দোকান মালিকের সাথে প্রশ্নোক্ত চুক্তি নাজায়েয হয়েছে। তা মূলত সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া মসজিদের টাকা মসজিদ কর্তৃপক্ষের নিকট আমানত হিসেবে থাকে। এ টাকা মসজিদের প্রয়োজনে ব্যয় করার জন্য সর্বোচ্চ সচেতনতার সাথে হেফাজত করতে হবে। কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না এবং মসজিদের খরচের বাইরে অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। মসজিদের সাধারণ খরচাদি নির্বাহের পর যদি আরো টাকা জমা থাকে তবে তা দ্বারা যথাসম্ভব ইমাম, মুআজ্জিন ও খাদেমগণের সুবিধাদি বাড়ানোর চেষ্টা করবে এবং মুসল্লিদের নামায ও ইবাদতে আরাম হয় সে ব্যবস্থা নিবে। এরপরও টাকা জমা থাকলে তা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিবে।

অবশ্য মসজিদের উন্নয়নের জন্য যদি আলাদা ফান্ড তৈরী করা হয় তাহলে সে টাকা দ্বারা মসজিদের জন্য লাভজনক স্থায়ী কোনো আয়ের ব্যবস্থা করা জায়েয হবে। যেমন, দোকান, মার্কেট ইত্যাদি ক্রয় বা নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া যাবে। কিন্তু নাজায়েয কারবার অবলম্বন করা যাবে না। বর্তমানে ব্যবসায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেহেতু লোকসানের, এমনকি কোনো কোনো সময় মূলধন খোয়া যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে তাই  সাধারণ দানের টাকা দিয়ে মসজিদের জন্যও ব্যবসা করা যাবে না।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদের এক লক্ষ টাকা যেভাবে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা ঋণ হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে দোকানটি বন্ধক হিসেবে গণ্য। আর বন্ধকী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের এ ধরনের কারবার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা আবশ্যক। তাই মসজিদ কমিটির দায়িত্ব হল, চুক্তিটি বাতিল করে দেওয়া এবং দোকান ফেরত দিয়ে মসজিদের যে টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে তা ফেরত নিয়ে নেওয়া।

Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৬৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮১-১৮৩

Sharable Link

তাওহীদুল ইসলাম - মাধবদী, নরসিংদী

৪২৩৬. Question

আমরা একটি ইসলামী ব্যাংকের সাথে একটি লেনদেন করি। তা এভাবে হওয়ার কথা ছিল যে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে আড়াই লক্ষ টাকার মেশিন কিনে দিবে। আর আমাদেরকে ব্যাংককে দুইলক্ষ আশি হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরাসরি আমাদেরকে মেশিন দামদর করে কিনে দেয়নি। বরং আমরাই মেশিন বিক্রেতার সাথে দামদর করেছি। আর ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা আমাদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা যখন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে মেশিন বিক্রেতার কাছে যাই তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে একজন লোক আমাদের সাথে গিয়েছিল। মেশিন বিক্রেতার কাছে যাওয়ার পর ব্যাংক থেকে যে লোকটি আমাদের সাথে গিয়েছিল আমরা তার হাতে টাকা দেই আর তিনি মেশিন বিক্রেতাকে টাকা দেন। কিন্তু তিনি মেশিন বুঝে নিয়ে তা আমাদের হস্তান্তর করেননি।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে লেনদেন করা বৈধ হয়েছে কি না? বৈধ না হয়ে থাকলে এখন আমাদের কারণীয় কী?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যাংকের সাথে আপনাদের লেনদেনটি বৈধ পন্থায় হয়নি। কেননা উক্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের জন্য আবশ্যক ছিল উক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে মেশিনটি ক্রয়ের পর দখল বুঝে নেয়া, এরপর ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যে তা আপনাদের নিকট বিক্রি করা। কিন্তু প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং ব্যাংক প্রতিনিধি শুধু মূল্য পরিশোধ করেছে। পণ্যের দখল বুঝে নিয়ে আপনাদেরকে তা হস্তান্তর করেনি। তাই আপনাদের কাছে মেশিনটি বিক্রি করা সহীহ হয়নি।

এখন ব্যাংকের করণীয় হল, নিজ প্রতিনিধির মাধ্যমে উক্ত মেশিনের দখল বুঝে নিয়ে পুনরায় আপনাদের কাছে বিক্রি করা। তবেই আপনারা নিয়ম অনুযায়ী এর মালিক হবেন। আর ইতিমধ্যে মেশিনটির মূল্যের নামে কোনো টাকা পরিশোধ করে থাকলে তা সমন্বয় করে নিতে পারবেন।

Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৮২; আলমাআয়ীরুশ শরইয়্যা পৃ. ১২১, ১২৩; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ২/১৫৩৯, ১৫৯৯

Sharable Link

জাহেদ হাসান - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২৩৭. Question

আমি একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (গখগ) কোম্পানিতে কাজ করতাম। এখানে ২জন লোক জয়েনিং করানোর পর তারা যতজন লোককে পরবর্তীতে জয়েন করাবে তাদের থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা টাকার এমাউন্ট পেতেই থাকব। যদিও আমি কোনো কাজ না করি। পরবর্তীতে আমি জানতে পেরেছি, এটা নাকি হারাম। শরীয়তের দৃষ্টিতে এই (গখগ) কোম্পানিগুলো থেকে এভাবে পাওয়া টাকাগুলো আমার জন্য হালাল হবে নাকি হারাম? বিস্তারিত জানতে চাই।
 

Answer

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি শরীয়তসম্মত নয়। এতে শরীয়ত নিষিদ্ধ আলগারার, উজরত বিলা আমাল (শ্রমবিহীন বিনিময়) ও আকলুল মাল বিলবাতিল অর্থাৎ শরীয়ত নিষিদ্ধ পন্থায় অর্থ অর্জন করার মত বড় বড় খারাবী বিদ্যমান আছে।

সুতরাং এই অবৈধ মার্কেটিং পদ্ধতিতে যে টাকা অর্জিত হবে তা জায়েয হবে না। না বুঝে কেউ এমন টাকা গ্রহণ করে ফেললে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে।

Ñসূরা নিসা (৪) : ২৯; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/১৭২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৯

Sharable Link

জামীল আহমাদ - তেজগাঁও, ঢাকা

৪২৩৮. Question

আমি কাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী। আমি ফ্যক্টরী থেকে ২৫-৩০ হাজার পিস গেঞ্জি একসাথে ক্রয় করি। যখন আমার গোডাউনে ২৫-৩০ কার্টুন গেঞ্জি আসে তখন সব গেঞ্জি চেক করা সম্ভব হয় না। আমরা ৮-১০ টা কার্টুন থেকে কয়েকটা গেঞ্জি চেক করি। তখন কোনো কার্টুনে যদি কোনো একটি গেঞ্জিতে খুঁত পাওয়া যায় তাহলে আমরা ঐ কার্টুনের সব গেঞ্জি ফেরত পাঠিয়ে দেই। এভাবে কখনো কখনো ২৫-৩০ কার্টুন থেকে ২-৩ টি কার্টুন ফেরত দিয়ে বাকিগুলো গোডাউনে তুলি। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমাদের ব্যবসার উক্ত পদ্ধতি কি জায়েয আছে? নাকি আমরা সমস্ত পণ্য রাখতে বা ফেরত দিতে বাধ্য?

 

Answer

প্রশ্নোক্ত বর্ণনায় মনে হচ্ছে এভাবে এক-দুটি কার্টুন ফেরত দেওয়া আপনাদের ব্যবসায় রেওয়াজ রয়েছে এবং এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও আপত্তি থাকে না। সুতরাং খুঁতওয়ালা কার্টুন ফেরত দিয়ে ভালোগুলো রেখে দেওয়া জায়েয হবে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ১৩/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৮১

Sharable Link

রাসেল আহমাদ - শ্রীপুর, গাজীপুর

৪২৩৯. Question

আমি বর্তমানে এক বাসায় টিউশনি করি। বেতন সামান্য হওয়ায় আমার খরচ চালাতে কষ্ট হয়। আগামী মাস থেকে নতুন একটা টিউশনির প্রস্তাব পেয়েছি। যে ছেলে দুটিকে পড়াতে হবে তাদের বাবা একটি সুদি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। আমার জানামতে এ চাকুরী ছাড়া তার অন্য কোনো আয় নেই।

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবকে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন, এ টিউশনি করা জায়েয হবে না। বিষয়টি নিয়ে আমি খুব টেনশনে আছি।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমি যদি সেখানে টিউশনি করে শুধু টিউশন ফি গ্রহণ করি; বোনাস গিফ্ট ইত্যাদি গ্রহণ না করি তাহলেও কি আমার জন্য এই টিউশনি করা জায়েয হবে না?

উত্তরটি দ্রুত জানালে ভালো হয়। আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

 

Answer

প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী আপনার জানামতে লোকটির সম্পূর্ণ আয় যেহেতু হারাম এবং আপনার টিউশন ফি ঐ হারাম উপার্জন থেকেই দেয়া হবে, তাই আপনার জন্য টিউশনি করে তার থেকে বেতন গ্রহণ করা বৈধ হবে না।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ৩/৩৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৫২

Sharable Link

মাসউদ - বরগুনা

৪২৪০. Question

আমার চাচার একটি জমি আছে। সেখানে তিনি আগে সবজি চাষ করতেন। কিন্তু গত দুই-তিন বছরে তিনি তাতে সবজি চাষ করেননি। ফলে তাতে ঘাস জন্মেছে। এখন তিনি সেই জমি অন্য কাজে লাগাবেন। তাই তিনি তাতে জন্মানো  ঘাস বস্তা বস্তা আকারে বিক্রি করতে চাচ্ছেন। এজন্য দুই-তিনজন কৃষককে বলেছেন, তারা যদি ঘাস কিনতে চায়, তাহলে বস্তা প্রতি ৫০ টাকা করে দিয়ে তারা যেন সেই জমি থেকে ঘাস কেটে নিয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ঘাস বিক্রি করা কি বৈধ হবে?

 

Answer

ঐ ঘাসগুলো জমিতে থাকা অবস্থায় আপনার চাচার জন্য তা বিক্রি করা বৈধ হবে না। কেননা, ঘাসগুলো  এমনিতেই হয়েছে। তাতে আপনার চাচার শ্রম বা অর্থ  ব্যয় হয়নি। তাই জমিটি আপনার চাচার হলেও ঘাসগুলোতে তার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আপনার চাচা যদি ঐ ঘাস বিক্রি করতে চান, তাহলে তাকে তা কেটে নিতে হবে। এরপর তা বিক্রি করতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, চাষকৃত ঘাসের হুকুম এমন নয়। বরং যে চাষ করবে সেই এর মালিক। তাই এমন ঘাস জমিতে রেখেও বিক্রি করা জায়েয আছে।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩২১; আলবাহরুর রায়েক ৬/৭৭; বাদায়েউস সনায়ে ৪/৩৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৬

Sharable Link

এইচ এম আসাদ উল্লাহ - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৪২৪১. Question

আমাদের ওয়ালটনের শো-রুম আছে। আমরা বিভিন্ন মেয়াদে কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করি। কিস্তির মেয়াদের হিসাবে পণ্যের দাম বিভিন্ন রকম হয়। যেমন : কেউ ৩ মাসের কিস্তিতে ফ্রিজ কিনলে মূল্য ৩০০০০ টাকা। আবার ঐ পণ্যটিই ১২ মাসের কিস্তিতে কিনলে এর দাম ৩২,৫০০ টাকা। আরেকটি নিয়ম হল, কেউ পণ্য কেনার সময় ৬ মাসের  কিস্তির চুক্তি করার পর মাঝে যদি কোনো কিস্তি ফেল করে, তাহলে আমরা তাকে ডেকে বাধ্য করি, যাতে সে এরচে’ বেশি সময়ের কিস্তি গ্রহণ করে। তখন সে বাধ্য হয়েই ১২ মাসের কিস্তি গ্রহণ করে, ফলে সে ৩০,০০০ টাকার স্থলে ৩২৫০০ টাকা পরিশোধ করে। অতীতে ২-৩ জনের সাথে এমনটি হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন আগে এক হুযুর বললেন, উক্ত পদ্ধতি নাজায়েয। এখন মাননীয় মুফতী সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন হল :

ক. এভাবে কিস্তির মেয়াদের কম-বেশির ভিত্তিতে একটি পণ্য ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করা বৈধ কি না?

খ. উল্লেখিত কিস্তি ফেইলের ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তবায়িত পদ্ধতিটি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?

গ. যদি বৈধ না হয়, তাহলে উক্ত পদ্ধতিতে আমরা যেই দুই-তিনজন থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছি, তার কী হুকুম?

বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুনÑ আমীন।

Answer

ক. কিস্তির মেয়াদ কম বেশি হওয়ার কারণে পণ্যের মূল্য কম বেশি করা জায়েয। তবে শর্ত হল, কেনা বেচার সময় মেয়াদ অনুযায়ী একটা মূল্য চূড়ান্ত করে দিতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহক যদি পণ্যটি কিস্তিতে নেয় তবে তা কত মাসে পরিশোধ করবে এবং মোট কত টাকা পরিশোধ করবে তা চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার পর কোনো কিস্তি আদায়ে বিলম্ব হলেও মূল্য বাড়ানো যাবে না। অথাৎ পূর্ব নির্ধারিত মূল্য অপরিবর্তীত থাকবে। তাই গ্রাহকের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কিস্তি আদায় করে দেয়া। যেন বিলম্বের কারণে বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

খ. ও গ. কিস্তি যথা সময়ে আদায় না করলে আপনারা মূল্য বৃদ্ধির যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা শরীয়তসম্মত নয়। বরং তা সম্পূর্ণ সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত ও হারাম।

সুতরাং আপনাদের কর্তব্য হল, যাদের থেকে উক্ত পদ্ধতিতে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে সম্ভব হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া। আর যোগাযোগ করা সম্ভব না হলে সে টাকা তাদের পক্ষ থেকে গরীব-মিসকীনদের সদকা করে দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তাওবা-ইস্তিগফার করা। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩৭; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ শাহাদত হোসেন - টাঙ্গাইল

৪২৪২. Question

জনাব, আমরা জানি জবাইকারী কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়। কিন্তু জনৈক ব্যক্তি কুরবানীর পশু জবাইয়ের বিনিময়ে গোশত নেন।

এখন আমাদের প্রশ্ন হল,

১. কুরআন ও সহীহ হাদীসের দৃষ্টিতে কুরবানীর পশু জবাইয়ের পারিশ্রমিক হিসেবে গোশত নেওয়ার বিধান কী?

২. যদি কোনো ব্যক্তি কুরবানীর পশু জবাই করে গোশত নেয় তাহলে উক্ত জবাইকৃত পশুর কুরবানী কি সহীহ হবে? এর বিধান সবিস্তারে জানতে চাই।

৩. জবাইকারীকে পশু জবাইয়ের বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা দেওয়ার পর স্বেচ্ছায় গোশত দেওয়া যাবে কি?

কুরআন-হাদীসের আলোকে উক্ত মাসআলাগুলো জানিয়ে বাধিত করবেন।

Answer

কুরবানীর পশুর গোশত বিক্রি করা বা বিনিময় হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। এ কারণেই জবাইকারী, কসাই বা অন্য কোনো কাজে সহযোগিতাকারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয হবে না।

এ ব্যাপারে হাদীসে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ، وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلَّتِهَا، وَأَنْ لَا أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا، قَالَ: نَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর কুরবানীর উটের দেখাশোনা করতে আদেশ করেছেন। আর বলেছেন, আমি যেন কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া জিন সদকা করে দেই। এবং কুরবানীর পশু থেকে যেন কসাইয়ের পারিশ্রমিক না দেই। তিনি বলেছেন, কসাইয়ের পারিশ্রমিক আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে দিব। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৭

অতএব জবাইকারী বা কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত, চামড়া ইত্যাদি কোনো কিছু দেওয়া জায়েয হবে না।

কেউ কুরবানীর পশুর গোশত চামড়া ইত্যাদি দ্বারা পারিশ্রমিক দিলে তার কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে ত্রুটিযুক্ত হবে। এ ত্রুটি দূর করতে হলে পশুর গোশত, চামড়া ইত্যাদি থেকে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে তার মূল্য গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে।

আর জবাইকারী, কসাই ও কাজে সহযোগিতাকারীদেরকে যথাযথ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর স্বেচ্ছায় হাদীয়াস্বরূপ কুরবানীর পশুর গোশত দেওয়া যাবে। হাদীসে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা শুধু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭১; বাদায়েউস সনায়ে ৪/২২৫; ফাতহুল বারী ৪/৬৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১৬; হাশিয়াতুল শিলবী আলা তাবয়ীনিল হাকায়েক ৬/৪৮৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ সাঈদুর রহমান - কেন্দুয়া, নেত্রকোণা

৪২৪৩. Question

গত ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রচলিত ভুল শিরোনামে পেয়েছি যে, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ৩৩ বার সুবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার আর শত পূর্ণ করবে এই বলেÑ 

لَا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ .

আর এক রেওয়াতে আছে যে, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ৩৩ বার সুবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে।

এখন আমার জানার বিষয় হলÑ এই উভয় আমল কি অভিন্ন নাকি ভিন্ন ভিন্ন, না এগুলোর মাঝে কোনো পার্থক্য রয়েছে। সঠিক সমাধান চাই।

Answer

প্রশ্নে বর্ণিত তাসবীহ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতদুটি সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের অন্যান্য নির্ভরযোগ্য কিতাবাদিতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। মূলত এ দুটি ভিন্ন ভিন্ন আমল নয়। বরং একই আমলের দুটি পদ্ধতি। তাই দু’ভাবেই আমল করা যাবে।

কোনো কোনো মুহাদ্দিস বলেছেন, এভাবে আমল করা যেতে পারে যে, কখনো ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে। আর কখনো সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার ৩৩ বার করে পড়েÑ

لَا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

দ্বারা শতক পূর্ণ করবে। (ফাতহুল মুলহিম ২/১৭৮)

আবার দুটি হাদীসের উপর একত্রে আমল করারও সুযোগ রয়েছে। যা ইমাম নববী রাহ. উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেনÑ

فَيَنْبَغِي أَنْ يَحْتَاطَ الْإِنْسَانُ فَيَأْتِيَ بِثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ تَسْبِيحَةً وَمِثْلُهَا تَحْمِيدَاتٌ وَأَرْبَعٍ وَثَلَاثِينَ تَكْبِيرَةً وَيَقُولُ مَعَهَا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ إِلَى آخِرِهَا لِيَجْمَعَ بَيْنَ الرِّوَايَاتِ.

অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়ে একবারÑ

لَا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

পড়লে উভয় রেওয়ায়েত অনুযায়ী আমল হয়ে যাবে। (শরহে মুসলিম, নববী ৫/৯৪)

Sharable Link