আবিদ হোসেন - নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম

৩৮৭৫. Question

 

 

আমি একদিন বাসায় অযু করি। পানির লাইনে পানি কম থাকায় পুরো অযু শেষ করতে পারিনি। পা ধোয়ার আগেই পানি শেষ হয়ে যায়। এর দশ/বারো মিনিট পর পানি আসে। তখন আমি শুধু পা ধুয়ে নিই। ততক্ষণে আমার হাত মুখ শুকিয়ে গেছে। আমি যে এভাবে অযু করেছি তা কি সহীহ হয়েছে?


 

 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পা ধুতে বিলম্ব হলেও আপনার অযু হয়ে গেছে। তবে অযুর ক্ষেত্রে সুন্নত হলএক অঙ্গ শোকানোর আগেই পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করা। তাই বিনা ওজরে এমনটি করা যাবে না। ওজর বশত এমনটি হলে কোনো সমস্যা নেই। 

-বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮

Sharable Link

হাবীবুল্লাহ - ঢাকা

৩৮৭৬. Question

একদিন আমার ছোট ভাই চাকু দিয়ে ফল কাটার সময় হাত কেটে ফেলে। রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে। এভাবে দুতিনবার করার পর সেভলন লাগালে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় কি ওর অযু ভেঙেছে?


Answer

হাঁতার অযু ভেঙ্গে গেছে। কেননা গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হলেই অযু ভেঙ্গে যায়। টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলার কারণে গড়িয়ে না পড়লেও তার পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলেও অযু ভেঙ্গে যাবে।

-ফাতাওয়া খনিয়া ১/৩৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫

Sharable Link

আতিকুর রহমান - মেঘনা, কুমিল্লা

৩৮৭৭. Question

ক) জুমার দিন খুতবার পূর্বে বাংলায় বয়ান চলাকালে যিকির-আযকার বা কথাবার্তা বলা যাবে কি? নাকি খুতবার ন্যায় তাও চুপ করে শোনা ওয়াজিব?

খ) আমাদের এলাকায় এ কথা প্রচলিত আছে যে, মৃত ব্যক্তিকে যদি কবরে কেবলার দিক ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে শোয়ানো হয় এটা তার ঈমানবিহীন মৃত্যুর আলামত। এ কথা কি সঠিক?


Answer

ক) জুমার নামাযের পূর্বে আরবীতে যে খুতবা হয় তা শ্রবণ করা সকলের উপর ওয়াজিব। আর খুতবাপূর্ব বাংলায় যে বয়ান হয় তা জুমআর অংশ নয়। তা শ্রবণ করা ওয়াজিব নয়। তবে যেহেতু এটি দ্বীনী আলোচনা তাই এ সময় কথা বলা বা ব্যক্তিগত কাজ করা দ্বীনী মজলিসের আদবের পরিপন্থী। অতএব মুসল্লিদের উচিতঐ সময় ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা কাজে মশগুল না হয়ে দ্বীনী আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া। -বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৩আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৬৩

খ) নাঐ কথা ঠিক নয়। তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া কথা। মৃত ব্যক্তিকে ডান কাতে কিবলামুখী করে কবরে শোয়ানো সুন্নত। এভাবে সুন্নত নিয়মে দাফন করা জীবিতদের দায়িত্ব। কোনো মৃতের যদি সুন্নত নিয়মে দাফন না হয় তাহলে কাজটি ঠিক না হলেও এটাকে কোনোভাবেই ঈমানবিহীন মৃত্যুর আলামত বলা ঠিক নয়। -সুনানে আবু দাউদহাদীস ২৮৬৭এলাউস সুনান ৮/৩০৭;ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৪

Sharable Link

লোকমান রাহাত - টঙ্গী, গাজীপুর

৩৮৭৮. Question

গত রযমানে একদিন তারাবীহর নামাযের পূর্বে সিজদার আয়াতের কথা ঘোষণা করতে ভুলে যাই। সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা সত্ত্বেও বিশৃঙ্খলার ভয়ে আর সিজদা করিনি। এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায শেষ করেছি। জানতে চাই, আমাদের উক্ত নামায কি আদায় হয়েছে? যদি আদায় না হয়ে থাকে তবে এখন কী করণীয়?


Answer

তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা ওয়াজিব। নামাযের তিলাওয়াতে সিজদা নামাযেই আদায় করতে হয়। নামাযে আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায়ের সুযোগ থাকে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত তিলাওয়াতে সিজদা আদায় না করার কারণে গুনাহ হয়েছে। এখন আর তা আদায়ের সুযোগ নেই। এজন্য আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। তবে উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে।

-শরহুল মুনয়াহ ৫০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১২২

Sharable Link

আব্দুর রহমান - সিলেট

৩৮৭৯ . Question

যে ঘরে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি টাঙানো থাকে সে ঘরে নামায পড়ার হুকুম কী? একজন আলেম বলেছেন, এমন ঘরে নামায পড়া মাকরূহ। তবে কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে যদি ছবি ঢেকে দেওয়া হয় তাহলে মাকরূহ হবে না। এখন আমি তাই করছি। নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বে কিছু দিয়ে ছবিটি ঢেকে দেই। এতে কোনো অসুবিধা নেই তো? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো।


Answer

যে ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান থাকে তাতে নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য নামাযের সময় ছবি ঢাকা থাকলে নামায মাকরূহ হবে না।

আর একথা মনে রাখা দরকার যেঘরে-বাইরে কোনো প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা কিংবা প্রদর্শনী হয় এভাবে খোলা রাখা নাজায়েয। এ কারণে ঐ স্থানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনফেরেশতারা এমন ঘরে প্রবেশ করে না যাতে কোনো কুকুর রয়েছে এবং এমন ঘরেও নাযাতে কোনো (প্রাণীর) ছবি রয়েছে। -সহীহ বুখারী,হাদীস ৩৩২২সহীহ মুসলিমহাদীস ২১০৬

তাই আপনার কর্তব্য হলোমানুষ বা জীবজন্তুর যত ছবি ঘরে টাঙানো আছে তা নামিয়ে ফেলা এবং তা নষ্ট করে ফেলা।

প্রকাশ থাকে যেবিনা প্রয়োজনে ছবি উঠানো নাজায়েয। হাদীস শরীফে ছবি উঠানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর ধমকি এসেছে।

-মাবসূত, সারাখসী ১/২১১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬২; শরহুল মুনইয়াহ ৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৮

Sharable Link

রাওযা হাসান - সিলেট

৩৮৮০. Question

 

অনেককে দেখি, বিতির নামাযের পর বসে বসে দুরাকাত নামায পড়ে। কাউকে কাউকে আবার এ নামাযকে বিভিন্ন নামেও অভিহিত করতে শুনেছি।

জানার বিষয় হল, এটা আসলে কী নামায? এ নামায কি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?


 

Answer

সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে যেনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের পর বসে দু’ রাকাত নামায পড়েছেন। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৭৩৮

ইমাম নববী রাহ. তাঁর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেন যেবিতিরের পর দু’ রাকাত নামায নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত পড়েননি। বরং এ আমল মূলত বিতিরের পরও নফল পড়া জায়েয আছে এবং নফল নামায বসে পড়া জায়েয আছে- তা বোঝানোর জন্য কখনো এরূপ করেছেন।

তা না হয় সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বিভিন্ন সাহাবী থেকে এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেরাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ নামায হত বিতির নামায এবং তিনি সাহাবায়ে কেরামকেও আদেশ করতেন- বিতিরকে তোমরা রাতের সর্বশেষ নামায বানাও। (শরহে মুসলিমনববী ৬/২১)

সুতরাং রাতে সর্বশেষে বিতির নামায পড়াই সুন্নাহসম্মত। অবশ্য কেউ যদি বিতিরের পরও নফল পড়ে তাহলে সেটা জায়েয হবে তবে সেটা নিয়মিত আমল বানানো ঠিক হবে না।

Sharable Link

ফরীদ আহমাদ - টাঙ্গাইল

৩৮৮১. Question

 

একদিন যোহরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ভুলবশত তিনটি সিজদাহ করে ফেলেছি। নামাযের শেষে সাহু সিজদাও করেছি। পরে মনে হল, সাহু সিজদা তো ওয়াজিব হয় কোনো ওয়াজিব পালনে ত্রুটি হলে। সিজদা আদায় যেহেতু ফরয তাই এতে ত্রুটির কারণে হয়ত আমার নামায ভেঙ্গে গেছে। আমার ধারণা কি সঠিকআমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?


 

Answer

ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা নামাযে কোনো রোকন অতিরিক্ত আদায় করলেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। কারণ এতে পরবর্তী রোকন আদায়ে বিলম্ব হয়। নামায ভেঙ্গে যায় না। তাই সাহু সিজদা দ্বারা আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।

হযরত আতা রাহ. বলেন,

وَإِنِ اسْتَيْقَنْتَ أَنَّكَ قَدْ سَجَدْتَ فِي رَكْعَةٍ ثَلَاثَ سَجَدَاتٍ فَلَا تُعِدْ، وَاسْجُدْ سَجْدَتَيِ السَّهْوِ.

যদি তুমি নিশ্চিত হও যেকোনো রাকাতে তিনটি সিজদা করেছ তবে নামায পুনরায় পড়বে নাবরং সাহু সিজদা করে নিবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৫২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৮; কিতাবুল আছল ১/২১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১

Sharable Link

এমদাদ - বরগুনা

৩৮৮২. Question

আমাদের বাসা ও মসজিদ পাশাপাশি অবস্থিত। মসজিদের বারান্দায় একটি সাউন্ডবক্স লাগানো। জুমার দিন ফজরের নামাযে ইমাম সাহেব সূরা সাজদাহ তিলাওয়াত করেন। যা আমাদের বাসা থেকে স্পষ্টভাবে শোনা যায় এবং বাসার সবাই সিজদার আয়াতটি সম্পর্কে অবগত।

প্রশ্ন হল, বাসায় মাস্তুরাত যারা আছেন উক্ত সিজদার আয়াত শোনার দ্বারা তাদের উপরও কি সিজদা করা ওয়াজিব হবে?


Answer

হাঁপ্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাসা থেকে যারা সিজদার আয়াত শুনেছে তাদেরও সিজদা করা ওয়াজিব। কেননা নামাযরত ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শুনলে বাইরের শ্রোতার উপরও সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই শ্রবণকারীকে একাকী ঐ সিজদা করে নিতে হবে। অবশ্য ঐ সময় যদি শ্রোতা নিজে পৃথকভাবে নামাযে থাকে তবে নামায শেষ করে সিজদা করবে।

আর কাজ-কর্মে ব্যস্ততার দরুণ যদি সিজদার আয়াতটি খেয়াল না করে থাকে তবে সিজদা ওয়াজিব হবে না। অনুরূপভাবে শ্রবণকারী ঋতুমতী হলেও তার উপর সিজদা ওয়াজিব হবে না।

-কিতাবুল আছল ১/২৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; শরহুল মুনইয়াহ ৫০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০

Sharable Link

উসামা - কুট্টাপাড়া, বি. বাড়িয়া

৩৮৮৩. Question

সিজদার সময় আমার দুই পা মাঝে মাঝে উঠে যায়। আমার ভাই বলেছে, এতে আমার নামায নষ্ট হয়ে যায়। এখন আমি জানতে চাই, সিজদার সময় যদি আমার দুই পা উঠে যায়, তাহলে কি নামায নষ্ট হয়ে যাবে?


Answer

সিজদার পুরো সময় দুই পায়ের কোনো অংশ কিছু সময়ের জন্যও যদি যমিনে লেগে না থাকে তাহলে সিজদা হবে না। কিন্তু যদি সিজদার সময় কোনো এক পা অল্প সময়ের জন্য মাটিতে লাগানো থাকে তাহলে সিজদা সহীহ হয়ে যাবে এবং  নামাযও হয়ে যাবে। তবে সিজদা অবস্থায় উভয় পা যমিনে লাগিয়ে রাখা সুন্নতে মুআক্কাদা। তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন সিজদার সময় উভয় পা যমিনে লেগে থাকে এবং আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী থাকে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২০; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৪৭,৫০০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/২২৩

Sharable Link

সাইফুল ইসলাম - চাঁদপুর

৩৮৮৪. Question

সফর অবস্থায় নামায কসর করা কি জরুরি? এক ব্যক্তি বলল কসর জরুরি নয়। কেউ চাইলে পুরো নামাযও পড়তে পারে আবার কসরও করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। তার এ কথার পর বিষয়টি নিয়ে আমি সংশয়ে পড়ে যাই। দয়া করে আমাকে এর সমাধান জানাবেন।


Answer

মুসাফিরের জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায একাকী পড়লে বা মুসাফির ইমামের পেছনে আদায় করলে কসর করা জরুরি। এক্ষেত্রে পূর্ণ নামায পড়া ঠিক নয়। ঐ লোকের বক্তব্য সহীহ নয়।

হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ.

নামায ফরয করা হয়েছে মুকিম অবস্থায় এবং সফরে দুই দুই রাকাত করে। অতপর সফর অবস্থায় নামায দুই রাকাতই বহাল রাখা হয়েছে আর মুকিম অবস্থার নামাযকে দুই রাকাত বৃদ্ধি করা হয়েছে।-সহীহ মুসলিমহাদীস ৬৮৫

সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেন,

إِنِّي صَحِبْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي السَّفَرِ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، وَصَحِبْتُ عُمَرَ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، ثُمَّ صَحِبْتُ عُثْمَانَ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ وَقَدْ قَالَ اللهُ: لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.

আমি সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হয়েছি। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের অধিক পড়েননি। এবং আবু বকর রা.-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছিতিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। উমর রা.-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছিতিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। উসমান রা.-এর সাথে সফর করেছিতিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.

অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৬৮৯

অপর এক বর্ণনায় এসেছেআব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে সফরের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ، مَنْ خَالَفَ السُّنَّةَ كَفَرَ.

সফরের নামায দুই রাকাত। যে সুন্নাহকে পরিত্যাগ করল সে (এ হুকুমের) অমান্য  করল।-মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাকহাদীস ৪২৮১

সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে  এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ইরশাদ করেছেন,

صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللهُ بِهَا عَلَيْكُمْ، فَاقْبَلُوا صَدَقَتَهُ.

(কসর নামায) সদকাআল্লাহ তাআলা তা তোমাদের দান করেছেন। অতএবতোমরা আল্লাহ তাআলার দানকে কবুল করে নাও। (হাদীস নং ৬৮৬)

সহীহ মুসলিমে মূসা ইবনে সালামা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন,

سَأَلْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ: كَيْفَ أُصَلِّي إِذَا كُنْتُ بِمَكَّةَ، إِذَا لَمْ أُصَلِّ مَعَ الْإِمَامِ؟ فَقَالَ : رَكْعَتَيْنِ سُنَّةَ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা-কে জিজ্ঞাসা করলাম মক্কায় অবস্থানকালে ইমামের পেছনে যখন নামায আদায় না করব তখন কীভাবে নামায পড়বতিনি বললেন দুই রাকাত পড়বে। এটা আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। (হাদীস ৬৮৮)

সফর অবস্থায় নামায কসর করা সম্পর্কে আরো অনেক হাদীস রয়েছে। এ সকল হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় সর্বদা নামায কসর পড়েছেন। সফর অবস্থায় তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায পূর্ণ পড়েছেন এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

অনুরূপ এটাও জানা গেল যে সফর অবস্থায় নামায ফরযই থাকে কেবল দুই রাকাত করে।

এসকল হাদীস ও আছারের উপর ভিত্তি করে ফিকহবিদগণ বলেছেন মুসাফির যখন একাকী বা মুসাফির ইমামের পেছনে নামায পড়বে তখন তার জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায কসর করা ওয়াজিব।

হাঁমুসাফির যদি মুকীম ইমামের পেছনে নামায পড়ে সেক্ষেত্রে সে ইমামের অনুসরণে চার রাকাতই পড়বে। দুই রাকাত পড়বে না।

এক্ষেত্রে মুক্তাদির জন্য চার রাকাত নামায পড়া সাহাবা কেরামের আমল ও আছার দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে। যেমন :

নাফে রাহ. বলেন,

أنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يُصَلِّي وَرَاءَ الْإِمَامِ، بِمِنًى أَرْبَعاً. فَإِذَا صَلَّى لِنَفْسِهِ، صَلَّى رَكْعَتَيْنِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মিনায় ইমামের পেছনে চার রাকাত পড়তেন। আর যখন একাকী পড়তেন তখন দুই রাকাত পড়তেন। -মুআত্তা ইমাম মালেকহাদীস ৫০৬

Sharable Link

আবু রায়হান - সিলেট

৩৮৮৫. Question

কিছুদিন পূর্বে আমার এক মামাতো ভাইয়ের জন্ম হয়েছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ই সে মারা যায়। তার জানাযা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এলাকার মুরব্বীগণ বলেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় মারা গেলে জানাযা দিতে হয় না। তারপরও ইমাম সাহেব জানাযা পড়ান। প্রশ্ন হল, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় বাচ্চা মারা গেলে তার জানাযার নামায পড়তে হবে কি?


Answer

ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুর দেহের অধিকাংশ বের হওয়ার পর তার মাঝে যদি নড়াচড়াকান্নাচোখের পলকপাত অথবা জীবিত ভূমিষ্ঠ হওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায় তবে তার জানাযা পড়তে হবে। আর যদি অধিকাংশ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রাণের কোনো আলামত না থাকে তাহলে ঐ শিশুর জানাযা পড়ার বিধান নেই।

জাবের ইবনে আবদুল্লহ রা. বলেন,

إِذَا اسْتُهِلَّ الصَّبِيُّ وُرِّثَ وَصُلِّيَ عَلَيْهِ

শিশুর কান্নার শব্দ পাওয়া গেলে সে ওয়ারিস হবে এবং তার জানাযা পড়তে হবে। -সুনানে বাইহাকীহাদীস ৬৭৮২

উল্লেখ্যদেহের অধিকাংশ বলতে মাথার দিক আগে বের হলে বুক পর্যন্ত আর পায়ের দিক থেকে হলে নাভী পর্যন্ত উদ্দেশ্য।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৭১৮, ১১৭২৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮০; রদ্দুল মুহতার ২/২২৭

Sharable Link

নোমান - ঝিগাতলা, ঢাকা

৩৮৮৬. Question

আমি গত রমযানে দুদিন ক্ষুধার কারণে খাবার খেয়ে রোযা ভেঙে ফেলি। এরপর সারাদিন অন্যান্য সময়ের মতো পানাহার করি। উক্ত কর্মের জন্য আমি অনুতপ্ত। এখন সেই রোযা দুটির কাযা আদায় করতে চাই। তাই জানতে চাচ্ছি, আমাকে কি ওই রোযা দুটির জন্য শুধু কাযা আদায় করলেই চলবে, নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে? প্রত্যেকটি রোযার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফফারা আদায় করতে হবে, নাকি একটি কাফফারা আদায় করলেই চলবে?


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত পানাহার করার কারণে আপনার উপর কাযা কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হয়েছে। অতএব আপনি ঐ রোযা দুটির জন্য দুটি রোযা কাযা করবেন। আর এ ক্ষেত্রে উভয় রোযার জন্য একটি কাফফারা আদায় করলেই চলবে।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪১৪; আলইখতিয়ার ১/৪০৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ লুকমান হাকীম - কোটবাড়ি, কুমিল্লা

৩৮৮৭. Question

গত রমযানে একদিন আমাদের বাসার ঘড়িটি কারো অজান্তেই ১০ মিনিট স্লো হয়ে যায়। আমরা এই ঘড়ি দেখেই সাহরি খাচ্ছিলাম। তখন পাশের বাসার একজন এসে বলল, ৮/৯ মিনিট আগেই সাহরির সময় শেষ হয়ে গেছে। সাথে সাথে আমরা খাওয়া বন্ধ করে দেই।

প্রশ্ন হল, আমাদের উক্ত রোযাটি কি সহীহ হয়েছে? না হয়ে থাকলে এখন আমাদের করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যারা ঐ সময় খাচ্ছিলেন তাদের রোযাটি সহীহ হয়নি। উক্ত রোযার কাযা করতে হবে। সায়ীদ ইবনে যুবায়ের রাহ. থেকে বর্ণিততিনি বলেন,

إذَا أَكَلَ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَضَى عَلَى صِيَامِهِ، وَقَضَى يَوْمًا مَكَانَهُ.

কোনো ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে সে রোযা অবস্থায়ই থাকবে (অর্থাৎ বাকি দিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে) এবং এর স্থলে অন্য একদিন রোযা রাখবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯১৩৪; কিতাবুল আছল ২/১৪৫; মাবসূত, সারাখসী ৩/৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৪

Sharable Link

হুযাইফা - কুট্টাপাড়া, বি.বাড়িয়া

৩৮৮৮. Question

আমার দুআ কুনূত মুখস্থ নেই। এখন বিতরের তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূতের সময় আমি কী করব?


Answer

আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুআ কুনূত মুখস্থ করে নিন। আর দুআ কুনূত মুখস্থ করার আগ পর্যন্ত নিম্নোক্ত দুআটি পড়তে পারেন-

رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّ فِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

অথবা কয়েকবার أَللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا বা أَسْتَغْفِرُ اللهَ পড়বেন।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২-৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৭

Sharable Link

জারীর - বাসাবো, ঢাকা

৩৮৮৯. Question

রোযা অবস্থায় একবার আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে পাতা পোড়ানোর জন্য আগুন জ্বালানো হচ্ছিল। অনেক ধোঁয়া বের হচ্ছিল। তখন কিছু ধোঁয়া আমার গলায় ঢুকে যায়। এখন আমি জানতে চাই, ঐ ধোঁয়া আমার গলায় যাওয়ার কারণে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে?


Answer

নাআপনার রোযা ভাঙ্গেনি। কারণ রোযা অবস্থায় গলায় ধোঁয়া চলে গেলে রোযা ভঙ্গ হয় না। তবে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া টেনে নিলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যায়। 

-মাবসূত, সারাখসী ৩/৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫

Sharable Link

মহিউদ্দীন - হবিগঞ্জ

৩৮৯০. Question

আমার বাড়ির পাশে এক হিন্দু লোক থাকে। সে আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল। আমি চাচ্ছি তাকে কিছু দান-সদকা করতে। এখন হুযুরের নিকট জানার বিষয় হল, আমি কি তাকে সদাকাতুল ফিতর বা মানতের টাকা দিতে পারব? আর তাকে নফল দান করলে সওয়াব পাওয়া যাবে কি?


Answer

অমুসলিমদেরকে নফল সদকা দেওয়া জায়েয এবং এতে সওয়াবও রয়েছে। তবে তাদেরকে সদকায়ে ফিতর বা মানতের টাকা দেওয়া যাবে না। কেননা সদকায়ে ফিতর বা মানতের টাকা বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী শুধু মুসলিম গরীবদের হক। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৫১২; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৯

Sharable Link

রহিমা আক্তার - চাঁদপুর

৩৮৯১. Question

আমার স্বামী অনেক বছর যাবৎ একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে অবস্থানরত। তিনি বড় কোনো আয়-উপার্জন করেন না। আমি একটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করি এবং আমার উপার্জনেই সংসার চলে। আমার নিজের উপর যাকাত ও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার স্বামী ও সন্তানদের পক্ষ থেকেও কি আমাকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে?

উল্লেখ্য, আমার স্বামী ও সন্তানদের এ পরিমাণ সম্পদ নেই যে, তাদের উপর যাকাত বা সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়।


Answer

নাস্বামী ও সন্তানদের সদকায়ে ফিতর আপনাকে আদায় করতে হবে না। স্বামীর উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হোক বা না হোক স্ত্রীর জন্য তা আদায় করা আবশ্যক নয়। আর পিতার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হলে নাবালেগ সন্তানের ফিতরা পিতাকেই আদায় করতে হয়। সন্তানের মায়ের উপর এ দায়িত্ব বর্তায় না।

উল্লেখ্যমা সামর্থ্যবান হলেও সন্তানদের সদকায়ে ফিতর দেওয়া তার উপর ওয়াজিব হয় না।

-কিতাবুল আছল ২/১৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৩; আল বাহরুর রায়েক ২/২৫২

Sharable Link

আবদুর রউফ - কুমিল্লা

৩৮৯২. Question

আমার উপর হজ্ব ফরয। যাব যাব করে এখনো যাওয়া হয়নি। হজ্বের উদ্দেশ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা আড়াই বছর যাবৎ ব্যাংকে জমা আছে। তো এই টাকার উপরও কি প্রতি বছর যাকাত দিতে হবে?


Answer

জ্বি হাঁহজ্বের উদ্দেশ্যে জমানো টাকার উপরও প্রতি বছর যাকাত দিতে হবে। বিগত দুই বছরের যাকাত না দেওয়া হলে সেটাও আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ম হলপূর্বের বছরের যাকাত বাদ দিয়ে পরবর্তী বছরের যাকাতের হিসাব বের করা। অতএব প্রথম বছরের যাকাত পাঁচ লক্ষ টাকার উপর ১২,৫০০/-দ্বিতীয় বছরের যাকাত ৪,৮৭,৫০০/- টাকার উপর ১২,১৮৭.৫/- ও চলতি বছরের যাকাত ৪,৭৫,৩১২.৫/- টাকার উপর ১১,৮৮২.৮১/- টাকা আদায় করতে হবে।

আর যত দ্রুত সম্ভব হজ্ব আদায় করে নিতে হবে। কেননা বিনা ওজরে হজ্ব আদায়ে বিলম্ব করা গুনাহ।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতহুল কাদীর ২/১১৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯-২৬১, ৪৫৭

Sharable Link

মুহাম্মাদ হাসান - কোটবাড়ি, কুমিল্লা

৩৮৯৩. Question

আমার এক ভাই ছোটবেলায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে রূপার মেডেলসহ রূপার তৈরি আরও নানা জিনিস পুরস্কার পেয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৬৫ তোলা।

আমি জানতে চাই, এখন বালেগ হওয়ার পর কি তার উপর এগুলোর কারণে যাকাত ওয়াজিব হবে? জানালে উপকৃত হব।


Answer

হাঁবালেগ হওয়ার পর তাকে এই রূপাগুলোর যাকাত দিতে হবে। বালেগ হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক বছর ২.৫% করে রূপা বা তার মূল্য যাকাত দিতে হবে। 

-মাবসূত, সারাখসী ২/১৮৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৫

Sharable Link

শোআইব - উত্তরা, ঢাকা

৩৮৯৪. Question

 

আমি সরকারী চাকরিজীবী। লাখ খানেকের মতো নগদ টাকা আমার কাছে আছে। আর গ্রামের বাড়িতে পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত দেড় বিঘা জমি আছে। যার আনুমানিক মূল্য পঞ্চাশ লক্ষ টাকা হবে। এছাড়া আমার আর কোনো অর্থ-সম্পদ নেই।

আমার জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার উপর হজ্ব ফরয হবে কি? অথচ হজ্বে যাওয়ার মতো টাকা আমার কাছে নেই।

উল্লেখ্য, চাকরির বেতন দিয়েই আমার সংসার চলে। আর উক্ত জমি ফসলি। বর্গাচাষের ভিত্তিতে সেখান থেকে বছরে কিছু আয় আসে।

 

 

Answer

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার উপর হজ্ব ফরয। কেননা হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য নগদ টাকা থাকা জরুরি নয়। বরং প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি ও স্বর্ণালংকার থাকলেও তার মূল্য যদি হজ্বের খরচ এবং হজ্ব থেকে ফেরা পর্যন্ত সংসারের খরচের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেই হজ্ব ফরয হবে।

তাই বিলম্ব না করে হজ্ব করে নেওয়া কর্তব্য। হজ্ব ফরয হওয়ার পর তা আদায়ে বিলম্ব করা গুনাহ।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮

Sharable Link

খুবাইব - টঙ্গী

৩৮৯৫. Question

এক ব্যক্তি উমরার ইহরাম করে তাওয়াফ সায়ী করেছে। এরপর সে মাথার দুই তিন স্থান থেকে তিন/ চারটা চুল কেটে নেয় এবং পুনরায় মসজিদে আয়েশা থেকে উমরার ইহরাম করে আরেকটি উমরা আদায় করে এবং শেষে মাথা মুণ্ডিয়ে নেয়। এ ব্যক্তির পূর্বের উমরা এবং পরের উমরার কী হুকুম?


Answer

ইহরাম থেকে চুল কেটে হালাল হওয়ার জন্য পুরো মাথার অন্তত চার ভাগের এক ভাগ পরিমাণ চুল কাটা জরুরি। এর কম কাটলে ইহরাম থেকে হালাল হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম উমরার তাওয়াফ  সায়ী করার পর কেবলমাত্র তিন/ চারটা চুল কেটে নেওয়ার দ্বারা লোকটি ইহরাম-মুক্ত হয়নি।

আর এক উমরা থেকে ইহরাম মুক্ত হওয়ার আগে আরেক উমরার ইহরাম করা জায়েয নয়। তাই প্রথম উমরা থেকে হালাল না হয়ে নতুন উমরার ইহরাম করা অনিয়ম ও গুনাহ হয়েছে এবং এ কারণে তার উপর হেরেমের এলাকায় একটি জরিমানা দম দেয়া আবশ্যক হয়েছে।

অবশ্য এক্ষেত্রে দ্বিতীয় উমরার ইহরাম করা নাজায়েয হলেও লোকটি যেহেতু দ্বিতীয় উমরা সম্পন্ন করেছে এবং শেষে মাথা মুণ্ডিয়েছে তাই এর দ্বারা সে উভয় উমরার ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেছে এবং উভয় উমরাই আদায় হয়েছে।

-মানাসিক, মুল্লা আলী আলকারী পৃ. ২২৯; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৩৭; যুবদাতুল মানাসিক পৃ. ৩৩৭

Sharable Link

লুৎফুর রহমান - মিরসরাইল

৩৮৯৬. Question

কিছুদিন আগে আমার মা একটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমি তখন মানত করেছিলাম, মা যদি সুস্থ হন তাহলে একটি ছাগল যবাই করে গরীবদের খাওয়াব। আল্লাহর রহমতে আমার মা ঐ রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

এদিকে আমার ছোট ভাইকে ছাগল কিনতে দিয়েছিলাম। সে যে ছাগল নিয়ে এসেছে তা ছোট। ৭/৮ মাস বয়স। আমাদের ইমাম সাহেব বলছেন, এই ছাগল দিয়ে মানত আদায় হবে না। হুযুরের কাছে জানতে চাই, আমাদের ইমাম সাহেবের কথা কি সঠিক? আর এই ছাগলটি আমরা কী করব?


Answer

আপনাদের ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। ছাগল যবাই করে গরীবদের খাওয়ানোর মানত করলে ছাগলের বয়স অন্তত এক বছর হওয়া আবশ্যক।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ৭/৮ মাসের ছাগল দ্বারা এখন আপনার মানত আদায় হবে না। তা এখন আপনি বিক্রিও করে দিতে পারবেন বা এর বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর এটি দ্বারাও মানত আদায় করতে পারবেন। 

-বাদায়েউস সনায়ে ৪/২৩৩; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৭

Sharable Link

হাফিজুর রহমান - খিলগাওঁ

৩৮৯৭. Question

আমার ছেলে গত মাসে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সুস্থতার কোনো লক্ষণ না দেখে তার মা মানত করে যে, ছেলে সুস্থ হলে আগামী মাসের প্রথম বৃহস্পতি ও শুক্রবার রোযা রাখবে। পাঁচ-ছয়দিন পর আল্লাহ তাআলা ছেলেকে সুস্থ করে দেন। তার মা বৃহস্পতি ও শুক্রবারে রোযা রাখার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ঘটনাক্রমে বুধবার থেকে তার মাসিক শুরু হয়ে যায়। এখন ঐ রোযা কি আদায় করা লাগবে? যদি আদায় করতে হয় তাহলে কি পবিত্র হওয়ার পর বৃহস্পতি-শুক্রবারেই রাখতে হবে নাকি যে কোনোদিন রাখলেই চলবে?


Answer

পবিত্র হওয়ার পর মানতের ঐ রোযা তাকে রাখতে হবে। অবশ্য পবিত্রতার পর যে কোনোদিন রোযাদুটি রাখতে পারবে। পরবর্তী বৃহস্পতি-শুক্রবার দিন রাখা আবশ্যক নয়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১০; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৩৭

Sharable Link

সাদেক হাসান - বাড্ডা, ঢাকা

৩৮৯৮. Question

 

আমাদের মসজিদের অযুখানাটি খুবই ছোট ও সংকীর্ণ। নামাযের সময় খুব ভীড় হয়। এদিকে মসজিদ সংলগ্ন একটি পারিবারিক কবরস্থান আছে। আমরা চাচ্ছি, কবরস্থানের উপর ছাদ দিয়ে অযুখানা নির্মাণ করতে।

জানতে চাই, পারিবারিক কবরস্থানের উপর অযুখানা নির্মাণের কোনো সুযোগ আছে কি?


 

Answer

পারিবারিক কবরস্থানের উপরও ছাদ বা তলা বৃদ্ধি করে অযুখানা বানানো জায়েয হবে না। কেননা কবরের উপর ছাদ দেওয়া বা ভবন নির্মাণ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে সুস্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য কবরস্থানটি যদি ওয়াকফিয়া না হয়বরং ব্যক্তি মালিকানাধীন হয় আর কবরস্থানের যে অংশের উপর অযুখানা বানাতে চাচ্ছে সেখানে কোনো কবর না থাকে বা সেখানের কবর পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে জায়গার মালিকের অনুমতিক্রমে কবরকে নিশ্চিহ্ন করে সেখানে অযুখানা বানানো যাবে।

আর কবরস্থান ওয়াকফকৃত হলে সেখানে কোথাও -চাই কবর থাক বা না থাক- অযুখানা বানানো জায়েয হবে না।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭০; উমদাতুল কারী ৪/১৭৪, ১৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭

Sharable Link

আবদুল হক্ব - মাদারিপুর

৩৮৯৯. Question

আমাদের এলাকার মসজিদটি প্রথমে ওয়াকফকৃত ছিল না। বরং প্রবাসী এক ব্যক্তির জায়গার উপর তার অনুমতি না নিয়েই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আমাদের ধারণা ছিল যেহেতু তিনি অনেক দানশীল মানুষ তাই তাকে মসজিদের কথা বললে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তা ওয়াক্ফ করে দিবেন। কিছুদিন হল তিনি দেশে এসেছেন। তাকে না জানিয়ে তার জায়গার উপর মসজিদ নির্মাণের কারণে মনক্ষুন্ন হন। তবে এলাকায় মসজিদের প্রয়োজন দেখে এবং লোকদের অনুরোধের কারণে ঐ জায়গাকে মসজিদের জন্য প্রথমে মৌখিকভাবে ওয়াকফ করে দেন এবং পরবর্তীতে লিখিত ওয়াকফও করেন। কিন্তু ওয়াকফ দলীলে একটি শর্ত রাখেন এমন যে, ওয়াকফকৃত ভূমি আমার নিজ দখলে থাকিবে। আমার জানার বিষয় হল,

ক. মালিকের প্রতি সুধারণার ভিত্তিতে তার অনুমতি ছাড়া ঐ জায়গায় মসজিদ বানানো কি ঠিক হয়েছে?

খ. মালিকের অনুমতি নিয়ে যেহেতু মসজিদটি নির্মাণ করা হয়নি তাই ওয়াকফ করে দেয়ার পর কি তা শরয়ী মসজিদ হবে?

গ. ওয়াকফ দলীলের ঐ শর্ত কি ঠিক আছে? জানালে উপকৃত হব।


Answer

(কখ) জায়গার মালিকের অনুমতি ছাড়া মসজিদ বানানো জায়েয হয়নি। মসজিদ বানানোর আগে মালিকের অনুমতি নেওয়া জরুরি ছিল। অবশ্য পরবর্তীতে মালিকের অনুমোদনের কারণে এবং জায়গাটিকে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেওয়ার কারণে তা শরয়ী মসজিদ হয়ে গেছে। তা ভেঙ্গে পুননির্মাণ করা লাগবে না।

গ) ওয়াকফ দলীলের এ শর্তটি- “ওয়াকফকৃত ভূমি আমার নিজ দখলে থাকিবে” ঠিক নয়। বরং তা বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কেননা শরীয়ার ওয়াকফ-নীতি হলকোনো জমি ওয়াকফ করা হলে ঐ জমি ওয়াকফকারীর মালিকানা এবং দখল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায়। তবে দখল দ্বারা কর্তৃত্ব বুঝিয়ে থাকলে তা সহীহ গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে মসজিদের স্বার্থ ও কল্যাণে সার্বিক দেখাশুনার দায়িত্ব তার উপর থাকবে। -আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৮;রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ ওয়াজউদ্দীন - শাহজাদপুর, ঢাকা

৩৯০০. Question

আমি একজনের কাছে একটি গরু বর্গা দিলাম এ শর্তে যে, পালার পর যে দামে বিক্রি করা হবে তা থেকে আমার মূল টাকা নিয়ে নিব। এরপর যা থাকবে তা থেকে অর্ধেক আমার আর অর্ধেক যে পালবে তার। এভাবে বর্গা দেওয়া জায়েয কি না? অনেকে বলে জায়েয আবার অনেকে বলে জায়েয নেই। যদি জায়েয না হয় তাহলে করণীয় কী?


Answer

প্রশ্নোক্ত গরু বর্গা পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। তাই উক্ত পন্থায় কেউ গরু বর্গা দিয়ে থাকলে তাতে যদি লাভ আসে বা বর্গা দেওয়া গরু বাচ্চা দেয় তাহলে তা মূল মালিকেরই হবে। আর যে গরু পালবে সে শুধু গরুর খরচ এবং তার পারিশ্রমিক পাবে। 

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম - ঢাকা

৩৯০১. Question

আমি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এটি পরিপূর্ণভাবে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখা হয়। জমা রাখা টাকার একটি ন্যূনতম পরিমাণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করা হয়ে থাকে। আমি ইচ্ছা করলে বেশি টাকাও জমা রাখতে পারি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সলে বেতনের প্রায় অর্ধেক জমা রেখেছিলাম। এতে আনুমানিক ১ লক্ষ টাকা সরকারী বাধ্যবাধকতার অতিরিক্ত জমা করেছি। এই টাকার উপর মুনাফা দেওয়া হয়। চাকরি হতে অবসর গ্রহণের সময় এই টাকা উঠানো যায়। তবে নিজ প্রয়োজনে এই টাকার ৮০% যে কোনো সময় লোন পাওয়া যায়। তবে উক্ত টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করা লাগে।

এ অবস্থায় আমার জানার প্রয়োজন-

ক) এই মুনাফা নেওয়া বৈধ হবে কি?

খ) এই জমানো টাকার উপর প্রতি বছর যাকাত আদায় করতে হবে কি?


Answer

সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে চাকরিজীবীর বেতনের যে অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখা হয় তার উপর সুদের নামে অতিরিক্ত যা দেওয়া হয় তা চাকরিজীবীর জন্য গ্রহণ করা জায়েয আছে। এটাকে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদ নয়।

আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত আরো টাকা নিজ থেকে কাটানো জায়েয নেই। কেউ কাটালে এ টাকার উপর যা অতিরিক্ত দেওয়া হবে তা নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আপনার জন্য বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত টাকা জমা করা বৈধ হয়নি। এ কারণে আপনার সুদি চুক্তির গুনাহ হয়েছে। এখন সম্ভব হলে আপনার কর্তব্য হবেবাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত যা জমা করেছেন তার সুদসহ উঠিয়ে ফেলা এবং এই সুদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দেওয়া। আর এখন উঠানো সম্ভব না হলে চাকরি শেষে যখন সব টাকা উঠাবেন তখন হলেও ঐচ্ছিক জমাকৃত অংশের সুদ সদকা করে দিতে হবে। আর নিজ বেতনের জমাকৃত অংশ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রকাশ থাকে যেবাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল ও অতিরিক্ত হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই তা হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে না।

আর আপনি স্বেচ্ছায় যে এক লক্ষ টাকা জমা করেছিলেন এ টাকার যাকাত জমার বছর থেকেই দিতে হবে। এ টাকার অতিরিক্তটা যাকাতযোগ্য নয়বরং তা পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকাযোগ্য।

-মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৫৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ মিকদাদ - বরিশাল

৩৯০২. Question

একবার আমি বাসে বসা ছিলাম। একজন হকার কিছু কাচের শো পিস নিয়ে আমাদের বাসে উঠল। সে বলছিল, প্রতি শো-পিসের দাম ২০ টাকা। যে কেউ হাতে নিয়ে দেখতে পারেন, কিনতে হবে না। যাত্রীদের অনেকে হাতে নিয়ে দেখছিল। হঠাৎ বাস জোরে ব্রেক করলে এক যাত্রীর হাত থেকে একটি শো-পিস পড়ে ভেঙ্গে যায়। এখন হকার উক্ত যাত্রীর কাছে মূল্য দাবি করে ও তার অস্বীকৃতি সত্ত্বেও তাকে মূল্য আদায় করতে বাধ্য করে। আমার জানার বিষয় হল, ভাঙ্গা শো-পিসটির মূল্য আদায় করা কি উক্ত যাত্রীর জন্য জরুরি ছিল? জানালে উপকৃত হব।


Answer

প্রশ্নের বিবরণ দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট যেশো-পিসটি পছন্দ হয় কি না- এ জন্যই ঐ যাত্রী তা হাতে নিয়েছিল। আর ব্রেক করার কারণে তা ভেঙ্গে গেছে। এখানে বাহ্যত যাত্রীর ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় না। তাই এক্ষেত্রে জোরপূর্বক তার থেকে জরিমানা আদায় করা অন্যায় হয়েছে। অবশ্য যাত্রীর ত্রুটির কারণে যদি ভেঙ্গে থাকে তাহলে তার থেকে জরিমানা আদায় করা জায়েয।

-ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১০-১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৭৩-৫৭৪

Sharable Link

খালিদ আহমদ - সিলেট

৩৯০৩. Question

এ বছর কুরবানীর ঈদের দিনের ঘটনা। আমি ঈদের নামায পড়তে গিয়েছি। নামায শেষ করে এসে দেখি, আমার কুরবানীর পশু কুরবানী করা হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, একটু আগে কসাইরা গরু বানানোর জন্য এসে পড়ে। তারা বলল, গরু যেহেতু আপনাদের একারই তাই এখনই কুরবানী করে ফেলি। তাহলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যাবে। আপনারাও আগেভাগে রান্না বান্না করে ফেলতে পারবেন। বাসার লোকদের সম্মতিক্রমে তারা কুরবানী করে ফেলে। এখন আমার উক্ত কুরবানী সহীহ হয়েছে কি?


Answer

আপনার পশুটি কুরবানী করার আগে ঐ এলাকার কোথাও যদি ঈদের নামায হয়ে থাকে কিংবা আপনাদের নামায শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা কুরবানী করে থাকে তাহলে কুরবানী সহীহ হয়েছে। কিন্তু যদি তারা কুরবানী করার আগে আপনাদের নামায কিংবা আপনার এলাকার নামায কোনোটাই শেষ না হয়ে থাকে তবে আপনার ঐ কুরবানী সহীহ হয়নি। সেক্ষেত্রে কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। আর কুরবানীর দিনগুলো অতিক্রম হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি কুরবানীযোগ্য পশুর মূল্য সদকা করতে হবে। তাই আপনার উচিত ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে সময়টি যাচাই করে নেওয়া। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছেজুনদুব বিন সুফিয়ান রা. বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঈদের নামাযে শরীক হয়েছি। নামায শেষে বাইরে এসে তিনি যবাইকৃত ছাগল দেখলেন। তখন বললেন,

مَنْ كَانَ ذَبَحَ أُضْحِيَّتَهُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ -أَوْ نُصَلِّيَ- فَلْيَذْبَحْ مَكَانَهَا أُخْرَى، وَمَنْ كَانَ لَمْ يَذْبَحْ، فَلْيَذْبَحْ بِاسْمِ اللهِ.

যে নামাযের আগে যবাই করেছে সে যেন সেটির বদলে অন্য একটি ছাগল কুরবানী করে। আর যে কুরবানী করেনি সে যেন আল্লাহর নামে কুরবানী করে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬০; কিতাবুল আছল ৫/৪০৫; মাবসূত, সারাখসী ১২/১০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬১; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২০

Sharable Link

মুহাম্মাদ আরিফ বিল্লাহ - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩৯০৪. Question

আমরা জানি, গরুতে একাকী বা সাত শরীকে কুরবানী করা জায়েয। এর কমে জায়েয নয়। কিন্তু আমার বড় ভাই এ বছর ছয় শরীকে কুরবানী করেছেন। সুতরাং তার কুরবানী কি সহীহ হয়েছে? তাকে কি পুনরায় কুরবানী করতে হবে?


Answer

সাত শরীকের কমে গরু কুরবানী করা জায়েয নয়- এমন ধারণা ভুল। একটি গরুতে এক থেকে সাত পর্যন্ত যে কোনো অংশে কুরবানী করা যাবে। সুতরাং আপনার বড় ভাইয়ের কুরবানী আদায় হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৬

Sharable Link