মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নান - ঢাকা

৩২১২. Question

 

আমি দৈনন্দিন ওযিফার জন্য আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত এবং আরো কিছু আয়াত ও ছোট ছোট কয়েকটি সূরা টাইপ করে লেমিনেটিং করে রেখেছি। সকাল-সন্ধ্যা এগুলো পাঠ করি। অনেক সময় দেখা যায়, পাঠকালে অযু থাকে না। তাই জানার বিষয় হল, বিনা ওযুতে উক্ত লেমিনেটিং করা কাগজ বা তার লেখা স্পর্শ করা জায়েয হবে কি?


 

Answer

কাগজটি লেমিনেটিং করা হলেও অযু ছাড়া লিখিত আয়াত বা সূরার উপর সরাসরি হাত লাগানো জায়েয হবে না। তবে এটি যেহেতু কুরআন শরীফ নয় তাই কাগজের যে অংশে আয়াত লেখা নেই তা স্পর্শ করা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, লিখিত অংশের উপর যেন হাত না লাগে। কিন্তু উক্ত কাগজে যেহেতু শুধু আয়াতই লিখা রয়েছে তাই সাদা অংশও অযু ছাড়া স্পর্শ না করা উচিত।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৩, ২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৭৭

Sharable Link

শাহ মুহাম্মাদ ওমায়ের - পূর্ব কলওয়ালাপাড়া জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা

৩২১৩. Question

 

শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় দুআ আছে। কিন্তু কোনো বইতে এই দুআগুলো পাইনি। তাই দয়া করে দুআগুলো জানালে কৃতজ্ঞ হব।


 

Answer

 

রুকু থেকে উঠার সময় ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه   বলবে তখন মুক্তাদীর জন্য رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলা উত্তম। অতপর সম্ভব হলে-

حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ দুআটিও পড়া উত্তম। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলবে তোমরা তখন رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বল।

অন্য এক হাদীসে আছে, রিফাআ ইবনে রাফে রা. বর্ণনা করেন যে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে যখন  سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বললেন তখন পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল  

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযে ঐ বাক্য কে বলেছে? এক ব্যক্তি বলল, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দেখতে পেলাম ত্রিশের অধিক ফেরেশতা উক্ত দুআর ছাওয়াব নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যে, কে আগে তার ছাওয়াব লিখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯৯

আর দুই সিজদার মাঝে রাবিবগ ফিরলী এবং  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي পড়া উত্তম।

   সুনানে নাসায়ীতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে রাবিবগফিরলী, রাবিবগফিরলী দুআটি পড়ার কথা এসেছে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে তা পড়তেন।-সুনানে নাসায়ী ১/২৯

আবার কখনো তিনি এ দুআটিও পড়তেন- اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৫০

ফযীলতপূর্ণ এ দুআগুলো ইমাম-মুকতাদী সবার জন্য নফল-ফরয সব নামাযেই পড়া উত্তম। আর নফল ও তাহাজ্জুদে উপরোক্ত দুআ ছাড়াও আরো কিছু দুআ পড়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে। যেমন-রুকু থেকে উঠে নিম্নোক্ত দুআগুলো পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তেন-

اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ، مِلْءُ السَّمَاوَاتِ والْأَرْضِ، وَمَا بَيْنَهُمَا، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ

অন্য বর্ণনায় এ দুআটি পড়ার কথাও এসেছে-

اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاءِ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ اللهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَالْمَاءِ الْبَارِدِ اللهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا، كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْوَسَخِ

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৬

আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে এ দুআটিও এসেছে-

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ، وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ: اللهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৭

ফকীহগণের ভাষ্যমতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল দীর্ঘ দীর্ঘ দুআগুলো সাধারণত তাহাজ্জুদ ও নফল নামাযে পড়তেন। তাই এ দুআগুলো বিশেষভাবে নফল নামাযে পড়া উত্তম।

প্রকাশ থাকে যে, এসব দুআর জন্য হিসনে হাসীন ইমাম জাযারী রাহ. কৃত কিতাবটি পড়া যেতে পারে। এটি দুআর একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব।

 

Sharable Link

মুহাম্মাদ ওমর ফারুক - রামপুরা, ঢাকা

৩২১৪. Question

 

অনেককে দেখা যায়, তারা প্যান্টের সাথে গেঞ্জি কিংবা শর্ট শার্ট পরে এবং ঐ পোশাকে নামায আদায় করে। আর ঐ পোশাকে নামায পড়লে রুকু-সিজদার সময় সাধারণত কোমরের নিচের অংশ থেকে কাপড় সরে যায়। আমার প্রশ্ন হল, ঐভাবে নামায পড়লে কি তা সহীহ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

 

পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশটুকু সতরের অন্তর্ভুক্ত। যা ঢেকে রাখা ফরয। নামায অবস্থায় সতরের কোনো অঙ্গের এক চতুর্থাংশ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। তাই নাভি বরাবর পেছন দিক থেকে নিতম্ব পর্যন্ত জায়গার এক চতুর্থাংশ এ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। আর এমন পোশাকে নামায পড়লে পেছনের মুসল্লিদের খুশু-খুযুও নষ্ট হয়। এছাড়া প্রশ্নোক্ত পোশাক মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব পোশাক নয়। তাই এ ধরনের পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকাই উচিত।    

প্রকাশ থাকে যে, সকল মুসলমানের জন্য শরীয়তসম্মত পোশাক পরিধান করা আবশ্যক এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের যে নীতিমালা আছে তা মেনে চলা জরুরি। পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও বিজাতীয় অনুকরণ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে হাদীস শরীফে তাকিদ এসেছে।

 

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪০২৭; মিরকাত ৮/২২২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৪, ৪০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ জসীম - টেকনাফ, কক্সবাজার

৩২১৫. Question

 

বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায়, ইমাম সাহেব জুমার খুতবা দেওয়ার সময় মুসল্লিরা বসে বসে গল্প করে। আবার অনেককে দেখা যায়, যখন ইমাম সাহেব খুতবায়

إن اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا 

  আয়াতটি পড়েন তখন তারা উচ্চস্বরে দরূদ পাঠ করে। আর আমাদের মসজিদে ছোটকাল থেকেই লক্ষ্য করছি যে, ঈদের নামাযের খুতবায় ইমাম সাহেব যখন তাকবীরে তাশরীক বলেন তখন সকল মুসলিস্ন একসঙ্গে উচ্চস্বরে ইমাম সাহেবের সাথে সাথে তাকবীর বলতে থাকেন। তাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জানালে কৃতজ্ঞ হব। 


 

Answer

 

জুমা ও ঈদের খুতবা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন সময়ে কোনো ধরনের কথা বলা, কাজ করা নিষিদ্ধ। এমনকি তাসবীহ-তাহলীল পড়াও নিষিদ্ধ। 

হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু যার রা. বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবায় সূরা বারাআত পাঠ করলেন। তখন আমি উবাই ইবনে কাআব (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এ সূরাটি কখন অবতীর্ণ হয়েছে? আমার প্রশ্ন শুনে তিনি চেহারা মলিন করলেন এবং চুপ থাকলেন। এভাবে পরপর তিনবার প্রশ্ন করার পরও তিনি আমাকে কোনো উত্তর দিলেন না। জুমার নামায শেষ হওয়ার পর আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে বার বার প্রশ্ন করার পরও কোনো উত্তর দিলেন না কেন? তখন উবাই রা. বললেন, (খুতবা চলাকালে প্রশ্ন করার কারণে) আপনি জুমার কোনো সওয়াব পাননি। আপনার অনর্থক কথা বলা হয়েছে। তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে উবাই রা.-এর এ কথা জানালাম। জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উবাই ঠিকই বলেছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ ইবনে খুযাইমা ২/৮৭৪, হাদীস : ১৮০৭ 

হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব ও যুহরী রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে কোনো নামায পড়া যাবে না। আর খুতবা শুরু করলে কোনো কথা বলা যাবে না।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/১০৩-১০৪

হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি যদি ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় পাশের ব্যক্তিকে কথা বলতে নিষেধ কর তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৫১

এ সকল হাদীস ও আসারের আলোকে ফকীহগণ খুতবা অবস্থায় মুকতাদীর জন্য কোনো কথা বলা এবং কোনো তাসবীহ পড়াকে নিষিদ্ধ বলেছেন। তাই খুতবা চলাকালে মুকতাদীর জন্য দরূদ শরীফ বা তাকবীরে তাশরীক বলা থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক।

 

-তাফসীরে তবারী ৬/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২১৭৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৬০

Sharable Link

রাফাত আঈন - বহুলা, সিলেট

৩২১৬. Question

 

কিছুদিন আগে আমার চাচির পূর্ণ দেহবিশিষ্ট একটি মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হয়। আমরা তার কাফন-দাফনের ব্যাপারে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন, তাকে গোসল দিয়ে একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে কবর দিয়ে দিতে হবে। তখন আমরা হুযুরের কথামতো তাই করি। প্রশ্ন হল, আমাদের জন্য কি মৃত শিশুটিকে গোসল দেওয়া ঠিক হয়েছে?


Answer

হাঁ, ঐ মৃত সন্তানটিকে গোসল দেওয়া ঠিক হয়েছে। কেননা পূর্ণ সন্তান মৃত ভূমিষ্ট হলে তাকে গোসল দেওয়া এবং কাফন পরিয়ে দাফন করাই শরীয়তের বিধান।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬২৮

Sharable Link

নজরুল ইসলাম - মনিরামপুর

৩২১৭. Question

 

কিছুদিন আগে আমাদের পাশের ঘরে একজন মহিলা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার পেটে নয় মাসের সন্তান ছিল। সন্তান জীবিত আছে এ সন্দেহে ডাক্তার তার অপারেশন করেন। কিন্তু পেটের ভেতরেই সন্তানকে মৃত পাওয়া গেছে। তাই তা আর বের না করে সেলাই করে দেন। অতপর তার আত্মীয়-স্বজন তার গর্ভের ঐ সন্তানসহ তাকে কাফন-দাফন করে দেয়। জানার বিষয় হল, মহিলা গর্ভবতী অবস্থায় মারা গেলে শরীয়তের বিধান কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় কোনো মহিলা মারা গেলে দেখতে হবে সন্তান জীবিত আছে কি না? যদি জীবিত থাকে তবে দ্রম্নত অপারেশন করে তা বের করতে হবে। অতপর মৃতের গোসল ও কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে হবে। আর গর্ভের সন্তান মৃত হলে গর্ভসহই মৃতকে দাফন করে দিতে হবে। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানটি মৃত হওয়ার কারণে এ অবস্থায় রেখে দাফন করাটা ঠিক হয়েছে।

-আততাজনীস ২/২৪৫-২৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৮

Sharable Link

মুহাম্মাদ ইশতিয়াক - পটিয়া, চট্টগ্রাম

৩২১৮. Question

 

এক বছর আগে আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা আছে। সে টাকা এখনো ব্যাংকেই আছে। ওয়ারিশদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। তাই কাউকে টাকা না দেওয়ার জন্য ব্যাংকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তিন মাস আগে একজন ব্যাংক থেকে টাকা আনতে গেলে তারা অসম্মতি জানায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ব্যাংক নিজেই ওয়ারিশদের মধ্যে তাদের প্রাপ্য অংশ বণ্টন করে দিবে।

জানার বিষয় হল, ঐ টাকার যে অংশ আমি পাব তার কারণে কি আমার উপর বিগত বছরের যাকাত ওয়াজিব হবে? 


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে যেহেতু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা বণ্টন করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তাই এ পরিস্থিতিতে টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তার উপর যাকাত আসবে না এবং বিগত বছরেরও যাকাত দিতে হবে না। বরং ঐ টাকা হাতে আসার পর থেকে তা যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৫০

Sharable Link

রফিক আনোয়ার - টেকনাফ

৩২১৯. Question

 

রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময় ২৫ রমযান বা তারপর দু একদিনের মধ্যেই যাকাত আদায় করে থাকি। কিন্তু এ বছর একজন দরিদ্র লোককে রমযানের আগেই যাকাত দিয়ে দিয়েছি। প্রশ্ন হল, যাকাতের বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা আদায় হবে কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


Answer

হ্যাঁ, নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেও যাকাত আদায় করা জায়েয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার অগ্রিম যাকাত দেওয়া শুদ্ধ হয়েছে।

-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৬৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩

Sharable Link

নাকিব হাসান - টুঙ্গিপাড়া

৩২২০. Question

 

আমার কাছে হজ্বে যাওয়ার মতো টাকা আছে। কিন্তু আমার এখন বিয়ে করার প্রয়োজন। এ টাকা দিয়ে হজ্ব করলে বিয়ের খরচের জন্য টাকা থাকবে না। আর বিয়ে করলে হজ্ব করা যাবে না। এখন এক্ষেত্রে আমার জন্য হজ্ব করা কি জরুরি?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হজ্বের টাকা জমা দেওয়া ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার শেষ সময়ের আগেই যদি আপনি বিয়ে করে ফেলেন আর বিয়েতে ঐ টাকা খরচ হয়ে যায় তবে আপনার উপর হজ্ব ফরয হবে না। কিন্তু হজ্বের প্রস্তুতি গ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত যদি ঐ টাকা খরচ না হয় তবে ঐ টাকার কারণে আপনার উপর হজ্ব ফরয হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৭৩; ফাতহুল কাদীর ২/৩২৩; গুনইয়াতুন নাসিক ২২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০১

Sharable Link

মুহাম্মাদ আবুল কালাম - সাবরাং, টেকনাফ

৩২২১. Question

 

আমার এক সাথী গত কয়েকমাস আগে বিবাহ করেছে। বেশ কয়েকদিন পর আমার সাথে দেখা হলে আমি তাকে বলি, তোমার বিয়ের ওলিমা খাওয়াতে হবে। তখন সে রসিকতা করে বলল, তোর ভাবিকে তো অনেক আগে তালাক দিয়ে দিয়েছি। অথচ সে তালাক দেয়নি। জানার বিষয় হল, এ কারণে কি তার স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হয়ে গেছে?


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার সাথী যদি বাস্তবেই তার স্ত্রীকে আগে তালাক না দিয়ে থাকে তবে এভাবে মিথ্যা বলার দ্বারা তার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়নি। তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পূর্বের মতোই বহাল আছে। তবে তালাকের বিষয়ে এভাবে রসিকতা করা অন্যায়। অনেক ক্ষেত্রে রসিকতা করতে গিয়ে তালাক হয়ে যায়। এছাড়া এতে মিথ্যা বলার গুনাহ তো হয়েছেই। তাই এজন্য তাকে তওবা করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/৫১৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২৩৬; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৪০১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১৭৮

Sharable Link

মাসীহুল্লাহ হাসান - গ্রিনরোড, ঢাকা

৩২২২. Question

 

জনৈক ব্যক্তি ছয় বছর দাম্পত্য জীবন যাপনের পর একপর্যায়ে তার স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাদের চার বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে। বর্তমানে তার স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং সে তার ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। অপরদিকে ছেলের বাবা সন্তানকে তার কাছেই রাখতে চায়। এক্ষেত্রে সন্তান লালন-পালনের অধিকারী কে হবে? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন। উলেস্নখ্য, মহিলার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে উক্ত সন্তানের কোনো ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই।


 

Answer

সন্তান লালন-পালনের অধিকার মূলত মায়ের। তবে মা সন্তানের মাহরাম ব্যতীত অন্য কাউকে বিয়ে করলে তার আর সন্তান লালন-পালনের অধিকারী থাকে না। সেক্ষেত্রে এ অধিকার ক্রমান্বয়ে নিম্নে বর্ণিত আত্মীয়গণ লাভ করে। যথা-ক) শিশুর নানী খ) শিশুর দাদী গ) শিশুর খালা ঘ) শিশুর ফুফু ঙ) আসাবা (শরীয়ত নির্ধারিত নিকটাত্মীয়)-এর ক্রমানুসারে পুরুষ আত্মীয়গণ। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলা গায়রে মাহরামকে বিয়ে করার কারণে তার লালন-পালনের অধিকার বাতিল হয়ে গিয়েছে। এখন উপরে বর্ণিত শিশুর নারী আত্মীয়গণ অর্থাৎ নানী, দাদী, খালা, ফুফু যদি বিদ্যমান না থাকে কিংবা তারা দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মত বা অসমর্থ্য হয় তাহলে সেক্ষেত্রে পিতা নিজে তার সন্তান লালন-পালনের অধিকারী হবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৭০; বাযলুল মাজহূদ ১১/১৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৬৭-১৬৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৫৫-৫৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৭৫-২৭৬

Sharable Link

আসেম ওমর - রংপুর

৩২২৩. Question

 

আমি ছোট বেলায় যার দুধ পান করেছি তার স্বামীর ছোট বোন অর্থাৎ আমার দুধ মায়ের ননদের সাথে আমার বিয়ের আলোচনা চলছে। গ্রামের এক মুরববী বললেন, এ বিয়ে শুদ্ধ হবে না। কারণ দুধ সম্পর্কের কারণে সে আমার মাহরাম। কিন্তু অন্য এক মুরববী বলেছেন, এই বিয়েতে কোনো সমস্যা নেই। জানার বিষয় হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে এ বিয়ের হুকুম কী? আমার দুধমায়ের ননদের সাথে আমার বিবাহ কি শুদ্ধ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


Answer

 

আপনার দুধ মায়ের স্বামী আপনার দুধ সম্পর্কের পিতা। আর তার বোন আপনার দুধ সম্পর্কের ফুফু। আপন ফুফুর মতোই সে আপনার মাহরাম এবং তার সাথে আপনার বিবাহ হারাম। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রক্তের সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিবাহ হারাম, দুধের সম্পর্কের কারণেও তাদের সাথে বিবাহ হারাম।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৪৪ 

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি দুধ মায়ের ননদকে বিয়ে করতে পারবেন না।

 

-শরহুল মুসলিম, নববী ১০/১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৩-৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ গুফরান - শ্যামলী, ঢাকা

৩২২৪. Question

 

জনৈক ব্যক্তি মান্নত করেছিল, তার অসুস্থ মা সুস্থ হলে দশজন ফকিরকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। আল্লাহ তার মাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল, তাকে কি দশজন ফকিরকেই খাওয়াতে হবে, নাকি খুব ভাল করে চার-পাঁচজনকে এক বেলা খাওয়ালেই চলবে?


 

Answer

ঐ ব্যক্তি যেহেতু দশজন ফকিরকে খাওয়ানোর মান্নত করেছে, তাই দশজন ফকিরকে এক বেলা খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে পাঁচজনকে এক বেলা ভালভাবে খাওয়ালে মান্নত আদায় হবে না। তবে হ্যাঁ, পাঁচজনকে দুই বেলা খাওয়ালে মান্নত আদায় হয়ে যাবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৩৫

Sharable Link

মুহাম্মাদ জসিম - টেকনাফ, কক্সবাজার

৩২২৫. Question

 

আমার উপর তিনটি কসমের কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। এখন আমাকে কি প্রত্যেক কসমের জন্য ভিন্ন ভিন্ন করে কাফফারা আদায় করতে হবে? নাকি সবগুলোর জন্য একটি কাফফারা আদায় করলেই যথেষ্ট হবে? আর এক কাফফারার জন্য দশ মিসকিনকে না খাইয়ে যদি এক মিসকিনকে দশদিন খাওয়ানো হয় তাহলে কি কাফফারা আদায় হবে?


 

Answer

যতবার কসম ভঙ্গ হয়েছে প্রত্যেকটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন করে কাফফারা দিতে হবে। একাধিক কসম ভঙ্গের জন্য একটি কাফফারা যথেষ্ট নয়। আর একবার কসম ভঙ্গের জন্য এক মিসকিনকে দশদিন দুবেলা খাওয়ালেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। 

আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/৩০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১৪ -তাকরীরাতে রাফেয়ী ৩/১৩;

Sharable Link

মুহাম্মাদ শুআইব - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৩২২৬. Question

 

একবার একটি কাজ পূর্ণ হওয়ার জন্য আমি এই বলে মান্নত করলাম। যদি আমি এই কাজে সফল হই তাহলে শাহজালাল রাহ.-এর দরগাহ মসজিদে ২০ রাকাত নামায পড়ব। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমার সেই কাজ পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে আমি ঢাকায় থাকি। মান্নত পূর্ণ করার জন্য কি আমাকে সিলেট দরগাহ মসজিদেই যেতে হবে? এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?


 

Answer

 

কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নামায আদায়ের মানত করলে সেই স্থানে নামায পড়া জরুরি হয়ে যায় না। বরং অন্য যে কোনো স্থানে নামায পড়ে নিলেও মান্নত আদায় হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মান্নত আদায়ের জন্য সিলেট দরগাহ মসজিদে না গিয়ে অন্য কোনো মসজিদে মান্নত আদায়ের নিয়তে ২০ রাকাত নামায পড়ে নিলেই মান্নত আদায় হয়ে যাবে। 

উলেস্নখ্য, মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিতে আকসা- এ তিন মসজিদ ছাড়া সকল মসজিদ সমান মর্যাদাসম্পন্ন। কোনো মসজিদের কাছে কোনো বুযুর্গের কবর থাকার কারণে তার ফযীলত কোনোভাবেই বৃদ্ধি পায় না। তাই এ ধারণা নিয়ে কোনো মসজিদে নামায পড়ার মান্নত করা বা ঐ মসজিদের জন্য কোনো মান্নত করা বিদআতের শামীল। আর কোনো মাযারের জন্য মান্নত করা তো সম্পূর্ণ হারাম।

 

- রদ্দুল মুহতার ৩/৭৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৬

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলআমীন - কুতুবখালী, যাত্রাবাড়ি

৩২২৭. Question

 

আমার মামা এক ব্যক্তির নিকট পাঁচ হাজার টাকা আমানত রাখেন। সে তা যথাযথভাবে হেফাযত করে। কিন্তু কয়েকদিন পর তা চুরি হয়ে যায়। চোর আলমারির লক ভেঙ্গে টাকাগুলো নিয়ে গেছে। এরপর লোকটি মামাকে বিষয়টি জানিয়ে বলে, যেহেতু টাকাগুলো আমার কাছ থেকে চুরি হয়েছে তাই আমি তোমাকে প্রত্যেক মাসে অল্প অল্প করে তা পরিশোধ করে দিব। এরপর লোকটি তিন মাসে ২৫০০/- টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু এখন সে আর টাকা দিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, তার জন্য কি বাকি টাকা পরিশোধ করা জরুরি? আমানতদাতা কি তার নিকট বাকি টাকা দাবি করতে পারবে?


 

Answer

আমানতের অর্থ যথাযথ সংরক্ষণের পর তা চুরি হয়ে গেলে আমানতগ্রহীতাকে এর জরিমানা দিতে হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্য আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া জরুরি ছিল না এবং আপনার মামার জন্যও চাপ প্রয়োগ করে তার থেকে ঐ টাকা নেওয়া জায়েয হবে না। আর লোকটি যে ২৫০০/- টাকা পরিশোধ করেছে। দেখতে হবে সে ঐ টাকা কী বুঝে দিয়েছে? যদি মনে করে যে, ঐ টাকা আদায় করা শরীয়তের দৃষ্টিতে তার জন্য আবশ্যকীয় ছিল তবে সেক্ষেত্রে তাকে ঐ টাকা ফেরত দিতে হবে। আর যদি সঠিক মাসআলা জানার পরও সে সতঃস্ফূর্তভাবেই টাকাগুলো দিয়ে থাকে তবে তা খরচ করা আপনার মামার জন্য জায়েয হবে। আর অবশিষ্ট টাকা সে দিতে না চাইলে তার থেকে চাওয়া বা চাপ দিয়ে নেওয়া জায়েয হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩১৪; বেনায়া ১২/৪৩৪-৫; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৬৪

Sharable Link

আনোয়ার শাহ মাবরূর - বারাহিপুর, মাদানী মঞ্জিল

৩২২৮. Question

 

আমাদের এলাকায় একজন দানশীল লোক আছেন। তিনি কখনো কারো থেকে ঋণ নিলে তা আদায়ের সময় ঋণের পরিমাণের চেয়ে একটু বেশি আদায় করে থাকেন। জানার বিষয় হল, ঋণের চেয়ে বেশি আদায় করা জায়েয আছে কি না?


 

Answer

 

ঋণ বা করযে হাসানা পরিশোধের ক্ষেত্রে কিছু বাড়িয়ে দেওয়া উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই লোক, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৩৯০ 

তবে এটি ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন ঋণের চেয়ে বেশি দেওয়া-নেওয়ার কোনো শর্ত অথবা প্রচলন না থাকে। যদি এ দুটির কোনো একটি উপস্থিত থাকে তাহলে অতিরিক্ত গ্রহণ করা জায়েয হবে না।

 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২২৬৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০২; আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২

Sharable Link

মুহাম্মাদ বেলাল মাসরূর - খরনা, পটিয়া, চট্টগ্রাম

৩২২৯. Question

 

গত ১০ বছর পূর্বে আমার আববার ইন্তেকাল হয়েছে। তখন আমরা ছোট ছিলাম। আমার বড় ভাই লেখাপড়া শেষ করেছিলেন বিধায় আমার বড় মামা তাকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। ১০ বছর যাবৎ তিনি পরিবারের খরচ বহন করে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি দেশে আসলে আমার আম্মা আমাদের মধ্যে জায়গা বণ্টন করে দিতে চাইলে তিনি দাবি করেন যে, তাকে জমির ভাগ বেশি দিতে হবে। কেননা তিনি গত ১০ বছর যাবৎ পরিবারের খরচ বহন করেছে। তাতে আমার আম্মা সন্তুষ্ট হয়নি। জানার বিষয় হল, আমার বড় ভাইয়ের দাবি কি সঠিক? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী? দয়া করে বিসত্মারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বড় ভাইয়ের জন্য অতিরিক্ত জমি দাবি করা শরীয়তসম্মত নয়। বরং এক্ষেত্রে আপনার বাবার সম্পত্তি শরীয়তের মীরাসের নিয়ম অনুযায়ী সকল ওয়ারিসের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টিত হবে। অন্যান্য ওয়ারিসদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি ছাড়া বড় ভাইয়ের জন্য বেশি নেওয়া জায়েয হবে না।

Sharable Link

আবদুস সামাদ চৌধুরী - জামেয়া দরগাহ, সিলেট

৩২৩০. Question

 

মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-

ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। 

খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার রুজির বরকত কমে যাবে। 

গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে।

ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে না।

ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ)

এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো অন্যকোনোভাবে প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ ও বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

 

Answer

 

প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাসত্মবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অসিত্মত্ব নেই। তাই হাদীস হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার করা জায়েয নয়। ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে। 

তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭ 

অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার যিম্মা উঠে গেল।-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১

আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৫

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

 

Sharable Link